ব্যাংকিং

অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর টুকিটাকি-৪

এই সিরিজে অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ কে একজন ব্যাংকারের দৃষ্টিতে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হবে। আইন পাঠদান এই সিরিজের উদ্দেশ্য নয়। অর্থ ঋণ আদালত আইন বিষয়ক যে প্রশ্নগুলো বারবার আসে এবং যে বিষয়গুলো একজন ব্যাংকারের জানা থাকা ভালো সেগুলোই আলোচনা করার চেষ্টা করা হবে এই সিরিজে। তবে আইনী যেকোন পদক্ষেপ গ্রহণের পূর্বে আপনার উচিত হবে আইন বিভাগের সাথে পরামর্শ করে কাজ করা।

অর্থ ঋণ বা জারী মামলা কি তামাদি হয়, যদি হয় তবে কত দিনে?
প্রথমেই বলে নেই তামাদি হওয়া বলতে কি বোঝায়? এটি আমাদের নিজস্ব বোধ থেকে দেয়া ব্যাখ্যা। কোন একটি ঘটনা সংগঠিত হবার পর কত দিনের মধ্যে আপনি আদালতে গিয়ে প্রতিকার চাইতে পারেন, এটি বিভিন্ন আইনে নির্দিষ্ট করে বলা আছে। যদি ঐ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যদি আপনি আদালতে না যান, তাহলে মামলা করার সুযোগ হারাবেন আপনি। এই সুযোগ হারানোকেই বলা হয় তামাদি হওয়া।

আরও দেখুন:
অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর টুকিটাকি-১
অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর টুকিটাকি-২
অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর টুকিটাকি-৩

সাধারণত ব্যাংক টাকা আদায়ের সব ধরণের চেষ্টা করে যখন ব্যর্থ হয়, তখনই মামলা করে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ব্যাংক কতদিন অপেক্ষা করে মামলা করবে। আমাদের সিরিজের প্রথম পর্বে আমরা কিন্তু বলেছি, ব্যাংক শ্রেণীমান নির্বিশেষে, নোটিশ প্রদান সাপেক্ষে, এমনকি অশ্রেণীকৃত গ্রাহকের বিরুদ্ধেও মামলা করতে পারে। ঐ লেখার স্পিরিট ছিল কত তাড়াতাড়ি আপনি মামলা করতে পারবেন। আর এখানে আমরা দেখবো মামলা দায়েরের জন্য আপনি সর্বোচ্চ কতদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারবেন।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

অর্থ ঋণ আদালত আইনের ৪৬ ধারার উপধারা ১ অনুযায়ী, কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান Sanction Letter অনুযায়ী ঋণ পরিশোধ সূচী (Repayment schedule) শুরু হবার পরবর্তী-
(ক) প্রথম এক বছরে প্রাপ্য অর্থের অনুন্য ১০%, অথবা
(খ) প্রথম দুই বছরে প্রাপ্য অর্থের অনুন্য ১৫%, অথবা
(গ) প্রথম তিন বছরে প্রাপ্য অর্থের অনুন্য ২৫%
পরিমাণ অর্থ যদি ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে আদায় করতে না পারে, তাহলে তার পরবর্তী এক বছরের মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে অর্থ ঋণ আদালতে মামলা দায়ের করতে হবে।

আর উপধারা ৩ অনুযায়ী, ঋণ পরিশোধ সূচী (Repayment schedule) অনুযায়ী ঋণ পরিশোধের নির্ধারিত সাকুল্য মেয়াদ ৩ (তিন) বছর অপেক্ষা কম হলে, উক্ত নির্ধারিত সাকুল্য মেয়াদের মধ্যে আদায়ের পরিমাণ ২০% এর চেয়ে কম হলে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরবর্তী ১ (এক) বছরে মধ্যে মামলা দায়ের করবে। উল্লেখ্য যে উভয় ক্ষেত্রেই যদি ঋণ পুনঃতফসিল হয়ে থাকে, তবে পুনঃতফসিলের পরিশোধসূচী বিবেচনায় নিতে হবে (উপধারা ২ ও ৪)।

এখন আমরা মূল প্রশ্নে ফিরে যাই। যদি এই ৪৬ ধারার উপধারা ১ থেকে ৪ এ বর্ণিত সময়ের মধ্যে ব্যাংক যদি মামলা না করে, তাহলে কি আর মামলা করা যাবেনা? চলুন তাহলে আইন কি বলে দেখে আসি। একই আইনের ৪৬ (৫) উপধারা অনুযায়ী উপ-ধারা (১) বা, ক্ষেত্রমত, (২) এবং (৩) বা, ক্ষেত্রমত, (৪) এ উল্লিখিত মেয়াদ শেষে কোন মামলা দায়ের করা হলে, আদালত অবিলম্বে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীকে লিখিতভাবে অবহিত করবে; এবং কোনো কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার কারণে মেয়াদের মধ্যে উক্ত মামলা দায়ের না হলে, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ অনুরূপ দায়ী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং এই উপ-ধারার অধীন অবহিত হওয়ার ৯০ (নব্বই) দিনের মধ্যে গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে সরকার এবং আদালতকে অবহিত করবে।

দেখুন ৪৬(৫) উপধারায় কিন্তু বলা হয়নি যে মামলা তামাদি হবে বা মহামান্য আদালত মামলা গ্রহণ করবে না। এই যুক্তিতে অনেকে বলেন যে, অর্থ ঋণ মামলা তামাদি হয়না। অর্থাৎ নির্ধারিত সময় পার হয়ে যাবার পরও আপনি মামলা করতে পারবেন। কিন্তু তামাদি হোক বা না হোক, শেষ সময়ের জন্য অপেক্ষা না করে দ্রুত মামলা করে দেয়াটাই আমরা মনে করি একজন ব্যাংকারের জন্য Due Diligence. অথবা আপনি ভাবুন আপনার গাফিলতির কারণে মামলা দায়েরে বিলম্ব হলো আর কোর্ট থেকে আপনার এমডি বরাবর চিঠি আসলো, তখন আপনার কি অবস্থা হতে পারে!!!

এবারে আসি, অর্থ জারী মামলা কি তামাদি হয়? দেখুন আইনে কি বলা হয়েছে-
অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর ২৮ এর ১ উপধারা অনুযায়ী, ডিক্রীদার (অর্থাৎ ব্যাংক), আদালতযোগে ডিক্রী বা আদেশ কার্যকর করতে ইচ্ছা করিলে, ডিক্রী বা আদেশ প্রদত্ত হওয়ার অনূর্ধ্ব ১ (এক) বৎসরের মধ্যে, ধারা ২৯ এর বিধান সাপেক্ষে (ধারা ২৯: আদালত, রায় প্রদানের সময় ডিক্রীকৃত টাকা এককালীন অথবা কিস্তিতে পরিশোধের জন্য কোন সময়সীমা নির্ধারণ করে থাকলে, অনুরূপ সময়সীমা অতিক্রান্ত বা অকার্যকর হবার পর হতে ধারা ২৮(১) এ উল্লিখিত সময়সীমা কার্যকর হবে৷) জারীর জন্য আদালতে দরখাস্ত দাখিল করিয়া মামলা করিবে।

আর ২৮(২) উপ-ধারা অনুযায়ী ২৮(১) উপধারা এর বিধানের ব্যত্যয়ে, ডিক্রী বা আদেশ প্রদানের পরবর্তী ১ (এক) বৎসর অতিবাহিত হইবার পরে জারীর জন্য দায়েরকৃত কোন মামলা তামাদিতে বারিত হইবে এবং অনুরূপ তামাদিতে বারিত মামলা আদালত কার্যার্থে গ্রহণ না করিয়া সরাসরি খারিজ করিবে।

অর্থাৎ অর্থ ঋণ মামলায় রায় প্রদানের সময় বিজ্ঞ আদালত যদি ঋণ পরিশোধের জন্য ঋণ গ্রহীতাকে কোন সময় প্রদান করে থাকেন, তাহলে সেই সময় অতিক্রান্ত হবার ১ বছরের মধ্যে অর্থ জারী মামলা করতে হবে। না হলে তা তামাদি হয়ে যাবে, কাজেই আপনি আর জারী মামলা দায়ের করতে পারবেন না। অতএব সাবধান।

কার্টেসিঃ মাই ব্যাংক বিডি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button