ফিনটেক

কিউআর কোড কি? ক্যাশলেস বাংলাদেশ গঠনে কিউআর কোডের ভূমিকা

কিউআর কোড কি? ক্যাশলেস বাংলাদেশ গঠনে কিউআর কোডের ভূমিকা- কিউআর (QR) কোড ভিত্তিক লেনদেন এখন আর কোন গল্প বা কাহিনী নয়, এখন এটি ভবিষ্যৎ লেনদেনের বিকল্প মাধ্যম হতে যাচ্ছে। আমরা এখন স্বপ্ন দেখছি একটি সমৃদ্ধ ক্যাশলেস বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য। গ্রাহকরা নির্দিষ্ট ব্যাংকের অ্যাপের মাধ্যমে কিউআর কোড স্ক্যান করে যেকোনো সেবা বা পণ্যের মূল্য পরিশোধ করার জন্য তাদের ভিসা কার্ড, মাস্টার কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট বা প্রিপেইড কার্ড থেকে সব ধরনের আর্থিক লেনদেন করতে পারবে।

১৮ জানুয়ারি, ২০২৩ ক্যাশলেস বা নগদবিহীন বাংলাদেশ প্রচারণার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। তখন কিউআর কোডের পেমেন্টসহ সব ডিজিটাল লেনদেনের একটি স্লোগান তৈরি করা হয়। সেটি হলো- ‘সর্বজনীন পরিশোধ সেবায় নিশ্চিত হবে স্মার্ট বাংলাদেশ’। এতদিন একটি ব্যাংকের কিউআর কোডে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের গ্রাহকরা পেমেন্ট করতে পারত। গ্রাহকরা এখন এক ব্যাংকের কিউআর কোড থাকলে যেকোনো ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেন করতে পারবেন।

আরও দেখুন:
◾ লেনদেন করি ইসলামী ব্যাংক বাংলা কিউআরে

কিউআর (QR) বা কুইক রেসপন্স কি?
কিউআর (QR) বা কুইক রেসপন্স (Quick response) কোড বা কিউআর কোড হলো এক ধরনের ‘বারকোড’। এটি একটি কন্টাক্টলেস পেমেন্ট পদ্ধতি। কিউআর কোড ব্যবহার করার মাধ্যমে নগদ টাকা অথবা ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড স্পর্শ না করেই মোবাইল অ্যাপে স্ক্যান করে দ্রুত ও সহজে লেনদেন করা যায়।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

পণ্য বা যেকোনো সেবা কিনতে এখন আর নগদ টাকার দরকার হবে না। শুধু একটা ব্যাংকের অ্যাপ থাকলেই চলবে। মোবাইল অ্যাপে বাংলা কিউআর কোডের মাধ্যমে সব ব্যাংকের গ্রাহক পণ্যের মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন। এছাড়া বিকাশ, এমক্যাশ, রকেটের মতো মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের অ্যাপ দিয়েও পরিশোধ করা যাবে পণ্যের মূল্য।

উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ধরুন এক চা দোকানি বা মুদি দোকানির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ইসলামী ব্যাংকে আছে। ওই দোকানদার তো ইসলামী ব্যাংকের কিউআর কোড দেবেন। এখন আপনি চা বিস্কুট খেয়ে বিল দেবেন। কিন্তু আপনার অ্যাকাউন্ট ডাচ-বাংলা ব্যাংকে। এখন কী করবেন? এটার সমাধান দেবে সর্বজনীন বাংলা কিউআর কোড। এখান থেকে যেকোনো ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেন করতে পারবেন। অর্থাৎ দোকানদারকে তার চায়ের বিল ডাচ-বাংলা ব্যাংকের কিউআর কোডে সরাসরি পরিশোধ করতে পারবেন।

বাংলাদেশের যে কার্ডগুলো সর্বাধিক ব্যবহৃত হয় যেমন- ভিসা, মাস্টারকার্ড, আমেরিকান এক্সপ্রেস ও ইউনিয়ন পে। এগুলো এখন কিউআর কোড এর মাধ্যমে ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট চ্যানেল ব্যবহার করে খুচরা বিক্রেতারাও গ্রাহকদের সাথে লেনদেনের জন্য চেকআউট রেজিস্টারে কিউআর কোড যুক্ত করছেন।

মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস ও কার্ড সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। বাংলা কিউআর কোডে বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বয়ে এ উদ্যোগে যেসব ব্যাংক যুক্ত হয়েছে এগুলো হলো— ইসলামী ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, পূবালী ব্যাংক ও ওয়ান ব্যাংক। এছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠান বিকাশ, এমক্যাশ, রকেট ও কার্ড সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান মাস্টারকার্ড, ভিসা ও অ্যামেক্স এ সেবায় যুক্ত হয়েছে।

কিউআর কোডের ব্যবহারবাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শপিংমল, হোটেল-রেস্তোরাঁয় এখন ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে কিউআর কোড। রিটেইলারগন গ্রাহকদের সাথে লেনদেনের জন্য চেকআউট রেজিস্টারে কিউআর কোড যুক্ত করছেন। কেবল কার্ডগুলোর ক্ষেত্রেই নয়, এই পদ্ধতিতে আরো বিভিন্ন ট্রানজেকশনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, বাংলাদেশের এখন যারা মোবাইল ব্যাংকিং গ্রাহক রয়েছেন তারাও ক্যাশ উত্তোলনের ক্ষেত্রে কিউআর কোড প্রযুক্তি এর সহায়তা নিয়ে থাকেন। মোবাইল ব্যাংকিং ছাড়াও যে সকল ফিনটেক কোম্পানিগুলো পেমেন্ট সার্ভিস অপারেটর হিসেবে কাজ করছে যেমন- আইপে, ডিমানি, ক্যাশবাবা তারাও এখন গ্রাহকদেরকে কিউআর কোড স্ক্যানিং এর মাধ্যমে নিরাপদে পেমেন্ট করার ব্যবস্থা চালু করেছে।

কিউআর কোড ব্যবহারের সুবিধা
কিউআর কোডের মাধ্যমে পেমেন্ট অপশন বিভিন্ন ব্যাংক বিভিন্নভাবে গ্রাহকদের নিকট নিয়ে আসছে। যেমন- ইসলামী ব্যাংক নিয়ে এসেছে সেলফিন। এছাড়া সিটি ব্যাংক নিয়ে এসেছে  সিটিপে। কিউআর কোডের ব্যবহার বাড়ার ফলে গ্রাহকদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ এবং সেসব তথ্য স্টোর করা সম্ভব হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীরা গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ ঠিক রাখার জন্য তাদের চাহিদা এবং পছন্দ সংক্রান্ত তথ্যের ডেটাবেজ তৈরি করতে পারছেন। সব কিছুর পরও কিউআর কোডের মাধ্যমে পেমেন্ট পদ্ধতির দ্রুততার জন্যই এর জনপ্রিয়তা বাড়বে। ভবিষ্যতে মানুষের সবচেয়ে পছন্দের পেমেন্ট পদ্ধতি হবে কিউআর কোড এটা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে।

কিউআর কোড ব্যবহারের আরেকটি সুবিধা হচ্ছে নগদ টাকার পাশাপাশি কার্ডও ফিজিক্যালি বহন করার কোন প্রয়োজন হয় না। যার ফলে কার্ড হারানো বা চুরি রোধ করা অনেকটাই সম্ভব হয়। অনেক গ্রাহকের কাছে এটি একটি স্বস্তি বলেও মনে হয়। কিউ আর কোড এর মাধ্যমে লেনদেন যেহেতু মার্চেন্ট এর নির্দিষ্ট কিউআর কোড স্ক্যান এর মাধ্যমে হয়ে থাকে এবং সেখানে গ্রাহকের ইন্টারনেটের সাহায্যে লেনদেনটি করছেন তো সেখানে কিছু সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকতে পারে। সে ব্যাপারে সজাগ থাকার কোন বিকল্প নেই।

‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ’ গঠনে কিউআর কোডের ভূমিকা
‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ’ গঠনে কিউআর কোডের ভূমিকা ও গুরুত্ব অপরিসীম। ‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ’ উদ্যোগের আওতায় শ্রম নির্ভর অতিক্ষুদ্র ভাসমান উদ্যোক্তা (চা বিক্রেতা, ঝালমুড়ি বিক্রেতা, সবজি বিক্রেতা, মাছ বিক্রেতা), বিভিন্ন প্রান্তিক পেশায় (মুচি, নাপিত, হকার) নিয়োজিত সেবা প্রদানকারীদের বিল গ্রহণ পদ্ধতিকে ডিজিটাল ও প্রাতিষ্ঠানিক করার উদ্দেশ্যে ব্যক্তিক রিটেইল হিসাব খোলা হচ্ছে। এ হিসাবের মাধ্যমে যেসব ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসায়িক লেনদেন সম্পন্ন করবেন, তারা মাইক্রো-মার্চেন্ট হিসেবে গণ্য হচ্ছেন। তাদেরকে কিউআর কোডের আওতায় নিয়ে এসে কিউআর কোড ব্যবহারের মাধ্যমে ক্যাশলেস বা নগদবিহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button