ব্যাংকিং

অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর টুকিটাকি-৩

আইন কোন রকেট সাইন্স নয়। অজ্ঞতার কারণে আমরা এই বিষয়টিকে এড়িয়ে চলি এবং কঠিন মনে করি। এই সিরিজে অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ একজন ব্যাংকারের কাছে বোধগম্যভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করবো আমরা। তবে আইন পাঠদান এই সিরিজের উদ্দেশ্য নয়। অর্থ ঋণ আদালত আইন বিষয়ক যে প্রশ্নগুলো বারবার আসে এবং যে বিষয়গুলো একজন ব্যাংকারের জানা থাকা ভালো সেগুলোই আলোচনা করার চেষ্টা করা হবে এই সিরিজে। তবে আইনী যেকোন পদক্ষেপ গ্রহণের পূর্বে আপনার উচিত হবে আইন বিভাগের সাথে পরামর্শ করে কাজ করা।

আরজি বা Plaint
আরজি বা Plaint এর মানে হচ্ছে দরখাস্ত। যখন কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান কোন ঋণ গ্রহীতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তখন একটি বিস্তৃত দরখাস্ত দিতে হয় যেটিকে আরজি বা Plaint বলা হয়। এই আরজিটি লিখে থাকেন ব্যাংকের প্যানেল আইনজীবী, কিন্তু যদি ধারণা থাকে তাহলে একজন ব্যাংকার এটি রিভিউ করে ভ্রান্তিমুক্ত ও সহজবোধ্য আরজি তৈরীতে সাহায্য করতে পারেন।

আরও দেখুন:
অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর টুকিটাকি-১
অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর টুকিটাকি-২
অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর টুকিটাকি-৪

আরজিতে কতগুলো গুরুত্ত্বপূর্ণ পয়েন্ট থাকে এবং এগুলো কিভাবে গুছিয়ে লিখতে হবে, আইনেই তা সুন্দর করে বলা আছে। যেমন আপনি (ব্যাংক) মামলা করছেন, কাজেই শুরুতেই আপনার পরিচয় এবং ঠিকানা দিতে হবে। এরপর বিবাদীর (যার বিরুদ্ধে মামলা করছেন) নাম এবং ঠিকানা দিতে হবে। এরপর কত টাকার জন্য মামলা করছেন, সেটি বলতে হবে। এরপরের অংশটি গুরুত্ত্বপূর্ণ, বিবাদীর সাথে আপনার ব্যাংকিং সম্পর্কের শুরু থেকে শেষ অনুমোদন পর্যন্ত বর্ণনা দিতে হবে। সাথে সাথে বিবাদী যে চার্জ ডকুমেন্ট, বন্ধক দিয়েছেন এগুলো বলতে হবে। শেষবার অনুমোদনের পর নিশ্চয় গ্রাহক আর টাকা দেননি, কাজেই টাকা চেয়ে আপনি যে নোটিশগুলো দিয়েছেন, সেগুলো সংক্ষেপে বলতে হবে। এর পর যদি লিগ্যাল নোটিশ দিয়ে থাকেন, সেটি উল্লেখ করবেন। যদি নিলাম প্রকাশ করে থাকেন, তাহলে সেটিও সংক্ষেপে বলতে হবে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

এরপর সংক্ষেপে মামলার Cause of Action বা মামলা দায়েরের কারণ বলতে হবে। Cause of Action এ সাধারণত কিছু তারিখ উল্লেখ করা হয়, যেমন ঋণের Expiry Date, Reminder Letter Dates, Auction Date ইত্যাদি। Expiry Date এ ঋণ পরিশোধের সময়সীমা শেষ হয়েছে, কিছু গ্রাহক ঋণ পরিশোধ করেননি। বিভিন্ন তারিখে Reminder Letter দিয়েছেন কিন্তু গ্রাহক ঋণ পরিশোধ করেননি। Auction প্রকাশ করেছেন কিন্তু সম্পত্তি বিক্রি হয়নি। কাজেই নিরুপায় হয়ে আপনি আদালতের স্মরণাপন্ন হয়েছেন। এগুলো সবই একত্রে Cause of Action বা মামলা দায়েরের কারণ।

এরপরের প্যারায় সরকার নির্ধারিত কোর্ট ফি কত টাকা দিয়েছেন সেটি বলতে হবে। তারপর আপনি যে আদালতে মামলা করেছেন, সেই আদালতের এই মামলা বিচারের এখতিয়ার আছে মর্মে আপনাকে ঘোষণা দিতে হবে।

এরপরের প্যারায়, আদালতের কাছে কি প্রতিকার চান, সেটি বলতে হয়। যেমনঃ আপনি যে টাকা দাবী করেছেন সেই টাকার জন্য সকল বিবাদীর বিরুদ্ধে ডিক্রী চান, অর্থ ঋণ আদালত আইন আওনুযায়ী টাকা আদায় না হওয়া পর্যন্ত সুদ চান, বন্ধকীকৃত সম্পত্তি বিক্রির অধিকার চান, বিবাদীদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার অধিকার চান (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ইত্যাদি।

এরপর সাধারণত দুটি শিডিউল দিতে হয়। প্রথম শিডিউলে আপনি যে টাকার জন্য মামলা করেছেন তার Break Up (গ্রাহক কত টাকা ঋণ নিয়েছেন, কত টাকা সুদ ও অন্যান্য চার্জ ধার্য হয়েছে, গ্রাহক কত টাকা পরিশোধ করেছেন এবং বাকী কত টাকা আপনি পান) দিতে হয়। অপর শিডিউলে আপনার নিকট বন্ধকীকৃত বা হাইপোথিকেটকৃত সম্পত্তির বর্ণনা দিতে হবে।

আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, মামলার আরজিতে যে সকল ডকুমেন্টের (যেমন ঋণের আবেদন পত্র, মঞ্জুরীপত্র, চার্জ ডকুমেন্ট, বন্ধকী ও পাওয়ার দলিল, Reminder Letters, Legal Notice, Auction Notice, ঋণ হিসাবের Statement) কথা উল্লেখ করবেন, সেগুলোর মূল কপি বিচার কাজ চলার সময় আদালতে জমা দিতে হয়। সাধারণত ব্যাংকগুলো এই কাগজপত্রের ফটোকপি মামলা দায়েরের সময় আদালতে জমা দেন। মূল কপি বা ফটোকপি যাই জমা দেন না কেন, একটি লিষ্ট করে এই কাগজপত্র জমা দেয়া হয় যাকে বলা হয় ফিরিস্তি ফর্ম।

মোটামুটি আরজির সম্পর্কে বিস্তারিত বলা শেষ। কাজেই আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, আরজির মূল বক্তব্য তৈরী করা একজন আইনজীবীর চাইতে ব্যাংকারের জন্যই সহজ কাজ। আইনী বিষয়গুলো দেখার জন্যতো আইনজীবী আছেনই। মামলার আরজি বা Plaint যত সহজবোধ্য থবে, মামলা প্রমাণে সুবিধা হবে।

কার্টেসিঃ মাই ব্যাংক বিডি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button