ব্যাংক ক্যারিয়ার টিপস

বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক হওয়াই প্রথম লক্ষ্য ছিল

মো. তুহিন মিয়াঃ হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিষয়ে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় হয়ে বিবিএ ও এমবিএ করি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (কুষ্টিয়া) থেকে। চাকরির জন্য প্রস্তুতিটা শুরু হয় মূলত বিবিএ তৃতীয় বর্ষ থেকেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক (এডি) পদে চাকরিই প্রথম লক্ষ্যই ছিল। বাজারের প্রচলিত গাইড বই থেকে গণিত ও ইংরেজির ভোকাবুলারি এবং BARRON’S GMAT, CLIFF’S TOEFL থেকে ইংরেজি গ্রামার অনুশীলন করেছি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদে নিয়োগে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হতে তিনটি ধাপ পেরোতে হয়—
(ক) এমসিকিউ/ প্রিলিমিনারি (১০০ নম্বর, ১ ঘণ্টা),
(খ) লিখিত (২০০ নম্বর, ২ ঘণ্টা) ও
(গ) ভাইভা (২৫ নম্বর)।

আরও দেখুন:
◾ বিভিন্ন ব্যাংকের জব সার্কুলার
◾ ব্যাংক জব ক্যারিয়ার টিপস
◾ ব্যাংকার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার উপায়
◾ ব্যাংকিং পেশা দূর হতে যেন স্বপ্নিল এক আবেশ!

এমসিকিউর প্রস্তুতি নিয়েছি বিগত বছরগুলোর পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে। এমসিকিউতে সাধারণত পাঁচটি বিষয় থেকে প্রশ্ন করা হয়। এমসিকিউ প্রশ্নের ধরন অনেকটা এমন—বাংলায় ১৫-১৮টি প্রশ্ন, ইংরেজিতে ১৫-১৬টি প্রশ্ন, গণিত ও অ্যানালিটিক্যাল অ্যাবিলিটিতে ২০-২২টি প্রশ্ন, সাধারণ জ্ঞান-বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে ২০-২২টি প্রশ্ন এবং কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তির ৮-১০টি প্রশ্ন।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

ফেসবুকভিত্তিক চাকরির প্রস্তুতিমূলক গ্রুপগুলো আমার পড়াশোনার জন্য বেশ সহায়ক ছিল। এমসিকিউ পরীক্ষার বাংলা অংশের জন্য সৌমিত্র শেখরের ‘বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা’, নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ এবং এর সঙ্গে একটি বাংলা গাইড বই পড়েছি। বাংলা সাহিত্য অংশে খ্যাতনামা লেখক ও কবিদের সাহিত্যের অংশগুলো বেশি পড়া হতো। আর বাংলা ব্যাকরণ অংশের ক্ষেত্রে বিগত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণের পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলোর ওপর জোর দিয়েছি সবচেয়ে বেশি। প্রতিদিন সকালে পড়ার রুটিনে শুরুতেই ছিল ইংরেজি ভোকাবুলারি।

এমসিকিউর ইংরেজি অংশের জন্য BARRON’S GMAT, CLIFF’S TOEFL দুটি প্রচলিত ইংরেজি গাইড বই ও ইংরেজি ভোকাবুলারি বই থেকে অনুশীলন করাটাই ছিল প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট। ফ্যাকাল্টি বেইসড গণিত সমাধানের পাশাপাশি গণিত গাইড বই থেকে গণিত ও অ্যানালিটিক্যাল অ্যাবিলিটি অংশ অনুশীলন করেছি। সাধারণ জ্ঞান অংশের জন্য সমসাময়িক বিষয়ে জেনেছি দৈনিক পত্রিকা, অনলাইন ও চাকরির প্রস্তুতিবিষয়ক মাসিক পত্রিকার মাধ্যমে।

সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে মৌলিক জ্ঞান ও ধারণা পেয়েছি নবম-দশম শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বই ও সাধারণ জ্ঞান (বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি) গাইড বইগুলো পড়ে। কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তির প্রস্তুতির জন্য দেখেছি উচ্চ মাধমিক পর্যায়ের কম্পিউটার (প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র) বই এবং বাজারের কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক গাইড বই। এ ছাড়া www.indiabix.com, www.examveda.com-এর মতো বিদেশি ওয়েবসাইটগুলো থেকেও গণিত, ইংরেজি ও কম্পিউটার অংশের প্রস্তুতি (এমসিকিউ) নিয়েছি।

লিখিত পরীক্ষায় ভালো করতে নিয়মিত ইংরেজি ও বাংলা পত্রিকা পড়ার পাশাপাশি বাংলা থেকে ইংরেজি অনুবাদ ও ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ অনুশীলন, লেটার-অ্যাপ্লিকেশন ও রিপোর্ট রাইটিংয়ের ফরম্যাট সম্পর্কে জেনেছি।

ফোকাস রাইটিং অংশে ভালো করতে গিয়ে পত্রিকার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নোট ও নিয়মিত ফোকাস রাইটিং অনুশীলন করতে হয়েছে। যেমন—বাংলাদেশের প্রবাসী আয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ধারাবাহিক জিডিপির প্রবৃদ্ধি ও রপ্তানি আয় ছক আকারে সংক্ষেপে লিখে রাখতাম। পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নচিত্র নিয়ে নির্ভরযোগ্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির পর্যবেক্ষণনির্ভর মন্তব্যও নোট করে রাখতাম।

লিখিত পরীক্ষার ২০০ নম্বরের মধ্যে ভালো করলে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হওয়ার জন্য অনেকটা এগিয়ে থাকা যায়। ভাইভায় মাত্র ২৫ নম্বর, তবে ভাইভার গুরুত্বও কম না। ২-১ নম্বরও অনেকটা পার্থক্য করে দেয়। এই হিসেবে ভাইভার গুরুত্বও কম না। ভাইভায় যে বিষয়গুলোর ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে হয়েছে, সেগুলো হলো—
ক. বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠিত বিষয়ের ওপর মৌলিক জ্ঞান,
খ. বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠিত বিষয়ের সঙ্গে ব্যাংকিংয়ের সম্পর্ক, অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠিত বিষয় থেকে অর্জিত জ্ঞান ব্যাংকিং সেক্টরে কিভাবে কাজে লাগবে, এ ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা এবং
গ. মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের ইতিহাস, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও সাম্প্রতিক আলোচিত ইস্যু সম্পর্কে জানা। ভাইভায় বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার পঠিত বিষয় ও অর্থনীতি থেকেই আমাকে বেশি প্রশ্ন করা হয়েছিল।

আরও দেখুন:
 বেছে নিন ব্যাংকিং পেশা
 ব্যাংকিং পেশার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য
 প্রাইভেট ব্যাংক জবঃ নিয়োগ প্রক্রিয়া ও সুযোগ সুবিধা
 এক চান্সেই ব্যাংকে চাকরি পেতে প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে

লেখকঃ মো. তুহিন মিয়া, সহকারী পরিচালক (জেনারেল), বাংলাদেশ ব্যাংক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button