ব্যাংকিং ডিপ্লোমার আধুনিকায়ণ জরুরী
কে এম মাসুম বিল্লাহঃ যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ব্যাংকিং ব্যবস্থা হয়েছে ডিজিটালাইজড। ম্যানুয়াল ব্যাংকিং বিদায় নিয়েছে, অনলাইন ব্যাংকিং সবার জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থা সহজ করে দিয়েছে। বর্তমান যুগে দেশের সকল সরকারি বেসরকারি ব্যাংকে লেগেছে আধুনিকায়ণের ছোয়া, কিন্তু ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরিক্ষা থেকে গেছে সেই পুরাতন ধারায়! যার যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিকায়নণ অত্যন্ত জরুরী হয়ে পরেছে। বিশেষ করে তাত্ত্বীক পরিক্ষাসমূহ কতটা প্রয়োজনীয় সে বিষয়ে নিয়ে হয়তো ভাবার সময় হয়েছে নীতি নির্ধারকদের। গত কয়েক বছরে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায়ও বেশ পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে এসএসসি কিংবা এইচএসসি পরিক্ষাগুলো হচ্ছে সৃজনশীল প্রশ্নপত্রে। অর্থ্যাৎ সেখানে সরাসরি বই পড়ে উত্তর করার থেকে নিজের দক্ষতা দিয়ে লেখাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। অথচ ব্যাংকাররা সবাই উচ্চ শিক্ষার লেভেল পার করে চাকরীতে আসলেও তাদের আবার তাত্ত্বীক বিষয়ে ১২ টি সাবজেক্টের লিখিত পরিক্ষা দিতে হচ্ছে!
ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরিক্ষা নিয়ে বেশ হতাশায় কাজ করে ব্যাংকারদের মধ্যে। বিশেষ করে বেশিরভাগ রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংকেই ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরিক্ষায় পাশের উপরে অনেকাংশেই প্রমোশন নির্ভর করে। আবার ব্যাংকিং ডিপ্লোমার বেশিরভাগ সাবজেক্টই বানিজ্য বিভাগের হওয়াতে বেশ সমস্যায় পরতে হয় বিজ্ঞান ও মানবিক বিভাগ থেকে স্নাতক/স্নাতকোত্তর শেষ করা ব্যাংক কর্মকর্তাদের জন্য। এছাড়াও খুব ভালো লেখার পরও বার বার ফেল করানোর মত অভিযোগও আছে ব্যাংকারদের। বিশেষ করে বানিজ্য বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেনীতে অনার্স/মাস্টার্স শেষ করা অনেক ব্যাংকারকেই ডিপ্লোমা পরিক্ষাতে সংশ্লিষ্ট সাবজেক্ট এ পাশ করতে কয়েকবার পরিক্ষা দিতে হচ্ছে! আর একারনেই হতাশ হতে হচ্ছে ব্যাংক কর্মকর্তাদের। বিশেষ করে ডিপ্লোমা পরিক্ষার দুই পার্টে পাশ করা না থাকলে প্রমোশন হচ্ছেনা অনেক দক্ষ ব্যাংকারদের! অথচ সবাই তাদের উচ্চ শিক্ষা শেষ করে মেধার স্বাক্ষর রেখে প্রতিযোগিতামূলক পরিক্ষার মধ্য দিয়ে ব্যাংকের চাকরীতে জয়েন করে!
বিগত বছরগুলোতে ডিপ্লোমা পরিক্ষা দিতে গিয়ে বেশ ভোঁগান্তিতে পরতে হয়েছে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের। বিশেষ করে ডিপ্লোমা পরিক্ষার হলে ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাথে অসদাচার নিয়ে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ জানিয়েছেন। ডিপ্লোমা পরিক্ষা দিতে গিয়ে হল পরিদর্শক কর্তৃক পুলিশ প্রশাসনের ভয় দেখানো হয় ব্যাংকারদের! একজন ৫ম/৬ষ্ঠ গ্রেডের ব্যাংক কর্মকর্তা (এসপিও/পিও) কে ৯ম গ্রেডের একজন কর্মকর্তা কর্তৃক অপমানিত হতে হয়, যা ব্যাংকারদের জন্য বেশ হতাশার! এমনকি কাউকে পরিক্ষার হলে সার্চ করার নামে যে হয়রানি করা হয় তাকে অন্য সব কর্মকর্তাদের সামনে বেশ লজ্জার মধ্যে পরতে হয়। ব্যাংকারদের কাজের প্রেশারের কথা সবাই অবগত। বিশেষ করে করোনা মহামারির সময়ে যখন সকল সরকারি বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায় তখনও দেশের অর্থনীতিকে সমুন্নত রাখতে ঢাল হয়ে দাড়ায় একেকজন ব্যাংকার। করোনার মধ্যে সেবা দিতে গিয়ে অনেক ব্যাংক কর্মকর্তাই প্রান হারিয়েছেন। তারপরও ব্যাংকিং সেবা দেয়া বন্ধ হয়নি। অথচ একটা ডিপ্লোমা পরিক্ষা দিতে গিয়ে যদি ব্যাংকারদের লাঞ্চিত হতে হয় তবে তা বেশ হতাশাজনক।
ব্যাংকিং ডিপ্লোমার যৌক্তিকতা নিয়ে অনেকদিন ধরেই আলোচনা চলে আসছে। বিশেষ করে বেশ কিছু সাবজেক্ট এর পরিক্ষা দিতে হয় যা কিনা ব্যাংকিং ব্যবস্থা সম্পর্কিত নয়। এছাড়াও এতে দক্ষ ব্যাংকাররা পিছিয়ে পরছে। সারাদিন ব্যাংকিং কাজ শেষ করে পরিবারেরকে সময় দেবার মত সময় থাকেনা অনেক ব্যাংকারের। অফিস টাইমের বাহিরেও কাজ করতে হয়, অনেক সময় বন্ধের দিনও কাজ করতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে তাত্ত্বীক পরিক্ষার প্রস্তুতি নেবার মত সময় যে থাকেনা তা নিশ্চিত। এরপর আবার যদি হয়রানি কিংবা লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনা ঘটে তবে তা সত্যিই দুংখজনক। দীর্ঘদিন থেকেই তাই একটা চাপা ক্ষোভ নিয়ে ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরিক্ষা দিতে হচ্ছে ব্যাংকারদের। ৯৫তম ব্যাংকিং ডিপ্লোমার আবেদন শুরু হচ্ছে সামনের সপ্তাহ থেকে, যার পরিক্ষার সময়সূচীও প্রকাশ করা হয়েছে। তবে হঠাৎ করেই পরিক্ষার রেজিষ্ট্রেশন ফি বাড়িয়ে ১৮০০/- করা হয়েছে! ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (আইবিবি) এর এমন সিদ্ধান্তও সবাইকে হতাশ করেছে। বিশেষ করে একই সাবজেক্ট বার বার দেবার পরও যখন ফেল করানো হচ্ছে তখন একটি সাবজেক্টের জন্য বার বার সমপরিমান টাকা দিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করানোটা বাড়তি বোঝা!
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
আরও দেখুন:
◾ ব্যাংকারদের পক্ষ থেকে আইবিবির লাগাম টেনে ধরবে কে?
ব্যাংক কর্মকর্তাদের চাকরী ক্ষেত্রে বেশ চ্যালেঞ্জ নিতে হয়। অফিস টাইমের বাহিরে গিয়েও কাজ করতে হয়। অর্থনিতীর যেকোনো চাপ মোকাবেলায় সবসময়ই প্রস্তত ব্যাংকাররা। করোনাকালিন অর্থনীতির চাঁকা সচল রাখতেও ব্যাংকারদের ছিলো সম্মুখ ভূমিকা। তাই ব্যাংকারদের অধিকার নিয়েও ভাবতে হবে নীতি নির্ধারকদের। ব্যাংকিং ডিপ্লোমার আধুনিকায়ণ হতে পারে যুগান্তকারী পরিবর্তন। বিশেষ করে তাত্ত্বীক বিষয়ে লিখিত পরিক্ষা কমিয়ে দক্ষ ব্যাংকারদের মূল্যায়নে প্রাকটিকাল কোর্সের আয়োজন করা যেতে পারে। ডিপ্লোমা পরিক্ষাতে শুধুমাত্র ব্যাংকিং রিলেটেড সাবজেক্ট অন্তর্ভুক্তিকরণ কিংবা অসংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহগুলো বাদ দেয়া, পরিক্ষার হলে ব্যাংকারদের হয়রানি না করা, কিংবা বহিঃর্বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন নতুন বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ হতে পারে সমাধান। ব্যাংকিং ডিপ্লোমার আধুনিকায়ণ হতে পারে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত এটা সকল ব্যাংকারদের বিশ্বাস।
লেখকঃ কে এম মাসুম বিল্লাহ, ব্যাংকার ও কলামিস্ট।