পরিবর্তন আসতে পারে দুর্বল আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্ষদে
দেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। দুর্নীতি ও অনিয়মের জড়িয়ে পড়ায় তীব্র সংকটে দিন পার করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। তুলনামূলক দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচাতে তাদের পরিচালনা পর্ষদের পরিবর্তন আনার কথা ভাবছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
জানা গেছে, ইতিমধ্যেই ৬টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে এমওইউ স্বাক্ষরের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই চুক্তি অনুযায়ী- মূলধন পর্যাপ্ততা, মূলধন ঘাটতি পূরণ, ঋণের প্রবৃদ্ধি, খেলাপি ঋণ আদায় ও ব্যবস্থাপনা দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে না পারলে আসতে পারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত। এর মধ্যে রয়েছে একাধিক প্রতিষ্ঠানকে একীভূতকরণ অথবা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আর কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে হারাতে চান না তারা। এগুলোকে বাঁচাতে একসাথে কাজ করছে সবাই। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, দুর্বল আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পর্ষদে দুর্নীতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কয়েক বছর থেকে কোনো অগ্রগতি নেই এগুলোর। তাই এই মুহূর্তে এনবিএফআই গুলোর পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন আনতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। তারই প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ৬টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
চিঠির শর্ত অনুযায়ী এমওইউ স্বাক্ষরিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়মিত তদারকির মধ্যে রাখবে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রথম ধাপে যেসব প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরের সিদ্ধান্ত হয়েছে সেগুলো হলো- রিলায়েন্স ফাইন্যান্স, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট এবং প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। সূত্র জানায়, পরবর্তী ধাপে বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডকেউ (বিআইএফসি) চিঠি পাঠানো হবে।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ লিজিং কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএফসি) সহ-সভাপতি এবং আইআইডিএফসি এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম সারওয়ার ভূঁইয়া বলেন, দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচানোর জন্য ভালো প্রতিষ্ঠানগুলো একমত। আমরা চাই না আর কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হোক। দুর্বল আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচানোর জন্য করণীয় বিষয়ক একটি প্রস্তাবনা বাংলাদেশ ব্যাংকে উপস্থাপন করব আমরা।
তিনি বলেন, এই মুহূর্তে খারাপ প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভালোদের সাথে মার্জারের বিষয়ে ভাবছি। ৬টি প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ ব্যাংক যে চুক্তির প্রস্তাবনা দিয়েছে তা রিকনস্ট্রাকশন বা পুনঃসংস্করণের প্রথম ধাপ বলে মনে করেন তিনি।
জানা যায়, বর্তমানে ৩৪টি এনবিএফআই তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর মধ্যে হাতেগোনা চার থেকে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকিগুলো গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। এরপরেও গত সপ্তাহে স্ট্র্যাটেজিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট নামের নতুন একটি নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তথ্য অনুযায়ী এনবিএফআইগুলোর ঋণ ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আমানত ৪৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলো থেকে ১৯ হাজার কোটি টাকা ধার করে ঋণ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
সূত্রমতে, আইনি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি দুর্বলতার কারণে শুরু থেকেই এনবিএফআই গুলো সমস্যার মধ্যে ছিল। সেটা প্রকট আকার ধারণ করে ২০১৫ সালে। ওই সময় পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড দুর্নীতি ও অনিয়মের মাত্রা ছিল সবার শীর্ষে। গতবছর প্রতিষ্ঠানটি অবসায়নের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।