অর্থনীতি

হালাল সার্টিফিকেশন অর্থনীতির নতুন সম্ভাবনা

ড. মোহাম্মদ কবির হাসান, মুহাম্মদ মোস্তফা হোসাইনঃ আন্তর্জাতিক অর্থনীতি, বাজার, শিল্প কিংবা বিনোদন সবকিছুর মান ব্যবস্থাপনা ও গ্রাহক সন্তুষ্টির জন্য হালাল সার্টিফিকেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড, যা এরই মধ্যে হালাল শিল্প হিসেবে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। ইসলামী শরিয়ার আলোকে অনুমোদিত সেবা ও পণ্যকেই হালাল বলে গণ্য করা হয়। ভোক্তার চাহিদা ও শরিয়তের শর্ত অনুযায়ী হালাল পণ্য বা সেবা উৎপাদন ও সরবরাহ করার ক্ষেত্রকে হালাল শিল্প এবং নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সেসব পণ্য বা সেবার শরিয়তের মানদণ্ড মূল্যায়ন-পরবর্তী প্রত্যয়নকে হালাল সার্টিফিকেশন বলা হয়। এ শিল্প ঘিরে পুরো ব্যবস্থাপনাকে হালাল অর্থনীতি বিবেচনা করা হয়। সমসাময়িক আন্তর্জাতিক বাণিজ্য জগতে দ্রুত বর্ধনশীল শিল্প হিসেবে হালাল শিল্প মুসলিমদের পাশাপাশি অমুসলিমদের মাঝেও ব্যাপক চাহিদা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। এর ফলে শুধু ব্রিটেনেই দেখা যায় গড়ে প্রতি বছর ২০ শতাংশ হারে হালাল খাবারের চাহিদা বাড়ছে।

অন্যদিকে করোনার বিরূপ প্রকোপে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য স্থবিরতা বাড়লেও হালাল শিল্পের প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ৩ শতাংশ। সে আলোকে ২০২৪ সাল নাগাদ বিশ্ববাজারে হালাল শিল্পের প্রাক্কলিত প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশা প্রায় ২ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, যদিও অন্য এক গবেষণায় দেখা যায় চলতি সময়ে ফাইন্যান্স বাদ দিয়ে শুধু পণ্য ও সেবা খাতেই বার্ষিক প্রায় ২ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার হালাল শিল্প গড়ে উঠেছে। এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হালাল সার্টিফিকেশনের সচেতনতাকে পুঁজি করে বিভিন্ন বহুজাতিক অমুসলিম মালিকানাধীন যেমন নেসলে, আব্বুট, কারগিল, বিআরএফ, ম্যাকডোনাল্ড, পিত্জাহাট কিংবা কেএফসির মতো কোম্পানি নিজেদের নতুন করে হালালের মোড়কে প্রস্তুত করছে এবং এরই মধ্যে তাদের উৎপাদিত পণ্যের হালাল সার্টিফিকেশনে অনেক দূর অগ্রসরও হয়ে গিয়েছে তারা। হালাল সার্টিফিকেশন মূলত একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিভাষা, যেটি একাধারে অর্থনীতি, ফাইন্যান্স, খাদ্য, পানীয়, ফ্যাশন, কসমেটিকস, ব্যক্তিগত রক্ষণাবেক্ষণ, ফার্মাসিউটিক্যালস, লজিস্টিক, মার্কেটিং, মিডিয়া, মোড়কজাত, ব্র্যান্ডিং, বিনোদন ও পর্যটনসহ অর্থনীতির প্রায় সব শাখাকেই অন্তর্ভুক্ত করে।

শুধু পরকালীন জবাবদিহিতা নয় বরং পার্থিব জীবনে পণ্য ও সেবার গুণগত মানের প্রতি গুরুত্ব, স্বাস্থ্য সচেতনতা ও মানসিক প্রশান্তি অর্জনের আকাঙ্ক্ষাও বিশ্বব্যাপী গ্রাহকদের কাছে হালাল সার্টিফিকেশনের চাহিদা ত্বরান্বিত করে চলছে। হালাল শিল্প মানে শুধু হালাল পণ্য বা সেবা উৎপাদন নয়, বরং এটি একটি ব্যাপকভিত্তিক বাণিজ্যিক ও ধর্মীয় উপলব্ধি প্রতিষ্ঠারও মাধ্যম। ই-কমার্স, মুক্তবাজার অর্থনীতি ও বিশ্বায়নের অবাধ অন্তর্ভুক্তির কারণে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর পক্ষে প্রান্তিক পর্যায়ের গ্রাহকদের ধর্মচর্চা ও বিশ্বাসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পণ্য হাতে পৌঁছানো অনেকটাই সহজ হয়ে গিয়েছে। শুধু বর্তমানে মুসলিম জনসংখ্যার পরিমাণই প্রায় ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন এবং বার্ষিক প্রায় ৫ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে এ অর্থনীতির আকার প্রায় ২ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। সে আলোকে ২০২৪ সাল নাগাদ সম্ভাব্য মুসলিম জনসংখ্যার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ২ দশমিক ২ বিলিয়ন, যার গড় প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ। যদিও অন্য একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এরই মধ্যে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২৮ দশমিক ২ শতাংশ মুসলিমরা প্রতিনিধিত্ব করে যার মোট সংখ্যা প্রায় ২ দশমিক ১৮ বিলিয়ন।

হালাল পণ্য বা সেবার দ্রুত বর্ধনশীলতার পেছনে মুসলিম দেশগুলোতে সম্ভাব্য জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জিডিপি প্রবৃদ্ধি, বিশেষ করে ওআইসি অধিভুক্ত দেশগুলোর অর্থনৈতিক অগ্রগতি, ধর্মীয় সচেতনতা বৃদ্ধি, ডিজিটাল প্রযুক্তিনির্ভরতা ও নৈতিক পণ্যের ব্যাপক জনপ্রিয়তা মূলত হালাল অর্থনীতির সম্ভাবনা ত্বরান্বিত করার পেছনে ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ মুসলিমপ্রধান দেশ হিসেবে অভ্যন্তরীণভাবে হালাল পণ্য ও সেবা উৎপাদন এবং সরবরাহের পাশাপাশি বহির্বিশ্বে রফতানিরও ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। যেমন পর্যটন খাত পৃথিবীর অনেক দেশেরই অর্থনৈতিক মূল ধারার একক উৎস। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক, চিকিৎসা ও শিক্ষাসহ পর্যটনের বহুমুখী সম্ভাবনা থাকলেও সেগুলোকে হালাল প্রত্যয়নের আওতায় এনে আরো ব্যাপকভাবে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণে রাষ্ট্রীয় কোনো উদ্যোগ বা বাধ্যবাধকতা পরিলক্ষিত হয় না। তাই হালাল বাণিজ্যে বিশ্বব্যাপী পরিসংখ্যানে শীর্ষ ১৫ দেশের মধ্যে কয়েকটি অমুসলিম এবং ওআইসি সদস্য নয় এমন দেশ থাকলেও মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হওয়ার পরও সেখানে বাংলাদেশের কোনো অবস্থান নেই।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।
রিলেটেড লেখা

অন্যদিকে শুধু হালাল ফ্যাশনে শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ সপ্তমে অবস্থান করলেও হালাল পর্যটন, হালাল খাদ্য, ইসলামিক ফাইন্যান্স, হালাল ফার্মা ও প্রসাধন সামগ্রীতে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষ দশে নেই। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকলেও প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও সুপ্রতিষ্ঠিত প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর অভাবে হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে বিশ্বব্যাপী সম্ভাবনাময়ী হালাল বাণিজ্যের এ সুবিশাল বাজার। বৈশ্বিক পর্যটনের পুরোটাই হালালনির্ভর এটি জোর দিয়ে বলা না গেলেও বিশ্বব্যাপী হালাল পর্যটনের চাহিদার ব্যাপকতাও অস্বীকারের কোনো সুযোগ নেই। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের পর্যটন আকর্ষণের জন্য হালাল পর্যটনের ধারণা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য এক অনবদ্য প্রাসঙ্গিকতা হয়ে উঠতে পারে। নাগালের মধ্যে হালাল খাবার কিংবা মুসলিমপ্রধান দেশ হলেই হালাল পর্যটনের জন্য উপযু্ক্ত হয় না বরং ভ্রমণপিপাসুদের সার্বিক নিরাপত্তা, পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে সবার জন্য ধর্মীয় রীতিনীতি এবং মূল্যবোধ প্রয়োগ ও পালনের সুবিধা, মুসলিমবান্ধব অবকাঠামো সুবিধা ও ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা ও পেশাদারিত্বসহ হালাল প্রত্যয়নপত্র প্রদানকারী নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রণীত বিভিন্ন মানদণ্ড পরিপালনের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণের আলোকে হালাল সার্টিফিকেশনের অভ্যন্তরীণ ও বহির্জাগতিক চর্চা গড়ে ওঠে। গড়ে ১১ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে ২০২২ সাল নাগাদ এ শিল্পের হালাল খাতকেন্দ্রিক গ্রাহক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

তাই হালাল সার্টিফিকেশনের ভিত্তিতে পর্যটন শিল্প গড়ে তুলতে পারলে বাংলাদেশের জন্য ব্যাপক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। পর্যটনের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ খাত হিসেবে বাংলাদেশে চিকিৎসা খাত ব্যাপক সম্ভাবনার কথা বলে। অন্যান্য দেশের তুলনায় সাশ্রয়ী চিকিৎসাসেবা ও বেসরকারি হাসপাতালের পর্যাপ্ততার কারণে ধীরে ধীরে এ শিল্পকে অর্থনীতির অনেক বড় অংশীদারিত্বের জায়গায় নিয়ে আসা যায়। এক্ষেত্রে সেবা, ব্যবস্থাপনা এবং এ খাতের কর্মযজ্ঞে জড়িত প্রতিষ্ঠান ও জনবল কাঠামোকে হালাল সার্টিফিকেশনের অধীনে আনা গেলে অভ্যন্তরীণভাবে গ্রহণযোগ্যতার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার ব্যাপক চাহিদা তৈরি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। রফতানিমুখী শিল্প হিসেবে ফার্মাসিউটিক্যাল এবং হেলথকেয়ার, সব ধরনের রফতানিনির্ভর খাদ্যসামগ্রী ও তৈরি পোশাক শিল্পকে হালাল সার্টিফিকেশনের অধীনে আনা গেলে অর্থনীতির পালে নতুন হাওয়া লাগতে বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না।

২০২২ সালে বৈশ্বিক হালাল খাদ্যের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ দশমিক ৯৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০৫০ সাল নাগাদ এর সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ৭০ শতাংশ, ২০২১ সালের শেষ নাগাদ ফার্মাসিউটিক্যাল ও হেলথকেয়ারে মোট বৈশ্বিক প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল প্রায় ১ হাজার ১৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, শুধু হালাল বায়োলজিকস ও নিউট্রিশন খাতেই ১৩২ বিলিয়ন মুসলিম জনসংখ্যার সম্ভাব্য অন্তর্ভুক্তির তথ্য পাওয়া যায়। অন্যদিকে হালাল প্রসাধনী ও ব্যক্তিগত রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ২০২২ সাল নাগাদ প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অন্যদিকে ২০২২ সাল নাগাদ তৈরি পোশাক শিল্পের হালাল অংশের প্রায় ৩৭৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে। তৈরি পোশাক যেহেতু বাংলাদেশের চলমান অর্থনীতি ও জিডিপির ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে অন্যতম নেতৃত্বের জায়গায় আসীন, সেক্ষেত্রে এ খাতকে হালাল সার্টিফিকেশনের মাধ্যমে পরিমার্জন করতে পারলে সন্দেহাতীতভাবেই অর্থনীতির নতুন বিস্তৃতির অপ্রতিরোধ্য অবস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সংযুক্ত হওয়ার পর শুল্কমুক্ত বাণিজ্যিক সুবিধা প্রত্যাহার হয়ে গেলে আন্তর্জাতিক বাজার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার ক্ষেত্রে একটি বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে।

হালাল সার্টিফিকেশনের ক্ষেত্রে সরকারিভাবে অভ্যন্তরীণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কিছু বিচ্ছিন্ন কার্যক্রম থাকলেও প্রয়োজনের তুলনায় এটি একেবারেই অপ্রতুল, ২০১১ সালে হালাল সার্টিফিকেশন কার্যক্রম শুরু হলেও প্রচারণার অভাবে এখান থেকে এখন পর্যন্ত খুবই সীমিতসংখ্যক প্রতিষ্ঠান হালাল সার্টিফিকেট গ্রহণ করেছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়। অন্যদিকে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি পৃথক কর্তৃপক্ষ তৈরি হওয়ার প্রস্তাবনা থাকলেও সেটি আলোর মুখ দেখেনি এখনো। বিএসটিআই হালাল সার্টিফিকেশনের ক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপ নিলেও নির্দিষ্ট প্রযুক্তি ও দক্ষতাগত দুর্বলতার কারণে এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মাঝে সংশয় রয়েছে। তবে সরকার চাইলে নির্দিষ্ট কাঠামো ও নীতিমালা প্রণয়ন করে হালাল সার্টিফিকেশন ইস্যুর জন্য বেসরকারি উদ্যোগকেও স্বাগত জানাতে পারে, তাতে করে সরকারের কাজ সহজ হওয়ার পাশাপাশি গ্রাহক গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

এছাড়া আন্তর্জাতিক ও দেশীয় শরিয়া এবং সংশ্লিষ্ট শিল্প বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে আলাদা করে সরকারি উদ্যোগে পৃথক গবেষণা ও হালাল সার্টিফিকেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। জিটুজি (সরকারের সঙ্গে সরকারের) ভিত্তিতেও হালাল সার্টিফিকেশনের বিষয়টিকে অন্যতম গ্রহণযোগ্যতায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব। এরই মধ্যে মালয়েশিয়া জিটুজি-ভিত্তিক বাংলাদেশের সঙ্গে এক্ষেত্রে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছে। যেহেতু বৈশ্বিক ইসলামী অর্থনৈতিক সূচকে ২০২০-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী হালাল পণ্যের বাজারে মালয়েশিয়ার অবস্থান শীর্ষে, এক্ষেত্রে সরকার তাদের কাছ থেকে প্রযুক্তি ও দক্ষতাগত সব ধরনের সুবিধাই গ্রহণ করতে পারে। অন্যদিকে আরব-আমিরাত ও তুরস্কসহ হালাল শিল্প প্রসারে যেসব দেশ এগিয়ে, সেসব দেশের সঙ্গেও বাংলাদেশ সরকার একযোগে কাজ করতে পারে। এছাড়া যেসব আন্তর্জাতিক সংস্থা আলাদাভাবে হালাল শিল্প নিয়ে কাজ করছে, সরকার চাইলে তাদের সঙ্গেও সহযোগিতা বিনিময় করে দেশীয় হালাল সার্টিফিকেশনের গ্রহণযোগ্যতাকে বৈশ্বিক পর্যায়ে উন্নীত করতে পারে। অন্যদিকে হালাল সার্টিফিকেশনের বিষয়টিকে ব্যাপকভাবে পরিচিত করার জন্য অভ্যন্তরীণভাবে হালাল পণ্য ও সেবার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্বকে ব্যাপক প্রচার, প্রসার ও পণ্য ক্রয় বা সেবা গ্রহণের সময় হালালের সচেতনতা বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পারলে সাধারণের মাঝে হালাল প্রত্যয়নকৃত পণ্য বা সেবার চাহিদা দিন দিন বাড়বে বলে আশা করা যায়।

আরও দেখুন:
ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ জরুরি

লেখকঃ ড. মোহাম্মদ কবির হাসান: অর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপক, ইউনিভার্সিটি অব নিউ অরলিন্স, যুক্তরাস্ট্র ও মুহাম্মদ মোস্তফা হোসাইন: পিএইচডি গবেষক, ইউনিভার্সিটি অব মালয়, মালয়েশিয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button