ব্যাংকার

ব্যাংকার যখন ঢাল-তলোয়ারবিহীন নিধিরাম সর্দার!

গ্রাহকদের কাছে ব্যাংক মানেই এই আইন-সেই আইন, এই কাগজ-সেই কাগজ। এরপরও ‘কী করেন’, ‘মাসিক আয়/বেতন কত’, ‘নেটওয়ার্থ কত’, ‘এই টাকার উৎস কী’, ‘কেন টাকা পাঠাবেন’- ইত্যাদি নানা প্রশ্নবাণে জর্জরিত হোন অনেক গ্রাহকই। ব্যাংকে টাকা রাখতে আসলে জমাকৃত অর্থের উৎস জানাতে হয়। অনলাইনে টাকা পাঠাতেও টাকার উৎস, টাকা পাঠানোর কারণ ইত্যাদি জানাতে হয়। এতে গ্রাহকদের ওজর-আপত্তিরও কমতি নেই। ব্যাংকারের এসব জিজ্ঞাসাকে অনেক গ্রাহকই পোদ্দারি মনে করেন। কেউ কেউ ব্যাংকারদের সাথে রাগারাগি, চিৎকার-চেঁচামেচিও যেমন করেন, গালিগালাজ এবং হুমকিধামকি দিতেও পিছপা হোন না কেউ কেউ।

কোনো গ্রাহকের এ্যাকাউন্টে একটু বড় অংকের টাকা আসলে বা বড় অংকের টাকা উত্তোলন বা ট্রান্সফার হলেও টাকার উৎস, উত্তোলন বা ট্রান্সফারের কারণ জেনে ব্যাংকাররা নিশ্চিত হতে চান। আর লেনদেনের অনুমিত মাত্রার (ট্রানজেকশন প্রোফাইল) সাথে লেনদেনের বড় ধরনের ব্যত্যয় হলে, টাকার উৎস, উত্তোলন বা ট্রান্সফারের কারণ নিশ্চিত হতে দালিলিক কাগজপত্র, যেমন- জমি ক্রয়ের টাকা পরিশোধ করতে কেউ ৫০ লাখ টাকা নগদ উত্তোলন বা অন্য কোনো হিসাবে ট্রান্সফার করতে গেলে ক্রয়কৃত জমির রেজিস্ট্রিকৃত দলিলের ফটোকপি চাইতে হবে ব্যাংকারকে।

কিন্তু জমির ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে আর্থিক লেনদেন সাধারণত জমির দলিল রেজিস্ট্রেশনের আগেই হয়ে থাকে। তাই রেজিস্ট্রেশন হওয়ার আগেই নতুন দলিলের কপি চাওয়াটা যৌক্তিক হতে পারে না। তাহলে লেনদেনের প্রাথমিক প্রমাণসরুপ দলিলের খসড়া কপি নিয়ে ব্যাংকার তাঁর গ্রাহককে ব্যাংকিং সুবিধাটি দিয়ে দিলেন- গ্রাহকের এই অনুরোধে যে, রেজিস্ট্রেশনের পরক্ষণেই রেজিস্ট্রিকৃত দলিলের সত্যায়িত কপি বা তার ফটোকপি ব্যাংকে জমা দিবেন। কিন্তু এ্যাকাউন্ট শুন্য করে সমুদয় টাকা নিয়ে যাওয়ার পরে ওই জমির ক্রেতা গ্রাহককে ব্যাংকে দ্বিতীয়বার হাজির করাবার সামর্থ্য কি ব্যাংকারের আছে? সেই গ্রাহক যদি আর ব্যাংকে না-ই আসেন তাহলে এই লেনদেনটির পরিপালন ত্রুটির দায় কে নিবে?

খসড়া দলিলের (যেখানে দাতা, গ্রহীতা, রেজিস্ট্রেশন অফিসের কারোর কোনো স্বাক্ষর বা সত্যায়ন নেই) গ্রহণযোগ্যতা আছে কি? যদি লেনদেনটি নিতান্তই সত্য ও বৈধ হয়ে থাকে, তাহলে কোনো কালেই হয়ত ব্যাংকারের বিপদে পড়ার কোনো শংকা থাকবে না। কিন্তু লেনদেনটি যদি অবৈধ তথা এর মাধ্যমে যদি মানি লন্ডারিং হয়ে থাকে, তাহলে আঙুল ব্যাংকারের দিকেই নির্দেশিত হবে- ‘ডিও ডিলিজেন্স’ অনুসরণ না করে ব্যাংকার সাহেব এই লেনদেনটি অনুমোদন করেছেন বলে অভিযুক্ত হবেন। তাহলে ব্যাংকারের কী করা উচিৎ ছিল? ব্যাংকার যদি এখানে শতভাগ কঠিন হতেন- রেজিস্ট্রেশনের আগেই রেজিস্ট্রিকৃত দলিলের অনুলিপি চাইতেন, তাহলে কি জমি ক্রয়-বিক্রয়ের কার্যটি আদৌ সম্ভব হত?

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

প্রভাবশালী গ্রাহকদের কেউ কেউ ব্যাংকারের এসব প্রশ্নে ও কাগজপত্রের চাহিদায় বিব্রত বোধ করেন এবং তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেন কেউ কেউ! ‘আমার টাকার উৎস আপনাকে বলতে হবে কেন? আপনি কি পুলিশ না র্যাব, যে আমাকে জেরা করছেন? আপনি ব্যাংকার, আপনার কাজ টেলারের কাজ- টাকা গুনে সহিসালামতে জমা রাখা- গোয়েন্দাগিরি করা নয়! এগুলোর জন্য আইন আছে; পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দাসংস্থা ও দুদক আছে। অতএব আপনি আপন চর্কায় তেল দেন!’; এমনটাই বলছিলেন ২০ লাখ টাকা জমা করতে আসা এক গ্রাহক। বোঝাই যাচ্ছে- ওনার টাকার গরম আছে, কিন্তু ব্যাংকারের মুখ পুঁজি ছাড়া আর আইনি কোনো ক্ষমতা নাই।আমার কাছে ব্যাংকারের এসব কার্যকে পুলিশি কার্য বলেই মনে হয়। কিন্তু ব্যাংকারদের পুলিশি কোনো ক্ষমতা আছে কি?

তাছাড়া আর্থিক লেনদেনের এ গোয়েন্দাগিরির দায়িত্ব কেবল ব্যাংকারের একার কেন? আট হাজার টাকা মাসিক মূল বেতনের একজন পিয়ন যখন কোটি টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট কিনতে বা রেজিস্ট্রেশন করতে যান, তখন বিক্রেতা বা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস কি জানতে চায় পিয়নের অর্থের উৎস? একইভাবে ২০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি করা কেউ যখন কোটি টাকা মূল্যমানের জমির উপর ১০ তলা ভবনের নকশার অনুমোদন চান- তখন নকশা অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ কি কখনো জানতে চান- আবেদনকারী কীভাবে এই জায়গার মালিক হলেন, নির্মিতব্য ভবনের অর্থের উৎস কী হবে? গাড়ি কিনতে আসা ক্রেতার কাছে কি বিক্রেতা জানতে চান- ২০ হাজার টাকার মাইনে পাওয়া সত্ত্বেও কোটি টাকার বিএমডব্লিউ কেনার টাকা কোথায় পেলেন? যদি এমনটা করা হত, তাহলে আট হাজার টাকা বেতনের কেউ কখনোই আট হাজার কোটি টাকার সম্পদের অবৈধ মালিক হতে পারতেন না। অথচ ব্যাংকে কয়েক হাজার টাকা জমা করে হিসাব খোলতে এবং টাকা লেনদেনে কত ধরনের জিজ্ঞাসাই না করতে হয় ব্যাংকার কর্তৃক গ্রাহককে!

কেউ কেউ আছেন- ব্যাংকারকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করা, হুমকি ধামকি এমনকি গায়ে হাত তুলতেও উদ্যত হন। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে ব্যাংকারের নিরাপত্তা কী? উচ্ছৃঙ্খল এসব গ্রাহকের সাথে কখনো একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেলে, ভয়ে তটস্থ থাকেন ব্যাংকার- অফিস থেকে বের হলে না জানি কী হয়! চলতে ফিরতে না জানি কোন বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়!

প্রায়ই এনবিআর থেকে নির্দেশ আসে বিভিন্ন গ্রাহকের হিসাব ফ্রিজ করতে। সাধারণত এসব গ্রাহক পয়সাওয়ালা এবং প্রভাবশালী হয়। এসব গ্রাহকরা তাদের ফ্রিজ হওয়া হিসাব থেকে যখন অর্থ উত্তোলন করতে আসেন, তখন ব্যাংকার টাকা উত্তোলনে অস্বীকৃতি জানালে ব্যাংকার এবং ব্যাংকের বারোটা বাজিয়ে ছাড়ার মত অবস্থার সৃষ্টি করেন এসব গ্রাহক। ব্যাংকের ভিতরে নানা অপ্রীতিকর ঘটনার উদয় হয়- নিজেদের স্থানীয় লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে ব্যাংকে তালা লাগিয়ে দেওয়ার মত হুমকিধামকিও দিতে দেখা যায়। এসব ক্ষেত্রে উচ্চ গলায় কথা বলার অধিকার থাকলেও ব্যাংকারের সেটা করার কোনো সুযোগ আছে কি? এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা মোকাবিলায় ব্যাংকারের কোনো ক্ষমতা আছে কি? যারা ব্যাংকারকে কাগুজে বাঘ হতে নির্দেশ দেন, সেই ব্যাংকারদেরকে যখন কেও শাসিয়ে যান কিংবা লাঞ্ছিত করেন- তখন ব্যাংকার কি কোনো ক্ষমতা চর্চা করতে পারেন?

নির্বাচনী দায়িত্ব ব্যাংকার ছাড়া চলেই না। কিন্তু পক্ষপাতিত্বের মিথ্যা অভিযোগ এবং পরাজিত প্রার্থীর হয়রানিমূলক মামলায় ব্যাংকারের পাশে তার ব্যাংক বা নির্বাচন কমিশন কাউকেই থাকতে দেখা যায় না- অসহায় ব্যাংকার একা একাই লড়ে যান এসব মামলা। বর্তমানে চালু হয়েছে- চেকের পেমেন্টের আগে চেকদাতা গ্রাহকের সম্মতি নেওয়ার বিধান। বিয়ারার চেক পেমেন্টের সময় নিতে হয় বাহকের এনআইডি। এসব কিছুর অজুহাতে চেকের পেমেন্ট না দিলেও ব্যাংকারকে অনেক ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা আছে- গ্রাহকদের কাছ থেকে কয়েন থেকে শুরু করে ছোট-বড় সব ধরনের কাগুজে নোট গ্রহণ করতে। শুধু তা-ই নয়- নিয়মিত নোটের পাশাপাশি ছেঁড়াফাঁটা নোটও গ্রহণ করতে হবে কোনো রকম ওজর আপত্তি ছাড়াই। কিন্তু নিয়মিত ছোট নোট জমা দেওয়া গ্রাহককেই যদি উত্তোলনের সময় ছোট নোট দেওয়া হয়, তাহলে তিনি যেন ব্যাংক নাড়িয়ে ফেলেন! প্রতিদিন যতবার ‘ম্যানেজার সাহেব, আমার সবগুলো এক হাজার টাকার বড় নোট লাগবে’ শোনতে পাই, তার এক হাজার ভাগের এক ভাগ সময়ও ব্যাংকাররা কোনো গ্রাহককে বলতে শোনেন না, ‘ম্যানেজার সাহেব আমার ৫৫ হাজার টাকার মধ্যে ৫ হাজার টাকার ১০ টাকা মূল্যমানের ছোট নোট লাগবে।’ ব্যাংকার যারা এ নিবন্ধটি পড়ছেন, তারা কি বলতে পারবেন, আপনি কোনো দিন আপনার কোনো গ্রাহককে কয়েন দেওয়ার সাহসিকতা দেখাতে পেরেছেন কিনা?

জাল টাকা প্রসঙ্গে ব্যাংকারের করণীয় শুনলে মনে হবে- ব্যাংকার খুব শক্তিধর কেউ! কোনো গ্রাহকের কাছে জাল টাকা পেলে জাল নোটসহ তাকে পুলিশে দেওয়ার বিধান আছে! তবে ব্যাংক যদি আশ্বস্ত হয় যে, গ্রাহক অনিচ্ছাকৃতভাবে সরল বিশ্বাসে কারো কাছ থেকে জাল টাকা গ্রহণ করেছে, তাহলে জাল টাকার উপর গ্রাহকের স্বাক্ষর বা আঙুলের ছাপ নিয়ে, তাঁর নাম-ঠিকানা, কার কাছ থেকে জাল নোট পেয়েছে- এই মর্মে স্বীকারোক্তি নিয়ে টাকার উপর ‘জাল’ সিল মারতে হবে বা লাল কালি দিয়ে বড় করে লিখে দিতে হবে ‘জাল’। এরপর এই নোট ও গ্রাহকের স্বীকারোক্তি অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশের কাছে পাঠাতে হবে। এই কাজটি সঠিকভাবে করার সাহস ক’জন ব্যাংকার দেখাতে পারেন বা আজ অবধি কেউ দেখিয়েছেন কি?

পরিচিত ও নিয়মিত গ্রাহকের কারো কারো টাকার বান্ডিলেও মাঝেমধ্যে জাল নোট পাওয়া যায়। এই জাল নোট জব্দ করা তো দূরের কথা, পাঞ্চ করতে চাইলে বা লাল কালি দিয়ে ‘জাল’ কথাটি লিখে দিতে গেলেই গ্রাহকের রক্তচক্ষু দেখেন অনেক ব্যাংকারই। এসব গ্রাহকদের যুক্তি হল- তিনি যার কাছ থেকে এই টাকা পেয়েছেন, তার কাছে তা অক্ষত অবস্থায় ফেরত দিয়ে সচল নোট নিয়ে নিবেন। তাই ব্যাংকার যদি এক হাজার টাকার জাল নোটটি জব্দ করে বা লাল কালি দিয়ে ‘জাল’ লিখে দেয় বা পাঞ্চ করে ছিদ্র করে দেয়, তাহলে ওই ব্যবসায়ী গ্রাহকের এক হাজার টাকার লোকসান গুনতে হবে। গ্রাহককে এই লোকসান থেকে বাঁচাতে এবং গ্রাহকের সাথে সম্পর্কের খাতিরে তথা গ্রাহকের হুমকিধামকির ভয়ে কখনো কখনো গ্রাহকের হাতেই জাল নোটটি ফেরত দিতে বাধ্য হন তখন বেচারা ব্যাংকার।

ব্যাংকিং এখন আর শুধু আমানত গ্রহণ আর ঋণ দানের সীমিত বা সহজ ব্যবসা নয়। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ইউটিলিটি বিল, কর, ফি ইত্যাদি গ্রহণের/আদায়ের পাশাপাশি ব্যাংকারকেই এসব গৃহীত বিল, কর ও ফি’র হরেক রকম তথ্য সন্নিবেশিত করে বিবরণী প্রস্তুত করে ওইসব প্রতিষ্ঠানকে দিতে হয়, অথবা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ড্যাটাবেজে প্রতি গ্রাহকের জন্যই রকমারি তথ্যের ইনপোটসহ এসব অর্থ গ্রহণ করতে হয়। অর্থাৎ টাকা গ্রহণের পাশাপাশি ওইসব প্রতিষ্ঠানের করণিক কার্যগুলোও এখন ব্যাংকারদের দিয়েই করিয়ে নেয়া হচ্ছে। এভাবে দিনের পর দিন ব্যাংকিং সেবার পরিসর বাড়ছে, বাড়ছে ব্যাংকারদের কাজের চাপ, মানসিক চাপ।

এক্ষেত্রে সর্বশেষ সংযোজন- গত ১৮ জুন ব্যাংকারদের দায়িত্ব বাড়িয়ে সার্কুলার জারি করেছে এনবিআর। এনবিআরের এই আদেশের ফলে ব্যাংকারকে ঋণগ্রহীতার মাসিক ভ্যাট রিটার্নের তথ্য (টার্নওভার/বিক্রয়ের পরিমাণ) যাছাই-বাছাই করতে হবে। যদি ব্যাংকে দাখিলকৃত গ্রাহকের ব্যবসার অডিট রিপোর্টের তথ্য ও ভ্যাট বিভাগে দাখিলকৃত রিটার্নের তথ্যের মধ্যে অসঙ্গতি বা কোনো গরমিল পাওয়া যায়, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে হবে এনবিআরকে। তা না করে ঋণ অনুমোদন করলে এর জন্য ব্যাংকের সংশ্নিষ্ট ব্যাংকাররা দায়ী হবেন। একইভাবে কোনো ব্যক্তির আয়কর রিটার্নে প্রদর্শিত সম্পত্তির সঙ্গে ব্যাংকে জমাকৃত ব্যালেন্স শিটে গরমিল পাওয়া গেলে তাকেও ব্যাংক ঋণ দেওয়া যাবে না এবং এ তথ্যও এনবিআরকে জানাতে হবে। নতুবা এর দায়-দায়িত্বও বর্তাবে ব্যাংক এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকারের উপরেই!

কিন্তু ব্যাংকাররা তো কর ও ভ্যাট বিশেষজ্ঞ নয়। রিটার্ন বিশ্লেষণের মত দক্ষতা ও সময় কোনোটাই ব্যাংকারদের নেই। তাছাড়া এত লোকবল কি ব্যাংকের আছে? আর ভ্যাট ও আয়কর রিটার্ন যাচাইয়ের দায়িত্ব যদি ব্যাংকারকেই পালন করতে হয়, তাহলে এনবিআরের দায়িত্ব কী? এ নির্দেশের কথা জানার পর আমার মনে হয়েছিল, এনবিআর হয়তো তাদের জনবল বা কার্যালয় কমিয়ে ফেলবে! কিন্তু না, এমনটা হচ্ছে না। নিজ অর্থে ব্যাংকে প্রয়োজনীয় জনবলও যোগান দিবে না এনবিআর, কিংবা নিজ দায়িত্বে ব্যাংকারদের সক্ষমতা বাড়াতে পর্যাপ্ত ট্রেনিংও করাবে না। তাহলে? এনবিআর হয় নিজের দায়িত্ব কমাতে অথবা ব্যাংকারদের দায় বাড়াতেই এটা করছে।

আরও দেখুন:
এক অদম্য ব্যাংকারের পথ চলা
একজন ব্যাংকারের স্যালারি কেন বেশি হওয়া উচিত!
এক অসহায় ব্যাংকারের আত্মসমর্পণ

সরকারের রাজস্ব ফাঁকি রোধে এবং রাজস্ব আয় বাড়াতে এনবিআর-এর যেকোনো পদক্ষেপকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু তা উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে নয় নিশ্চয়। এক্ষেত্রে এনবিআর যেটা করতে পারত, সেটা হচ্ছে- তাদের নিবন্ধিত করদাতা ও ভ্যাটদাতাদের নাম, ঠিকানা, টিআইএন ও ভ্যাট নিবন্ধন নম্বর দিয়ে ব্যাংকের কাছ থেকে সংশ্লিষ্ট সেসব ব্যক্তিদের আর্থিক বিবরণী ও ব্যাংক স্ট্যাটমেন্ট চাইতে পারে। তারপর তাদের এক্সপার্টগণ তা যাচাই-বাছাই করার পর যদি কোনো অসংগতি পান, তাহলে তারা নিজেরাই দোষী ঋণগ্রহীতা করদাতা/ভ্যাটদাতার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবেন।

কিন্তু এটা না করে বন্দুক রাখা হচ্ছে ব্যাংকারের কাঁধে। কিন্তু নিরীহ ব্যাংকারদের ক’জনের শক্তি-সামর্থ্য আছে বড় বড় কর ফাঁকি দেওয়া, ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া ক্ষমতাবানদের সাথে নিজের ক্ষমতা দেখানোর? তাই ব্যাংকারদের উপর এমন দায়িত্ব চাপিয়ে দিবেন না। ব্যাংকারদের কাছ থেকে অন্যভাবে সহযোগিতা নিন। আর যদি এভাবেই ব্যাংকারদের দিয়ে তলোয়ার চালাতে চান, তাহলে ব্যাংকারদের ঢাল-তলোয়ারবিহীন নিধিরাম সর্দার না বানিয়ে তাদেরকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দিন।

লেখকঃ মোশারফ হোসেন, ব্যাংকার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button