ব্যাংক ক্যারিয়ার টিপস

যেভাবে হলো ব্যাংকে চাকরি

গাজী মিজানুর রহমানঃ আমি মূলত বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। পাশাপাশি ব্যাংকের চাকরির জন্য কিছু বই সংগ্রহ করে পড়তে থাকি। আমার কাছে মনে হলো, বিসিএসের প্রস্তুতি নিলে ব্যাংকের জন্য আলাদা করে খুব বেশি পরিশ্রম করতে হয় না, অল্প অল্প করে পড়লেই হয়ে যায়।

এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেছি মানবিক বিভাগ থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে পড়াশোনার শেষের দিকে এসে ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে শুরু করি। মনে মনে ঠিক করলাম—হয় বিসিএস ক্যাডার হবো, নয়তো ‘ব্যাংকার’।

তখন থেকেই বিসিএসের পাশাপাশি ব্যাংকের জন্য অল্প অল্প করে প্রস্তুতি নিতে থাকি। যদিও আর্টস ফ্যাকাল্টির স্টুডেন্ট হিসেবে ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষায় ভালো করতে পারব কি না, এ নিয়ে প্রথম দিকে মনে যথেষ্ট শঙ্কা ছিল।

ব্যাংকের চাকরির জন্য প্রথম পরীক্ষা দিই মধুমতি ব্যাংকে। সেই পরীক্ষায় এমসিকিউর ৬২ ক্রমিক নম্বরের প্রশ্নের উত্তর করার পর সময় স্বল্পতায় পরেরগুলো করতে পারিনি। পরে দেখি, পেছনের অনেক প্রশ্নের উত্তর আমার জানা ছিল।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

প্রথমবার ব্যাংক নিয়োগের এই পরীক্ষায় পাস করতে পারিনি। দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিলাম, জনতা ব্যাংক লিমিটেডে সিনিয়র অফিসার পদে। সেখানেও প্রিলিতে পাস করিনি। তৃতীয়বার পরীক্ষা দিলাম বাংলাদেশ ব্যাংকে। সেখানের প্রিলি পাস করলেও রিটেনে পাস করতে পারিনি। চতুর্থবার পরীক্ষা সোনালী ব্যাংক লিমিটেডে। সেখানও একই অবস্থা—প্রিলিতে পাস, রিটেনে ফেল। পঞ্চমবার পরীক্ষা ছিল পূবালী ব্যাংকে। অবশেষে, সেখানে প্রিলি, রিটেন সবগুলোতে পাস করলাম।

জীবনের প্রথমবারের মতো ব্যাংকের চাকরির ভাইভা দিলাম পূবালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদে। ভাইভা ভালো হলো। অবশেষে কাঙ্ক্ষিত সেই সোনার হরিণের দেখা মিলল! হয়ে গেলাম ‘ব্যাংকার’।

যেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম
আমি মূলত বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। পাশাপাশি ব্যাংকের চাকরির জন্য কিছু বই সংগ্রহ করে পড়তে থাকি। আমার কাছে মনে হলো, বিসিএসের প্রস্তুতি নিলে ব্যাংকের জন্য আলাদা করে খুব বেশি পরিশ্রম করতে হয় না, অল্প অল্প করে পড়লেই হয়ে যায়! এখন কথা হলো, ‘বিসিএস পরীক্ষায় গণিত আসে বাংলায়, কিন্তু ব্যাংকে আসে ইংরেজিতে। এ ক্ষেত্রে সমাধান কী?’

সমাধান একেবারেই সহজ—আপনি যদি ভালো করে বাংলায় গণিত পারেন, তাহলে ইংরেজিতে গণিত শেখার কিছু টার্ম আছে, সেগুলো শিখে কিছুদিন ভালো করে চর্চা করলেই হয়ে যায়। যেমন—বাংলায় ‘বিয়োগ’ বা ‘পার্থক্য’কে ইংরেজি ভাষার গণিতে Difference হিসেবে উল্লেখ করে। ‘দ্বিগুণ/ তিন গুণ’-এর ইংরেজি Two times/ three times। আবার ‘স্রোতের অনুকূলে’ বোঝাতে Down stream ও ‘স্রোতের প্রতিকূলে’ বোঝাতে Up stream ব্যবহার হয়। এমন ধরনের টার্মগুলো আগে রপ্ত করতে হবে।

এখানে বলে রাখি, ব্যাংকে চাকরি পেতে হলে ইংরেজি ও গণিতে খুব ভালো হতে হয়। ব্যাংকের প্রায় সব প্রশ্ন (বাংলা বিষয় বাদে) ইংরেজিতে হয়; এমনকি বেশির ভাগ ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষার গণিত বিষয়ের প্রশ্নও ইংরেজিতে হয়। ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন যেহেতু বাংলা বিষয় ছাড়া বাকি বিষয়গুলো ইংরেজি মাধ্যমে হয়; এমনকি গণিতের প্রশ্নগুলোও, তাই প্রথমে বেশি জোর দিলাম ইংরেজির ওপর। আর ইংরেজি বিষয়ে প্রথমে যে টপিকটির ওপর বেশি জোর দিলাম, তা হলো ভোকাবুলারি। কারণ ভালোভাবে ভোকাবুলারি জানা না থাকলে পরীক্ষায় যেসব প্রশ্ন ইংরেজি মাধ্যমে হয়, সেগুলো বোঝা মুশকিল। আর পরীক্ষার হলে প্রশ্ন ঠিকভাবে না বুঝলে তো সঠিকভাবে উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়।

ইংরেজির জন্য Saifur’s Vocabulary খুব ভালোভাবে শেষ করলাম বেশ কয়েকবার। এর পাশাপাশি The Daily Star, The Daily Sun পত্রিকা পড়তাম। বিশেষভাবে Editorial অংশটি জোর দিয়ে পড়তাম। এতে আমার ভোকাবুলারি শেখার পাশাপাশি Focus Writing, Creative Writing পার্টে দক্ষতা অর্জনে দারুণভাবে সাহায্য করেছে। এই দুটি ইংরেজি পত্রিকা ছাড়াও মাঝেমধ্যে The Financial Express পত্রিকাটির এডিটরিয়াল পার্টটিও পড়তাম।

আমি ইংরেজি বেসিকের জন্য Chowdhury & Hossain-এর Advanced Learner’s Functional English বইটি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েছি। এর পর Applied English Grammar & Composition by PC Das, High School English Grammar & Composition by Wren & Martin, A Text Book of Advanced Functional English by Mohiuddin and Kasem, BARRON’S TOEFL, CLIFF TOEFL বইগুলো পড়েছি এক এক করে।

এরপর চর্চার জন্য English For Competitive Exam, Compact English বই দুটি খুব ভালোভাবে শেষ করেছি। এই বইগুলোর মধ্যে কিছু বই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য আগেই পড়েছিলাম বলে আমার জন্য প্রস্তুতি নেওয়াটা সহজ হয়েছে। এ ছাড়া একটি ইংরেজি বই ভালোভাবে বুঝে শেষ করতে পারলে বাকিগুলোও খুব দ্রুত শেষ করা যায়। যেহেতু ঘুরে-ফিরে নিয়মগুলো প্রায় একই।English Analogy-এর জন্য Saifur’s Analogy বইটি পড়েছিলাম। ভোকাবুলারি আগে জানা ছিল বলে বইটি দ্রুত শেষ করতে পেরেছি।

ব্যাংকের লিখিত বা রিটেন পরীক্ষায় Writing, Translation টপিক দুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই দুই টপিকের জন্য Saifur’s Translation & Writing বইটি ভালোভাবে পড়েছি। পাশাপাশি ইংরেজি পত্রিকার Editorial অংশও নিয়মিত পড়তাম বলে Translation, Writing-এ আমার খুব একটা সমস্যা হয়নি।

ইংরেজির পাশাপাশি গণিত নিয়মিত অনুশীলন করেছি। বিসিএস প্রস্তুতির জন্য আগে থেকে পঞ্চম-দশম শ্রেণির গণিত বইয়ের অঙ্কগুলো করা ছিল। কিন্তু ব্যাংকে তো গণিতের প্রশ্ন বাংলায় আসে না; তাই Saifur’s Math বই থেকে ইংরেজি সংস্করণে গণিত অনুশীলন করেছি। যেখানে বুঝতে সমস্যা হয়েছে সেখানে সিনিয়র ভাই বা সহপাঠীদের কাছ থেকে বুঝে নিয়েছি। তার পরও না বুঝে বা স্পষ্ট ধারণা না নিয়ে গণিত করিনি।

এভাবে ব্যাংকের প্রিলি ও রিটেন পরীক্ষার জন্য জোরদার প্রস্তুতি নিতে পেরেছি। যদিও আমার কাছে মনে হয়েছে বইটিতে গণিতগুলো অনেক কঠিন নিয়মে দেওয়া হয়েছে। তাই আমি মূলত সেই বই থেকে গণিতের প্রশ্নগুলো দেখেছিলাম, আর নিজের মতো করে করেছিলাম। অর্থাৎ বইয়ের নিয়মগুলো খুব একটা অনুসরণ করিনি। আপনি চাইলে ব্যাংকের গণিত প্রস্তুতির জন্য বাজারের অন্য কোনো বইও সংগ্রহ করতে পারেন।

ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষায় ইংরেজি ও গণিতের পর যে বিষয়টির ওপর জোর দিতে হয়, তা হলো আইসিটি। এ বিষয়টির প্রস্তুতির অনেকটাই আমি ‘ইজি কম্পিউটার’ বই থেকে নিয়েছি। এ ছাড়া পরীক্ষায় যেসব টপিক থেকে প্রশ্ন আসে, সেগুলোর বিস্তারিত জানতে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’ (লেখক: প্রকৌশলী মুজিবুর রহমান) বইটির সাহায্য নিয়েছি। এর বাইরে প্রশ্ন্নভিত্তিক বিদেশি ওয়েবসাইট যেমন—examveda.com, indiabix.com, sawaal.com-এর সাহায্য নিয়েছি। সাম্প্রতিক সময়ের ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষায় এসব সাইট থেকে অনেক প্রশ্ন পরীক্ষায় এসেছে।

বাংলার জন্য নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ভাষার ব্যাকরণ বইটি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েছি। বইটির পাশাপাশি বাজারে প্রচলিত বিসিএস নিয়োগ গাইড থেকে প্রস্তুতি নিয়েছি। যেমন—বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা, এমপিথ্রি বাংলা বই থেকে পড়েছিলাম। মাঝে মাঝে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনলাইনে জাতীয় জ্ঞানকোষ ‘বাংলাপিডিয়া’র সাহায্য নিয়েছি।

সাধারণ জ্ঞানের জন্য আজকের বিশ্ব বইটি পড়েছি। তবে যেসব প্রশ্ন কনফিউজিং মনে হতো সেগুলো সমাধানের জন্য ইন্টারনেটের সাহায্য নিয়েছি। এ ছাড়া দৈনিক কালের কণ্ঠসহ প্রথম সারির কয়েকটি জাতীয় পত্রিকা পড়তাম। চাকরির প্রস্তুতিমূলক মাসিক পত্রিকাগুলোর পাশাপাশি প্রফেসর’স কি টু ব্যাংক জব বইটি দেখেছি। এখান থেকে বিগত বছরগুলোর ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সমাধান করেছি, প্রশ্নপত্রের ধরন সম্পর্কেও স্বচ্ছ ধারণা পেয়েছি।

আরও দেখুন:
 বেছে নিন ব্যাংকিং পেশা
 ব্যাংকিং পেশার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য
 প্রাইভেট ব্যাংক জবঃ নিয়োগ প্রক্রিয়া ও সুযোগ সুবিধা
 এক চান্সেই ব্যাংকে চাকরি পেতে প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে

লেখকঃ গাজী মিজানুর রহমান [পূবালী ব্যাংকে চাকরি হওয়ার পর ৩৫তম বিসিএসে (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button