আয়কর

টিন সার্টিফিকেট কেন প্রয়োজন হয়?

টিন/ টিআইএন বা ট্যাক্সপেয়ার আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (TIN- Taxpayer Identification Numbers) হলো ১২ সংখ্যার একটি বিশেষ নম্বর, যা সংশ্লিষ্ট কর অফিস প্রদান করে। এর প্রথম চারটি সংখ্যা দ্বারা করদাতার অঞ্চল, মাঝের চারটি সংখ্যা দ্বারা করদাতার পদমর্যাদা এবং শেষ চারটি দ্বারা করদাতাকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়। ব্যবসা করতে হলে টিন/ টিআইএন লাগে। শুধু ব্যবসা কেন, আয় করেন এমন সব মানুষের দৈনন্দিন অনেক প্রয়োজনে টিন/ টিআইএন লাগে। এমনকি আপনি যদি আয় না করেন, কিন্তু পৈতৃক সূত্রে সম্পদ থাকে, তা–ও টিন/ টিআইএন একটি জরুরি কর সনদপত্র। টিন/ টিআইএন করদাতাকে করের সব ঝামেলা থেকে সুরক্ষা করে।

টিন/ টিআইএন সার্টিফিকেট- এর প্রকারভেদ
টিন/ টিআইএন সার্টিফিকেট পাঁচ প্রকার হয়ে থাকে। নিম্নে এর প্রকারগুলো তুলে ধরা হলো-
১. SSN (Social Security Number): সামাজিক নিরাপত্তা কার্ড তৈরির জন্য প্রয়োজন।
২. EIN (Employer Identification Number): একজন কর্মীর ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়াবলিতে প্রয়োজন।
৩. ITIN (Individual Taxpayer Identification Number): একজন ব্যক্তির আবাসিক, অনাবাসিক, বাসস্থান, তার বৈবাহিক অবস্থান প্রভৃতির জন্য প্রয়োজন (যদি তার কাছে SSN নম্বর না থাকে)।
৪. ATIN (Adoption Taxpayer Identification Number): বাংলাদেশে এই টিন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন বা প্রয়োগক্ষেত্র নেই।
৫. PTIN (Preparer tax identification number): বাংলাদেশে এই টিন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন বা প্রয়োগক্ষেত্র নেই।

আরোও দেখুনঃ অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট করবেন কিভাবে?

টিন/ টিআইএন কেন প্রয়োজন
বর্তমানে আপনি যে কোন কাজই করেন না কেন আপনার টিন/ টিআইএন লাগবে। যেমন- ব্যবসা করতে হলে টিন/ টিআইএন লাগে। শুধু ব্যবসা কেন, আয় করেন এমন সব মানুষের দৈনন্দিন অনেক প্রয়োজনে টিন/ টিআইএন লাগে। এমনকি আপনি যদি আয় না করেন, কিন্তু পৈতৃক সূত্রে সম্পদ থাকে, তা–ও টিন/ টিআইএন একটি জরুরি কর সনদপত্র। এছাড়া যে সকল ক্ষেত্রে টিন/ টিআইএন লাগবে-

✓ আমদানি করার ক্ষেত্রে আমদানিপত্র রেজিস্ট্রেশন করার জন্য।
✓ বিভাগীয় জেলা শহর অথবা পৌরসভায় ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করার জন্য।
✓ মাল সরবরাহ, চুক্তিনামা অথবা অন্যান্য যেকোনো বাণিজ্যের দরপত্রের জন্য।
✓ সাধারণ বীমা তালিকাভুক্তকরণ অথবা লাইসেন্স নবায়ন করার জন্য।
✓ এক লাখ টাকার ওপরে সিটি করপোরেশনভুক্ত অঞ্চলে যেকোনো জমি বা ভবন রেজিস্ট্রেশনের জন্য।
✓ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করার ক্ষেত্রে।
✓ কোম্পানি রেজিস্ট্রেশনের জন্য।
✓ ড্রাগ লাইসেন্সের জন্য।
✓ যেকোনো ব্যবসায়িক সমিতির সদস্য হওয়ার জন্য কিংবা সদস্যপদ নবায়ন করার জন্য।
✓ আইএসডি টেলিফোন সংযোগের জন্য।
✓ মুসলিম বিবাহ ও তালাকনামা রেজিস্ট্রেশনের জন্য।
✓ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা জমা দেওয়ার জন্য।
✓ গাড়ি, জিপ অথবা মাইক্রোবাসের রেজিস্ট্রেশন কিংবা মালিকানা পরিবর্তন ও ফিটনেস লাইসেন্সের জন্য।
✓ কোনো ব্যক্তির কমার্শিয়াল ব্যাংক অথবা লিজিং কোম্পানি থেকে ঋণ গ্রহণ অথবা ঋণ অনুমোদনের জন্য।
✓ সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার দরপত্রে অংশ নিতে এবং রাইড শেয়ারিং কোম্পানিতে গাড়ি দিতে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

টিন/ টিআইএন থাকার সুবিধা
টিন/ টিআইএন থাকার প্রথম সুবিধা হচ্ছে, আপনি ট্যাক্স প্রদানকারী হিসেবে নিবন্ধিত হবেন। এরপর আপনার আয়ের সীমায় কর দেবেন, যে টাকা দিয়ে সরকার দেশ চালাবে। অনেক আগে যখন আয়কর বা মূল্য সংযোজন করের মতো বিষয়গুলো ছিল না। সরকার জমি থেকে খাজনা আদায় করত, তাই দিয়ে দেশের রাস্তা তৈরি, স্কুল, হাসপাতাল ইত্যাদি সেবা চলত। কিন্তু এখন মানুষের আয়ের বৈচিত্র্যের কারণে সরকারকে আয়করের মাধ্যমে দেশ চালানোর অর্থ সংগ্রহ করতে হয়।

টিন/ টিআইএন নম্বর সংগ্রহের মাধ্যমে আপনি গর্বিত করদাতা হবেন। এ ছাড়া টিন/ টিআইএন রেজিস্ট্রেশন নম্বর থাকলে ব্যাংক আপনার গচ্ছিত অর্থ থেকে ১০ শতাংশ কর কাটবে, যদি না থাকে তবে কাটা যাবে ১৫ শতাংশ। ধরুন, এর মধ্যে আপনি কোথাও থেকে কোনো উপহার বা পুরস্কারের অর্থ পেলেন, যা ব্যাংকের মাধ্যমে আপনাকে দেওয়া হলো, সে ক্ষেত্রেও টিন/ টিআইএনধারীরা ১০ শতাংশ কর কেটে অর্থ হাতে পাবেন, আর যাঁদের টিআইএন নেই, তাঁদের কাটা হবে ১৫ শতাংশ।

আরোও দেখুনঃ টিন থাকলেই কি রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক?

এমনিতে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে টিন/ টিআইএন প্রয়োজন হয় না; তবে আপনি যদি ব্যাংক ঋণ নেন, তবে টিন/ টিআইএন থাকতেই হবে। সরকার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পেশাজীবী বা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন সুবিধা ও প্রণোদনা দিয়ে থাকে, যার কোনোটাই টিন/ টিআইএন ছাড়া পাওয়া সম্ভব না। এছাড়াও টিন/ টিআইএন গ্রহণকারী হিসেবে আপনি নিম্নোক্ত সুবিধাগুলো পাবেন-

✓ কর-সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে আপনি নিজেই উপস্থিত থাকতে পারবেন।
✓ কর্তৃপক্ষ কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলে আপনি তার বিপরীতে কোনো আবেদন করার অধিকার রাখেন।
✓ কর্তৃপক্ষ সব বিষয়ে আপনাকে তথ্য প্রদানে বাধ্য থাকবে।
✓ আপনাকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভাউচার প্রদান করা হবে।
✓ টিন/ টিআইএন-সংক্রান্ত যথাযথ নীতিমালা থাকায় আপনি আশঙ্কামুক্ত থাকবেন।

কারা টিন/ টিআইএন সার্টিফিকেট নেবেন
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী আপনি যদি মাসে ১৬ হাজার টাকার সমান অর্থ আয় করেন, তবে আপনার টিন/ টিআইএন থাকা আবশ্যক। এমনিতে পুরুষদের বছরে তিন লাখ, সব বয়সের নারী এবং ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে সব নাগরিক সাড়ে তিন লাখ এবং প্রতিবন্ধীদের বছরে সাড়ে চার লাখ টাকার ওপরে আয় না হলে কর দিতে হয় না। এর ওপর আয় হলে কর দেওয়া বাধ্যতামূলক।

যদি আপনি করসীমার নিচে থাকেন, তবে টিন/ টিআইএন দেখিয়ে শূন্য বিবরণী জমা দিতে হয়। যদিও টিন/ টিআইএন প্রয়োজন হয়, এমন কোনো ক্ষেত্র আপনার থাকে, যেমন গাড়ির মালিকানা বা কোনো সংগঠনের সদস্যপদ, তাহলে করযোগ্য আয় না থাকলেও টিন/ টিআইএন সার্টিফিকেট থাকতেই হবে।

টিন/ টিআইএন গ্রহীতার বাধ্যবাধকতা
টিন/ টিআইএন সার্টিফিকেট গ্রহন করার কারণে আপনাকে নিম্নোক্ত বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হবে-
✓ কর প্রদানের নীতিমালা অনুযায়ী আপনাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রদান করতে হবে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বকেয়া কর পরিশোধ করতে হবে।
✓ আপনার আয় দুই লাখ টাকার ওপরে হলে আপনাকে আয়ের চতুর্থাংশের এক ভাগ অগ্রিম কর প্রদান করতে হবে।
✓ একজন টিন/ টিআইএন গ্রহণকারীকে অবশ্যই তাঁর সম্পত্তি এবং দায়বদ্ধতা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে হবে।
✓ আপনার ব্যক্তিগত আয় সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিতে হবে।
✓ ব্যবসায়িক লেনদেন সম্পর্কিত তথ্য সঠিক হতে হবে।
✓ আপনার টিন/ টিআইএন সার্টিফিকেট অনুমোদন, চুক্তিনামা হিসাব সংক্রান্ত তথ্য আইন অনুযায়ী হবে।
✓ ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে আপনাকে অবশ্যই টিন/ টিআইএন সার্টিফিকেট প্রদর্শন করতে হবে।

আরোও দেখুনঃ টিন থাকলেই কি রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক?

টিন/ টিআইএন কীভাবে করবেন
টিন/ টিআইএন করা খুবই সহজ একটি কাজ। এর জন্য কোনো অফিসে যাওয়া লাগে না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইটে ফরম পাওয়া যাবে। এরপর মুঠোফোন নাম্বার, জাতীয় পরিচয়পত্র, সদ্য তোলা এক কপি ছবি দিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করলে ঘরে বসেই ই-টিন/ ই-টিআইএন নম্বর পাওয়া যাবে। এমনকি যাঁদের আগে টিন/ টিআইএন নম্বর নেওয়া ছিল, তাঁরাও পুরোনো নম্বর দিয়ে টিন/ টিআইএন পেতে পারেন। এই সার্টিফিকেট সংরক্ষণ করতে হবে। টিন/ টিআইএন (TIN) সার্টিফিকেট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন এখানে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button