অর্থনীতি

সৃজনশীল অর্থনীতি ও বাংলাদেশ

দীপক আঢ্যঃ এটি এখন বহুল আলোচিত বিষয় যে, প্রচলিত অর্থনীতিকে ডিজিটাল অর্থনীতিতে রূপান্তর করতে হবে। ডিজিটাল বিপ্লব, শিল্প বিপ্লব ৪.০, সোসাইটি ৫.০, সৃজনশীল অর্থনীতি ইত্যাদি যে নামেই ডাকিনা কেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম যাই বলুক, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দুনিয়াকে ঘোষণা দিয়ে সবার আগে জানিয়ে দিয়েছেন সর্বাগ্রে আমাদের পথচলা শুরু হয়েছে ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর। এবার আমরা তার এক দশক পার করে দ্বিতীয় দশকে পা ফেলেছি এবং আমাদের নেত্রী আরও অন্তত পাঁচ বছর এই বিপ্লবে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য জনগণের ম্যান্ডেট পেয়েছেন।

২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার পর আমরা আমাদের সভ্যতাকেই ডিজিটাল করার চেষ্টা করছি। বিশ্বজুড়ে এখন এই বিষয়টি সর্বোচ্চ আলোচ্য বিষয় হয়েছে। সম্প্রতি বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামেও ডিজিটাল অর্থনীতি আলোচিত হয়েছে। ওরা এখন অনুভব করছে যে, দুনিয়া চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের পথে হাঁটছে। ডিজিটাল প্রযুক্তি সেই বিপ্লবের হাতিয়ার এবং সারা দুনিয়াতেই ডিজিটাল অর্থনীতি এখন চূড়ান্ত রূপ নিচ্ছে।

আমাদের ডিজিটাল অর্থনীতি বলতে কী বোঝায় এটি আগে পরিষ্কার করে বুঝতে হবে। এই বিষয়ে অনেকেরই ভুল ধারণা আছে। ডিজিটাল অর্থনীতি যদি বোঝায় বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাইজড্ হয়ে গেছে; ব্যাংকগুলো ডিজিটাইজড সেবা দিচ্ছে; মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রামে-গঞ্জে সাধারণ মানুষের কাছে টাকা পৌঁছে যাচ্ছে; এটিএম ব্যবহার করে টাকা তোলা যাচ্ছে; এ ধরনের কার্যক্রম, তাহলে বলার কিছু নেই। এগুলো হচ্ছে ডিজিটাল অর্থনীতির এক ধরনের প্রদর্শন প্রভাব। ডিজিটাল অর্থনীতি বুঝতে হলে আমাদের অর্থনীতির রূপান্তর সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে।

এক সময় আমাদের এই পৃথিবীর সব দেশই ছিল কৃষিভিত্তিক। তারপর কৃষিভিত্তিক সমাজ ভেঙে হল শিল্পভিত্তিক সমাজ। শিল্পভিত্তিক সমাজ থেকে সেবা ও তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক অর্থনীতির বিকাশ হল। সমাজ বিকাশের ধারায় উৎপাদনশীলতা হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। উৎপাদনশীলতার কারণে সমাজ ব্যবস্থায়ও পরিবর্তন এসেছে। প্রথমে যন্ত্র, তার পরে বিদ্যুৎ এবং তারও পরে ইন্টারনেট উৎপাদন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করেছে। এরপর উৎপাদন ব্যবস্থায় আসছে ডিজিটাল প্রযুক্তি। ডিজিটাল অর্থনীতি হচ্ছে মেধাভিত্তিক উৎপাদনশীল একটি অর্থনীতি যার ভিত্তি হচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তি। কৃষি, শিল্প-বাণিজ্য, সেবা খাতকে বাদ দিয়ে কাগজে-কলমে তথ্য প্রযুক্তিভিত্তিক সমাজের দিকে এগিয়ে যাওয়ার নাম ডিজিটাল অর্থনীতি নয়। ডিজিটাল অর্থনীতি হচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে গড়ে তোলা মেধাভিত্তিক উৎপাদনশীল অর্থনীতি। কেউ কেউ একে সৃজনশীল অর্থনীতিও বলেন।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

ডিজিটাল অর্থনীতি গড়ে তুলতে হলে আমাদের প্রথমে মেধাভিত্তিক মানবসম্পদ পেতে হবে যারা প্রয়োজনীয় ডিজিটাল টুলস বা প্রযুক্তি বা উপকরণ ব্যবহার করে বেশি মূল্য সংযোজন করতে পারে। একটি গাড়ি তৈরি করতে প্রয়োজন হয় লোহার। লোহার দাম সারা বিশ্বে প্রায় একই। এই লোহা দিয়ে টয়োটা, মার্সিডিজ, লেক্সাস ব্র্যান্ডের গাড়ি তৈরির সময় প্রযুক্তিগত জ্ঞান লোহার মূল্য সংযোজন বহু গুণ বৃদ্ধি করে। এটাই হচ্ছে মেধাবী মানবসম্পদের কাজ। এ সব গাড়িতে ব্যবহৃত লোহার মূল্যের সঙ্গে যদি মেধার মূল্য সংযোজন তুলনা করেন তাহলে মেধার মূল্য অনুভব করতে পারবেন। যে দেশে মেধাবী মানবসম্পদ রয়েছে তারাই অর্থনীতিকে এখন ডিজিটাল করতে সক্ষম হচ্ছে। আমাদের অর্থনীতিতে এক সময় কৃষির অবদান ছিল ৮০ শতাংশ। অথচ তখন ছিল খাদ্য ঘাটতির দেশ।

এখন আমাদের অর্থনীতিতে কৃষির অবদান নেমে হয়েছে মাত্র ১৯ শতাংশে। তারপরও বাংলাদেশ এখন খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত হয়েছে। এই যে মেধা ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে কৃষি উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে, এটাই হচ্ছে ডিজিটাল অর্থনীতির প্রাথমিক রূপ। এরপর আমরা কৃষিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স, আইওটি ইত্যাদি প্রযুক্তি ব্যবহার করব এবং কৃষি অর্থনীতিকেই একটি নতুন মাত্রায় উন্নীত করব। আবার উৎপাদিত কৃষিপণ্য সরাসরি ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য মেধা ও প্রযুক্তির ব্যবহারই হচ্ছে ডিজিটাল অর্থনীতি। উৎপাদনশীলতাকে বাদ দিয়ে ডিজিটাল অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করা যায় না।

আরও দেখুন:
ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ জরুরি

আধুনিক বিশ্বে মেধাভিত্তিক সম্পদ যাদের বেশি রয়েছে তারা কিন্তু কৃষি, শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্য, সেবা খাতসহ সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে রয়েছে। যার কারণে অনেক শিল্পোন্নত দেশের কৃষি উৎপাদন কৃষিভিত্তিক দেশের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে। আমেরিকার অর্থনীতিতে ৩৭ ভাগ অবদান রাখছে মেধাভিত্তিক সম্পদ। চীন, ভারত এখন মেধাভিত্তিক সম্পদ গড়ে তোলার জন্য জাতীয় পর্যায়ে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বর্তমান বিশ্বের অর্থনীতিতে বস্তুগত সম্পদের চেয়ে মেধাসম্পদ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমাদের অর্থনীতির প্রতিটি খাতের জন্য মেধাভিত্তিক মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই ডিজিটাল অর্থনীতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। তবে এটা ঠিক আমাদের অর্থনীতি সময়ের প্রয়োজনে ক্রমেই ডিজিটাইজেশনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এখন প্রয়োজন হচ্ছে, যে লক্ষ্যকে সামনে রেখে আইসিটি নীতিমালা গ্রহণ করা হয়েছে তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা।

আমাদের দেশের মানুষের একটি সুবিধা হচ্ছে, তারা খুব দ্রুত আপগ্রেড টেকনোলজি নিজেদের আয়ত্তে নিতে পারে। দেশে বর্তমানে ১৫.৭০ কোটি মোবাইল সংযোগ আছে এবং অন্তত ১০ কোটি লোক মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। এখন প্রায় ১০ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে। এখন ৫ মিনিট যদি ইন্টারনেট বন্ধ থাকে তবে আমাদের অর্থনীতির ওপর যে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে তা চিন্তাও করা যায় না। অথচ আজ থেকে ১০ বছর আগে ইন্টারনেটের কোনো প্রভাবই অর্থনীতিতে ছিল না। ফেসবুক ব্যবহার করে হাজার হাজার তরুণ নিজের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। অনুমান করা হয় যে, ১০ লাখ ফেসবুক ব্যবহারকারী এতে ব্যবসা করে। বিপণন ও সামাজিক যোগাযোগের কথা না হয় উল্লেখই করা হল না। ফেসবুক থেকে সরাসরি জিনিসপত্র বেচা-কেনা হচ্ছে।

এখন আর ভোক্তাকে বাজারে গিয়ে পছন্দের জিনিস কিনতে হচ্ছে না। ইন্টারনেটে জিনিস পছন্দ করে অর্ডার দিলেই তা বাসায় পৌঁছে যাচ্ছে। মূল্য পরিশোধ করে ভোক্তা তা গ্রহণ করতেও পারছে। মানুষ যতটুকু সুযোগ-সুবিধা রাষ্ট্রীয়ভাবে পেয়েছে তা সুন্দরভাবে কাজে লাগাতে পেরেছে। যেটা বর্তমানে ডিজিটাল অর্থনীতি হিসেবে দৃশ্যমান হচ্ছে। মানুষ কিন্তু বসে নেই। তার নিজের প্রয়োজনে এগিয়ে যাচ্ছে। যার সুফলটা পাচ্ছে রাষ্ট্র এবং সরকার। এখানে আরও অনেক বেশি কাজ করার সুযোগ আছে। পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক এবং যুগোপযোগী করার দরকার রয়েছে। তাহলে মেধাভিত্তিক একটি মানব সমাজ আমরা গড়ে তুলতে পারব। আমাদের মানবসম্পদের ৯০ শতাংশই এখনও কায়িক শ্রমের ওপর নির্ভরশীল। তাদের যদি মেধাভিত্তিক সম্পদে পরিণত করা যায়, তাহলে সত্যিকার ডিজিটাল অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।

প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। শিক্ষার মূল লক্ষ্য হবে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো। থাইল্যান্ডের জাতীয় নীতিমালা হচ্ছে তারা যাই উৎপাদন করুক না কেন এর মাধ্যমে ১৫ শতাংশ সৃজনশীলতার মাধ্যমে মূল্য সংযোজন বাড়াতে হবে। এই মূল্য সংযোজন বাড়াতে হলে মেধাবী মানবসম্পদ তৈরি করতে হবে। সৃজনশীলতা বাড়ানো এবং মূল্য সংযোজন বৃদ্ধির উপযোগী মানবসম্পদ আমাদের গড়ে তুলতে হবে। দেশে ৪০টি সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো হয়। এখান থেকে যারা পাস করে বের হচ্ছে তারা যে খুব ভালো করতে পারছে এমনটাও নয়। কম্পিউটার সায়েন্সে পড়া শতকরা ৫ জন ছাত্র-ছাত্রীকে প্রোগ্রামার হিসেবে পাওয়া যায় না। আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষার সঙ্গে সৃজনশীলতা বাড়ানোর কোনো সংযোগ নেই। যার কারণে উচ্চশিক্ষার হার বাড়লেও মেধাবী মানবসম্পদের পরিমাণ বাড়ছে না। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার গুণগতমান যেমন বাড়াতে হবে তেমনি শিক্ষাব্যবস্থাকেও যুগোপযোগী করতে হবে।

বাংলাদেশে ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনে যাওয়ার পথে বড় বাধা ও কঠিন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে প্রচলিত ও বিদ্যমান আমলাতন্ত্র। এর ডিজিটাল রূপান্তর প্রয়োজন। সাধারণ মানুষ ডিজিটাইজেশনের পক্ষে। আমরা দেখেছি সিলেটে রাজন হত্যাকাণ্ড ইউটিউব এবং ফেসবুকে প্রচারের পর সরকার খুনিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হয়েছে। সাধারণ মানুষ খুনিকে চিহ্নিত করে সৌদি আরবে ধরতে সক্ষম হয়েছে। ডিজিটাইজেশনের কারণে খুনির অপরাধ সম্পর্কে কোনো সাক্ষি ছাড়াই জানা সম্ভব হয়েছে। এতে বিচারও সুষ্ঠু হয়েছে। এটি হচ্ছে ডিজিটাইজেশনের দৃশ্যমান ফলাফল। এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, ডিজিটাইজেশন হচ্ছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য।

যার কারণে অনেকে নিজেদের কৃতকর্ম আড়াল করার স্বার্থে ডিজিটাইজেশনের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করছে। তরুণ সমাজের মাঝে আমরা ডিজিটাইজেশনের পক্ষে যে জোয়ার দেখছি তা কোনো বাধা দিয়ে আটকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। জনগণ যেভাবে প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সঙ্গে চলতে চাচ্ছে তার সঙ্গে সরকারের প্রশাসন যন্ত্রকেও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। তবে কঠিন বাস্তবতা হচ্ছে দুনিয়ার সব কিছু বদলানো যায় শুধু ব্রিটিশ ধাঁচের আমলাতন্ত্র পরিবর্তন চ্যালেঞ্জিং। ২০১৮ সালে যে আইসিটি পলিসি আমরা প্রণয়ন করেছি সেখানে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের সময়কাল সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, সরকারের টাইম লাইনের আগেই মানুষ সব বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যাচ্ছে।

ব্রিটিশরা আমাদের অফিসের কেরানি, কল-কারখানার শ্রমিক তৈরি করার যে শিক্ষা পদ্ধতি দিয়ে গেছে এটা আমাদের অর্থনীতির জন্য এখন বিশাল একটা বোঝা। এই বোঝা কমাতে হলে আমাদের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার আমূল রূপান্তর করে উৎপাদনশীল, সৃজনশীল, ডিজিটাল ও নতুন যুগের ডিজিটাল দক্ষতাসম্পন্ন বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা চালু করতে হবে। আমাদের অর্থনীতি যেভাবে রূপান্তর হচ্ছে এর সঙ্গে চাহিদা অনুযায়ী মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হবে। না পারলে অর্থনীতি গতিশীল ও শক্তিশালী হয়ে উঠবে না। আমাদের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা হচ্ছে ক্ষতস্থানে মলম লাগানোর উপযোগী। শিক্ষাব্যবস্থার আমূল সংস্কার না করা হলে ডিজিটাল অর্থনীতিতে এগিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে যাবে।

সরকারের প্রশাসন যদি ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনে চলে যায় তাহলে সেখানে অনেক মেধাবী লোকবলের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। যাদের সৃজনশীলতা আছে তারা দেশে প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ না পাওয়ার কারণে বর্তমানে বিদেশ চলে যাচ্ছে। তারা সেখান থেকে আয় করে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে। দেশে বিশাল সফটওয়্যার মার্কেট রয়েছে। আমরা যদি দেশীয় সফটওয়্যার ব্যবহার করি তাহলে যারা আইটি প্রফেশনাল হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে এসেছে তারা সুন্দরভাবে কাজ করতে পারবে। দেশে যদি কোর ব্যাংকিং সলিউশন তৈরি হয় তাহলে বেশি দামে বিদেশি সফটওয়্যার ব্যবহার করার প্রয়োজন আছে কি?

আমাদের জাতীয় নীতিমালা হওয়া উচিত, আমরা যা উৎপাদন করি তা যেন আমদানি না করি। ভারত এই নীতিমালা প্রয়োগ করে সব ক্ষেত্রে অগ্রসর হতে পেরেছে। যে ব্যাংকগুলো বিদেশি সফটওয়্যার ব্যবহার করছে তার দেশি সফটওয়্যার ব্যবহারে উদ্যোগ নিতে পারে এবং কোর ব্যাংকিং সলিউশন তৈরিতে সহায়তা করতে হবে। আমরা দেশে যদি সফটওয়্যার তৈরিতে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারি তাহলে তা রফতানিতেও ব্যবহার করতে পারব। ডিজিটাইজেশন এমন একটি প্রক্রিয়া যা দেশের সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি সব কিছুকেই প্রভাবিত করবে। ডিজিটাল অর্থনীতি অগ্রসর করার জন্য দেশে মানুষের যে আগ্রহ এবং চাপ রয়েছে আমি মনে করি এর মাধ্যমে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে বাধ্য। আমরা সামন্ততান্ত্রিক ও পুঁজিবাদি সমাজের মধ্যে সাধারণ মানুষের ক্ষমতায়ন যদি চাই তাহলে সেটা একমাত্র তথ্য-প্রযুক্তি দিয়েই সম্ভব হবে।

তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি হচ্ছে এখন সামাজিক যোগাযোগ এবং অর্থনৈতিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা ছিল সাম্যবাদী সমাজ গড়ে তোলা সেটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে। ১৯ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতির দিকে যদি তাকাই তবে সব সূচকে এর অগ্রগতির একটি বড় কারণ হচ্ছে যে, এমনকি প্রচলিত প্রথম শিল্পযুগের শিক্ষায় শিক্ষিত তরুণ মানবসম্পদকেও আমরা ডিজিটাল যুগের কাজে ব্যবহার করতে পারছি। এটি অবশ্যই আমাদের জন্য একটি বড় সফলতা। তবে শিশুশ্রেণী থেকে যদি ডিজিটাল দক্ষতা গড়ে তোলার কাজটা আমরা শেখাতে পারি তবে বিশ্বের সেরা দেশে পরিণত হতে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে না। ডিজিটাল অর্থনীতিতে বাংলাদেশের সম্ভাবনাটা হচ্ছে আমাদের মানবসম্পদ। আমাদের জনসংখ্যার শতকরা ৬৫ ভাগের বয়স ৩০ বছরের নিচে। আমরা কেবল যদি এই মানবগোষ্ঠীকে ডিজিটাল যুগের মানবসম্পদে পরিণত করতে পারি তবে সেটিই হবে অর্থনীতির ডিজিটাল রূপান্তরের সবচেয়ে বড় সম্ভাবনা।

লেখকঃ দীপক আঢ্য, জনতা ব্যাংক লিমিটেড।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button