ব্যাংকিং ডিপ্লোমাব্যাংকিং প্রফেশনাল এক্সাম

ব্যাংকিং ডিপ্লোমা: আইবিবির আয় বাড়ানোর দায় ব্যাংকারদের ঘাড়ে

ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ বা আইবিবির ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন।

ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরীক্ষার নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (আইবিবি) আয় কমে গেছে। এ জন্য আয় বাড়াতে প্রতিষ্ঠানটির কাউন্সিল সদস্যরা পরীক্ষার্থী বাড়ানোর পক্ষে মত দেন। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর কাউন্সিল সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বা সিনিয়র অফিসারের পরের পদে পদোন্নতিতে দুই পর্বের ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পাস বাধ্যতামূলক করা হোক। আর এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। আইবিবি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

আরও দেখুন:
◾ ব্যাংকিং ডিপ্লোমা বাধ্যতামূলক চায় না ব্যাংকার্স ওয়েলফেয়ার

আইবিবি তাদের সিদ্ধান্তের বিষয়টি গত ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠায়। এরপরই কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দেশনা দেয়, ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পাস না করলে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার পরের পদের জন্য কোনো ব্যাংকার পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন না। এই সিদ্ধান্ত ২০২৪ সাল থেকে কার্যকরের কথা জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

আইবিবির আয় বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেওয়া এ সিদ্ধান্ত ব্যাংকিং পেশাকে জটিল পরিস্থিতিতে ফেলতে পারে বলে এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। কারণ, ব্যাংকিং পেশা শুধু বাণিজ্য অনুষদের শিক্ষার্থীদের জন্য নয়। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন অনুষদ ও বিভাগের শিক্ষার্থীরা ব্যাংকিং পেশায় যুক্ত হচ্ছেন। এ ছাড়া ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। কারণ, ১০ শতাংশ পরীক্ষার্থীও এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারছেন না।

আইবিবি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। তবে এটি পৃথকভাবে পরিচালিত হয়। প্রতিষ্ঠানটির মহাসচিব পদে দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন। ডিপ্লোমা পরীক্ষা হয় দুই পর্বে। প্রতিটি পর্বে ৬টি করে ১২টি বিষয় থাকে।

গত বুধবার পদোন্নতির ক্ষেত্রে ডিপ্লোমা পাসকে বাধ্যতামূলক করা সংক্রান্ত নির্দেশনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ব্যাংকের চাকরিতে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা অথবা সমতুল্য পদের ওপরে যেকোনো পদে পদোন্নতি পেতে হলে ব্যাংকিং ডিপ্লোমার দুই পর্বেই পাস করতে হবে। ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পাস ছাড়া কোনো ব্যাংকার পদোন্নতির যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না। দেশের সরকারি-বেসরকারি ও বিদেশি সব ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে এই নির্দেশনা কার্যকর হবে। এর আগে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ব্যাংকিং ডিপ্লোমাকে গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া থাকলেও এবার তা বাধ্যতামূলক করল বাংলাদেশ ব্যাংক।

এই নির্দেশনার পর ব্যাংকারদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেক ব্যাংকার এ নিয়ে সমালোচনামূলক লেখা লিখছেন। সারা দেশে ব্যাংক কর্মকর্তার সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা রয়েছেন প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি। পদোন্নতিতে সব ধরনের ব্যাংকারদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ডিপ্লোমা ডিগ্রি।

উত্তীর্ণ ৫ শতাংশের কম
আইবিবির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সর্বশেষ পরীক্ষায় প্রথম পর্বে সব বিষয়ে পাস করেছেন মাত্র ২ হাজার ১৯২ জন ব্যাংকার। এই পরীক্ষায় সারা দেশের প্রায় ৪০ হাজার ব্যাংকার অংশ নিয়েছিলেন। ফলে উত্তীর্ণ হয়েছেন মাত্র সাড়ে ৫ শতাংশ। ঢাকার ৪টি কেন্দ্রে এবং বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের ২১টি কেন্দ্রে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

ডিপ্লোমা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া দুজন ব্যাংকার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ডিপ্লোমা পরীক্ষায় যে ধরনের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয়, নিয়মিত চাকরি করে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া বেশ কঠিন। আবার উত্তরপত্র মূল্যায়ন ঠিকভাবে হয় কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতকোত্তর করে আসা অনেক ব্যাংকারও ডিপ্লোমা পরীক্ষায় এসে অর্থনীতি বিষয়ে উত্তীর্ণ হতে পারছেন না। আবার হিসাববিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করা ব্যাংকাররাও হিসাববিজ্ঞানে অকৃতকার্য হচ্ছেন। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও মুদ্রানীতি বিষয়ে ভালো ফল করছেন না। এ কারণে পরীক্ষার মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে অনেকের মনে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইবিবির মহাসচিব লাইলা বিলকিস আরা বলেন, অনেক শিক্ষার্থী সব পরীক্ষায় অংশ নেন না। একটি-দুটি পরীক্ষা দেন। এ জন্য সব বিষয়ে পাসের হার এত কম। তবে বিষয়ভিত্তিক পাসের হার ৪০ শতাংশের মতো। বাধ্যতামূলক না থাকায় ব্যাংকাররা এই পরীক্ষাকে খুব একটা গুরুত্ব দেন না।

পরীক্ষার সিলেবাস ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে জানতে চাইলে লাইলা বিলকিস আরা বলেন, ‘আমরা প্রতিবছর সিলেবাস হালনাগাদ করছি। আর একেক পরীক্ষক একেকভাবে মূল্যায়ন করে থাকেন। এ জন্য মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কিছুটা হেরফের থাকতে পারে। তবে আমরা চেষ্টা করি ভালো ব্যাংকারদের দিয়ে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করার।’

ব্যাংকাররা বলছেন, ডিপ্লোমায় দ্বিতীয় পর্বে ১২ বিষয়ে ৬ বছর ধরে পাস করা একটা রীতি হয়ে গেছে। প্রতিবার পরীক্ষায় অংশ নিতে ১ হাজার ৮০০ টাকা জমা দিতে হয়।

প্রয়োজন ডিপ্লোমা পরীক্ষার আধুনিকায়ন
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ব্যাংকিং আইন ও নিয়মাচার অনুশীলন-সম্পর্কিত বিষয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার একটি মানদণ্ড হলো আইবিবি পরিচালিত দুই পর্বের ব্যাংকিং ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন।

আইবিবির সাবেক মহাসচিব নওশাদ আলী চৌধুরী বলেন,‘আইবিবিতে প্রথমবার সব বিষয়ে উত্তীর্ণ হতে পারেন—এমন ব্যাংকার খুবই কম আছেন। তবে এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে বারবার অংশ নেওয়া যায়। তাই অনেকেই একে গুরুত্ব দেন না। এ জন্য একবারে উত্তীর্ণের হার কম।’

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান বলেন, ‘ব্যাংকিং ডিপ্লোমা যদি পদোন্নতির মাপকাঠি হয়, তবে তা একধরনের বৈষম্য তৈরি করবে। কারণ, ব্যাংকাররা দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যাংক পরিচালনা করছেন। তাঁদের অনেকেই ডিপ্লোমা শেষ করতে পারছেন না।

আবার বিভিন্ন অনুষদ থেকে আসা ছেলেমেয়েরা ব্যাংকে ভালো করছেন। ফলে ডিপ্লোমা পরীক্ষার সিলেবাস সেভাবেই হালনাগাদ করা উচিত। পদোন্নতির ক্ষেত্রে ব্যাংকিং ডিপ্লোমা পাস বাধ্যতামূলক করতে হলে আগে আইবিবির সক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং এর পরই এমন নির্দেশনা কার্যকর করা উচিত।’

সোর্সঃ প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button