বাংলাদেশ ব্যাংকব্যাংকিং আইন

নন-ব্যাংকিং এসেট নীতিমালা

দেশের সব ব্যাংকের জন্য অ-ব্যাংকিং সম্পদ সংক্রান্ত কঠোর নীতিমালা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নীতিমালা অনুযায়ী অ-ব্যাংকিং সম্পদ দ্বারা ঋণগ্রহীতার ঋণ সমন্বয়ের আগে ব্যাংকের মোট পাওনা নিরূপণ করে ঋণের মোট স্থিতি নিরূপণ করতে হবে। এক্ষেত্রে অনারোপিত সুদকে অবশ্যই সুদ স্থগিত হিসাবে স্থানান্তর করতে হবে।

তবে এ ধরনের সম্পদের বিক্রয়লব্ধ অর্থ যতক্ষন না পর্যন্ত নগদে আদায় করা সম্ভব হবে ততক্ষন পর্যন্ত সুদ স্থগিত হিসাবে রক্ষিত অর্থ আয়খাতে স্থানান্তর করা যাবে না। এছাড়া সংশ্লিষ্ট ঋণের বিপরীতে সংরক্ষিত প্রভিশনও আয়খাতে নেওয়া যাবে না। কারণ ঋণের বিপরীতে অব্যাংকিং সম্পদ ব্যাংকের হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হলেও সম্পদের মূল্য হ্রাস ও বিক্রয়ের ঝুঁকিসহ বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি থেকে যায়।

সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১) বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এই নীতিমালা সার্কুলার আকারে জারি করা হয়। ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ৩৮ ধারার নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রথম তফসিলের ফরম মোতাবেক ব্যাংকগুলোর ব্যালেন্সশিট, লাভ-ক্ষতির হিসাব এবং আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়ে থাকে।

প্রথম তফসিলে বর্ণিত আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতির নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকের কোন দাবি বা প্রাপ্য পরিশোধের সূত্রে অর্জিত সম্পদকে ব্যাংকের ব্যালেন্সশীটে অ-ব্যাংকিং সম্পদ হিসেবে প্রদর্শন করতে হয়। সাধারণত ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণ অনাদায়ী হলে তা আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঋণের বিপরীতে গৃহীত জামানত বা বন্ধকীকৃত সম্পদের মালিকানা লাভ করলে এরূপ সম্পদের উদ্ভব হয়।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর ৩৩(৭) ধারা মোতাবেক আদালত কর্তৃক ঋণের বিপরীতে গৃহীত জামানত বা বন্ধকীকৃত সম্পদের মালিকানা স্বত্ব ব্যাংকের অনুকূলে পাওয়ার পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে এরূপ সম্পদ ব্যাংকের নামে রেজিস্ট্রেশন ও মিউটেশন করে দখলী স্বত্ব নিশ্চিতকরণসহ প্রয়োজনীয় আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ঋণগ্রহীতার ঋণ সমন্বয়পূর্বক প্রাপ্ত সম্পদ ব্যাংকের হিসাবে অ-ব্যাংকিং সম্পদ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট ঋণ সমন্বয়পূর্বক ব্যাংকের হিসাবে অ-ব্যাংকিং সম্পদ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে বেশকিছু নির্দেশনা পরিপালন করার কথা সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে বলা হয়, অ-ব্যাংকিং সম্পদ ব্যাংকের হিসাবে অন্তর্ভুক্তিকালে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে মূল্যায়ন করতে হবে। এরূপ সম্পদ মূল্যায়নের জন্য কমপক্ষে তিনজন অভিজ্ঞ কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি কমিটি করতে হবে। মূল্যায়ন কমিটি কর্তৃক নির্ণীত মূল্যের সাথে সম্পদের স্থানীয় অধিক্ষেত্রাধীন সাব-রেজিষ্ট্রারের জন্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যের পার্থক্য পরিলক্ষিত হলে মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এর যৌক্তিকতা উপস্থাপন করতে হবে।

ব্যাংকের কর্মকর্তাদেরর সমন্বয়ে গঠিত কমিটি কর্তৃক সম্পদের মূল্যায়নের পাশাপাশি ভ্যালুয়ার ফার্ম বা পেশাজীবী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও সম্পদের মূল্যায়ন করতে হবে। ভ্যালুয়ার ফার্ম/ পেশাজীবী প্রতিষ্ঠান এবং কমিটি কর্তৃক নির্ণীত মূল্য-এ দু’টি মূল্যের মধ্যে যেটি কম সেটিকে সম্পদের বাজার মূল্য হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

সম্পদের বাজার মূল্য নিরূপণের পর তা ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে। তবে বাজার মূল্য নিরূপণকালে টিন বা সেমি পাকা দালান, ব্যবহার অযোগ্য স্থাপনা ও মেশিনারিকে কোনভাবেই অ-ব্যাংকিং সম্পদ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না।

ঋণ স্থিতির সমপরিমাণ অর্থ দ্বারা সংশ্লিষ্ট অ-ব্যাংকিং সম্পদকে ডেবিট করে ঋণের স্থিতি সমন্বয় করতে হবে। এক্ষেত্রে সম্পদের বাজার মূল্য ঋণ স্থিতির তুলনায় বেশি হলেও ঋণ সমন্বয়ের পর অবশিষ্ট অর্থ হিসাবায়নের অন্তর্ভুক্ত হবে না। এরূপ ক্ষেত্রে ঋণ স্থিতির সম্পূর্ণ অংশ সমন্বিত হওয়ায় ঋণগ্রহীতাকে ঋণের দায় হতে অব্যাহতি দিতে হবে এবং সিআইবিতে ঋণগ্রহীতাকে খেলাপী হিসেবে প্রদর্শন করা যাবে না।

তবে সম্পদের বাজার মূল্য ঋণের মোট স্থিতির তুলনায় কম হলে ঋণগ্রহীতাকে ঋণের সম্পূর্ণ দায় হতে অব্যাহতি দেওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে অসমন্বিত ঋণের সমপরিমাণ অর্থ ব্যাংকের ঋণ হিসাবে প্রদর্শন করতে হবে এবং সিআইবিতে ঋণগ্রহীতাকে খেলাপী হিসেবে প্রদর্শন করে অবশিষ্ট অর্থ আদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ধরনের আইনগত প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।

আরও দেখুন:
◾ ব্যাংকিং আইন

এছাড়া অবলোপন করা ঋণের বিপরীতে প্রাপ্ত অ-ব্যাংকিং সম্পদ দ্বারা ঋণগ্রহীতার ঋণ সমন্বয়ের আগে ঋণগ্রহীতার নিকট হতে অনারোপিত সুদসহ সকল পাওনা অন্তর্ভুক্ত করে ব্যাংকের মোট পাওনা নিরূপণ করতে হবে। নন-ব্যাংকিং এসেট নীতিমালাটি নিম্নে তুলে ধরা হলো-

অ-ব্যাংকিং সম্পদ (Non-Banking Asset) সংক্রান্ত নীতিমালা
ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ
বাংলাদেশ ব্যাংক
প্রধান কার্যালয়
ঢাকা।
website: www.bb.org.bd

ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৩৮ এর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রথম তফসিলের ফরম মোতাবেক তফসিলি ব্যাংকসমূহের ব্যালেন্সশীট, লাভ-ক্ষতির হিসাব এবং আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। প্রথম তফসিলে বর্ণিত আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতির নির্দেশনা ক এর ০৯ নং ক্রমিক অনুযায়ী ব্যাংকের কোন দাবী বা প্রাপ্য পরিশোধের সূত্রে অর্জিত সম্পদকে ব্যাংকের ব্যালেন্সশীটে অ-ব্যাংকিং সম্পদ (Non-Banking Asset) হিসেবে প্রদর্শন করতে হয়। সাধারণতঃ ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত ঋণ অনাদায়ে আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যাংক ঋণের বিপরীতে গৃহীত জামানত/ বন্ধকীকৃত সম্পদের মালিকানা লাভ করলে এরূপ সম্পদের উদ্ভব হয়। এক্ষেত্রে অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর ৩৩(৭) ধারা মোতাবেক আদালত কর্তৃক ব্যাংক ঋণের বিপরীতে গৃহীত জামানত/ বন্ধকীকৃত সম্পদের মালিকানা স্বত্ব ব্যাংকের অনুকূলে পাওয়ার পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে এরূপ সম্পদ ব্যাংকের নামে রেজিস্ট্রেশন ও মিউটেশন করে দখলী স্বত্ব (Physical Possession) নিশ্চিতকরণসহ প্রয়োজনীয় আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্নকরতঃ ঋণগ্রহীতার ঋণ সমন্বয়পূর্বক প্রাপ্ত সম্পদ ব্যাংকের হিসাবে Non-Banking Asset হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট ঋণ সমন্বয়পূর্বক ব্যাংকের হিসাবে Non-Banking Asset (NBA) অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণিত নির্দেশনাসমূহ অনুসরণীয় হবেঃ

১) সম্পদের মূল্যায়নঃ
Non-Banking Asset ব্যাংকের হিসাবে অন্তর্ভুক্তিকালে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে মূল্যায়ন করতে হবে। এরূপ সম্পদ মূল্যায়নের ক্ষেত্রে এতদ্বিষয়ে অভিজ্ঞ কমপক্ষে তিনজন কর্মকর্তা/ নির্বাহীর সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনপূর্বক তাদের মাধ্যমে মূল্যায়ন সম্পন্ন করতে হবে। মূল্যায়ন কমিটি কর্তৃক নির্ণীত মূল্যের সাথে সম্পদের স্থানীয় অধিক্ষেত্রাধীন সাব-রেজিষ্ট্রারের জন্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যের পার্থক্য পরিলক্ষিত হলে মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এর যৌক্তিকতা উপস্থাপন করতে হবে। ব্যাংক কর্মকর্তা/ নির্বাহীর সমন্বয়ে গঠিত কমিটি কর্তৃক সম্পদের মূল্যায়নের পাশাপাশি ভ্যালুয়ার ফার্ম বা পেশাজীবী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও সম্পদের মূল্যায়ন করতে হবে। ভ্যালুয়ার ফার্ম/ পেশাজীবী প্রতিষ্ঠান এবং কমিটি কর্তৃক নির্ণীত মূল্য-এ দু’টি মূল্যের মধ্যে যেটি কম সেটিকে সম্পদের বাজার মূল্য হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। সম্পদের বাজার মূল্য নিরূপণের পর তা ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে। উল্লেখ্য, সম্পদের বাজার মূল্য নিরূপণকালে টিন/ সেমি পাকা দালান, ব্যবহার অযোগ্য স্থাপনা ও মেশিনারি যতদূর সম্ভব স্বল্পতম সময়ের মধ্যে বিক্রয় করে ঋণের বিপরীতে জমা করতে হবে। কোনভাবেই এরূপ সম্পদকে Non-Banking Asset হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। তবে যে জমি/ ভূমির উপর টিন/ সেমি পাকা দালান, ব্যবহার/ বিক্রয় অযোগ্য স্থাপনা ও মেশিনারি থাকবে সে জমি/ ভূমির নিরূপিত বাজার মূল্য হতে উক্ত স্থাপনা/ মেশিনারি অপসারণ করার ব্যয় বাদ দিয়ে জমি/ ভূমির বাজার মূল্য নির্ধারণ করতে হবে।

Non-Banking Asset হিসেবে অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে সম্পদের মূল্যায়নে যদি দেখা যায় যে, কোন সম্পদের মূল্য ব্যাংক কর্তৃক ইতোপূর্বে সম্পাদিত সর্বশেষ মূল্যায়ন হতে অস্বাভাবিকভাবে হ্রাস পেয়েছে তাহলে তার কারণ নিরূপণপূর্বক দায়-দায়িত্ব (যদি থাকে) নিরূপণ করতে হবে।

২) ঋণ সমন্বয়ের মাধ্যমে Non-Banking Asset-কে ব্যাংকের হিসাবে অন্তর্ভুক্তকরণঃ
Non-Banking Asset-এর দ্বারা ঋণগ্রহীতার ঋণ সমন্বয়ের পূর্বে ঋণগ্রহীতার নিকট হতে ব্যাংকের মোট পাওনা (অনারোপিত সুদসহ সকল পাওনা) নিরূপণপূর্বক ঋণ হিসাবে আরোপ (আদালতে ভিন্নরূপ নির্দেশনা না থাকলে) করে ঋণের মোট স্থিতি নিরূপণ করতে হবে। এক্ষেত্রে অনারোপিত সুদকে অবশ্যই Interest Suspense Account-এ স্থানান্তর করতে হবে। নিম্নবর্ণিত উপায়ে ঋণ সমন্বয়ের মাধ্যমে Non-Banking Asset-কে ব্যাংকের হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে [সংযোজনী ক এর উদাহরণ-১ দ্রষ্টব্য]:

ক) সম্পদের বাজার মূল্য ঋণের মোট স্থিতির সমান বা বেশি হলেঃ ঋণ স্থিতির সমপরিমাণ অর্থ দ্বারা সংশ্লিষ্ট Non-Banking Asset-কে (খাত-ভিত্তিক) ডেবিট করে ঋণের স্থিতি সমন্বয় করতে হবে। এক্ষেত্রে সম্পদের বাজার মূল্য ঋণ স্থিতির তুলনায় বেশি হলেও ঋণ সমন্বয়ের পর অবশিষ্ট অর্থ হিসাবায়নের অন্তর্ভুক্ত হবে না। এরূপ ক্ষেত্রে ঋণ স্থিতির সম্পূর্ণ অংশ সমন্বিত হয় বিধায় এ নীতিমালার ৪নং অনুচ্ছেদে উল্লেখিত নীতিমালা পরিপালন সাপেক্ষে ঋণগ্রহীতাকে ঋণের দায় হতে অব্যাহতি দিতে হবে এবং সিআইবিতে উক্ত ঋণগ্রহীতাকে খেলাপী হিসেবে প্রদর্শন করা যাবে না।

খ) সম্পদের বাজার মূল্য ঋণের মোট স্থিতির তুলনায় কম হলেঃ সংশ্লিষ্ট সম্পদের বাজার মূল্যের সমপরিমাণ অর্থ দ্বারা Non-Banking Asset-কে (খাত-ভিত্তিক) ডেবিট করে সমপরিমাণ ঋণের স্থিতি সমন্বয় করতে হবে। সম্পদের বাজার মূল্য ঋণের মোট স্থিতির তুলনায় কম বিধায় এক্ষেত্রে ঋণের সম্পূর্ণ অংশ সমন্বিত হবে না। ফলে ঋণগ্রহীতাকে ঋণের সম্পূর্ণ দায় হতে অব্যাহতি দেয়া যাবে না। এক্ষেত্রে অসমন্বিত ঋণের সমপরিমাণ অর্থ ব্যাংকের ঋণ হিসাবে প্রদর্শন করতে হবে এবং সিআইবিতে ঋণগ্রহীতাকে খেলাপী হিসেবে প্রদর্শনকরতঃ অবশিষ্ট অর্থ আদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ধরনের আইনগত প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। উক্ত অবশিষ্ট অর্থ আদায়ের জন্য আইনী প্রক্রিয়া গ্রহণের ক্ষেত্রে অর্থ ঋণ আদালত আইন এর ২৮(৩) ধারায় উল্লেখিত তামাদির মেয়াদ যেন অতিক্রান্ত না হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

গ) ঋণের বিপরীতে রক্ষিত Interest Suspense Account-সমন্বয়করণঃ ঋণের বিপরীতে Non-Banking Asset ব্যাংকের হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হলেও উক্ত সম্পদের মূল্য হ্রাস ও বিক্রয়ের ঝুঁকিসহ বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি থেকে যায়। ফলে এরূপ সম্পদের বিক্রয়লব্ধ অর্থ নগদে আদায় ব্যতিরেকে Interest Suspense Account-এ রক্ষিত অর্থ আয়খাতে স্থানান্তর করা যাবে না। তবে এরূপ Interest Suspense অন্যান্য Interest Suspense হতে ভিন্ন বিধায় ঋণ সম্পূর্ণরূপে সমন্বয় হলে উক্ত Interest Suspense Account-এ রক্ষিত অর্থ Interest Suspense against NBA হিসাবে স্থানান্তরকরতঃ তা অন্যান্য দায়ের মধ্যে ব্যালেন্সশীটে প্রদর্শন করতে হবে। তবে কোন ঋণ অসমন্বিত থাকলে তার সম-পরিমাণ অর্থ (Specific Provision বাদ দেয়ার পর) Interest Suspense Account-এ সংরক্ষণ করতে হবে।

ঘ) ঋণের বিপরীতে রক্ষিত প্রভিশন সমন্বয়করণঃ Non-Banking Asset-এর ক্ষেত্রে মূল্য হ্রাস ও বিক্রয়ের ঝুঁকিসহ বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি থাকায় এরূপ সম্পদের বিক্রয়লব্ধ অর্থ নগদে আদায় ব্যতিরেকে সংশ্লিষ্ট ঋণের বিপরীতে ইতোপূর্বে রক্ষিত Specific Provision আয়খাতে স্থানান্তর করা যাবে না। এরূপ ক্ষেত্রে ঋণ হিসাবটি Non-Banking Asset এর মাধ্যমে সম্পূর্ণভাবে সমন্বয় হলে ঋণের বিপরীতে রক্ষিত Specific Provision-কে Provision against NBA হিসাবে স্থানান্তরকরতঃ তা অন্যান্য দায়ের মধ্যে প্রদর্শন করতে হবে। তবে কোন ঋণ অসমন্বিত থাকলে তার সমপরিমাণ প্রভিশনকে (Interest Suspense বাদ দেয়ার পর) Specific Provision-হিসেবে সংরক্ষণ করতে হবে।

৩) অবলোপনকৃত ঋণের বিপরীতে Non-Banking Asset-কে ব্যাংকের স্থিতিপত্রে অন্তর্ভুক্তকরণঃ
অবলোপনকৃত ঋণের বিপরীতে প্রাপ্ত Non-Banking Asset দ্বারা অবলোপনকৃত ঋণগ্রহীতার ঋণ সমন্বয়ের পূর্বে ঋণগ্রহীতার নিকট হতে অনারোপিত সুদসহ সকল পাওনা অন্তর্ভুক্ত করে (আদালতে ভিন্নরূপ নির্দেশনা না থাকলে) ব্যাংকের মোট পাওনা নিরূপণ করতে হবে এবং নিম্নবর্ণিত উপায়ে অবলোপনকৃত ঋণের বিপরীতে Non-Banking Asset-কে ব্যাংকের হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে [সংযোজনী ক এর উদাহরণ-২ দ্রষ্টব্য]:

ক) সম্পদের মূল্য অবলোপনকৃত ঋণের বিপরীতে নির্ণিত মোট পাওনার সমান বা বেশি হলেঃ ব্যাংকের মোট পাওনার সমপরিমাণ অর্থ দ্বারা সংশ্লিষ্ট Non-Banking Asset-কে (খাত-ভিত্তিক) ডেবিট করে সমপরিমাণ অর্থ Provision against NBA হিসেবে ক্রেডিট করতে হবে। এরূপ ক্ষেত্রে ঋণ স্থিতির সম্পূর্ণ অংশ সমন্বিত হয় বিধায় এ নীতিমালার ৪নং অনুচ্ছেদে উল্লেখিত নীতিমালা পরিপালন সাপেক্ষে ঋণগ্রহীতাকে ঋণের দায় হতে অব্যাহতি দিতে হবে এবং সিআইবিতে উক্ত ঋণগ্রহীতাকে খেলাপী হিসেবে প্রদর্শন করা যাবে না।

খ) সম্পদের মূল্য অবলোপনকৃত ঋণের বিপরীতে নির্ণীত মোট পাওনার তুলনায় কম হলেঃ সংশ্লিষ্ট সম্পদের বাজার মূল্যের সমপরিমাণ অর্থ দ্বারা Non-Banking Asset-কে (খাত-ভিত্তিক) ডেবিট করে সমপরিমাণ অর্থ Provision against NBA হিসেবে ক্রেডিট করতে হবে। সম্পদের মূল্য অবলোপনকৃত ঋণের বিপরীতে মোট পাওনার তুলনায় কম বিধায় এক্ষেত্রে অবলোপনকৃত ঋণের সম্পূর্ণ অংশ সমন্বয় হয় না। ফলে ঋণগ্রহীতাকে ঋণের সম্পূর্ণ দায় হতে অব্যাহতি দেয়া যাবে না। এক্ষেত্রে অবলোপনকৃত ঋণের বিপরীতে মোট পাওনার অসমন্বিত অংশ হিসাবায়নপূর্বক আলাদাভাবে সংরক্ষণ করতে হবে এবং সিআইবিতে ঋণগ্রহীতাকে খেলাপী হিসেবে প্রদর্শনকরতঃ অবশিষ্ট অর্থ আদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ধরনের আইনগত প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। উক্ত অবশিষ্ট অর্থ আদায়ের নিমিত্ত আইনী প্রক্রিয়া গ্রহণের ক্ষেত্রে অর্থ ঋণ আদালত আইন এর ২৮(৩) ধারায় উল্লেখিত তামাদির মেয়াদ যেন অতিক্রান্ত না হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

৪) ঋণ/ অবলোপনকৃত ঋণের সম্পূর্ণ অর্থ সমন্বয়ের পর ঋণগ্রহীতাকে খেলাপী হতে অবমুক্তকরণঃ
Non-Banking Asset ব্যাংকের হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে ঋণ/ অবলোপনকৃত ঋণের সম্পূর্ণ অর্থ সমন্বিত হলে সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতাকে খেলাপী হতে অবমুক্ত করতে হবে। তবে ঋণগ্রহীতাকে খেলাপী হতে অবমুক্ত করার পূর্বে নীতিমালায় উল্লেখিত সকল প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়েছে মর্মে ব্যাংকের ‘হেড অব ইন্টারনাল কন্ট্রোল এন্ড কমপ্লায়ান্স’ এর প্রত্যয়ন গ্রহণপূর্বক পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে।

৫) Non-Banking Asset -এর বিক্রয় ও ব্যবহারঃ
Non-Banking Asset ব্যাংকের কোন দাবী বা প্রাপ্য পরিশোধের সূত্রে অর্জিত বিধায় ব্যাংক কোনভাবেই এরূপ সম্পদ অর্জনের তারিখ হতে ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ধারা ১০ এর মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ের অধিক মেয়াদে তার স্বীয় অধিকারে রাখতে পারে না। সে কারণে সম্পদ অর্জনের পর যত দ্রুত সম্ভব তা বিক্রয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তবে প্রয়োজন হলে ব্যাংক উক্ত সম্পদ (সম্পূর্ণ বা আংশিক) নিজস্ব ব্যাংকিং কার্যক্রমে ব্যবহার করতে পারবে। NBA-এর কোন অংশ (সম্পদ) বিক্রয় বা ব্যাংকিং কার্যক্রমে ব্যবহার করা হলে নিম্নরূপ উপায়ে তা সমন্বয় করতে হবে [সংযোজনী ক এর উদাহরণ-৩ ও উদাহরণ-৪ দ্রষ্টব্য]:

ক) Non-Banking Asset বিক্রয়ের ক্ষেত্রেঃ
অ) সম্পদের বিক্রয় মূল্য বহি মূল্য অপেক্ষা বেশি বা সমান হলেঃ Non-Banking Asset-এর বিক্রয়লব্ধ অর্থ দ্বারা এরূপ হিসাব সমন্বয় করতে হবে। সম্পদের বিক্রয় মূল্য বহি মূল্য অপেক্ষা বেশি হলে উক্ত অতিরিক্ত অর্থ সরাসরি Retained Earnings হিসাবে স্থানান্তর করতে হবে। একইভাবে বিক্রিত Non-Banking Asset-এর বিপরীতে কোন Interest Suspense against NBA বা Provision against NBA থাকলে তাও সরাসরি Retained Earnings হিসাবে স্থানান্তর করতে হবে। কোনভাবেই উল্লিখিত অর্থ চলতি বছরের আয়খাতে স্থানান্তর করা যাবে না।

আ) সম্পদের বিক্রয় মূল্য বহি মূল্য অপেক্ষা কম হলেঃ Non-Banking Asset-এর বিক্রয়লব্ধ অর্থ দ্বারা এরূপ হিসাব সমন্বয় করতে হবে। এক্ষেত্রে সম্পদের বহি মূল্য এবং বিক্রয় মূল্যের পার্থক্য তথা বিক্রয়জনিত ক্ষতি একই সম্পদের বিপরীতে সংরক্ষিত Interest Suspense against NBA ও Provision against NBA (যদি থাকে) হিসেবে সংরক্ষিত অর্থ দ্বারা সমন্বয় করতে হবে। সম্পদের বিপরীতে সংরক্ষিত Interest Suspense against NBA ও Provision against NBA দ্বারাও যদি এরূপ ক্ষতি সম্পূর্ণরূপে সমন্বয় করা সম্ভব না হয় তাহলে Loss on Sale of NBA হিসাবের মাধ্যমে সমন্বয় করতে হবে এবং উক্ত ক্ষতিকে চলতি হিসাব বছরের লাভ-লোকসান হিসাবে প্রদর্শন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সম্পদের বিপরীতে সংরক্ষিত Interest Suspense against NBA ও Provision against NBA হিসাবে সংরক্ষিত অর্থ দ্বারা বিক্রয়জনিত ক্ষতি সমন্বয় করার পর Interest Suspense against NBA বা Provision against NBA-এর কোনো ব্যালেন্স অবশিষ্ট থাকলে তা সরাসরি Retained Earnings হিসাবে স্থানান্তর করতে হবে। কোনভাবেই উল্লিখিত অর্থ চলতি বছরের আয়খাতে স্থানান্তর করা যাবে না। Non-Banking Asset এর বিক্রয় মূল্য তার বহি মূল্য অপেক্ষা কম হলে বিক্রয়কালে অবশ্যই নিম্নবর্ণিত কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবেঃ

১) মূল্য হ্রাস পাওয়ার কারণ নিরূপণ করা;
২) ব্যাংকের হিসাবে অন্তর্ভুক্তিকালে কিভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে তা পুনঃপরীক্ষা করা;
৩) Non-Banking Asset-হিসেবে অন্তর্ভুক্তিকালে মূল্যায়নের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কোনরূপ গাফিলতি ছিল কিনা তা পরীক্ষা করা;
৪) সার্বিক কার্যক্রমে দায়-দায়িত্ব নিরূপণ করা।

ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগ দ্বারা উপর্যুক্ত কার্যক্রম সম্পন্নকরতঃ সার্বিক কার্যক্রমে দায়-দায়িত্ব নিরূপণপূর্বক অনুমোদনের নিমিত্ত পরিচালনা পর্ষদে উপস্থাপন করতে হবে।

খ) Non-Banking Asset নিজস্ব ব্যাংকিং কার্যক্রমে ব্যবহার করার ক্ষেত্রেঃ Non-Banking Asset-এর কোন অংশ (সম্পদ) নিজস্ব ব্যাংকিং কার্যক্রমে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে ব্যবহারের কারণ ও যৌক্তিকতা উল্লেখপূর্বক পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনক্রমে উক্ত সম্পদ Non-Banking Asset হতে ব্যাংকের স্থায়ী সম্পদ হিসেবে স্থানান্তর করতে হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট Non-Banking Asset-এর বিপরীতে কোন Interest Suspense against NBA বা Provision against NBA থাকলে তা সরাসরি Retained Earnings হিসাবে স্থানান্তর করতে হবে এবং কোনভাবেই উল্লিখিত অর্থ চলতি বছরের আয়খাতে স্থানান্তর করা যাবে না। এক্ষেত্রে সম্পদের বাজার মূল্য নিরূপণপূর্বক সম্পদের বহি মূল্য অপেক্ষা বাজার মূল্য কম হলে ৫(ক)(আ)-এ উল্লিখিত কার্যক্রম সম্পাদন করতে হবে এবং সম্পদের বহি মূল্য অপেক্ষা বাজার মূল্য বেশি হলে অতিরিক্ত মূল্য Revaluation Reserve for Asset-হিসাবে স্থানান্তর করতে হবে।

৬) ডিসক্লোজারঃ
Non-Banking Asset ব্যাংকের হিসাবে অন্তর্ভুক্তির পর ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদনে (Financial Statements) সম্পদের ধারণকাল উল্লেখপূর্বক খাত-ভিত্তিক পৃথকভাবে দেখাতে হবে। এছাড়াও এরূপ সম্পদের মধ্যে আয় উপার্জনক্ষম এবং আয় উপার্জনে অক্ষম সম্পদকে পৃথকভাবে দেখাতে হবে।

৭) হিসাবায়নঃ
Non-Banking Asset হিসাবে অন্তর্ভুক্তিকালে সার্কুলারে বর্ণিত সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর এতদ্সংক্রান্ত হিসাবায়নের ক্ষেত্রে সংযোজনী-ক-এ উল্লেখিত উদাহরণসমূহ অনুসরণীয় হবে।

৮) রিপোর্টিংঃ
ব্যাংক কর্তৃক ষান্মাসিক ভিত্তিতে Non-Banking Asset সংক্রান্ত তথ্যাদি বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশন কর্তৃক নির্ধারিত ফরম্যাটে উক্ত বিভাগ বরাবরে দাখিল করতে হবে।

৯) ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করা হলো। সার্কুলার ও সংযোজনী দেখতে ক্লিক করুন- এখানে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button