এজেন্ট ব্যাংকিং

হুমকির মুখে এজেন্ট ব্যাংকিং

আরাফাত হোসাইনঃ সম্প্রতি এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম নিয়ে বেশ কিছু অনিয়ম বা এজেন্ট কতৃক গ্রাহক আমানত আত্মসাৎ করার অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। বিষয় টি খুবই দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ এখনই শক্ত ব্যবস্থা না নিলে এর প্রকোপ বাড়বে এবং সম্ভাবনাময় একটি ব্যাংকিং ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়বে। একই সাথে লক্ষ লক্ষ সাধারণ গ্রাহক এজেন্ট ব্যাংকিং এর প্রতি আস্থা হারাবেন ও আমানত তুলে নিবেন। ফলে হাজার হাজার উদ্যােক্তা যারা এই ব্যবসার সাথে জড়িত তারা পথে বসবেন। যদিও বলা হয় এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবস্থা হলো সর্বাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর একটি ব্যাংকিং ব্যবস্থা যেখানে সকল প্রকার লেনদেনে সম্পন্ন হয় গ্রাহকের ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর মাধ্যমে। তারপরও কেন এমন ঘটনা ঘটেছে?

উল্লেখ যে বিকল্প ব্যাংকিং ব্যবস্থা হিসেবে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম প্রবর্তন করেন। বাংলাদেশ ব্যাংক এর তথ্য মতে (ডিসেম্বর-২০২২) বর্তমানে মোট ৩১টি তপশিলি ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। মোট ১৫১২৬টি এজেন্টের মাধ্যমে ১৭৪৭৫৯৪৯টি ব্যাংক একাউন্ট খোলা হয়েছে যা সেপ্টেম্বর ২০২২ থেকে ৪.১৪% বেশি। এসব একাউন্টে আমানতের পরিমাণ ৩০১৫৭৬.৬৭ মিলিয়ন যা সেপ্টেম্বর ২০২২ থেকে ১.৬৫% কম। এসময়ের মধ্যে ঋণ বিতরন করা হয়েছে ১০৩০৭৩.৬৬ মিলিয়ন ও রেমিট্যান্স উত্তোলন করা হয়েছে ১১৪৯১৭৩.৭৮ মিলিয়ন।

আরও দেখুন:
◾ এজেন্ট ব্যাংকিং সম্পর্কিত লেখাসমূহ

অর্থ আত্মসাৎ এর কারণ
সাধারণত গ্রাহক যখন কোন এজেন্ট আউটলেটে গিয়ে অর্থ জমা করেন তখন এজেন্টের কাজ হলো সেই নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ তার মাদার একাউন্ট থেকে গ্রাহক একাউন্টে ট্রান্সফার করা। সেক্ষেত্রে এজেন্ট মাদার একাউন্টে পর্যাপ্ত পরিমান ই মানি অবশ্যই থাকতে হয়। যদি গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী অর্থ এজেন্ট মাদার একাউন্টে না থাকে তাহলে এজেন্ট তৎক্ষনাৎ গ্রাহক একাউন্টে অর্থ জমা করতে পারবেন না। ফলে নিয়ম অনুযায়ী এজেন্ট গ্রাহকের অর্থ গ্রহণ করতে পারবেন না। একই সাথে কোন এজেন্ট গ্রাহকদের হাতে লেখা কোন জমা রশিদ প্রদান করতে পারেন না। এজেন্ট আউটলেটের সকল প্রকার লেনদেনে সম্পন হয় অনলাইনে রিয়াল টাইম তাই জমা বা উত্তোলন করামাত্রই সিস্টেম জেনারেটেড রশিদ বের হয় যার এক কপি গ্রাহকের প্রাপ্য ও অন্য কপি এজেন্ট আউটলেটে সংরক্ষিত থাকার কথা। একই সাথে গ্রাহক তার রেজিস্ট্রার মোবাইলে একটি খুদে বার্তা পেয়ে থাকেন যাতে লেনদেন সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য থাকে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

এক্ষেত্রে অসৎ উপায় অবলম্বনকারীর এজেন্ট আউটলেট থেকে যেটি করা হতে পারে তা হলো- গ্রাহকের বিশ্বাসের বা আস্থার সুযোগ নিয়ে তাকে কোন প্রকারে ভুল ভাল বুঝিয়ে একাউন্টে পরে জমা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার অর্থ গ্রহন করেন। অথবা ডুপ্লিকেট জমা রশিদ প্রিন্ট করে তা গ্রাহকদের প্রদান করেন। পরবর্তীতে সেই অর্থ আর গ্রাহক একাউন্টে জমা করেন না।

যেহেতু এজেন্ট আউটলেটগুলো মফস্বল বা গ্রামীণ এলাকায় বেশি হয় ফলে স্বাভাবিক ভাবেই স্বল্প শিক্ষিত বা অশিক্ষিত লোকজন এসব সেবা গ্রহন করে থাকেন। আর অসৎ উপায় অবলম্বনকারী এজেন্টদের টার্গেট থাকে কম বোঝেন বা স্বল্প শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত গ্রাহক। তারা পুর্ব পরিকল্পিত ভাবে এই কাজগুলো করার জন্য ওঁৎ পেতে থাকেন।

অপর দিকে এত বেশি সংখ্যক ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে যে নিজ নিজ টার্গেট ফিল আপ করার জন্য তারা মরিয়া হয়ে যেখানে সেখানে এজেন্ট নিয়োগ করছেন। এজেন্ট নিয়োগ প্রদান করার ক্ষেত্রে সঠিক ভাবে যাচাই বাছাই করছেন না। আবার এজেন্ট কার্যক্রম নিয়মিত মনিটরিং করার জন্য অধিকাংশ আউটলেটগুলোতে সার্বক্ষণিক কোন কর্মকর্তা থাকেন না। ফলে এজেন্ট আউটলেটগুলোতে ঝুঁকি বেড়েই চলছে।

এক্ষেত্রে প্রতিকার
নিঃসন্দেহে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম একটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ। গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে এই ব্যাংকিং ব্যবস্থা অবিস্মরণীয় অবদান রেখে চলেছে। তাই এই ব্যবস্থাকে সাধারণ জনগণের আস্থাভাজন করতে নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো নেয়া যেতে পারে-
১/ ব্যাংক কতৃক প্রতিটি এজেন্ট আউটলেটে একজন সার্বক্ষণিক কর্মকর্তা নিয়োজিত রাখা।
২/ এজেন্ট নিয়োগ প্রদান করার সময় সঠিকভাবে সিডিডি (CDD) সম্পন্ন করা।
৩/ এজেন্ট নিয়োগ প্রদানের আগে উর্ধতন কর্মকর্তা কতৃক যাচাই-বাছাই সম্পন্ন করা।
৪/ পর্যাপ্ত সিকিউরিটি জামানত গ্রহন করা।
৫/ গ্রাহক পর্যায়ে সচেতনতা তৈরি করা।
৬/ বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কতৃপক্ষ কতৃক নিয়মিত পরিদর্শন করা।
৭/ প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও সোসাল মিডিয়ায় সচেতনতা মুলক প্রচারণা চালানো।
৮/ প্রতিটি জমা বা উত্তোলন রশিদে গ্রাহক কতৃক করনীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলো সংযুক্ত করা।
৯/ প্রতিটি এজেন্ট আউটলেটে গ্রাহক সচেতনতা মুলক পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ করা।
১০/ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষী এজেন্টকে আইনের আওতায় আনা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা।

লেখকঃ মোঃ আরাফাত হোসাইন, ব্যাংকার ও কলামিস্ট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button