বিশেষ কলামস্কুল ব্যাংকিং

করোনাকালে স্কুল ব্যাংকিং

মো. জিল্লুর রহমানঃ প্রবাদ আছে, অর্থই অনর্থের মূল এবং এক্ষেত্রে অনেক শিক্ষার্থী অর্থের কারণে বখাটে হয়ে যায়। আর সময়মতো সঞ্চয় না করলে, ভবিষ্যতে অনেক সময় তাদের কাছে অন্ধকার মনে হয়। অর্থের অভাবে ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া যায় না, কখনও লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। যেহেতু সকল বাণিজ্যিক ব্যাংকে স্কুল ব্যাংকিং হিসাব খোলার সুযোগ আছে, তাই শিক্ষার্থীদের এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে ভবিষ্যতে ভালো ফল পাওয়া যাবে। শিক্ষার্থীদের আজকের সঞ্চয় ভবিষ্যতের উত্তম বিনিয়োগ ও আগামী দিনের সোনালি সোপানের ভিত্তি। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিন্দু গড়ে তোলে সিন্ধু। কথাটা সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে চরম সত্য।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, প্রায় ২৭ লাখ হিসাবে শিক্ষার্থীদের আমানত জমা হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকা এবং ক্রমেই বাড়ছে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমের পরিধি। ২০২০ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিকে স্কুল ব্যাংকিংয়ের হিসাব ৯.৭৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং একই সঙ্গে আমানত বেড়েছে ৭.১১ শতাংশ। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে এই প্রান্তিকে স্কুল ব্যাংকিং হিসাব এবং আমানতের ধীরগতি থাকলেও গত বছরের তুলনায় স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

কোমলমতি স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের জন্য যে ব্যাংকিং ব্যবস্থা তা-ই মূলত স্কুল ব্যাংকিং। এ হিসাব থেকে কোনো চার্জ কর্তন করা হয় না। বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে বাংলাদেশে ২০১০ সাল থেকে স্কুল ব্যাংকিং চালু করা হয়েছে। স্কুল ব্যাংকিং-এ যারা টার্গেট গ্রুপ ১১ থেকে ১৭ বছরের তরুণ-তরুণী, ছাত্রছাত্রীদের তাদের কোনো আয়ের উৎস নেই। তারা তাদের মা-বাবা, ভাইবোন, আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উৎসব, পার্বণে উপহার বা নগদ অর্থ পেয়ে থাকে অথবা নিয়মিতভাবে দুপুরের টিফিন বাবদ যে অর্থ পেয়ে থাকে তা থেকে কিছু কিছু অর্থ বাঁচিয়ে জমা রাখার নিমিত্তে স্কুল নিকটস্থ ব্যাংক শাখায় একটি সেভিংস হিসাব খোলার উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করাই স্কুল ব্যাংকিংয়ের উদ্দেশ্য।

আসলে স্কুল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে ছেলে-মেয়েদের অর্থব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বৃদ্ধি ও সঞ্চয় করার মনোভাব এবং অভ্যাস গড়ে তোলার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়াস। স্কুল ব্যাংকিং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রচলিত আছে। কমনওয়লেথ স্কুল ব্যাংকিং, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে স্কুল ব্যাংকিং একটি জনপ্রিয় সঞ্চয় বৃদ্ধির উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত। কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের খরচ কমানোর মাধ্যমে সঞ্চয় করার অভ্যাস গড়ে তোলার নিমিত্তে এ ধরনের ব্যাংকিংয়ের শুরু হয়েছে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

এর মাধ্যমে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা ছেলেবেলা থেকেই ব্যাংক হিসাব খোলার নিয়ম-কানুন, হিসাব পরিচালনায় দক্ষতা ও অভ্যাস গড়ে তুলতে পারদর্শী হবে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ ব্যাংকে জমা রেখে সঞ্চয়ের মনোভাব গড়ে তুলবে এবং নিয়মিত ব্যাংকে আসা-যাওয়া ও টাকা জমা উত্তোলন করতে করতে এক সময় দেখা যাবে সংশ্লিষ্টদের হিসাবে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা হয়েছে, যা টিফিনের পয়সায় বা গুরুজনদের দেওয়া উপহারের বদৌলতে সম্ভব হয়েছে। আর এর মাধ্যমে সঞ্চয়ের যে অভ্যাস গড়ে উঠবে, তা সারাজীবন সুফল দেবে। স্কুল ব্যাংকিংয়ের সেবা পৌঁছে গেছে সারা দেশের প্রায় সবখানেই। হয়তো এ সঞ্চয়ই এক সময় তার কলেজ, বিশ^বিদ্যালয়, দেশে বা বিদেশের উচ্চশিক্ষায় খুব কাজে আসবে।

বর্তমানে আমাদের দেশে ৫৫টি ব্যাংকে বিদ্যমান এই স্টুডেন্ট ব্যাংকিং স্কিম। এক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে সরকারি ব্যাংকের চেয়ে অনেকদূর এগিয়ে আছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। ব্যাংক হিসাব চালাতে গ্রাহককে কোনো না কোনো চার্জ দিতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে স্কুলের শিক্ষার্থীদের এই হিসাব চালাতে কোনো খরচ দিতে হয় না। চেক বই নিতে গুনতে হয় না কোনো মাশুল। জমা বই, ডেবিট কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিংসহ অন্যান্য সুবিধা তো আছেই। লেনদেন করা যায় যত খুশি। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের জন্য স্কুল ব্যাংকিংয়ের আমানত মূলত একটি দীর্ঘস্থায়ী আমানত, যা স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগযোগ্য।

স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের আগ্রহের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অংশগ্রহণ। ফলে ব্যাংকগুলোতে এই কার্যক্রমের আওতায় খোলা হিসাবের পাশাপাশি আমানতের পরিমাণও অব্যাহতভাবে বাড়ছে। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান ২০১০ সালে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঞ্চয় উদ্বুদ্ধ করতে ‘স্কুল ব্যাংকিং’ কার্যক্রমের উদ্যোগ নেন। তবে শিক্ষার্থীরা টাকা জমা রাখার সুযোগ পায় ২০১১ সাল থেকে। ২০১১ সালে ১০ টাকা দিয়ে হিসাব খোলা হলেও পরে হিসাব খুলতে ১০০ টাকা জমা রাখতে বলা হয়। এসব হিসাব সাধারণ সঞ্চয়ী হিসাবে রূপান্তরের সুযোগও আছে।

আরও দেখুন:
◾ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি না হওয়ার সুযোগ বাড়ল
◾ ঋণ পরিশোধের সময়সীমা আরও বাড়লো
◾ ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা

ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকণা বিন্দু বিন্দু জল, সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে কথাটি চরম সত্য। সঞ্চয় হচ্ছে ভবিষ্যতের মাপকাঠি, স্বপ্নের সিঁড়ি ও চরম বিপদের বন্ধু। ভবিষ্যতে, বৃদ্ধ বয়সে, অবসর যাওয়ার পর আরাম আয়েশ করা, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া, বিয়ে-শাদি, হঠাৎ অসুস্থ হলে চিকিৎসা ব্যয় মেটানো ইত্যাদি নানা প্রয়োজনে সঞ্চয় খুব উপকারে আসে। তাই ভবিষ্যতে অর্থের সংকট মেটাতে সবার সঞ্চয় করার অভ্যাস করা জরুরি।

কালকের কথা চিন্তা না করে আজ থেকেই অল্প অল্প সঞ্চয় করা উচিত। হতে পারে সেটা মাটির ব্যাংক, সমিতি, বেসরকারি সংস্থা বা কোনো তফসিলি ব্যাংক। শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতের কান্ডারি, জাতির কারিগর, স্বপ্নের সিঁড়ি এবং শিক্ষার বিপরীতে তাদের সঞ্চয় ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের উত্তম বিনিয়োগ। হয়তো এ সঞ্চয়ই এক সময় তার কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, দেশে বা বিদেশের উচ্চশিক্ষায় খুব কাজে আসবে।

লেখকঃ মো. জিল্লুর রহমান, ব্যাংকার ও মুক্তমনা কলামিস্ট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button