স্কুল ব্যাংকিং

স্কুল ব্যাংকিং কী এবং কেন?

ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশঃ স্কুল ব্যাংকিং বাংলাদেশের নতুন নয়। ১৯৬০ এর দশকে মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংক সহ কিছু ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিং শুরু করেছিল। কিন্তু এটি দীর্ঘ সময় চলেনি। তারপর ২০০৩ সালে চট্টগ্রামের সানশাইন গ্রামার স্কুলে এবি ব্যাংক লিমিটেড স্কুল ব্যাংকিং সেবা চালু করে। আবারও সেটি বন্ধ হয়ে গেলে পুনরায় ২০১০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করার জন্য সকল তফসিলি ব্যাংককে পরামর্শ দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম নীতিমালা চালু করে।

Definition of School Banking (স্কুল ব্যাংকিং এর সংজ্ঞা)
স্কুল ব্যাংকিং হলো ছেলে-মেয়েদেরকে অর্থব্যবস্থাপনায় (Money Management) দক্ষতা বৃদ্ধি ও সঞ্চয় করার মনোভাব এবং অভ্যাস গড়ে তোলার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়াস।

স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে-মেয়েদের জন্য যে ব্যাংকিং ব্যবস্থা তা-ই স্কুল ব্যাংকিং। এ হিসাব থেকে কোন চার্জ কাটা হয় না।

Dominic Beattie স্কুল ব্যাংকিং এর সংজ্ঞায় বলেন-
School Banking can give your child some of the most important lessons they’ll ever learn in school – how to manage their own money and save for the future.

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলিকে অনুপ্রাণিত করে থাকে যেন প্রতিটি স্কুলের শিক্ষার্থীরা ব্যাংকিং সেবার আওতায় আসতে পারে। এজন্য বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ব্যাংকগুলি ঐ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শাখায় শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যাংকিং সেবা সহজতর করার জন্য পৃথক স্কুল ব্যাংকিং কাউন্টার বা ডেস্ক স্থাপন করা হয়ে থাকে।

উপরন্তু ব্যাংকের শাখাগুলি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুমতি সাপেক্ষে তাদের প্রাঙ্গণে বুথ খোলার মাধ্যমে এক বা একাধিক নির্দিষ্ট দিনে স্কুল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করতে পারে। স্কুল ব্যাংকিং হিসাবের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের সব ধরনের টাকা প্রদান করা যাবে। এই বিষয়ে বৃত্তি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সাথে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করতে হয়। ব্যাংক হিসাব গুলিতে সুবিধা প্রদান করতে পারে যদি কোন পরিবার আর্থিক কারণে তার শিক্ষার খরচ চালাতে আর্থিক সঙ্কটের মুখোমুখি হয়।

Goals of School Banking (স্কুল ব্যাংকিং এর লক্ষ্য)
স্কুল ব্যাংকিং এর লক্ষ্য সমূহ নিম্নে তুলে ধরা হলো-
১) দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি উন্নত করা;
২) অর্থ সঞ্চয়ের মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রমে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা; ও
৩) আধুনিক ব্যাংকিং সেবা ও প্রযুক্তিতে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে তাদের মধ্যে সঞ্চয়ের মনোভাব তৈরি করা ও সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করা।

School Banking Account (স্কুল ব্যাংকিং হিসাব)
১৮ বছরের কম বয়সী শিক্ষার্থীরা স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমের অধীনে কমপক্ষে ১০০ টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে হিসাব খুলতে পারবে। হিসাব খোলার জন্য শিক্ষার্থীদের জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট এবং প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় পত্র অথবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত প্রশংসাপত্রের ফটোকপি, সর্বশেষ মাসের স্কুল ফি জমা দেওয়ার রশিদ প্রদান করতে হয়। এই সমস্ত কাগজপত্র ব্যাংক সংরক্ষণ করে থাকে।

হিসাব শিক্ষার্থীর পিতা বা মাতা অথবা আইনি অভিভাবক দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। হিসাবধারীর বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে এবং হিসাবটি নিয়মিত সঞ্চয়ী হিসেবে রূপান্তরিত হওয়ার আগে টাকা উত্তোলন অনুমোদিত হবে না।

এই হিসাবধারীকে কিছু ব্যাংকিং সুবিধা যেমন- স্বয়ংক্রিয় টেলার মেশিন, এটিএম বা ভিসা কার্ড (শুধুমাত্র ডেবিট কার্ড) প্রদান করা যেতে পারে। এটিএম বা ভিসা কার্ড এবং পয়েন্ট অফ সেল (POS) এর মাধ্যমে মাসিক উত্তোলনের সর্বোচ্চ সীমা হলো ২ হাজার টাকা। অভিভাবকের অনুরোধ এই সীমা ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যেতে পারে। হিসাবধারীর অভিভাবকের মোবাইল নম্বরে এসএমএস এর মাধ্যমে লেনদেনের সর্তকতা প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। সরকারি ফি ছাড়া এই হিসাবের কোন সার্ভিস চার্জ বা ফি নেই। ব্যাংকগুলি এই হিসাবের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ছাত্র-ছাত্রীদের মাসিক বেতন সংগ্রহ করতে পারে।

Benefits of School Banking Account (স্কুল ব্যাংকিং হিসাবে সুযোগ সুবিধা)
স্কুল ব্যাংকিং শিক্ষার্থীদেরকে যে সকল ক্ষেত্রে সাহায্য করে থাকে তা হলো-
১) আধুনিক ব্যাংকিং সেবা এবং প্রযুক্তির সাথে পরিচিত করা এবং ব্যাংকের ভবিষ্যতের গ্রাহক বা কর্মচারী হিসেবে তাদেরকে প্রস্তুত করা;
২) অর্থ সঞ্চয় করার মাধ্যমে পুঁজি গঠন;
৩) একটি নির্দিষ্ট সময় পরে বিপুল পরিমাণ সঞ্চয়ের অধিকারী হওয়া;
৪) অল্প বয়সে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে ওঠা;
৫) অর্জিত অর্থ কিভাবে পরিচালনা করা যায় তা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা, যা বাকি জীবনের জন্য উপকারী হতে পারে;
৬) আর্থিক সাক্ষরতা জানতে পারা;
৭) যদি দুর্ভাগ্যবশত তাদের বাবা মায়ের মৃত্যু হয়, তাহলে ১৮ বছর পর্যন্ত হিসাব ধারক ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ালেখার খরচ বহন নিশ্চিত করা; এবং
৮) আর্থিক খাত সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা।

স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমের অধীনে জমা দেয়া অর্থ সারা দেশে শুধুমাত্র আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং আর্থিক সাক্ষরতা কে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে না, এটি আর্থিক স্থিতিশীলতা ও বয়ে আনে। কারণ এই ধরনের আমানত নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ব্যাংকগুলিতে স্থিতিশীল থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button