এজেন্ট ব্যাংকিং

এজেন্ট ব্যাংকিং খাতে প্রণোদনা ও স্বাস্থ্য বীমা প্রদান প্রসঙ্গে

ব্যাংকিং খাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যতম যুগান্তকারী পদক্ষেপ এজেন্ট ব্যাংকিং। এজেন্ট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতে রীতিমত বিপ্লব সাধিত হয়েছে। ব্যাংকিং সেবাকে সুবিস্তৃতভাবে মানুষের মাঝে পৌঁছাতে পেরেছে এই এজেন্ট ব্যাংকিং। সারাদেশে লকডাউনে অধিকাংশ ব্রাঞ্চগুলো বন্ধ থাকলেও এজেন্টদের মাধ্যমে গ্রাহকরা এখনো ব্যাংকিং সেবা পাচ্ছেন।

মাত্র ছয় বছরে এই সেবার আওতায় এসেছে চল্লিশ লাখেরও বেশি গ্রাহক। মোট আমানতের পরিমাণ প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। ঋণ বিতরণের পরিমাণ তিনশত কোটি টাকা এবং বৈদেশিক রেমিটেন্স আহরিত হয়েছে প্রায় বার হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে ২২টি ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং এর অনুমোদন পেলেও কার্যক্রম পরিচালনা করছে ১৯টি ব্যাংক। (ডিসেম্বর-২০১৯ পর্যন্ত, তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলো)

মার্চ মাস থেকে (কোভিড-১৯) করোনা ভাইরাস বাংলাদেশের উপর প্রভাব বিস্তার শুরু করেছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক সীমিত পরিসরে ব্যাংকিং সেবা চালুর পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে ব্যাংকারদের জন্য নগদ প্রণোদনা ত্রিশ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকা (নূন্যতম ১০দিন স্বশরীরে উপস্থিত, বা আনুপাতিক হারে প্রাপ্য) করে এবং স্বাস্থ্য বীমা প্রদানেরও ঘোষণা দেয়। এক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যাংকারদের জন্য নূন্যতম পাঁচ লক্ষ থেকে সর্বোচ্চ দশ লক্ষ টাকার ইন্সুরেন্স এবং মৃত্যুতে তার পাঁচ গুণ ক্ষতিপূরণ পরিশোধের নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

পর্যায়ক্রমে নেয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের এই পদক্ষেপগুলো ব্যাংকারদের মনে কিছুটা হলেও স্বস্তি এনে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে জরুরী সেবায় নিয়োজিত প্রতিটি নাগরিকের ক্ষেত্রেই স্ব স্ব কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল হওয়া নৈতিক দায়িত্ববোধেরই পরিচায়ক। তাই ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশ ব্যাংককে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

তবে ব্যাংকিং খাতে প্রণোদনা ঘোষণার পর পরই এজেন্ট ব্যাংকিং সংশ্লিষ্টরা হতাশায় পড়েন। কেননা প্রণোদনার ঘোষণায় এজেন্টদের তালিকা ভূক্তি না থাকাকে অনেকেই তাদের কাজের প্রতি স্বীকৃতি না থাকাকেই বড় কারণ মনে করছেন। অথচ ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে লেনদেন হয় বলে এখানে রয়েছে বাড়তি ঝুঁকিও। তবুও এই পরিস্থিতিতেও এজেন্টগণ তাদের সেবা অব্যাহত রাখতে বদ্ধপরিকর। এজেন্টগণ সামাজিক ভাবে পরিচিত এবং স্থানীয় পর্যায়ের হওয়াতে মানুষ তাদের জরুরী আর্থিক সেবা পেতে ব্যক্তিগত পর্যায় হতেই এজেন্ট বা তার কর্মীদের সাথে যোগাযোগ করছেন এবং অনুরোধ করছেন সেবা অব্যাহত রাখতে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সরাসরি অনুমোদনের পরেই এসব এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটগুলো সেবা প্রদান করে যাচ্ছে বিগত সময় ধরে। প্রতিটি আউটলেটের বিপরীতে গড়ে পাঁচ জন মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এই খাতে। লকডাউন এর প্রেক্ষাপটে অনেক আউটলেট ইতিমধ্যে কন্ট্রোলিং ব্যাংক/ ব্রাঞ্চ কর্তৃক বন্ধের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। ফলে এজেন্টে কর্মরত কর্মীদের বেতন পরিশোধের মত চাপ এবং লোকসানের মুখে এজেন্ট ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্টরা। লোকসান এড়াতে বা গ্রাহক সেবা চালিয়ে নিতে এজেন্ট মালিকরা আউটলেট খুলতে চাইলেও অধিকাংশ এজেন্ট কর্মীদের মধ্যেই দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক (বাংলাদেশ ব্যাংক), ব্যাংকারদের জন্য ঘোষিত প্রণোদনা ইস্যুর পর কার্যত এজেন্ট ব্যাংকিং সংশ্লিষ্টরা তাদের প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ করতে থাকেন। এই পরিস্থিতিতে এখন বড় প্রশ্ন এজেন্ট ব্যাংকিং খাতের বড় অভিভাবক কে? নিশ্চয়ই বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং খাতের জন্য এই বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত দেয়নি।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মূল ধারার অনেক ব্যাংকারগণই মনে করেন শীঘ্রই এজেন্ট ব্যাংকিং নিয়েও ঘোষণা আসবে ব্যাংকিং খাতের অভিভাবক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (বাংলাদেশ ব্যাংক) পক্ষ থেকেই। এই প্রত্যাশা নিয়েই সেবা দিয়ে যাচ্ছে অনেক এজেন্ট।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ব্যাংকিং সেবাকে সম্মুন্নত রাখতে বিশেষ বিশেষ শাখাসমুহ পর্যায়ক্রমে সপ্তাহে অন্তত দুইদিন চালু রাখার পাশাপাশি এজেন্টের ক্যাশ সরবরাহের প্রতি ব্যাংকগুলোর দায়িত্বশীল ভূমিকা নেয়া প্রয়োজন।

বৈদেশিক রেমিটেন্স প্রদানে ব্রাঞ্চ কর্তৃপক্ষের সরাসরি অনুমোদন ছাড়া অধিকাংশ ব্যাংকের এজেন্টগণ তা প্রদান করতে পারেন না। ফলে গ্রাহকের সময় অপচয় হওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘ লাইনের এবং মানব জটের সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ভবিষ্যতে এই খাতকে আরো সমৃদ্ধ করতে পারে। সরাসরি রেমিটেন্স প্রদানে এজেন্টদের বিবেচনায় নেয়া এখন সময়ের দাবী।

সবাই যখন যার যার অভিভাবকের কাছে প্রণোদনা বা স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রত্যাশা করে, ঠিক তেমনি এজেন্ট ব্যাংকিং সংশ্লিষ্টরাও ব্যাংকিং খাতের অভিভাবক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (বাংলাদেশ ব্যাংক) পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে চেয়ে আছেন। সরকার এবং ব্যাংকিং খাতের দায়িত্বশীলদের কাছে অনুরোধ আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন আমাদের সেবাকে সম্মুন্নত রাখতে সাহায্য করুন। এই মহা বিপর্যয়ে আমরাও চাই মানবতার কল্যাণে মানুষের পাশে দাঁড়াতে।

লেখকঃ আফছার উদ্দিন ভূঁইয়া
এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটে কর্মরত

একটি মন্তব্য

Leave a Reply to Afsarjaved Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button