ফিনটেক

ক্রেডিট কার্ড ফ্রড প্রিভেনশনে মেশিন লার্নিং…বাংলাদেশী ব্যাংকগুলোতে কতটা জরুরী?

আব্দুল্লাহ আল-মামুনঃ আপনি প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকার বেশি ট্রাঞ্জেকশন করতে পারবেন না এটাকে বলে রুল-বেজড অ্যাপ্রোচ, আর আপনার লিমিট ঐটাই আছে কিন্তু আপনার ট্রান্সজেক্শন প্যাটার্ন বলছে আপনি সপ্তাহে ১০ হাজার টাকার বেশী ট্রাঞ্জেকশন করেন না, এটাকে বলে মেশিন লার্নিং অ্যাপ্রোচ। মনে করুন আপনার কার্ড হ্যাক হয়েছে, তাহলে হ্যাকার কিন্তু একদিনেই ৫০ হাজার টাকা ট্রাঞ্জেকশন করে ফেলবে যেটা রুল-বেজড অ্যাপ্রোচ আটকাতে পারবে না, কিন্তু মেশিন লার্নিং(ML) ধরতে পারবে।

আচ্ছা ধরলাম, আপনি আসলেই নিজেই হুট করে বড় অংকের ভ্যালিড ট্রাঞ্জেকশনটাই করতে চাচ্ছেন, কোনো প্রোব্লেম নেই, ML সাস্পিসিয়াস ট্রাঞ্জেকশন ডিটেক্ট করলেই ট্রাঞ্জেকশন হওয়ার আগে আপনার কাছে OTP যাবে এবং আপনি OTP কনফার্ম করলেই শুধু Transaction টা শেষ হবে। যদি আপনার Transaction এ্যলার্ট থাকে তবে রুল বেজড অ্যাপ্রোচে Transaction হয়ে যাওয়ার পর আপনি SMS পাচ্ছেন এবং কল সেন্টারে ফোন করতে করতেই কিন্তু আপনার max লিমিট Transaction হ্যাকার শেষ করে ফেলবে। কিন্তু ML থাকলে Transaction হওয়ার আগেই আপনি জানতে পারতেন।

এবার আর একটা উদাহরণ দেই, ধরুন সকাল ১০ টার সময় আপনি মতিঝিল ATM থেকে ট্রাঞ্জেকশন করলেন, তার ৫ মিনিট পর সকাল ১০ টা ৫ মিনিটে উত্তরা ATM থেকে রিকুয়েষ্ট আসলে সেটা কি সাস্পিসিয়াস না? প্রচলিত রুল বেজড অ্যাপ্রোচে জিওগ্রাফিক্যাল লোকেশন, দুইটা ATM এর ডিসটেন্স এত কিছু দিয়ে আটকাতে হলে আপনাকে প্রতিনিয়ত এই রকম রুলগুলো সোর্স কোডে if-else লিখে লিখে আটকাতে হবে। আবার ধরুন আপনি সাধারণত মাসের ১০-১২ তারিখের দিকে বাসা ভাড়া দেয়ার জন্য ২০ হাজার টাকা তোলেন কিন্তু অন্য তারিখে আপনি সাধারণত ৫ হাজার টাকা তোলেন, এই ধরনের predictive এ্যনালাইসিস এর জন্য কিন্তু রিগ্রেশন এ্যনালাইসিস এর বিকল্প নেই।

এডুকেশনের সাথে ই-কমার্স ট্রাঞ্জেকশনের কো-রিলেশন থাকতে পারে, কিম্বা দিন-রাত এর সাথে কিম্বা স্পেসিফিক টাইম ফ্রেমের সাথে ট্রাঞ্জেকশনের কো-রিলেশন থাকতে পারে। এই ফিচার এক্সট্রাকশন রুল বেজড অ্যাপ্রোচে মান্যুয়ালী করতে হয় অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে এবং সিস্টেম নিজ থেকে লার্ন করতে পারে না, কিন্তু মেশিন লার্নিং খুব সহজেই Chi-Square কিম্বা Recursive Elimination ইত্যাদি অনেক ফিচার সিলেকশন এ্যল্গোরিদম থেকে হিস্ট্রি ডেটা এ্যনালাইসিস করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মোস্ট কোরিলেটেড ফিচার গুলোর রেটিংসহ আলাদা করতে পারে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

ML মুলত তিনটা স্টেপে কাজ করেঃ
১। প্রথমে ডাটা ক্লিনিং আর ফিচার সিলেকশন এর পর ট্রেনিং ডাটা সেট তৈরী করা হয়, এই ট্রেনিং ডাটা মুলত হিস্ট্রি ডাটা।
২। এই ট্রেনিং ডাটা সেটের উপর বিভিন্ন মেশিন লার্নিং এ্যল্গোরিদম এ্যপ্লাই করে একটা মডেল ডেভেলোপ করা হয়।
৩। তারপর যেকোন টেস্ট ডাটা সেট কিম্বা যে ট্রাঞ্জেকশনটা আমরা টেস্ট করতে চাচ্ছি সেটা এই মডেলে পাস করলেই একটা প্রেডিক্টিভ রেজাল্ট দেয়।

এই পুরো প্রসেসের ভেতর সব থেকে গুরুত্বপুর্ণ হচ্ছে ট্রেনিং মডেল ডেভেলোপ করা। সিংগাপুরের ডাটা সেট এর উপর ডেভেলোপ করা মডেল বাংলাদেশে কাজ করবে না আবার সব ডাটা সেটে সব এ্যলগোরিদম বেস্ট রেজাল্ট দিবে না। এখানেই মেশিন লার্নিং আর ডাটা সায়েন্টিস্টের আর্ট।

মনে করুন, আপনি যে ট্রাঞ্জেকশনটি করতে চাচ্ছেন বিভিন্ন ক্যাল্কুলেশনের পর তার রিক্স স্কোর পেলেন ৭০ এখন আপনাকে আগে থেকেই সিস্টেমে বলা থাকতে হবে কত রিস্ক ফ্যাক্টর পর্যন্ত আপনি সাস্পিসিয়াস ধরবেন না। এখন এই থ্রেসহোল্ডটা যদি খুব কম হয় তবে প্রচুর ফলস পজিটিভ আসবে আবার যদি অনেক বেশী হয় তবে কিন্তু আপনার বিজনেস ডোমেইন কমে যাবে। এই যে থ্রেসহোল্ড এটা ঠিক করা হয় ROC (Receiver Operating Characteristic) কার্ভ থেকে।

আবার এই থ্রেসহোল্ড ডাটা সেটের উপর কেমন পারফর্ম করছে সেটা জানার জন্য লাগবে AUC (Area Under Curve). AUC পারসেন্টেজ যত বেশী সেই মডেলটি এই ডাটা সেটের উপর তত ভালো কাজ করে। আবার শুধু এ্যকুরেসী দিয়ে সব সময় অপ্টিমাম রেজাল্ট পাওয়া যাবে না। কারণ ১ লাখ ট্রাঞ্জেকশন এর ভেতর ফ্রড হয়ত হবে একটা। এখন এ্যলগোরিদমটি যদি ভ্যালিড ট্রাঞ্জেকসনকে ভ্যালিড বলতে পারে কিন্তু ইনভ্যালিড টা না ধরতে পারে তাহলেও কিন্তু তার এ্যকুরেসী অনেক বাড়বে, তাই সেক্ষেত্রে প্রিসিশন, রিকল এই জিনিসগুলো কনসিডার করতে হবে।

তাই হুট করে একটা ML সিস্টেম নিয়ে আসলেই কাজ করবে না। দরকার পরিকল্পিত প্রস্তূতি, তা না হলে আগামী দিনের কম্পেটিটিভ গ্লোবাল ইকোনোমীতে আমরা টিকতে পারব না। তাই এখন থেকেই সব ব্যাংগুলোর ML সিস্টেমের দিকে নজর দেয়া দরকার। আর এটার সুবিধা-অসুবিধা, চ্যালেঞ্জগুলো বোঝানোর দায়িত্ব আমাদের আইটি প্রকৌশলীদের, আমাদের ফিনটেক ভেন্ডরদের…

লেখকঃ ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল্লাহ আল-মামুন, বি.এসসি (সিএসই, কুয়েট), এম.এসসি (আইসিটি, বুয়েট), আইটি ম্যানেজার, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড এবং এক্স-সিনিয়র সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার, ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড।

আরও দেখুন:
ফিনটেক কী এবং কেন?
ফিনটেক এবং ব্যাংকিং খাতের ভবিষ্যৎ
আগামীর ডিজিটাল ব্যাংকিং কেমন হবে
আধুনিক ব্যাংকিং ও ভবিষ্যৎ চাহিদা
ফিনটেক কি? ফিনটেক ও ব্যাংকিং এর সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button