ব্যাংকিং আইন

তামাদি আইন কী? তামাদি আইনের উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা কী?

তামাদি আইন, ১৯০৮ (১৯০৮ সালের ৯নং আইন) এই আইনটি ০৭ আগস্ট ১৯০৮ সালে প্রণীত হয়। এটি দেওয়ানী মামলার মেয়াদ সম্পর্কিত আইন একীভূত ও সংশোধন করণার্থে এবং অন্যান্য উদ্দেশ্যে প্রণীত একটি আইন।

তামাদি আইন কি?
তামাদি শব্দটি আরবী শব্দ, এর আভিধানিক অর্থ হলো কোন কিছু বিলুপ্ত হওয়া কিংবা বাধা প্রাপ্ত হওয়া। মূলত ১৯০৮ সালের তামাদি আইন একটি পদ্ধতিগত আইন। এই আইন একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের পরে কোন আইনগত অধিকারে এর বিলুপ্তি ঘটায়। কতদিনের মধ্যে কোন মামলার আপীল, রিভিউ বা রিভিশনের জন্য আদালতে দরখাস্ত পেশ করতে হবে। কখন বিলম্ব মৌকুফ করা যাবে ইত্যাদি বিষয় তামাদি আইনে নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।

তামাদি আইন বা Limitation Act হচ্ছে কোন সম্পত্তির উপর থেকে মালিকানার দ্বন্দকে শেষ করে পক্ষগন যেন তাহাদের মধ্যে পারষ্পারিক বিরোধ অনেক বছর যাতে চলাতে না পারে সেজন্য তামাদি আইনের সৃষ্টি। তামাদি আইন বা Limitation Act সকল প্রকার প্রতারণা মুলক কাজ বন্ধ করে দেয়। কোন মামলার দরখাস্ত কতদিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে হবে কতদিনের মধ্যে আপিল করা যাবে। কোন সময় মামলা করতে দেরি হবার পরও আদালত মামলার দরখাস্ত গ্রহন করতে পারেন এসব বিষয় সহ ইত্যাদি বিষয় তামাদি আইন বা Limitation Act নির্দিষ্ট করে দেয়। তাই দাবী বা অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তামাদি আইন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মামলা মোকদ্দমা করার একটি নির্দিষ্ট সময় আছে। কোন মামলা ৩ বৎসর আবার কোন মামলা ১২ বৎসর মেয়দের মধ্যে করতে হয়। মামলার মত আপীলেরও একটি নির্দিষ্ট সময় আছে। তামাদি আইনের প্রথম তফসিলে উক্ত নির্ধারিত সময়সীমা বর্ণনা করা হয়েছে। একবার এর সময়সীমা অতিক্রম হয়ে গেলে আর মামলা করা যায় না।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, তামাদি আইন বলতে এমন একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আইন, যে আইন দ্বারা সকল প্রকার দাবী বা স্বত্বের দ্বন্দ্বকে অবিরাম গতিতে বৃদ্ধি যা দীর্ঘায়িত করার সুযোগ না দিয়ে বরং তা চিরদিনের জন্য নিস্পত্তি করায় সাহায্য করে। এরুপ ব্যবস্থাকে তামাদি আইন বলে।

তামাদি আইনের উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীতা
১৯০৮ সালের তামাদি আইনের উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
১) দেওয়ানী মোকদ্দমা, আপীল ও কতিপয় দরখাস্ত আদালতে দায়ের করার মেয়াদ সম্পর্কিত আইন একত্রীকরণ ও সংশোধন করা হয়।
২) দখলের দ্বারা ব্যবহার স্বত্বের ও অন্যান্য সম্পত্তির অধিকার অর্জনের নির্ধারিত সময়সীমা প্রণয়ন করা হয়।
৩) তামাদি আইনের সময় সীমার দ্বারা সমাজের বিবাদ নিস্পত্তির মাধ্যমে শান্তি শৃংখলা বজায় রাখা হয়।
৪) মামলার দীর্ঘসূত্রীতা জিইয়ে না রেখে জনসাধারনের ভোগান্তি লাঘব করা হয়।
৫) মামলার জটিলতা অর্থাৎ বহুতা বা সময় এর সাশ্রয় করা হয়।
৬) মামলার দীর্ঘ সূত্রীতা বন্ধের জন্য অর্থের অপচয় রোধ করা হয়।
৭) প্রতারণামূলক কার্যক্রমকে প্রতিরোধ করা হয়।
৮) প্রতিষ্ঠিত অধিকার সংরক্ষনের জন্য সহায়তা করে অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হয়।
৯) সর্বোপরি তামাদি আইন দ্বারা সর্বপ্রকার দাবী ও স্বত্বের দ্বন্দ্বকে অবিরাম গতিতে দীর্ঘায়িত করে সুযোগ না দিয়ে বরং চির দিনের জন্য নিস্পত্তি করতে সাহায্য করে।

উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, দেওয়ানী আইনে তামাদি আইনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

তামাদি আইন একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ আইন কি না?
১৯০৮ সালের তামাদি আইনের সুস্পষ্ট বিধান হল এই আইনের নির্ধারিত সময়-সীমার মধ্যে কোন মামলা, আপীল কিংবা দরখাস্ত আদালতে দাখিল না করলে পরবর্তীতে আদালত তা গ্রহন করবে না।

তামাদি আইনের ৩ ধারা হতে ২৫ ধারা পর্যন্ত বর্ণিত বিধান মোতাবেক যে কোন ধরণের মামলা আপীল কিংবা দরখাস্ত দাখিলের মেয়াদ সম্পর্কে সাধারণ নিয়মাবলী ব্যতিক্রম সহ উল্লেখ করা হয়েছে। এই আইনের মধ্যে ৫ ধারায় তামাদি রেয়াত বা বিলম্ব মৌকুফের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তামাদি আইনের ২৮ ধারায় জবর দখলের মাধ্যমে স্থাবর সম্পত্তির মালিকানা স্বত্ব বিলপ্ত হয় এবং জবর দখরকারীর স্বত্ব অর্জনের সময়-সীমার বিষয়ে নির্ধারিত বিধানাবলী বর্ণিত হয়েছে।

ইহা ছাড়া অত্র আইনের ১৬ ও ২৭ ধারায় ব্যবহার সিদ্ধ অধিকার অর্জনের সময়-সীমা সম্পর্কে বিধান রয়েছে। তাই এই আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী বিলম্ব মৌকুফের যে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে উক্ত বিধান ছাড়া আদালত ন্যায়-বিচার এর স্বার্থে তামাদি আইন দ্বারা অনুমোদিত সময় সীমার ব্যাপারে কোন অনুমান বা ক্ষমা প্রদর্শন করবেন না।

সুতরাং যে দাবী তামাদি হয়ে যায় তার সময়-সীমা বাড়ানোর এখতিয়ার আদালতের নেই এমনকি তামাদিকৃত দাবী বা অধিকারকে আদালত পুনরুজ্জীবিত করতে পারে না।

তাই তামাদি আইন বলতে এমন এক স্বয়ংসম্পূর্ণ আইনকে বুঝায় যে আইন দ্বারা সর্ব প্রকার দাবী বা স্বত্বের দ্বন্দ্বকে অবিরাম গতিকে দীর্ঘায়িত করার সুযোগ না দিয়ে বরং তা চিরদিনের জন্য নিস্পত্তি করায় সাহায্য করে থাকে। তাছাড়া এই আইন প্রতারনা মূলক কার্যক্রম প্রতিরোধ করে।

১৯০৮ সালের তামাদি আইনের ২৯টি ধারা ১ নং তফসিলে ১৮৩টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। অতএব এই আইনে সব ধরনের বিধিবদ্ধ নিয়মাবলী সন্নিবেশিত রয়েছে বিধায় একে স্বয়ং সম্পূর্ণ বিধিবদ্ধ আইন বলে গন্য করা হয়। তাই উপরোক্ত আলোচনার সার তত্বে বলা যায় যে, ১৯০৮ সালের তামাদি আইন একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ আইন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button