অর্থনীতি

অর্থনীতির প্রকারসমূহ কি কি?

অর্থনীতির প্রকারসমূহ কি কি? অর্থনীতি বা ‌‌‌অর্থশাস্ত্র সামাজিক বিজ্ঞান-এর একটি শাখা যা সীমিত সম্পদের সাথে মানুষের চাহিদা ও পছন্দের মধ্যে সম্পর্ক, পণ্য এবং কৃত্যের উৎপাদন, সরবরাহ, বিনিময়, বিতরণ এবং ভোগ ও ভোক্তার আচরণ নিয়ে আলোচনা করে থাকে৷ অর্থনীতির মূল উদ্দেশ্য হল মানুষের কল্যাণ বৃদ্ধি করা। মানুষের চাহিদা অসীম, কিন্তু সম্পদের পরিমাণ সীমিত। তাই মানুষের চাহিদা পূরণের জন্য সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হয়। এটিই অর্থনীতির মূল কাজ। অর্থনীতি একটি গতিশীল শাস্ত্র বলে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অর্থনীতিবিদের দেয়া বহু সংজ্ঞা আজ যথার্থতা ও কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলেছে।

অর্থনীতির প্রকার (Type of Economics):
অর্থনীতিকে বিভিন্ন ভাগে বা শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যেমন-
১. ব্যাস্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতি (Micro ও Macro Economics) এবং
২. ইতিবাচক ও নীতিবাচক অর্থনীতি (Positive ও Normative Economics)।

আরও দেখুন:
অর্থনীতি কী?

ব্যাস্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতি (Micro ও Macro Economics):
ব্যষ্টিক বা (Micro) শব্দের অর্থ হল ক্ষুদ্র। অর্থনীতির যে অংশে অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে ব্যষ্টিক অর্থনীতি বলে। আর সামষ্টিক বা (Macro) শব্দের অর্থ হল বৃহৎ। অর্থনীতির যে অংশে বৃহৎ বা বিশাল দিক সমূহ নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে সামষ্টিক অর্থনীতি বলে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

ইতিবাচক ও নীতিবাচক অর্থনীতি (Positive ও Normative Economics):
অর্থনীতির যে শাখায় কি করা হবে, কিভাবে করা হবে এবং কি কারণে করা হবে এই জাতীয় বক্তব্য পর্যালোচনা করা হয় তাকে ইতিবাচক অর্থনীতি বলে। আর অর্থনীতির শাখায় নীতিগত মূল্যায়ণের ভিত্তিতে বিভিন্ন বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়, তাকে নীতিবাচক অর্থনীতি বলে।

এছাড়াও অর্থনীতির প্রকারভেদগুলোকে সাধারণত সম্পদ বরাদ্দকরণ পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়ে থাকে। সম্পদ বরাদ্দকরণ হলো অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক যেখানে অর্থনীতিতে উৎপাদিত পণ্য এবং পরিষেবাগুলো কীভাবে উৎপাদিত, বিতরণ এবং ব্যবহার করা হবে তা নির্ধারণ করা হয়। পৃথিবীর প্রধান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তিনটি। সেগুলো হলো-
১. ওপেন-মার্কেট ইকোনমি বা মুক্ত বাজার অর্থনীতি
২. কমান্ড ইকোনমি বা কমান্ড অর্থনীতি
৩. মিক্সড ইকোনমি বা মিশ্র অর্থনীতি।

মুক্ত বাজার অর্থনীতি (Open-market Economy):
মুক্ত বাজার অর্থনীতি হলো এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে সম্পদ বরাদ্দকরণ মূলত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে। অর্থনীতিতে উৎপাদিত পণ্য এবং পরিষেবাগুলোর দাম, সরবরাহ এবং চাহিদার উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। এই ধরনের অর্থনীতিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরা তাদের সম্পদ এবং শ্রমকে তাদের পছন্দ অনুসারে ব্যবহার করার জন্য স্বাধীন থাকে। উদাহরণ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতি হলো মুক্ত বাজার অর্থনীতি।

কমান্ড অর্থনীতি (Command Economy):
কমান্ড অর্থনীতি হলো এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে সম্পদ বরাদ্দকরণ মূলত সরকারের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে। অর্থনীতিতে উৎপাদিত পণ্য এবং পরিষেবাগুলোর দাম, সরবরাহ এবং চাহিদার উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয় না, বরং সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হয়। এই ধরনের অর্থনীতিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরা তাদের সম্পদ এবং শ্রমকে তাদের পছন্দ অনুসারে ব্যবহার করার জন্য স্বাধীন থাকে না। উদাহরণ: চীন, উত্তর কোরিয়া, ভিয়েতনাম, কিউবার অর্থনীতি হলো কমান্ড অর্থনীতি।

মিশ্র অর্থনীতি (Mixed Economy):
মিশ্র অর্থনীতি হল এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে সম্পদ বরাদ্দকরণ ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত এবং সরকারী সিদ্ধান্ত উভয়ের উপর নির্ভর করে। অর্থনীতিতে উৎপাদিত কিছু পণ্য এবং পরিষেবা ব্যক্তিগত খাতের দ্বারা উৎপাদিত হয়, অন্যগুলো সরকারী খাতের দ্বারা উৎপাদিত হয়। এই ধরনের অর্থনীতিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরা তাদের সম্পদ এবং শ্রমকে তাদের পছন্দ অনুসারে কিছুটা স্বাধীন তবে সরকারও অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদাহরণ: জাপান, জার্মানি, ফ্রান্স, ভারতের অর্থনীতি হলো মিশ্র অর্থনীতি।

অর্থনীতির অন্যান্য ধরনগুলোর মধ্যে আরোও রয়েছে:
– ট্রেড ইউনিয়নবাদী অর্থনীতি
– সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি ও
– পুঁজিবাদী অর্থনীতি।

মোটকথা, অর্থনীতি হল এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বিজ্ঞান যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। এটি মানুষের আয়, ব্যয়, কর্মসংস্থান, কল্যাণ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে অসীম অভাব ও বিকল্প ব্যবহার উপযোগী সীমিত সম্পদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button