ব্যাংকার

করোনায় অর্থ ব্যবস্থাপনায় ব্যাংকার

মনজুরুল হকঃ করোনার এই মহাদুর্যোগে ব্যাংকের যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, সেটা গত ১৩ তারিখ অনেকেই অনুধাবন করতে পেরেছেন। কারণ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার প্রজ্ঞাপন জারি করার পরেও সকল শ্রেণীর মানুষের প্রয়োজনের কথা চিন্তা করে আবার চালু রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হয়। আমরা হয়ত অনেকেই সেভাবে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করিনা। যদি কাউকে প্রশ্ন করা হয়, করোনাকালীন সময়ে ব্যাংক আর ব্যাংকার আপনার কি কাজে লাগে? অনেকেই হয়ত এককথায় উত্তর দিয়ে দেবেন, করোনাকালীন এই সময়ে ব্যাংকারদের আবার কোন কাজে লাগে?

একটা সহজ প্রশ্ন করি, স্মৃতি হাতড়ে উত্তরটা দিবেন। কোন না কোন সময় আপনার এলাকায় হয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ (ঘুর্নিঝড়, বন্যা) হয়েছে। অনেকেই ঘর বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন। সেটা যাবারই কথা। কিন্তু যে কোন দুর্যোগে এলাকায় অবস্থিত যে ব্যাংক, সেটি কি বন্ধ পেয়েছেন? গ্রাহকদের কথা চিন্তা করে ব্যাংকাররা তাদের কাজ চালিয়ে গেছেন। দুর্যোগের কথা বাদ দিন। ঈদ, পুজা, নির্বাচন কিংবা যে কোন কারণে যদি লম্বা সময়ের জন্য ছুটি হয়, অনেক চাকরিজীবী, পেশাজীবী নিজ গ্রামে আপনজনদের কাছে চলে যান।

কিন্তু লম্বা ছুটির মধ্যে ব্যবসা, বাণিজ্যের যাতে সমস্যা না হয় কিংবা কেউ যাতে অর্থ সমস্যায় না পড়ে, সেই জন্য লম্বা ছুটির মধ্যেও অনেক সময় ব্যাংক খোলা থাকে। ব্যাংক খোলা থাকার কারণে ব্যাংকাররা তখনও নিজের আপনজনের কাছে না যেয়ে, কর্মস্থলে থেকেই মানুষকে সেবা দিয়ে যান। সরকারের ঘোষিত দায়িত্ব যদি ব্যাংকারদের উপর এসে পড়ে, তবে তারা সেটা সুশৃঙ্খল ভাবে করে থাকে।

করোনার কারণে সবকিছু লন্ডভন্ড। ১৪ এপ্রিল রেকর্ড ৯৬ জন মানুষ করোনায় মারা গেছে। প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলেছে। যেন থামার কোন লক্ষণ নেই। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হচ্ছে সংক্রমণের বিষয়টি। হাঁচি-কাশি, স্পর্শের মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে। আর ব্যাংকারদের কাজ করতে সাধারণ মানুষদের নিয়ে। নানা প্রান্ত থেকে বিভিন্ন বয়সের মানুষ ব্যাংকে আসেন। যে কারণে ব্যাংকারদের ঝুঁকি থেকেই যায়।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

এখন মানুষের বাসায় কিন্তু সিন্দুক নাই। টাকা পয়সা কলসে রেখে মাটির নীচে পুতে রাখবে সেই ব্যবস্থারও এখন সুযোগ নাই। যার টাকা আছে, তার ব্যাংক একাউন্টও আছে। কৃষক, শিক্ষার্থী, হিজড়া থেকে শুরু করে সকল শ্রেণীর মানুষ এখন ব্যাংকিং সেবার আওতায়। এখন ১০০০/ ২০০০ টাকা লাগলেও মানুষ এটিএম বুথে যায় কিংবা বাড়ির পাশে ব্যাংকে যায়। অনেকের পকেটে নগদ টাকা পাওয়া যায় না, কয়েকটা ব্যাংকের ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড পাওয়া যায়। কেউ কেউ এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলে দৈনন্দিন বাজার করে। মানুষ যত ব্যাংকমুখী, ব্যাংকারদের কর্মপরিধি ততই বিস্তৃত।

আরও দেখুন:
◾ ৫ দিন বন্ধ থাকার পর আন্তঃব্যাংক (NPSB) লেনদেন চালু
◾ ই-টিআইএনের সঙ্গে আয়কর রিটার্ন বাধ্যতামূলক
◾ ব্যাংক খোলা গ্রাহক উপস্থিতি কম
◾ অ্যাকাউন্ট মেইনটেন্যান্স ফি বছরে একবারের বেশি নয়
◾ সিএমএসএমই প্যাকেজ থেকে ঋণ দেয়ার সময় বাড়ল

ধরুণ, আপনার অনেক টাকা আছে। কিন্তু যে কোন প্রয়োজনের মুহূর্তে যদি টাকা আপনি হাতে না পান, তবে টাকা থাকা আর না থাকা সমান। ব্যাংকগুলো কিন্তু আমাদের সেই প্রয়োজনীয় সময়ে টাকার অভাবটা পূরণ করছেন। টাকার সম্পূর্ণ নিরাপত্তার সাথে সাথে ইন্টারেস্ট কিংবা মুনাফার বিষয়টাতো থাকছেই। কেউ বলতে পারবে না, অমুক কর্মকর্তা ছুটিতে ছিল, সেই কারণে শাখা আমার টাকা সেই দিন দেয়নি।

বর্তমান এই করোনাকালে সাধারণ মানুষ যেন অর্থ কষ্টে না পড়ে, ব্যবসায়ীদের কার্যক্রম যেন স্থবির হয়ে না পড়ে, সেজন্য ব্যাংকগুলো নির্দেশনা মোতাবেক সীমিত পরিসরে প্রতিদিনই তাদের কাজগুলো চালিয়ে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে কাজের জন্য ঝুঁকি রয়েছে, তারপরেও ব্যাংকাররা মানুষের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন। করোনার ভয়ে কোন ব্যাংক কর্মকর্তা কোন গ্রাহককে ব্যাংকিং সেবা দিতে রাজি হননি, এমন রেকর্ড এখনও আমরা দেখিনি। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত যত গ্রাহকই শাখায় আসছেন, তারা সকলেই সেবা পাচ্ছেন। ব্যাংক কর্মকর্তাদের রাস্তায় বের হতে হচ্ছে। দূর-দূরান্ত থেকে অফিসে আসছেন। সবই কিন্তু মানুষের জন্য। ব্যাংকের চেইন অব কমান্ড খুবই শক্তিশালী। বিশৃঙ্খলা তাদের মাঝে দেখা যায় না।

অনেক ব্যাংক কর্মকর্তাই তাদের চাকরিকে নন-থ্যাংকস জব বলে থাকেন। এটা আসলে তাদের মনের কষ্ট থেকেই হয়ত বলেন। সেদিন এক ব্যাংকের কর্মকর্তা বলছিলেন, ব্যাংকগুলো হচ্ছে পরিবারে গৃহিনী মায়েদের মত। মুখবুজে সারাদিন পরিবারের সকলের জন্য কাজ করে। কথাবর্তা কম বলে। অনেকেই সেটা উপলব্ধি করতে পারেনা। কিন্তু মা যদি ঘরে দুই চার দিন না থাকে, তখন সকলেই হাড়ে হাড়ে টের পায়, মা সংসারের কতটা প্রয়োজনীয়।

দেশের যে কোন মহাদুর্যোগে সকল ব্যাংকার সবসময় প্রস্তুত থাকে। তারা তাদের কাজটুকু সকল সময় ভালোভাবেই করে থাকে। সাধারণ মানুষও ভালোবাসে, সম্মান করে চাকরিজীবী এই মানুষগুলোকে। ভালো থাকুক দেশের সকল ব্যাংকার। হাসিমুখে সেবা দিক সকলকে।

লেখকঃ মনজুরুল হক, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার, এবি ব্যাংক লিমিটেড, খুলনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button