বাংলাদেশ ব্যাংকস্কুল ব্যাংকিং

স্কুল ব্যাংকিং নীতিমালা

ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশঃ সঞ্চয়ের মাধ্যমে স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের অর্থনৈতিক তথা ব্যাংকিং কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশের আর্থিক অন্তর্ভূক্তি বৃদ্ধি এবং ছাত্র-ছাত্রীদেরকে আধুনিক ব্যাংকিং সেবা ও প্রযুক্তির সাথে সম্পৃক্ত করে তাদের মধ্যে সঞ্চয়ের মানসিকতা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১০ সালে স্কুল ব্যাংকিং প্রচলন করার জন্য সব তফসিলী ব্যাংককে পরামর্শ প্রদান করে। এরই ধারাবাহিকতায় অধিকাংশ তফসিলী ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করেছে এবং স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমে ব্যাংকগুলো ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিও অর্জন করেছে। এ কার্যক্রমকে আরো স্বচ্ছ, সচেতনতামূলক ও গতিশীল করার মাধ্যমে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ব্যাংকিং সেবা যথার্থ ভাবে পৌছে দেওয়ার লক্ষ্যে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংক নিম্নোক্ত নীতিমালা জারি করেছেঃ

০১. হিসাব খোলাঃ ছয় থেকে আঠার বছরের কম বয়স্ক শিক্ষার্থীরা স্কুল ব্যাংকিং এর আওতায় হিসাব খুলতে পারবে ১;
০২. হিসাব পরিচালনাঃ ছাত্র/ছাত্রীদের পক্ষে পিতা/মাতা অথবা আইনগত অভিভাবকের মাধ্যমে হিসাবটি পরিচালনা করতে হবে;
০৩. হিসাব খোলার ফরমঃ স্কুল ব্যাংকিং এর হিসাব খোলার ক্ষেত্রে বিদ্যমান Uniform Account Opening Formএবং KYC ফরম ব্যবহার করার জন্য বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এর জুন ৩০, ২০০৮ তারিখে জারীকৃত সার্কুলার লেটার নং-এএমএলডি-১(পলিসি)/২০০৮-২৩২৪ এর নির্দেশনা প্রযোজ্য হবে। এরূপ হিসাবের জন্য ছাত্র- ছাত্রী এবং অভিভাবক উভয়কেই ব্যক্তিগত তথ্য ফরম পূরণ করতে হবে এবং উভয় ফরমে বৈধ অভিভাবকের স্বাক্ষর থাকতে হবে;
০৪. হিসাবের প্রকৃতিঃ এরূপ হিসাব সঞ্চয়ী হিসাব আকারে খোলা যাবে। তবে, প্রয়োজনে এ হিসাব হতে স্থানান্তরের মাধ্যমে যে কোন সঞ্চয়ী স্কীম খোলা যাবে;
০৫. ন্যূনতম প্রারম্ভিক জমাঃ এরূপ হিসাব কমপক্ষে ১০০ (একশত) টাকা জমা গ্রহণপূর্বক খোলা যাবে;
০৬. নাগরিকত্বঃ হিসাবধারী ছাত্র-ছাত্রী এবং অভিভাবক/আইনগত অভিভাবক উভয়কেই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে;
০৭. হিসাব খোলার সময় প্রয়োজনীয় দলিলাদিঃ হিসাব খোলার সময় হিসাবধারী এবং হিসাব পরিচালনাকারী উভয়ের যথাযথ KYC নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্ম নিবন্ধন সনদ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র/প্রতিষ্ঠান কতৃর্ক প্রদত্ত প্রত্যয়ন পত্র/সর্বশেষ মাসের বেতন রশিদের সত্যায়িত অনুলিপি গ্রহণ করতে হবে। গৃহীত দলিলাদি বাধ্যতামূলকভাবে ব্যাংকে সংরক্ষণ করতে হবে;
০৮. হিসাবধারীর অর্থের উৎসঃ হিসাবে জমাকৃত অর্থের উৎসের আইনগত বৈধতার বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে এবং সম্পাদিত লেনদেন সে প্রেক্ষিতে যৌক্তিক হতে হবে;
০৯. এটিএম কার্ডঃ এরূপ হিসাবের বিপরীতে এটিএম কার্ড (শুধুমাত্র ডেবিট কার্ড) ইস্যু করা যাবে। এটিএম কার্ডের মাধ্যমে এবং Point of Sales (POS) এ মাসিক উত্তোলন সীমা হবে সর্বোচ্চ ২০০০/- টাকা। তবে, অভিভাবকের অনুরোধের প্রেক্ষিতে এ সীমা সর্বোচ্চ ৫০০০/- টাকায় বর্ধিত করা যেতে পারে। হিসাবধারীর অভিভাবকের মোবাইলে SMS Transaction Alert এর ব্যবস্থা থাকতে হবে (লেনদেন হওয়ামাত্রই অভিভাবকের মোবাইল নম্বরে লেনদেনের বিস্তারিত এসএমএস আকারে যাবে);
১০. সার্ভিস চার্জ/ফিঃ এরূপ হিসাবসমূহ হতে সরকারী ফি ব্যতীত অন্য কোন প্রকার সার্ভিস চার্জ/ফি কর্তন করা যাবে না। স্কুল ব্যাংকিং হিসাবে এটিএম কার্ড ইস্যু করা হলে এটিএম কার্ড ইস্যু ও নবায়ন ফি এর ক্ষেত্রেও একই দৃষ্টিকোণ থেকে তা বিবেচিত হবে;
১১. ছাত্র/ছাত্রীদের বেতন/ফি সংগ্রহঃ এসব হিসাবের মাধ্যমে ব্যাংক ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাসিক বেতন/ফি ও অন্যান্য ফি সংগ্রহ (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে) করতে পারবে। প্রতিটি স্কুল এর ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আসে, সে উদ্দেশ্যে ব্যাংকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে উদ্বুদ্ধ করবে;
১২. স্কুল ব্যাংকিং কাউন্টার/ডেস্ক স্থাপনঃ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শাখা ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যাংকিং কার্যক্রমে সহায়তাকরণের লক্ষ্যে স্বতন্ত্র কাউন্টার/ডেস্ক স্থাপন করতে পারে। অন্যান্য কাজের পাশাপাশি এই কাউন্টারে ছাত্র-ছাত্রীদের হিসাবে জমা/উত্তোলনসহ অন্যান্য সেবা প্রদান করবে। এছাড়াও, ব্যাংক শাখা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনাক্রমে মাসের এক বা একাধিক নির্দিষ্ট দিনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বুথ খুলে এ সেবা দিতে পারবে;
১৩. বৃত্তি/উপবৃত্তির অর্থ জমাঃ ছাত্র-ছাত্রীদের সকল প্রকার বৃত্তি/উপবৃত্তির অর্থ তাদের স্কুল ব্যাংকিং হিসাবে জমা করা যাবে। এক্ষেত্রে, বৃত্তি/উপবৃত্তি প্রদানকারী সরকারী/আধা-সরকারী/স্বায়ত্তশাসিত/বেসরকারী সংস্থাগলোকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সাথে সমঝোতা চুক্তি করতে হবে;
১৪. শিক্ষা বীমাঃ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকসমূহ ব্যাংকিং কার্যক্রমের আওতায় পরিচালিত হিসাবগুলোতে শিক্ষা বীমা সুবিধা প্রদান করতে পারবে যাতে কোন ছাত্র-ছাত্রী পারিবারিক/প্রাকৃতিক কারণে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় আর্থিক সঙ্কটে পড়লে তাদের এই বীমার আওতায় সহায়তা করা সম্ভব হয়;
১৫. প্রতিবেদন দাখিল ও কার্যক্রম প্রকাশঃ ব্যাংকগুলো তাদের স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমের অগ্রগতি প্রতিবেদন (সংযুক্ত ছক মোতাবেক) ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রিন ব্যাংকিং এন্ড সিএসআর ডিপার্টমেন্ট এ দাখিল করবে। প্রতি ত্রৈমাসিকের পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে এ প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। ব্যাংকগুলো ডিসেম্বর ৩১, ২০১৩ ভিত্তিক প্রথম ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন জানুয়ারি ১৫, ২০১৪ এর মধ্যে অত্র বিভাগে দাখিল করবে। এছাড়াও, ব্যাংকগুলো তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন এবং ওয়েবসাইটে স্কুল ব্যাংকিং সংক্রান্ত কার্যক্রমের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করবে;
১৬. অন্যান্যঃ
১৬.১. স্কুল ব্যাংকিং হিসাবের ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট আইন এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক জারিকৃত বিধি-বিধান এবং নীতিমালাগুলো প্রযোজ্য হবে;
১৬.২. হিসাবধারীর বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে হিসাবধারীর সম্মতির প্রেক্ষিতে এরূপ হিসাব সাধারণ সঞ্চয়ী হিসাবে রূপান্তরিত হবে এবং তা চালু থাকবে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আইনগুলো এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক জারিকৃত বিধি-বিধান এবং নীতিমালাসমূহ যথারীতি প্রযোজ্য হবে।
উল্লেখ্য, সাধারণ সঞ্চয়ী হিসাবে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রে অবশ্যই পূর্ণাঙ্গ KYC সম্পাদন করতে হবে এবং TP সহ অন্যান্য ঘোষণা পত্র গ্রহণ করতে হবে। হিসাব ধারীর বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবার পর সাধারণ সঞ্চয়ী হিসাবে রূপান্তরকরণের পূর্ব পর্যন্ত এরূপ হিসাব হতে কোন উত্তোলন (হিসাব বন্ধকরণ ব্যতীত) প্রদানযোগ্য হবে না;
১৬.৩. ইতোপূর্বে খোলা স্কুল ব্যাংকিং হিসাবগুলোর জন্যও এ নীতিমালা প্রযোজ্য হবে।
১ শিক্ষা নীতিমালা-২০১০ অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষা শুরুর সর্বনিম্ন বয়স ৬ বছর এবং The Majority Act-1875 এর ধারা ৩ অনুযায়ী ১৮ বছর বয়সের নীচে সকল নাগরিককে minor হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সূত্রঃ গ্রিন ব্যাংকিং এন্ড সিএসআর ডিপার্টমেন্ট, বাংলাদেশ ব্যাংক
জিবিসিএসআরডি সার্কুলার নং: ০৭, তারিখঃ অক্টোবর ২৮, ২০১৩

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button