ব্যাংকিং আইন

ব্যাংক-কোম্পানীর একত্রীকরণ সম্পর্কিত নীতিমালা

ব্যাংক-কোম্পানীর একত্রীকরণ সম্পর্কিত নীতিমালা – ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৪৯(১) (গ), ৭৭ (১৬) এবং কোম্পানী আইন, ১৯৯৪ এর ধারা ২২৮ ও ২২৯ এর বিধান মোতাবেক কোনো ব্যাংক-কোম্পানী কর্তৃক স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অন্য কোনো ব্যাংক-কোম্পানী বা ফাইন্যান্স কোম্পানীর সাথে একত্রীকরণের মাধ্যমে আর্থিকভাবে অধিকতর সবল ব্যাংক গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক

বৃহস্পতিবার (০৪ এপ্রিল, ২০২৪) বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার ও এ সংক্রান্ত নীতিমালা (বিআরপিডি সার্কুলার নং- ০৮) জারি করে বাংলাদেশে কার্যরত তফসিলি ব্যাংকসমূহের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

আরও দেখুন:
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন সার্কুলার

উক্ত সার্কুলারে বলা হয়েছে, ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৪৯(১) (গ), ৭৭(১৬) এবং কোম্পানী আইন, ১৯৯৪ এর ধারা ২২৮ ও ২২৯ এর বিধান অনুসরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনক্রমে এবং মধ্যস্থতায় কোনো ব্যাংক-কোম্পানী স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে (mutually agreed/negotiated) অন্য কোনো ব্যাংক-কোম্পানীর সাথে একীভূত হতে পারবে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

এছাড়া, ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ৭৭ক ধারায় ব্যাংক-কোম্পানীর পুনরুদ্ধার বিষয়ে আশু/ দ্রুত সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। উক্ত ক্ষমতাবলে ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৩ তারিখে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক “Prompt Corrective Action (PCA) Framework” শীর্ষক সার্কুলার জারি করা হয়েছে। উক্ত সার্কুলারের নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো ব্যাংক মূলধন ও তারল্য ঘাটতি, উচ্চ মাত্রার খেলাপী ঋণ, সুশাসনের ঘাটতি এবং সর্বোপরি আমানতকারীগণের জন্য ক্ষতিকর কার্যকলাপের কারণে PCA Framework এর আওতাভুক্ত হলে, সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক আরোপিত/ নির্দেশিত বিধিনিষেধ অনুসরণ করতে হবে। উক্ত পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে, আমানতকারীগণের স্বার্থ রক্ষার্থে বা জনস্বার্থে ব্যাংকের যথাযথ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার স্বার্থে, ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৭৭ এর বিধান সাপেক্ষে, উক্ত ব্যাংক-কোম্পানীকে অন্য কোনো ব্যাংক-কোম্পানীর সাথে বাধ্যতামূলক একত্রীকরণ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক যে কোনো এক বা একাধিক বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করার আইনি বিধান পরিপালনের আবশ্যকতা রয়েছে।

এমতাবস্থায়, ব্যাংক-কোম্পানীর একত্রীকরণ প্রক্রিয়া শৃঙ্খল এবং সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার লক্ষ্যে ব্যাংকসমূহের অনুসরণের জন্য ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ৪৯, ৭৭, ৭৭ক এবং ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এই নীতিমালা (সংযুক্তি- ‘ক’ ও সংযুক্তি ‘খ’) জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই নীতিমালায় বর্ণিত নির্দেশনার যে কোনো পরিবর্তন/ পরিবর্ধন করার ক্ষমতা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সংরক্ষণ করে। এ সার্কুলারে বর্ণিত নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে।

সংযুক্তি-‘ক’: স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ব্যাংক-কোম্পানীর একত্রীকরণ সম্পর্কিত নীতিমালা

ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৪৯(১) (গ), ৭৭ (১৬) এবং কোম্পানী আইন, ১৯৯৪ এর ধারা ২২৮ ও ২২৯ এর বিধান মোতাবেক কোনো ব্যাংক-কোম্পানী কর্তৃক স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অন্য কোনো ব্যাংক-কোম্পানী বা ফাইন্যান্স কোম্পানীর সাথে একত্রীকরণের মাধ্যমে আর্থিকভাবে অধিকতর সবল ব্যাংক গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য হলো অপেক্ষাকৃত দুর্বল ব্যাংকের বিদ্যমান সমস্যা সমাধান এবং একইসাথে অপেক্ষাকৃত সবল ব্যাংকের কার্যক্রম উন্নয়নের মাধ্যমে আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করা যাতে করে জনস্বার্থে একীভূত ব্যাংক-কোম্পানী অধিকতর সেবা প্রদান করতে পারে। বর্ণিত প্রেক্ষাপটে একত্রীকরণ বিষয়ে নিম্নরূপ নীতিমালা অনুসরণীয় হবে:

১। আইনি বিধান:
(১) ব্যাংক-কোম্পানী আইন, ১৯৯১
ধারা ৪৯: বাংলাদেশ ব্যাংকের অধিকতর ক্ষমতা ও কার্যাবলী। (১) (গ) বাংলাদেশ ব্যাংক, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক-কোম্পানীসমূহের অনুরোধক্রমে এবং ধারা ৭৫ এর বিধান সাপেক্ষে, উহাদের একত্রীকরণের প্রস্তাবে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে বা অন্য কোনোভাবে সহায়তা প্রদান করতে পারবে।
ধারা ৭৫: স্বেচ্ছায় অবসায়নে বাধা-নিষেধ। কোম্পানী আইনের ধারা ২৮৬ তে ভিন্নতর কোনো কিছু থাকা সত্ত্বেও, কোনো ব্যাংক-কোম্পানী তার পাওনাদারদের ঋণ সম্পূর্ণরূপে পরিশোধ করতে সমর্থ, এই মর্মে বাংলাদেশ ব্যাংক লিখিতভাবে প্রত্যয়ন না করলে ধারা ৩১ এর অধীন লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোনো ব্যাংক-কোম্পানীর স্বেচ্ছা অবসায়ন করা যাবে না; এবং স্বেচ্ছা অবসায়নের কার্যধারার কোনো পর্যায়ে যদি ব্যাংক-কোম্পানী তার কোনো দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হয়, তাহলে কোম্পানী আইনের ধারা ৩১৪ এবং ৩১৫ এর বিধান ক্ষুন্ন না করে, বাংলাদেশ ব্যাংক হাইকোর্ট বিভাগের মাধ্যমে উক্ত কোম্পানীর অবসায়নের জন্য আবেদন করবে।
ধারা ৭৬ (১): ব্যাংক-কোম্পানী এবং পাওনাদারদের মধ্যে আপস-মীমাংসা বা বিশেষ ব্যবস্থার উপর বাধা-নিষেধ।-(১) আপাততঃ বলবৎ অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, হাইকোর্ট বিভাগ কোনো ব্যাংক-কোম্পানী এবং তার পাওনাদার বা তাদের কোনো শ্রেণির মধ্যে বা উক্ত কোম্পানী এবং তার সদস্য বা সদস্য-শ্রেণির মধ্যে, কোনো আপস-মীমাংসা বা বিশেষ ব্যবস্থা অনুমোদন করবে না, বা অনুরূপ কোনো মীমাংসা বা বিশেষ ব্যবস্থায় কোনো সংশোধন অনুমোদন করবে না, যদি না বাংলাদেশ ব্যাংক এই মর্মে প্রত্যয়ন করে যে, উক্ত মীমাংসা, বিশেষ ব্যবস্থা বা উহাদের সংশোধন কার্যকর করার অযোগ্য নয় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক-কোম্পানীর পাওনাদারদের স্বার্থের পরিপন্থি নয়।
ধারা ৭৭(১৬): ব্যাংক-কোম্পানীর ব্যবসা সাময়িকভাবে স্থগিতকরণ এবং ব্যাংক-কোম্পানীর পুনর্গঠন বা একত্রীকরণ। উপ-ধারা (৪) এ উল্লিখিত ক্ষেত্র ব্যতীত, কোনো ব্যাংক-কোম্পানী স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অন্য কোনো ব্যাংক-কোম্পানী বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে একত্রীভূত হতে চাইলে অথবা কোনো ব্যাংক-কোম্পানী নিজের ব্যবসার কিয়দংশ অন্য কোনো ব্যাংক-কোম্পানী বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিকট হস্তান্তরের মাধ্যমে পুনর্গঠিত হতে চাইলে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদনক্রমে, এতদ্বিষয়ে তৎকর্তৃক জারীকৃত নীতিমালা অনুসরণ করে কাঙ্ক্ষিত একত্রীকরণ বা পুনর্গঠন করতে পারবে।
(২) ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন, ২০২৩
অনুরূপভাবে, ফাইন্যান্স কোম্পানী আইন, ২০২৩ এর ধারা ৫০ এ বর্ণিত বিধান অনুযায়ী কোনো ফাইন্যান্স কোম্পানী বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনক্রমে কোম্পানী আইন, ১৯৯৪ এর ২২৮ ও ২২৯ এর বিধান অনুসরণে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অন্য কোনো ফাইন্যান্স কোম্পানী বা ব্যাংক কোম্পানীর সাথে একীভূত হতে পারবে।
(৩) উল্লিখিত বিধানসমূহ অনুসারে, আমানতকারী বা ব্যাংক-কোম্পানী বা ব্যাংকিং খাতের জন্য ক্ষতিকর নয় মর্মে বাংলাদেশ ব্যাংকের সন্তুষ্টি/প্রত্যয়ন ব্যতীত কোনো ব্যাংকের একত্রীকরণ কার্যক্রম সম্পন্ন হতে পারবে না। অর্থাৎ, ব্যাংক-কোম্পানী মূলত আমানতকারীগণের অর্থে পরিচালিত হয় বিধায় ব্যাংক যেন আমানতকারীগণের স্বার্থের পরিপন্থি, ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা ও সুশাসনের পরিপন্থি সর্বোপরি দেশের আর্থিক ব্যবস্থায় ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে এরূপ কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারে বা জড়িত না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য আইনে বাংলাদেশ ব্যাংককে ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।

২। নীতিমালার প্রযোজ্যতা ও আওতা:
এই নীতিমালার আওতায়-
(১) কোনো এক বা একাধিক ব্যাংক-কোম্পানী অন্য কোনো ব্যাংক-কোম্পানীর সাথে একীভূত হতে পারবে।
(২) কোনো ফাইন্যান্স কোম্পানী অন্য কোনো ব্যাংক-কোম্পানীর সাথে একীভূত হতে পারবে;
(৩) আপস-মীমাংসা/সমঝোতা বা বিশেষ ব্যবস্থা/বন্দোবস্তের (compromised/arranged/negotiated) অধীনে কোনো ব্যাংক-কোম্পানী অন্য কোনো ব্যাংক বা ফাইন্যান্স কোম্পানীর নির্দিষ্ট শাখা অধিগ্রহণ, দুইটি অনুরূপ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শাখার অদল-বদল, ব্যবসা স্থানান্তর এবং ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণ করতে পারবে;
(৪) বিদেশী ব্যাংকের শাখার ক্ষেত্রে একত্রীকরণ তার প্যারেন্ট/মূল ব্যাংকের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হবে।

৩। একত্রীকরণের কার্যপদ্ধতি:
(১) একত্রীকরণের প্রস্তাব: সংশ্লিষ্ট ব্যাংক-কোম্পানী বা, ক্ষেত্রমত, ফাইন্যান্স কোম্পানী নিজেদের একত্রীকরণের ইচ্ছা সম্বলিত প্রস্তাব নিজ নিজ পরিচালনা পর্ষদে উপস্থাপনপূর্বক উক্ত বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন গ্রহণ করবে এবং তা অবহিতকরণপূর্বক বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিগত অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কোম্পানীসমূহ তালিকাভুক্ত কোম্পানী হলে তাদের পর্ষদের উক্ত সিদ্ধান্ত সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (সুবিধাভোগী ব্যবসায় নিষিদ্ধকরণ) বিধি, ১৯৯৫ অনুযায়ী তা ‘price sensitive information/মূল্য সংবেদনশীল তথ্য’ হিসেবে বিবেচিত হলে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
(২) সংশ্লিষ্ট কোম্পানীসমূহের নিরীক্ষা, আর্থিক এবং আইনি due diligence সম্পন্ন করা:
(ক) হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংক এবং হস্তান্তরকারী ব্যাংক-কোম্পানী/ফাইন্যান্স কোম্পানী তার বা যে অংশ অধিগ্রহণ করা হবে তার নিরীক্ষা, আর্থিক এবং আইনি due diligence সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক তার তালিকাভুক্ত নিরীক্ষা ফার্ম হতে এক বা একাধিক নিরীক্ষা ফার্মকে নিয়োগ প্রদান করবে। এক্ষেত্রে উক্ত নিরীক্ষা এবং আর্থিক ও আইনি due diligence সম্পন্ন/পরিচালনা করা সংক্রান্ত ব্যয় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বহন করা হবে।
(খ) নিরীক্ষা এবং due diligence সম্পাদনকারী নিরীক্ষা ফার্ম তাদের কার্য সম্পাদনের সময়ে কোনো তথ্য অবহিত হলে বা দলিলাদি প্রাপ্ত হলে সে বিষয়ে গোপনীয়তা রক্ষা করবে এবং উক্ত তথ্য বা দলিলাদি কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার নিকট প্রকাশ করবে না মর্মে অঙ্গীকার প্রদান করবে।
(গ) আমানতকারী, পাওনাদার ও শেয়ারহোল্ডারগণের দাবী পরিশোধসহ সম্পূর্ণ একত্রীকরণ কার্যক্রম সুষ্ঠু ও যথাযথভাবে সম্পাদনের উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষা ফার্ম তার নিরীক্ষা এবং আর্থিক ও আইনি due diligence প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট দাখিল করবে।
(৩) সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহ কর্তৃক গোপনীয়তা রক্ষা করা/বজায় রাখা: নিরীক্ষা, আর্থিক এবং আইনি due diligence সম্পন্ন হওয়া এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন প্রাপ্তির পর সংশ্লিষ্ট পক্ষগণ (হস্তান্তর গ্রহীতা ও হস্তান্তরকারী কোম্পানী, নিরীক্ষা ফার্ম) পরিশিষ্ট-‘ক’ অনুযায়ী একটি অঙ্গীকার/ঘোষণাপত্র দাখিল করবে। অঙ্গীকার/ঘোষণাপত্রে এ মর্মে উল্লেখ থাকতে হবে যে, কোম্পানীসমূহের সকল তথ্য, বিশেষত অ-পাবলিক ডোমেইন তথ্য ও দলিলাদির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগণ কঠোর গোপনীয়তা বজায় রাখবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শ ব্যতীত বা আইনগত প্রক্রিয়ায় প্রকাশ আবশ্যক/প্রয়োজনীয় না হলে উক্ত তথ্য ও দলিলাদি কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার নিকট প্রকাশ করবে না। তবে যেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো তথ্য ও দলিলাদি প্রকাশের অনুমোদন প্রদান করবে উক্ত তথ্য ও দলিলাদি প্রকাশের অব্যবহিত পরে সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে যথাযথভাবে অবহিত করতে হবে। এক্ষেত্রে গোপনীয়তা বজায় রাখা/রক্ষা করার অঙ্গীকারের কোনো লঙ্ঘন হলে বাংলাদেশ ব্যাংক তার প্রদত্ত অনুমোদন বাতিলও করতে পারবে।
(৪) নিরীক্ষা ফার্ম/নিরীক্ষক কর্তৃক নিরীক্ষা, আর্থিক এবং আইনি due diligence প্রতিবেদন দাখিল: আর্থিক এবং আইনি due diligence সম্পন্ন হওয়ার পর উক্ত নিরীক্ষা ফার্ম তার একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট দাখিল করবে। উক্ত প্রতিবেদনে অন্যান্য বিষয় ব্যতীত নিম্নলিখিত বিষয় থাকতে হবে, যথা:
(ক) সুরক্ষিত/জামানতী এবং অসুরক্ষিত/জামানতবিহীন ঋণ/ডেট, সুরক্ষিত ঋণের ক্ষেত্রে সিকিউরিটিজ/জামানতের বিস্তারিত বিবরণ ও তাদের অর্থমূল্য;
(খ) হস্তান্তর গ্রহীতা ও হস্তান্তরকারী কোম্পানীর ভূসম্পত্তি এবং সম্পদের অর্থমূল্য, পরিশিষ্ট-‘খ’;
(গ) হস্তান্তর গ্রহীতা ও হস্তান্তরকারী কোম্পানীর দায়;
(ঘ) শেয়ার বিনিময়/সোয়াপ অনুপাত (swap ratio) এবং goodwill নির্ধারণের বিবরণী;
(ঙ) উপরোল্লিখিত প্রেক্ষাপটে একত্রীকরণের ফলশ্রুতিতে কোম্পানীসমূহের উপর এবং তাদের আমানতকারী, পাওনাদার ও শেয়ারহোল্ডারগণের উপর আর্থিক প্রভাব।
(৫) কোম্পানীসমূহের শেয়ারহোল্ডার ও পাওনাদারগণের সম্মতি গ্রহণ: নিরীক্ষা ফার্ম হতে প্রাপ্ত due diligence প্রতিবেদনের কপি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক হস্তান্তর গ্রহীতা ও হস্তান্তরকারী কোম্পানীর নিকট প্রেরণ করা হবে। অতঃপর due diligence এ প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে হস্তান্তরকারী ও হস্তান্তর গ্রহীতা কোম্পানীসমূহ প্রস্তাবিত একত্রীকরণ বিষয়ে স্কীম প্রণয়ন করে তা নিজ নিজ পরিচালনা পর্ষদে উপস্থাপনকরতঃ অনুমোদন ও এতদ্বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। উক্ত সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে কোম্পানী আইন, ১৯৯৪ এর বিধান অনুযায়ী কোম্পানীসমূহ তাদের শেয়ারহোল্ডারগণের বা পাওনাদারগণের সম্মতির জন্য বিশেষ সভা আহ্বান করে বিশেষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে প্রণীত স্কীমের উপর কোম্পানী আইন, ১৯৯৪ এর বিধান অনুযায়ী কোম্পানীর পাওনাদারগণের বা শেয়ারহোল্ডারগণের, বা ক্ষেত্রমত, সদস্যগণের সংখ্যাগরিষ্ঠের সম্মতি গ্রহণ করতে হবে।
(৬) স্কীম বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মতির জন্য দাখিল: একত্রীকরণ সংক্রান্ত স্কীম বিশেষ সাধারণ সভায় অনুমোদনের পর হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংক-কোম্পানীকে পরিশিষ্ট-‘গ’ এ উল্লিখিত তথ্য ও দলিলাদিসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মতির জন্য উক্ত স্কীমসহ আবেদনপত্র দাখিল করতে হবে।
(৭) খসড়া স্কীমের পর্যালোচনা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা: হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংক হতে একত্রীকরণ সংক্রান্ত স্কীম প্রাপ্তির পর বাংলাদেশ ব্যাংক যদি এ মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংক কর্তৃক দাখিলকৃত উক্ত স্কীম সফলভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক স্কীমের বিষয়ে সম্মতি প্রদান করবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক পরিশিষ্ট-‘ঘ’ এ উল্লিখিত শর্ত ও বিষয়াদি বিবেচনায় নিবে।
(৮) সম্পদ ও দায়সমূহের মূল্যায়ন: হস্তান্তর গ্রহীতা এবং হস্তান্তরকারী কোম্পানীসমূহ পারস্পরিক সমঝোতা/সম্মতিতে সম্পদের মূল্যায়নের বিষয়ে সম্মত হতে পারবে। সাধারণভাবে, বাংলাদেশ ব্যাংক উক্ত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না যদি না এরূপ বিশ্বাস করার কারণ থাকে যে মূল্যায়ন ন্যায্য এবং যুক্তিসঙ্গত নয়। তবে, নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে যেমন (ক) বিশেষ/সুনির্দিষ্ট/স্বতন্ত্র কোনো সম্পদ; (খ) ঋণ বা বিনিয়োগের শ্রেণিবিভাগঃ (গ) কোনো দায় নির্ধারণে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে সেক্ষেত্রে কোম্পানীসমূহ বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শ গ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করবে এবং সমস্যা সমাধান করবে। মধ্যস্থতা ব্যর্থ হলে, সম্পদ বা দায়ের মূল্য নির্ধারণ বা সমস্যার নিষ্পত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত মর্মে গণ্য হবে এবং তা সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহ মানতে বাধ্য থাকবে। এক্ষেত্রে, বাংলাদেশ ব্যাংক আবশ্যক মনে করলে, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা গ্রহণপূর্বক সিদ্ধান্ত প্রদান করবে।
(৯) লেনদেন/হস্তান্তর মূল্য/ব্যয়/লাভ (consideration): হস্তান্তর গ্রহীতা এবং হস্তান্তরকারী কোম্পানীর মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে সম্পত্তি এবং দায় হস্তান্তরের যুক্তিসঙ্গত এবং ন্যায্য মূল্য নির্ধারিত হবে, মূল্য নির্ধারণ প্রিমিয়াম বা ডিসকাউন্টে হতে পারে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক সাধারণভাবে হস্তক্ষেপ করবে না, তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এ মর্মে সন্তুষ্ট হবে যে, পারস্পরিকভাবে সম্মত মূল্য ন্যায্য এবং যুক্তিসঙ্গত, এবং এতদুদ্দেশ্যে পর্যালোচনা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর স্কীমের সংশোধন/পরিমার্জন/পরিবর্তনপূর্বক উক্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে।
(১০) বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন: বাংলাদেশ ব্যাংকের সন্তুষ্টির পর প্রস্তাবিত একত্রীকরণ স্কীমের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রয়োজনীয় পরিবর্তনসহ বা পরিবর্তন ব্যতীত, অনুমোদন প্রদান করবে, এবং উক্ত অনুমোদনের পর প্রস্তাবিত স্কীমটি কার্যকর করা যাবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক নিশ্চিত হবে যে, উক্ত স্কীমটি সংশ্লিষ্ট কোম্পানীসমূহের জন্য লাভজনক বা সুবিধাজনক বা উপকারী এবং আমানতকারীগণের জন্য ক্ষতিকর নয় এবং/অথবা দেশের আর্থিক ব্যবস্থার জন্য লাভজনক বা সুবিধাজনক বা উপকারী, বা ক্ষতিকর নয়।
(১১) হাইকোর্ট বিভাগে পিটিশন দাখিল: (১) প্রস্তাবিত স্কীমটি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুমোদিত হলে, হস্তান্তর গ্রহীতা এবং হস্তান্তরকারী কোম্পানী দুইটি কোম্পানী আইন, ১৯৯৪ এর ২২৮ ও ২২৯ ধারার বিধান অনুসরণে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের নিকট প্রস্তাবিত স্কীমের অনুমোদনের জন্য আবেদন দাখিল করবে এবং উক্ত আবেদনের একটি কপি বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রেরণ করবে। সংশ্লিষ্ট পক্ষ কর্তৃক মহামান্য আদালতে উক্ত স্কীমটির অনুমোদনের অগ্রগতির বিষয়ে, সময়ে সময়ে, বাংলাদেশ ব্যাংককে লিখিতভাবে অবহিত করবে।
(২) মহামান্য আদালতে আবেদন করা হলে, একত্রীকরণ স্কীম বাস্তবায়নের জন্য বা স্কীম সম্পর্কিত বিষয়ে, মহামান্য আদালত যে আদেশ দ্বারা উক্ত স্কীম অনুমোদন করে সেই একই আদেশ বা পরবর্তী কোনো আদেশ দ্বারা নিম্নবর্ণিত বিষয়সমূহের সকল বা যে কোনোটির বিষয়ে বা মহামান্য আদালতের বিবেচনায় যে কোনো বিষয়ে বিধান করবে:
(ক) হস্তান্তরকারী কোম্পানীর অঙ্গীকার/প্রতিশ্রুতি মোতাবেক সকল সম্পদ, দায়, দায়িত্ব, ইত্যাদির সম্পূর্ণ বা অংশ বিশেষ হস্তান্তর গ্রহীতা কোম্পানীর নিকট হস্তান্তর করা:
(খ) হস্তান্তর গ্রহীতা কোম্পানী কর্তৃক হস্তান্তরকারী কোম্পানীর কোনো শেয়ার, ডিবেঞ্চার, অথবা অন্যবিধ অনুরূপ স্বার্থাদির বরাদ্দকরণ বা আদায়করণ যা উক্ত একত্রীকরণের অধীনে হস্তান্তরকারী কোম্পানী কর্তৃক কোনো ব্যক্তির অনুকূলে বা ব্যক্তির জন্য বরাদ্দ কিংবা আদায় করতে হবে:
(গ) হস্তান্তরকারী কোম্পানী কর্তৃক বা উহার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত অনিষ্পন্ন কোনো আইনগত কার্যধারা হস্তান্তর গ্রহীতা কোম্পানী কর্তৃক বা উহার বিরুদ্ধে অব্যাহত রাখা;
(ঘ) হস্তান্তরকারী কোম্পানীকে অবলুপ্ত না করে উক্ত কোম্পানীকে ভেঙ্গে দেয়া (dissolution):
(ঙ) বিভিন্ন শ্রেণির শেয়ার বা শেয়ারসমূহকে বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্তিকরণের মাধ্যমে বা উভয়বিধভাবে কোম্পানীর শেয়ার মূলধনের পুনর্বিন্যাস বা একীভূত করা;
(চ) একত্রীকরণ প্রক্রিয়া কার্যকরভাবে সম্পন্ন হওয়ার লক্ষ্যে মহামান্য আদালতের বিবেচনায় অন্যান্য বিষয়।

৪। স্কীমের বাস্তবায়ন:
একত্রীকরণ স্কীম ঘোষিত হওয়ার পর হস্তান্তর গ্রহীতা ও হস্তান্তরকারী কোম্পানী জয়েন্ট স্টক কোম্পানীর রেজিস্ট্রারের নিকট নিবন্ধন করার জন্য মহামান্য হাইকোর্টের আদেশের কপি দাখিল করবে। সে অনুযায়ী, হস্তান্তর গ্রহীতা ও হস্তান্তরকারী কোম্পানী স্কীমটি বাস্তবায়নের জন্য শেয়ারহোল্ডারগণ ও অন্যান্য অংশীদারগণের অবগতির জন্য নোটিশ প্রদানপূর্বক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং স্কীমের একটি কপি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (যদি মূলধন ইস্যুর প্রয়োজন হয়) এর নিকট প্রেরণ করবে।

৫। হস্তান্তরকারী কোম্পানীর বিলুপ্তি:
হস্তান্তরকারী কোম্পানীর কার্যাবলী সম্পূর্ণভাবে সমাপ্ত হলে, হস্তান্তরকারী কোম্পানী তার সকল পরিশোধযোগ্য এবং গ্রহণযোগ্য হিসাব এবং এতদসংক্রান্ত ব্যাখ্যা প্রদানের উদ্দেশ্যে একটি সাধারণ সভা আহ্বান করবে। উক্ত সভা অনুষ্ঠানের ১ (এক) মাস পূর্বে হস্তান্তরকারী কোম্পানী সভার উদ্দেশ্য এবং স্থান, তারিখ ও সময় উল্লেখপূর্বক সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে। সভায় কোম্পানীর বিলুপ্তির বিষয়ে গৃহীত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে হস্তান্তরকারী ব্যাংক/ফাইন্যান্স কোম্পানী তার লাইসেন্সের মূল কপি বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিল করবে। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক লাইসেন্স বাতিলকরতঃ তা হস্তান্তরকারী কোম্পানীকে অবহিত করবে।

৬। আর্থিক বিবরণী একত্রীকরণ:
(১) একীভূত হওয়ার পর হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংক-কোম্পানী তাদের আর্থিক বিবরণীর সাথে হস্তান্তরকারী কোম্পানীর আর্থিক বিবরণী একত্রীত/সমন্বিত আকারে প্রকাশ/প্রণয়ন করতে পারবে।
(২) একীভূত হওয়ার পর হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংক-কোম্পানী ইচ্ছে করলে সর্বোচ্চ ৩ (তিন) বছর মেয়াদের জন্য তাদের আর্থিক বিবরণী ও হস্তান্তরকারী কোম্পানীর আর্থিক বিবরণী পৃথকভাবে প্রকাশ/প্রণয়ন করতে পারবে। তবে শর্ত থাকে যে, ৩ (তিন) বছর পর তাদের সমন্বিত আর্থিক বিবরণী প্রণয়ন নিশ্চিত করতে হবে।

৭। নাম পরিবর্তনে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ও লাইসেন্স গ্রহণ:
একীভূত হওয়ার পর হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংক-কোম্পানী যদি নাম পরিবর্তনের কোনো প্রস্তাব না করে, তাহলে উক্ত কোম্পানী বিদ্যমান নাম এবং লাইসেন্সের অধীনে তার ব্যাংক ব্যবসা পরিচালনা করবে। তবে, নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব দেয়া হলে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া অনুসরণপূর্বক বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ও লাইসেন্স গ্রহণ করতে হবে।

৮। ব্যাংক-কোম্পানীর একত্রীকরণে অন্যান্য নির্দেশনা:
(১) আমানতের অর্থ পরিশোধ: হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংক-কোম্পানীতে হস্তান্তরিত ব্যাংক/ফাইন্যান্স কোম্পানীর আমানতের অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে ব্যক্তি শ্রেণির আমানতকারীর অর্থ পরিশোধ বা তাদের হিসাব ও ব্যাংকিং লেনদেন সচল করার বিষয়টিকে সাধারণভাবে অগ্রাধিকার প্রদান করবে। প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীর অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময়ে সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধের উদ্দেশ্যে একটি পরিশোধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নপূর্বক তা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করা হলে, বাংলাদেশ ব্যাংক উক্ত কর্মপরিকল্পনা পরীক্ষা-নিরীক্ষান্তে বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাবিত পরিকল্পনাটিতে, প্রয়োজনীয় পরিবর্তনসহ বা পরিবর্তন ব্যতীত, অনুমোদন প্রদান করবে।
(২) হস্তান্তরকারী ব্যাংক-কোম্পানী বা ফাইন্যান্স কোম্পানীর কর্মকর্তা-কর্মচারী: হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংক-কোম্পানী কর্তৃক হস্তান্তরকারী ব্যাংক-কোম্পানী বা ফাইন্যান্স কোম্পানীর বিদ্যমান কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে ৩ (তিন) বছর পূর্তির পূর্বে ছাঁটাই করা যাবে না। তবে ৩ (তিন) বছর পর পুনর্গঠিত বা হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংক-কোম্পানী উক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের কর্মদক্ষতার মূল্যায়ন করে যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
(৩) হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংক-কোম্পানীর পরিচালনা পর্ষদ গঠন: একত্রীকরণের পর হস্তান্তরকারী ব্যাংক/ফাইন্যান্স কোম্পানীর বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো পরিচালক হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংক-কোম্পানীর পরিচালনা পর্ষদে পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হতে পারবেন না। তবে, ৫ (পাঁচ) বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর, হস্তান্তরকারী ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারগণ তাদের শেয়ারধারণের আনুপাতিক হারে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও উপযুক্ততা থাকা সাপেক্ষে, পর্ষদে পরিচালক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। এতদ্ব্যতীত, একত্রীকরণের সময়ে যারা পরিচালক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন তাদের ক্ষেত্রে ৫ (পাঁচ) বছর পর পরিচালক হওয়ার অন্যতম যোগ্যতা হিসেবে বর্ণিত ৫ (পাঁচ) বছর সময়ের মধ্যে ঐ সকল পরিচালকগণের ঋণ/বিনিয়োগ ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কোনো প্রকার পুনঃতফসিল/পুনর্গঠন ব্যতিরেকে অবশ্যই নিয়মিত রাখার শর্ত পরিপালনীয় হতে হবে।
(৪) শীর্ষ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ: বিলুপ্ত ব্যাংক/ফাইন্যান্স কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও উপব্যবস্থাপনা পরিচালককে একীভূত ব্যাংক-কোম্পানীর কোনো পদে রাখা যাবে না। একীভূত ব্যাংক-কোম্পানীর পরিচালনা পর্ষদ উক্ত বিলুপ্ত কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদের কোনো কর্মকর্তাকে যদি উপযুক্ত মনে করে তাহলে নতুন করে চুক্তি ভিত্তিতে উপযুক্ত কোনো পদে নিয়োগ প্রদান করতে পারবে। তবে, হস্তান্তরকারী ব্যাংক/ফাইন্যান্স কোম্পানী সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান হলে সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক/ফাইন্যান্স কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও উপব্যবস্থাপনা পরিচালককে সরকার তার অন্য ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সমপদে বহাল/বদলি করতে পারবে।
(৫) ঋণ আদায়: হস্তান্তরকারী ব্যাংক/ফাইন্যান্স কোম্পানী হতে অধিগৃহীত ঋণসমূহ যাতে খেলাপী না হয়ে যায়, এবং ঋণগুলোর তদারকি ও খেলাপী ঋণ আদায়ের জন্য পৃথক ইউনিট/বিভাগ গঠনপূর্বক প্রয়োজনীয় উদ্যোগ এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানী গঠিত হওয়ার পর ঋণ/বিনিয়োগের বিপরীতে গৃহীত সহায়ক জামানতসহ উক্ত খেলাপী ঋণ/বিনিয়োগ বিক্রয় করা যাবে।
(৬) হস্তান্তরকারী কোম্পানীর কতিপয় কার্যক্রম হস্তান্তর গ্রহীতা কোম্পানী কর্তৃক অব্যাহত রাখা: হস্তান্তরকারী কোম্পানীর কার্যক্রম যা দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখে এরূপ কাজগুলো/কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে, এবং জনস্বার্থে ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা রক্ষার্থে এরূপ কোনো কাজ বা কার্যক্রম বন্ধ করা যাবে না।

৯। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সহায়তা:
কোনো দুর্বল/সংকটাপন্ন ব্যাংক-কোম্পানী/ফাইন্যান্স কোম্পানী অন্য কোনো ব্যাংক-কোম্পানীর সাথে একীভূত হলে, উক্ত একীভূতকরণের পর হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংক-কোম্পানীর মূলধন, তারল্য, খেলাপী ঋণ, ইত্যাদি আর্থিক সূচকসমূহ প্রভাবিত হতে (diluted) পারে। উক্ত ব্যাংক-কোম্পানীর কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখা এবং জনস্বার্থে ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা রক্ষার্থে প্রয়োজনমতো বাংলাদেশ ব্যাংক হতে নিম্নবর্ণিত নীতি সহায়তা প্রদান করা হবে-
(১) ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণ, CRR (Cash Reserve Ratio), SLR (Statutory Liquidity Ratio), LCR (Liquidity Coverage Ratio), NSFR (Net Stable Funding Ratio) সংরক্ষণে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট অংশ অব্যাহতি প্রদান;
(২) হস্তান্তরকারী কোম্পানীর পুঞ্জিভূত লোকসানকে ‘goodwill’ এ রূপান্তরপূর্বক তা একটি নির্দিষ্ট মেয়াদে হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংকের আয় হতে সমন্বয়/পরিশোধ (amortization) এর সুযোগ প্রদান;
(৩) বিদ্যমান সুবিধাদির আওতায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তারল্য সুবিধা প্রদান;
(৪) বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ব্যাংকের দীর্ঘ মেয়াদি বন্ড ক্রয়ের মাধ্যমে নগদ সহায়তা প্রদান;
(৫) মূলধন বৃদ্ধির জন্য শেয়ার ইস্যু, পারপেচুয়াল বন্ড এবং সাবঅর্ডিনেটেড বন্ড ইস্যুকরণে সহায়তা প্রদান;
(৬) ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এবং বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার, ১৯৭২ এর বিধান সাপেক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিবেচনান্তে অন্যান্য নীতি সহায়তা প্রদান।

১০। সরকারের নীতি সহায়তা:
বাংলাদেশ ব্যাংকের আবেদনক্রমে সরকার কর্তৃক বিশেষ নীতি সহায়তা প্রদান করা হতে পারে।

সংযুক্তি-‘খ’ ব্যাংক-কোম্পানীর বাধ্যতামূলক একত্রীকরণ সম্পর্কিত নীতিমালা

ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ৭৭ক ও ৭৭ ধারার বিধান অনুসরণে কোনো ব্যাংক-কোম্পানীর অন্য কোনো ব্যাংক- কোম্পানীর সাথে একত্রীকরণ বিষয়ে নিম্নরূপ নীতিমালা অনুসরণীয় হবে:

১। আইনি বিধান: ব্যাংক-কোম্পানী আইন, ১৯৯১:
ধারা ৭৭ক। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ব্যাংক-কোম্পানীর দ্রুত সংশোধনমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কিত বিধানাবলী।-
(১) অন্য কোনো আইন বা কোনো চুক্তি বা কোনো দলিল বা এই আইনের অন্য কোনো বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো ব্যাংক-কোম্পানীর বা তার আমানতকারীগণের স্বার্থে বা জনস্বার্থে উক্ত ব্যাংক-কোম্পানীর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তার বিষয়ে আশু সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যাংক-কোম্পানীর কার্যাবলী এবং তার পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার বিষয়ে নির্দেশ প্রদান করতে পারবে।
(২) এই ধারার অধীন গৃহীত ব্যবস্থায় যদি কোনো ব্যাংক-কোম্পানী পুনরুদ্ধার কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয় বা পুনরুদ্ধার কর্ম পরিকল্পনা অনুসরণ না করে উক্ত ব্যাংক-কোম্পানীর চেয়ারম্যান, পরিচালক, প্রধান নির্বাহী বা ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক-কোম্পানী বা তার আমানতকারীদের জন্য ক্ষতিকর কার্যকলাপ অব্যাহত রাখে, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক, আমানতকারীদের স্বার্থে বা জনস্বার্থে উক্ত ব্যাংক-কোম্পানীর যথাযথ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে, ধারা ৭৭ এর বিধান সাপেক্ষে, অন্য কোনো ব্যাংক-কোম্পানীর সাথে বাধ্যতামূলক একত্রীকরণ বিষয়ে যে কোনো এক বা একাধিক বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।

ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ৭৭ক ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক জারীকৃত “Prompt Corrective Action (PCA) Framework” শীর্ষক সার্কুলারের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকের মূলধন, তারল্য ও সুশাসনের ঘাটতি এবং খেলাপী ঋণ বৃদ্ধি, সর্বোপরি আমানতকারীগণের জন্য ক্ষতিকর কার্যকলাপের কারণে কোনো ব্যাংক-কোম্পানী উক্ত Framework এর আওতাভুক্ত হলে, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক আরোপিত/নির্দেশিত বিধিনিষেধ অনুসরণপূর্বক পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে, উক্ত ধারায় বর্ণিত বিধান পরিপালনে বাংলাদেশ ব্যাংক আমানতকারীগণের স্বার্থ রক্ষার্থে বা জনস্বার্থে বা ব্যাংকের যথাযথ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার স্বার্থে ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৭৭ এর বিধান সাপেক্ষে উক্ত ব্যাংক-কোম্পানীকে অন্য কোনো ব্যাংক-কোম্পানীর সাথে বাধ্যতামূলক একত্রীকরণের জন্য যে কোনো এক বা একাধিক বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

ধারা ৭৭(৪) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে, জনস্বার্থে বা আমানতকারীগণের স্বার্থে কোনো ব্যাংক-কোম্পানীর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার স্বার্থে বা দেশের সামগ্রিক ব্যাংক-ব্যবস্থার স্বার্থে উক্ত ব্যাংক-কোম্পানীকে অন্য কোনো ব্যাংক-কোম্পানীর সাথে একত্রীকরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক স্কীম প্রণয়ন করবে।

২। নীতিমালার প্রযোজ্যতা ও আওতা:
এই নীতিমালার আওতায় –
(১) কোনো এক বা একাধিক ব্যাংক-কোম্পানী অন্য কোনো ব্যাংক-কোম্পানীর সাথে একীভূত করা যাবে।
(২) বিদেশী ব্যাংকের শাখার একত্রীকরণের ক্ষেত্রে তার প্যারেন্ট/মূল ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পাদিত হবে।

৩। বাধ্যতামূলক একত্রীকরণের যৌক্তিকতা:
ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকি মোকাবেলা করার একটি উপায়/অপশন হলো আর্থিকভাবে উন্নত/শক্তিশালী কোনো ব্যাংকের সাথে দুর্বল ব্যাংক একীভূত করা; যা সারা বিশ্বে স্বীকৃত ও অনুসৃত একটি প্রক্রিয়া/পদ্ধতি। ব্যাংক দীর্ঘ সময়ব্যাপী দুর্বল থাকলে তা আমানতকারীগণের আস্থায় সংকট তৈরিপূর্বক সম্পূর্ণ ব্যাংকিং খাত তথা আর্থিক খাতের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে। এতদ্ব্যতীত, উচ্চ মাত্রার খেলাপী ঋণ, আমানত ও ঋণের উচ্চ সুদ, মূলধন ও তারল্য ঘাটতি, ব্যাংক পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতা ও সুশাসনের ঘাটতি এবং পুঞ্জিভূত ক্ষতির কারণে উক্ত ব্যাংকগুলোর পক্ষে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার নির্দেশনা পরিপালন করে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকা সম্ভবপর হয় না, ফলশ্রুতিতে ব্যাংকগুলো দেউলিয়া অবস্থায় উপনীত হয়; যা ব্যাংকিং খাতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে আন্তর্জাতিক পরিসরে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে। এক্ষেত্রে যেহেতু, ব্যাংক-কোম্পানীর অবসায়ন একটি জটিল প্রক্রিয়া এবং যার আর্থ-সামাজিক ক্ষতিকর প্রভাব (social cost and dimensions) অনেক বেশি এ কারণে ব্যাংক একীভূত করার মাধ্যমে উল্লিখিত ঝুঁকি ও ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলা করা হয়।

অন্যদিকে, দুর্বল ব্যাংকের খেলাপী ঋণ ও অন্যান্য আর্থিক দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থা মোকাবেলা করার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও যদি কোনো দুর্বল ব্যাংক আর্থিকভাবে একটি সবল বা ভালো ব্যাংকের সাথে একীভূত হয়, তাহলে ভালো ব্যাংকটি দুর্বল ব্যাংকের কার্যক্রম তথা আমানত, গ্রাহক, শাখার নেটওয়ার্ক, অপারেশন, বৈচিত্র্য, কৌশল, গবেষণা, ও আধুনিক প্রযুক্তি ও একই কারিগরি সিস্টেম এবং ব্যবস্থাপনার আরও ভালোভাবে ব্যবহার করে সাশ্রয়ী ব্যয়ে আরও বড়, দক্ষ ও শক্তিশালী হওয়ার কারণে দুই ব্যাংকেরই লাভবান হওয়ার সুযোগ তৈরি হয় (synergy effect)। এ প্রেক্ষিতে, দুর্বল ব্যাংকসমূহের বিদ্যমান সংকট সমাধানের লক্ষ্যে একীভূতকরণের আবশ্যকতা দেখা দিলে বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

৪। বাধ্যতামূলক একত্রীকরণের সূত্রপাত/অবতারণা:
(১) ব্যাংক-কোম্পানীর পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ব্যাংক-কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ৭৭ক ধারার বিধান পরিপালনে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক জারীকৃত “Prompt Corrective Action (PCA) Framework” সার্কুলারের নির্দেশনা অনুযায়ী PCA Framework এর আওতায় ব্যাংকসমূহ কর্মদক্ষতা এবং বিভিন্ন আর্থিক সূচকের (মূলধন ঘাটতি, উচ্চ মাত্রার খেলাপী ঋণ, তারল্য ও গভর্ন্যান্স/সুশাসনের ঘাটতি) উপর ভিত্তি করে ৪টি ক্যাটাগরি/শ্রেণিতে বিভক্ত হবে। উক্ত ক্যাটাগরিভুক্ত দুর্বল/সংকটাপন্ন ব্যাংক পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ব্যাংকের ঋণ বিতরণ, মুনাফা প্রদান, ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সাথে লেনদেন, শাখা ও ব্যয় হ্রাস এবং অন্যান্য ব্যাংকিং কার্যক্রমসহ পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার উপর বিভিন্ন বাধ্যতামূলক ও বিবেচনামূলক বিধিনিষেধ আরোপপূর্বক বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের অনুকূলে পুনরুদ্ধার কর্মপরিকল্পনা তথা “Directives of Bangladesh Bank” or “DOBB” প্রদান করা হবে। উক্ত পুনরুদ্ধার কর্মপরিকল্পনার উদ্দেশ্য হলো দুর্বল/সংকটাপন্ন ব্যাংকটিকে PCA Framework এ বর্ণিত একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্বাভাবিক কার্যক্রমে/অবস্থায় ফিরিয়ে আনা অথবা এ ব্যবস্থা ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যাংক উক্ত ব্যাংকের resolution এর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
(২) PCA Framework এর আওতায় গুরুতর সংকটাপন্ন দুর্বল ব্যাংক অর্থাৎ ক্যাটাগরি ৪ ভুক্ত ব্যাংক, ক্ষেত্রমত, ক্যাটাগরি ৩ ভুক্ত বা অন্য ক্যাটাগরি ভুক্ত, ব্যাংক পুনরুদ্ধার কর্মপরিকল্পনা “DOBB” এর নির্দেশনা অনুসরণপূর্বক আর্থিক অবস্থার কোনো উন্নতি বা তার পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় কোনো উন্নতি করতে ব্যর্থ হলে এবং উক্ত সংকটাপন্ন অবস্থা ১২ মাস/এক বছর অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে অন্য কোনো ব্যাংকের সাথে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে একীভূত হওয়ার পরামর্শ দিবে।
(৩) সংশ্লিষ্ট ব্যাংক অনুচ্ছেদ (২) এ উল্লিখিত একত্রীকরণে ব্যর্থ হলে, এবং ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি, উচ্চ খেলাপী ঋণ, তারল্য এবং সুশাসনের ঘাটতি চলমান থাকলে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ৭৭ক ধারার বিধানমতে উক্ত ব্যাংকের বাধ্যতামূলক একত্রীকরণ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
(৪) অনুচ্ছেদ (৩) এ উল্লিখিত ব্যবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক যদি বিবেচনা করে, তাহলে আমানতকারীগণের স্বার্থ রক্ষার্থে বা জনস্বার্থে ব্যাংকের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা বা ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা ও সুশাসন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকটির পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার আওতায়, ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৪৬ ও ৪৭ এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকের পর্ষদ বাতিল করে ব্যাংকের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ গ্রহণপূর্বক একজন প্রশাসক নিয়োগ করবে।
(৫) ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ৭৭(১) ও ৭৭(২) ধারায় ব্যাংক ব্যবসা সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার (Moratorium) বিধান থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ব্যাংক আমানতকারীগণের স্বার্থ রক্ষার্থে বা জনস্বার্থে ব্যাংকের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে, উক্ত Moratorium আদেশ প্রদান না করেও PCA Framework এর আওতাভুক্ত যে কোনো ক্যাটাগরিভুক্ত দুর্বল ব্যাংকের জন্য বাধ্যতামূলক একত্রীকরণের নির্দেশনা প্রদান করতে পারবে।

৫। বাধ্যতামূলক একত্রীকরণের প্রক্রিয়া/কার্যপদ্ধতি:
(১) বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক যে কোনো ক্যাটাগরিভুক্ত ব্যাংকের একত্রীকরণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের দায় ও সম্পদ গ্রহণের জন্য দরপত্রে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে।
(২) বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক মূল্যায়নের উদ্দেশ্যে দরপত্রে অংশগ্রহণকারীগণ তার সক্ষমতার প্রমাণাদি হিসেবে তাদের নিজস্ব ব্যবসার সম্পূর্ণ বর্ণনা, আর্থিক স্বাস্থ্য, সম্পদ, দায়, ঝুঁকি, ইত্যাদির পূর্ণ বিবরণ প্রদান করবে;
(৩) দরপত্র আহ্বানে যথাযথ সাড়া পাওয়া না গেলে অথবা দরপত্রে অংশগ্রহণকারী ব্যাংক উপযুক্ত বিবেচিত না হলে ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ৭৭(৪) এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে একই আইনের ৪৫(১) (ঘ) এর বিধানে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ ব্যাংক যে কোনো এক বা একাধিক ব্যাংককে স্কীমের আওতায় হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংক-কোম্পানী হিসেবে দায়িত্ব পালনে নির্দেশনা প্রদান করবে;
(৪) দরপত্রে অংশগ্রহণকারীর প্রস্তাব বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল্যায়ন কমিটি কর্তৃক পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করা হবে এবং কমিটি কর্তৃক উপযুক্ত হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংক/দরদাতার নাম সুপারিশকৃত হলে উক্ত ব্যাংকের একত্রীকরণের প্রস্তাবে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতিগত অনুমোদন প্রদান করবে বা, ক্ষেত্রমত অনুচ্ছেদ ৫(৩) এর আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক একীভূতকরণের লক্ষ্যে নির্ধারিত/চিহ্নিত হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংককে তার একত্রীকরণের প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন প্রদান করবে, এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকসমূহকে এতদ্বিষয়ে অবহিত করবে। উক্ত অবহিতকরণ পত্রে এ মর্মেও জানানো হবে যে, সংশ্লিষ্ট সকল ব্যাংকের due diligence বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগকৃত নিরীক্ষা ফার্ম দ্বারা সম্পাদন করা হবে।
(৫) হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংক-কোম্পানী এবং হস্তান্তরকারী ব্যাংক-কোম্পানী বা যে অংশের একীভূতকরণ করা হবে তার উপর নিরীক্ষাসহ আর্থিক এবং আইনি due diligence সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক নিরীক্ষা ফার্ম নিয়োগ করবে। এক্ষেত্রে উক্ত নিরীক্ষা এবং আর্থিক ও আইনি due diligence সম্পন্ন/পরিচালনা করা সংক্রান্ত ব্যয় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বহন করা হবে।
(৬) নিরীক্ষা, আর্থিক এবং আইনি due diligence সম্পন্নকারী নিরীক্ষা ফার্ম এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিগত অনুমোদন প্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট কোম্পানীসমূহ পরিশিষ্ট-‘ক’ অনুযায়ী একটি অঙ্গীকার/ঘোষণাপত্র দাখিল করবে। অঙ্গীকার/ঘোষণাপত্রে এ মর্মে উল্লেখ থাকতে হবে যে, কোম্পানীসমূহের সকল তথ্য, বিশেষত অ-পাবলিক ডোমেইন তথ্য ও দলিলাদির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগণ কঠোর গোপনীয়তা বজায় রাখবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শ ব্যতীত বা আইনগত প্রক্রিয়ায় প্রকাশ আবশ্যক/প্রয়োজনীয় না হলে উক্ত তথ্য ও দলিলাদি কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার নিকট প্রকাশ করবে না।
(৭) নিরীক্ষা ফার্ম কর্তৃক আর্থিক, আইনি এবং অন্যান্য due diligence সম্পাদন করার পর তার একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট দাখিল করবে। উক্ত প্রতিবেদনে অন্যান্য বিষয় ব্যতীত নিম্নলিখিত বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে:
(ক) সুরক্ষিত/জামানতী এবং অসুরক্ষিত/জামানতবিহীন ঋণ/ডেট, সুরক্ষিত ঋণের ক্ষেত্রে সিকিউরিটিজ/জামানতের বিস্তারিত বিবরণ ও তাদের অর্থমূল্য:
(খ) হস্তান্তর গ্রহীতা ও হস্তান্তরকারী ব্যাংক-কোম্পানীর ভূসম্পত্তি এবং সম্পদের অর্থমূল্য, পরিশিষ্ট- ‘খ’;
(গ) হস্তান্তর গ্রহীতা ও হস্তান্তরকারী ব্যাংক-কোম্পানীর সম্পদ ও দায়;
(ঘ) শেয়ার বিনিময়/সোয়াপ অনুপাত (swap ratio) এবং goodwill নির্ধারণের বিবরণী;
(ঙ) উপরোল্লিখিত প্রেক্ষাপটে একত্রীকরণের ফলশ্রুতিতে ব্যাংক-কোম্পানীসমূহের উপর এবং তাদের আমানতকারী, পাওনাদার ও শেয়ারহোল্ডারগণের উপর আর্থিক প্রভাব।
(৮) নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর এর একটি কপি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক হস্তান্তর গ্রহীতা ও হস্তান্তরকারী ব্যাংককে তাদের অবগতি ও প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণার্থে প্রেরণ করা হবে।
(৯) নিরীক্ষা ও due diligence সম্পাদিত হওয়ার পর হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংক ও হস্তান্তরকারী ব্যাংক তাদের নিজ নিজ পরিচালনা পর্ষদে একীভূত হওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করবে, এবং কোম্পানী আইন, ১৯৯৪ ও সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ এর বিধানাবলী পরিপালন সাপেক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করবে।
(১০) একত্রীকরণ প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট ব্যাংকসমূহের পরিচালনা পর্ষদ ও শেয়ারহোল্ডারগণ কর্তৃক অনুমোদিত হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক একত্রীকরণের বিষয়ে স্কীম প্রণয়ন করবে।

৬। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রণীতব্য স্কীমের বিষয়:
ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ৭৭(৫) ধারার বিধানমতে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্কীমে নিম্নবর্ণিত সকল বা যে কোনো বিষয় থাকতে পারে:
(১) হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংকের গঠন, নাম, নিবন্ধনকরণ, কার্যধারা, মূলধন, সম্পদ, ক্ষমতা, অধিকার, স্বার্থ, কর্তৃত্ব, দায়, কর্তব্য এবং দায়িত্ব:
(২) স্কীমে নির্ধারিত শর্ত মোতাবেক হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংকের নিকট হস্তান্তরকারী ব্যাংক-কোম্পানীর ব্যবসা, সম্পত্তি, সম্পদ এবং দায় এর হস্তান্তর;
(৩) হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের পরিবর্তন বা নতুন পরিচালনা পর্ষদ নিয়োগ, এবং কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কিভাবে এবং কি শর্তে উক্ত পরিবর্তন করা হবে সেই বিষয়, এবং নতুন পরিচালনা পর্ষদে পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে, কোন্ মেয়াদের জন্য নিয়োগ করা হবে সেই বিষয়;
(৪) মূলধন পরিবর্তনের জন্য এবং একত্রীকরণ কার্যকর করার উদ্দেশ্যে হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংকের সংঘস্মারক সংশোধন;
(৫) একত্রীকরণের প্রস্তাব অনুমোদন, ক্ষেত্রমত ধারা ৭৭ এর অধীন প্রদত্ত আদেশ, এর অব্যবহিত পূর্বে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক- কোম্পানী কর্তৃক বা ব্যাংকের বিরুদ্ধে গৃহীত যে সকল পদক্ষেপ বা কার্যধারা অনিষ্পত্তিকৃত ছিল তা হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংক কর্তৃক অব্যাহত থাকার বিষয়:
(৬) জনস্বার্থে, অথবা হস্তান্তরকারী ব্যাংক-কোম্পানীর সদস্য/শেয়ারহোল্ডার, আমানতকারী বা অন্যান্য পাওনাদারগণের স্বার্থে, অথবা, ব্যাংক-কোম্পানীর ব্যবসা চালু রাখার স্বার্থে, বাংলাদেশ ব্যাংক যেভাবে প্রয়োজন মনে করে সেইভাবে উক্ত সদস্য/শেয়ারহোল্ডার, আমানতকারী বা পাওনাদারগণের প্রাক-একত্রীকরণ স্বার্থ বা দাবী হ্রাসকরণ;
(৭) আমানতকারী এবং অন্যান্য পাওনাদারগণের দাবী পূরণকল্পে,-
(ক) হস্তান্তরকারী ব্যাংক-কোম্পানীর একত্রীকরণের পূর্বে উক্ত ব্যাংকে বা ব্যাংকের বিরুদ্ধে তাদের স্বার্থ বা অধিকার এর ভিত্তিতে তা নগদ পরিশোধ; বা
(খ) হস্তান্তরকারী ব্যাংক-কোম্পানীতে বা এর বিরুদ্ধে তাদের স্বার্থ বা দাবী অনুচ্ছেদ ৬(৬) অনুযায়ী হ্রাস করা হয়ে থাকলে, হ্রাসকৃত স্বার্থ বা দাবীর ভিত্তিতে তা নগদ পরিশোধ;
(৮) একত্রীকরণের পূর্বে ব্যাংক-কোম্পানীতে সদস্যদের/শেয়ারহোল্ডারদের যে পরিমাণ শেয়ার ছিল সেই পরিমাণ শেয়ার, বা অনুচ্ছেদ ৬(৬) অনুযায়ী হ্রাস করা হয়ে থাকলে হ্রাসকৃত শেয়ারের ভিত্তিতে প্রদেয় শেয়ার হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংকে উক্ত সদস্যগণকে/শেয়ারহোল্ডারগণকে বরাদ্দকরণ, এবং কোনো সদস্যগণকে/শেয়ারহোল্ডারগণকে শেয়ার বরাদ্দ করা সম্ভব না হওয়ার ক্ষেত্রে, তাদের পূর্ণ দাবী পূরণকল্পে-
(ক) একত্রীকরণের পূর্বে ব্যাংক-কোম্পানীর শেয়ারে তাদের বিদ্যমান স্বার্থের ভিত্তিতে তা নগদ পরিশোধ; বা (খ) উক্ত স্বার্থ অনুচ্ছেদ ৬ (৬) অনুযায়ী হ্রাস করা হয়ে থাকলে হ্রাসকৃত স্বার্থের ভিত্তিতে তা নগদ পরিশোধ;
(৯) একত্রীকরণের প্রস্তাব বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুমোদনের, ক্ষেত্রমত ৭৭ ধারার অধীন প্রদত্ত স্থগিত আদেশের, অব্যবহিত পূর্বে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক-কোম্পানীর সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী যে বেতনে ও শর্তাধীনে কর্মরত ছিলেন সেই একই বেতনে ও শর্তাধীনে হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংকে কর্মরত থাকার বিষয়।
(১০) স্কীম অনুমোদনের অব্যবহিত ৩ (তিন) বছরের মধ্যে একীভূত/হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংক নিম্নরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে:
(ক) একীভূত ব্যাংক-কোম্পানী তার কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের জন্য এরূপ বেতন ও সুবিধাদি নির্ধারণ করবে যা এরূপ নির্ধারণের সময় উক্ত ব্যাংক-কোম্পানীর সমতুল্য ব্যাংক-কোম্পানীতে কর্মরত সমমর্যাদাসম্পন্ন কর্মকর্তা- কর্মচারীগণ ভোগ করেন, এবং এরূপ ব্যাংক-কোম্পানীর সমতুল্যতা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের পারস্পরিক সমমর্যাদা নির্ধারণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে;
(খ) হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংক তার নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার সাথে তুলনীয় হলে পূর্বতন ব্যাংক-কোম্পানীর কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের জন্য তার নিজস্ব সমমর্যাদাসম্পন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের সমান বেতন ও সুবিধাদি নির্ধারণ করবে এবং যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও সমমর্যাদা সম্পর্কে কোনো সন্দেহ বা দ্বিমত দেখা দিলে বিষয়টি, বেতন এবং অন্যান্য সুবিধাদি নির্ধারণের তারিখ হতে ৩ (তিন) মাস সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পূর্বে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট পাঠাতে হবে এবং এই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে:
(১১) অনুচ্ছেদ ৬(৯) ও ৬(১০) এ যাই থাকুক না কেন, স্কীমে যে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ব্যাপারে বিশেষভাবে উল্লেখ থাকবে, বা যে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী, সরকার কর্তৃক স্কীম মঞ্জুর হওয়ার এক মাস সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পূর্বে যে কোনো সময়ে হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবে বহাল না হওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করে নোটিশ প্রদান করবে, সেই সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে একত্রীকরণের প্রস্তাব বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুমোদনের, ক্ষেত্রমত ৭৭ ধারার অধীন প্রদত্ত স্থগিত আদেশের, অব্যবহিত পূর্বে বিদ্যমান এতদসংক্রান্ত বিধি বা ব্যাংক-কোম্পানীর সিদ্ধান্ত অনুসারে প্রদেয় কোনো ক্ষতিপূরণ, পেনশন, গ্র্যাচুইটি, ভবিষ্য তহবিল এবং অন্যান্য অবসরজনিত সুবিধা প্রদানের বিষয়:
(১২) ব্যাংক-কোম্পানীর একত্রীকরণের বিষয়ে অন্য যে কোনো শর্ত;
(১৩) একত্রীকরণ কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রাসঙ্গিক, আনুষঙ্গিক বা পরিপূরক অন্য কোনো বিষয়।

৭। প্রণীত খসড়া স্কীমের উপর সংশ্লিষ্ট ব্যাংক-কোম্পানীর মতামত/বক্তব্য গ্রহণ এবং চূড়ান্তকরণ:
(১) বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ৭৭(৫) ধারার বিধান সমুন্নত রেখে উপরে বর্ণিত অনুচ্ছেদ ৬ এ উল্লিখিত বিষয়াবলী অন্তর্ভুক্ত করে প্রণীত একত্রীকরণ স্কীমের বিষয়ে তৎকর্তৃক এতদুদ্দেশ্যে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মতামত/বক্তব্য প্রদানের আহ্বান জানিয়ে স্কীমের কপি হস্তান্তর গ্রহীতা এবং হস্তান্তরকারী ব্যাংক-কোম্পানীর নিকট প্রেরণ করবে।
(২) সংশ্লিষ্ট ব্যাংক-কোম্পানীসমূহ হতে মতামত/বক্তব্য পাওয়া গেলে তা বিবেচনান্তে বাংলাদেশ ব্যাংক খসড়া স্কীমে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনয়ন করতে পারবে।

৮। স্কীম কার্যকর করার লক্ষ্যে সরকারের নিকট আবেদন:
চূড়ান্তকৃত স্কীম কার্যকর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নিকট আবেদন করবে। সরকারের সম্মতি জ্ঞাপনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক স্কীমটি সরকারি গেজেটে জারির ব্যবস্থা করবে। স্কীমটি প্রণয়নের পূর্বে যদি হস্তান্তরকারী ব্যাংক-কোম্পানীর ব্যাংকিং কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার (moratorium) আবশ্যকতা দেখা দেয় সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নিকট আবেদন করবে।

৯। স্কীমের কার্যকারিতা, প্রযোজ্যতা, পরিপালন, ইত্যাদি:
স্কীম বা এর কোনো বিধান কার্যকর হওয়ার তারিখ হতে নিম্নবর্ণিত সকলেই তা মানতে বাধ্য থাকবে, যথা-
(১) হস্তান্তরকারী ব্যাংক-কোম্পানী, হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংক-কোম্পানী এবং একত্রীকরণের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য ব্যাংক-কোম্পানী:
(২) অনুচ্ছেদ ৯(১) এ উল্লিখিত কোম্পানীসমূহের শেয়ারহোল্ডার/সদস্য, আমানতকারী এবং অন্যান্য পাওনাদার;
(৩) অনুচ্ছেদ ৯(১) এ উল্লিখিত কোম্পানীসমূহের কর্মকর্তা-কর্মচারী:
(৪) হস্তান্তরকারী ব্যাংক-কোম্পানী বা হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংক-কোম্পানী কর্তৃক রক্ষিত কোনো ভবিষ্য তহবিল বা অন্য কোনো তহবিলের ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত কোনো ট্রাস্টি বা উক্ত কোম্পানীসমূহে অধিকার বা দায় রয়েছে এমন সকল ব্যক্তি;
(৫) স্কীম কার্যকর হওয়ার তারিখ হতে হস্তান্তরকারী ব্যাংক-কোম্পানীর সকল সম্পত্তি, সম্পদ ও দায় স্কীমে বিধৃত পরিমাণে হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংক-কোম্পানীতে হস্তান্তরিত ও ন্যস্ত হবে এবং উক্ত সকল সম্পত্তি, সম্পদ ও দায় হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংকের সম্পত্তি, সম্পদ ও দায় হিসেবে গণ্য হবে:

১০। স্কীমের বাস্তবায়ন:
একত্রীকরণ স্কীম ঘোষিত হওয়ার পর হস্তান্তরকারী ও হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংক-কোম্পানী জয়েন্ট স্টক কোম্পানীর রেজিস্ট্রারের নিকট নিবন্ধন করার জন্য গেজেট নোটিফিকেশনের কপি দাখিল করবে। সে অনুযায়ী, হস্তান্তরকারী ও হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংক-কোম্পানী স্কীমটি বাস্তবায়নের জন্য শেয়ারহোল্ডারগণ ও অন্যান্য অংশীদারদের অবগতির জন্য নোটিশ প্রদানপূর্বক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং স্কীমের একটি কপি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (যদি মূলধন ইস্যুর প্রয়োজন হয়) এর নিকট প্রেরণ করবে।

১১। হস্তান্তরকারী কোম্পানীর বিলুপ্তি:
হস্তান্তরকারী ব্যাংক-কোম্পানীর কার্যাবলী সম্পূর্ণভাবে সমাপ্ত হলে, হস্তান্তরকারী কোম্পানী তার সকল পরিশোধযোগ্য এবং গ্রহণযোগ্য হিসাব এবং এতদসংক্রান্ত ব্যাখ্যা প্রদানের উদ্দেশ্যে একটি সাধারণ সভা আহ্বান করবে। উক্ত সভা অনুষ্ঠানের ১ (এক) মাস পূর্বে হস্তান্তরকারী কোম্পানী সভার উদ্দেশ্য এবং স্থান, তারিখ ও সময় উল্লেখপূর্বক সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে। সভায় কোম্পানীর বিলুপ্তির বিষয়ে গৃহীত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে হস্তান্তরকারী ব্যাংক-কোম্পানী তার লাইসেন্সের মূল কপি বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিল করবে। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক লাইসেন্স বাতিলকরতঃ তা হস্তান্তরকারী কোম্পানীকে অবহিত করবে।

১২। নাম পরিবর্তনে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ও লাইসেন্স গ্রহণ:
একীভূত হওয়ার পর হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংক-কোম্পানী যদি নাম পরিবর্তনের কোনো প্রস্তাব না করে, তাহলে উক্ত ব্যাংক-কোম্পানী বিদ্যমান নাম এবং লাইসেন্সের অধীনে তার ব্যাংক ব্যবসা পরিচালনা করবে। তবে, নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব দেয়া হলে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া অনুসরণপূর্বক বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ও লাইসেন্স গ্রহণ করতে হবে।

১৩। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরকারের নীতি সহায়তা:
ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এবং বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার, ১৯৭২ এর বিধান সাপেক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় ও উপযুক্ত নীতি সহায়তা প্রদান করবে। এছাড়াও, বাংলাদেশ ব্যাংকের আবেদনক্রমে সরকার কর্তৃক বিশেষ নীতি সহায়তা প্রদান করা হতে পারে।

পরিশিষ্ট-ক: হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংক-কোম্পানী/হস্তান্তরকারী ব্যাংক-কোম্পানী/নিরীক্ষা ও due diligence সম্পাদনকারী ফার্ম কর্তৃক গোপনীয়তা রক্ষার ঘোষণাপত্র/অঙ্গীকারপত্র

আমি/আমরা, নিম্নস্বাক্ষরকারী ব্যাংক/কোম্পানী পিএলসি/সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষা ফার্ম এর পক্ষে এ মর্মে নিশ্চয়তা প্রদান করছি যে,
(১) ব্যাংক/কোম্পানী পিএলসি এবং -ব্যাংক পিএলসি এর নিরীক্ষা এবং due diligence সম্পাদনের সাথে সম্পর্কিত সকল তথ্য ও দলিলাদি, বিশেষত অ-পাবলিক ডোমেইন তথ্য ও দলিলাদি, এর বিষয়ে কঠোর গোপনীয়তা বজায় রাখা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ব্যতীত বা আইনগত প্রক্রিয়ায় প্রকাশ আবশ্যক/প্রয়োজনীয় না হলে দায়িত্ব পালনকালে আমাদের বিবেচনার্থে উপস্থাপিত কোনো বিষয় অথবা আমাদের গোচরীভূত কোনো বিষয় প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার নিকট প্রকাশ করবো না। তবে, আমাদের দায়িত্ব পালনের জন্য আবশ্যক হলে অথবা প্রচলিত আইনের বিধান অনুযায়ী বাধ্য হলে অথবা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুমোদনপ্রাপ্ত হলেই কেবল তা প্রকাশ করবো, এবং উক্ত বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে যথাযথভাবে অবহিত করবো।
(২) এই ঘোষণাপত্র/অঙ্গীকারপত্র লঙ্ঘন করে কোনো তথ্য/দলিল আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করা হলে, বাংলাদেশ ব্যাংক নীতিগত অনুমোদন প্রত্যাহার করতে পারবে। এতদ্ব্যতীত, এই ঘোষণাপত্র/অঙ্গীকারপত্রে উল্লিখিত বিষয় লঙ্ঘনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক যে কোনো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।

**পক্ষে,
স্বাক্ষর:
নাম:
পদবী:
তারিখ:
সাক্ষী:

১। নাম:
পদবী (ব্যাংকের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা/নিরীক্ষা ফার্মের ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা):
অফিসিয়াল সিল:
ফোন নাম্বার:

২। নাম:
পদবী (ব্যাংকের কোম্পানী সচিব/নিরীক্ষা ফার্মের ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা):
অফিসিয়াল সিল:
ফোন নাম্বার:
** ১. হস্তান্তর গ্রহীতা এবং হস্তান্তরকারী ব্যাংকের ক্ষেত্রে স্বস্ব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক/প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্বাক্ষর করবেন।

২. নিরীক্ষা ফার্মের ক্ষেত্রে পার্টনারগণ স্বাক্ষর করবেন।

পরিশিষ্ট-খ: হস্তান্তর গ্রহীতা এবং হস্তান্তরকারী কোম্পানীর মূল্য নির্ধারণ

(১) সরকারি সিকিউরিটিজ ব্যতীত অন্যান্য বিনিয়োগসমূহ পূর্ববর্তী মাসের শেষ তারিখের চলতি বাজার দরে মূল্যায়ন করতে হবে।
(২) সরকারি সিকিউরিটিজ অর্থ মন্ত্রণালয়/বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক জারীকৃত এতদসংক্রান্ত সার্কুলার মোতাবেক মূল্যায়ন করতে হবে।
(৩) অন্যান্য সিকিউরিটিজ তাদের পূর্ববর্তী মাসের শেষ তারিখে বিদ্যমান অভিহিত মূল্য অথবা নগদায়নযোগ্য মূল্যে মূল্যায়ন করতে হবে।
(৪) কোনো সিকিউরিটির মূল অর্থ কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য হলে উক্ত সিকিউরিটি এমন একটি পরিমাণে মূল্যায়ন করতে হবে যা ভবিষ্যতে পরিশোধযোগ্য অবশিষ্ট বকেয়ার মূল অর্থ ও সুদের কিস্তির সাপেক্ষে যুক্তিসঙ্গত হিসেবে বিবেচিত হয়।
(৫) কোনো অস্বাভাবিক উপাদান দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার কারণে কোনো সিকিউরিটি, শেয়ার, ডিবেঞ্চার, বন্ড অথবা অন্য কোনো বিনিয়োগের বাজার মূল্য যুক্তিসঙ্গত হিসেবে বিবেচিত না হলে, উক্ত বিনিয়োগের মূল্য অব্যবহিত পূর্ববর্তী ছয় মাসের গড় বাজার মূল্যের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করতে হবে।
(৬) বাট্টাকৃত ও ক্রীত বিল, হিসাব বহিতে উল্লিখিত ঋণ/বিনিয়োগ এবং অন্যান্য সম্পদসহ ঋণ/বিনিয়োগসমূহকে নিম্নলিখিত দুইটি শ্রেণিতে বিভক্ত করতে হবে এবং সে অনুযায়ী মূল্যায়ন করতে হবে যথা: (ক) ভালো ও সহজে আদায়যোগ্য ঋণ/বিনিয়োগ (খ) সহজে আদায়যোগ্য নয় এরূপ মন্দ ও সন্দেহজনক ঋণ/বিনিয়োগ।
(৭) Goodwill/সুনামের হিসাবায়ন বাজারমূল্য এবং নীট সম্পদ মূল্যের পার্থক্যের ভিত্তিতে করতে হবে।
(৮) জমি/প্রাঙ্গণ ও অন্যান্য সকল অস্থাবর সম্পদ এবং দাবী পরিশোধের সূত্রে অর্জিত সম্পদ বাজার দরে মূল্যায়ন করতে হবে।
(৯) আসবাবপত্র ও সরঞ্জাম, ইত্যাদি লিখিত মূল্যে (written down value) মূল্যায়ন করতে হবে।
(১০) অন্যান্য, যদি থাকে, প্রচলিত ও যুক্তিসঙ্গত নিয়মে মূল্যায়ন করতে হবে।

পরিশিষ্ট-গ: স্কীম অনুমোদনের জন্য আবেদনপত্রের সাথে যে তথ্যাবলী ও কাগজপত্রাদি সরবরাহ করতে হবে

(১) একত্রীকরণের পর হস্তান্তর গ্রহীতা কোম্পানীর পরিচালকগণের নাম, ঠিকানা ও পেশা:
(২) একত্রীকরণের পর হস্তান্তর গ্রহীতা কোম্পানীর প্রস্তাবিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক/প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বিস্তারিত বিবরণ;
(৩) একীভূতকরণ পরবর্তী ব্যাংকের শাখা বিষয়ক পরিকল্পনা, প্রযুক্তিগত পরিকল্পনা, মানবসম্পদ বিষয়ক পরিকল্পনা এবং প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন সংক্রান্ত (সমস্যা, যদি থাকে তার সমাধানসহ) প্রস্তাব:
(৪) স্কীম প্রণয়ণকালে বিবেচিত প্রাসঙ্গিক তথ্যাবলী যথা:
ক. হস্তান্তর গ্রহীতা ও হস্তান্তরকারী কোম্পানীর বিগত তিন বছরের বার্ষিক প্রতিবেদন;
খ. বার্ষিক প্রতিবেদন প্রস্তুতের পরবর্তী সময়ে কোম্পানী কর্তৃক প্রকাশিত কোনো আর্থিক ফলাফল (financial results), যদি থাকে;
গ. নতুন পণ্য এবং সেবার প্রচলন অথবা স্থগিতকরণসহ বিদ্যমান পণ্য ও সেবার প্রত্যাশিত পরিবর্তনের বিষয়াদি:
ঘ. হস্তান্তর গ্রহীতা কোম্পানীর সমন্বিত স্থিতিপত্র (pro forma combined balance sheet) যা একত্রীকরণের পর প্রদর্শিত হবে;
ঙ. সমন্বিত ব্যালেন্স শীট/স্থিতিপত্রের উপর ভিত্তি করে নিম্নলিখিত খাতসমূহের হিসাবায়ন:
১. টিয়ার-১ মূলধন
২. টিয়ার-২ মূলধন
৩. ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ
৪. মোট এবং নিট শ্রেণিকৃত ঋণ
৫. টিয়ার-১ মূলধন ও ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের অনুপাত
৬. টিয়ার-২ মূলধন ও ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের অনুপাত
৭. মোট মূলধন ও ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের অনুপাত
৮. টিয়ার-১ মূলধন ও মোট সম্পদের অনুপাত
৯. মোট ও নীট শ্রেণীকৃত ঋণ এবং মোট ঋণের অনুপাত
চ. স্কীম অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী অন্যান্য তথ্যাবলী ও ব্যাখ্যা সম্বলিত তথ্যাদি/বিবরণ।

পরিশিষ্ট-ঘ: স্বতঃপ্রণোদিত একত্রীকরণের স্কীম অনুমোদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিবেচ্য বিষয়

(১) একীভূত কোম্পানীর মূলধন: হস্তান্তরকারী কোম্পানীর মন্দ ও সন্দেহজনক ঋণ, এবং অন্যান্য সম্পদের অবচয় সংক্রান্ত বিধি-বিধান অনুসরণপূর্বক একীভূত কোম্পানীর মূলধনের ভিত্তি।
(২) সম্পদ ও দায় মূল্যায়ন: যে মূল্যে হস্তান্তরকারী কোম্পানীর সম্পদ, দায় এবং সঞ্চিতি (reserves) হস্তান্তর গ্রহীতা কোম্পানীর হিসাববহিতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়, এবং এরূপ অন্তর্ভুক্তির ফলে সম্পদের ঊর্ধ্বমুখীতার পুনর্মূল্যায়ন অথবা অস্বাভাবিক লাভের উদ্দেশ্যে ব্যবহারের বিষয় পর্যালোচনা/মূল্যায়ন।
(৩) হস্তান্তর মূল্য/বিনিময়: হস্তান্তর গ্রহীতা কোম্পানী কর্তৃক হস্তান্তরকারী কোম্পানীকে তার সদস্যদের/শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিতরণের জন্য নগদ বা শেয়ার বা পলিসি বা অন্যান্য অনুরূপ স্বার্থাদির বা মিশ্র ধরণের মূল্য হিসেবে যে পরিমাণ অর্থ প্রদান করা হবে তার প্রকৃতি।
(৪) হস্তান্তর মূল্য পরিশোধ পদ্ধতি এবং সোয়াপ অনুপাত নির্ধারণ: বিভিন্ন শ্রেণির শেয়ারহোল্ডারদের হস্তান্তর মূল্য/বিনিময় পরিশোধের পদ্ধতি, যেক্ষেত্রে শেয়ার আকারে প্রদেয় হবে সেক্ষেত্রে সোয়াপ অনুপাত নির্ধারণের ভিত্তি যার ভিত্তিতে হস্তান্তরকারী কোম্পানীর শেয়ারহোল্ডারগণকে শেয়ার বণ্টন করা হবে।
(৫) হস্তান্তরকারী কোম্পানীর দায় পরিশোধ: হস্তান্তরকারী কোম্পানীর সঞ্চয়ী হিসাব, চলতি হিসাব, মাসিক আমানত হিসাব, কল বা স্বল্প নোটিশে প্রদেয় আমানত, অনিবাসী বৈদেশিক মুদ্রা আমানত অথবা অন্য যে কোনো নামে আমানতসহ আনুষঙ্গিক যে কোনো দায় যে পদ্ধতিতে পরিশোধ করা হবে।
(৬) মুনাফা/লাভজনকতার উপর প্রভাব: হস্তান্তর গ্রহীতা কোম্পানীর লাভজনকতা এবং মূলধনের পর্যাপ্ততার উপর একীভূতকরণের প্রভাব। একীভূতকরণ পরবর্তী অবস্থায় কীভাবে হস্তান্তর গ্রহীতা কোম্পানীর আর্থিক লাভ অর্জিত হতে পারে এবং একীভূতকরণের মাধ্যমে কীভাবে হস্তান্তর গ্রহীতা কোম্পানীতে synergy সৃষ্টি হতে পারে সে বিষয়।
(৭) হস্তান্তরকারী কোম্পানীর শাখাসমূহ পুনর্গঠন: হস্তান্তরকারী কোম্পানীর শাখাসমূহ হস্তান্তর গ্রহীতা কোম্পানীর শাখার সাথে কী উপায়ে সমন্বয় বা স্থান পরিবর্তন অথবা স্থগিত/বন্ধ করা হবে এই মর্মে একটি pro forma branch plan/শাখা পরিকল্পনা প্রণয়নের বিষয়।
(৮) প্রযুক্তিগত পরিকল্পনা: আইটি সিস্টেম পুনর্গঠন এবং দ্রুত ও কার্যকরভাবে সমন্বয় সাধনের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা যেমন- টেলিযোগাযোগ ও কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ইত্যাদির অন্তর্ভুক্ত হার্ডওয়্যার/সফটওয়‍্যারগুলোর সমন্বয়করণ যা হস্তান্তর গ্রহীতা কোম্পানীর কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
(৯) হস্তান্তরকারী কোম্পানীর কর্মকর্তা-কর্মচারী: একীভূতকরণ পরবর্তী সময়ে হস্তান্তর গ্রহীতা কোম্পানী কর্তৃক হস্তান্তরকারী কোম্পানীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের কোনো দায়-দেনা পরিশোধসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের নিয়োগ/পদায়ন, অভিযোজন/উপযোগী করা এবং হস্তান্তর গ্রহীতা কোম্পানীর কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের সাথে তাদের সমন্বয় বিধান, ইত্যাদি সকল বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে প্রস্তাবের বিস্তারিত বর্ণনা এবং বিশ্লেষণসহ মানব সম্পদ বিষয়ক দাখিলকৃত পরিকল্পনা।
(১০) মার্কেট শেয়ারের উপর একীভূতকরণের প্রভাব: একত্রীকরণের প্রেক্ষাপটে কোম্পানীর মার্কেট শেয়ার/হিস্যা এর একচেটিয়া বাজার পরিস্থিতি বা প্রভাবের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বিবেচনাপূর্বক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা।
(১১) একীভূত কোম্পানীর শেয়ার ধারণের কাঠামো: একীভূত কোম্পানীর সম্ভাব্য শেয়ার ধারণের কাঠামোর বিস্তারিত বিবরণ।
(১২) একীভূত কোম্পানীর পর্ষদ: হস্তান্তর গ্রহীতা কোম্পানীর পর্ষদে প্রস্তাবিত পরিবর্তনসমূহ।
(১৩) নাম পরিবর্তন: একীভূত কোম্পানীর নাম পরিবর্তনের কোনো প্রস্তাব।
হস্তান্তর গ্রহীতা ব্যাংক-কোম্পানীকে উল্লিখিত সকল বিষয় যথাযথ এবং বিস্তারিতভাবে অন্তর্ভুক্ত করে তাদের প্রস্তাবিত স্কীমটি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট দাখিল করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button