জেনারেল ব্যাংকিং

বাণিজ্যিক ব্যাংকের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সমূহ

যে প্রতিষ্ঠান অর্থ ও স্বল্পমেয়াদি ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে তাকে বাণিজ্যিক ব্যাংক বলে অভিহিত করা হয়। তবে প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে বহু দেশে বাণিজ্যিক ব্যাংক স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বা বিনিয়োগ প্রদানের মাধ্যমে ব্যবসায়-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ তথা অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

Objectives of Bank (বাণিজ্যিক ব্যাংকের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সমূহ)
বাণিজ্যিক ব্যাংক সাধারণত মুনাফা অর্জনের জন্য গঠিত হলেও তার আরো অন্যান্য উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য রয়েছে। নিম্নে বাণিজ্যিক ব্যাংকের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সমূহ আলোকপাত করা হলো-

আরও দেখুন:
◾ ব্যাংক কি বা ব্যাংক কাকে বলে?
◾ বাণিজ্যিক ব্যাংকের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা
◾ ব্যাংকিং কি বা ব্যাংকিং কাকে বলে?

ক) Gain Profit (মুনাফা অর্জন)
মুনাফা অর্জনের মৌলিক উদ্দেশ্যেই বাণিজ্যিক ব্যাংক গঠিত হয়ে থাকে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

খ) Formation of Capital (মূলধন গঠন)
সমাজের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় বাণিজ্যিক ব্যাংক আমানতের মাধ্যমে সংগ্রহ করে তা বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে বিনিয়োগের জন্য ঋণ দেয়। দেশের মূলধন গঠনে সাহায্য করা এবং সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করা বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান অন্যতম উদ্দেশ্য।

গ) Medium of Exchange (বিনিময়ের মাধ্যম)
বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে চেক, হুন্ডি, বিনিময় বিলের প্রচলন ইত্যাদি করে থাকে।

ঘ) Public Welfare (জনকল্যাণ)
মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি জনকল্যাণমূলক কাজ বাণিজ্যিক ব্যাংকের একটি পরোক্ষ উদ্দেশ্য।

ঙ) Cooperation in Debt Control (ঋণ নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা)
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণনীতি ও ঋণ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা প্রদান করা বাণিজ্যিক ব্যাংকের অন্যতম একটি উদ্দেশ্য।

চ) Cooperation in Planning and Implementation (পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সহযোগিতা)
সঠিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে ও বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সাহায্য করা বাণিজ্যিক ব্যাংকের আরেকটি উদ্দেশ্য।

ছ) Equitable Distribution of Assets (সম্পদের সুষম বণ্টন)
অর্থ-সম্পদ এর মাধ্যমে অর্থনীতির সকল খাতকে সমানতালে উন্নত করে সামগ্রিক ভাবে সম্পদের সুষম বন্টন নিশ্চিত করা বাণিজ্যিক ব্যাংকের অন্যতম একটি উদ্দেশ্য।

জ) Employment Creation (কর্মসংস্থান সৃষ্টি)
দেশের বেকারত্ব দূরীকরণের জন্য সরকারকে সাহায্য করা বাণিজ্যিক ব্যাংক ব্যবস্থার একটি অন্যতম কাজ। ব্যাংকগুলো সেসব কারবারি অর্থায়ন করতে পারে, যেগুলো অধিকহারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে থাকে। যেমন- মূলধন নির্ভর প্রযুক্তির বদলে শ্রম নির্ভর প্রযুক্তিতে অর্থায়ন করে বাণিজ্যিক ব্যাংক অধিকতর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে সরকারকে সাহায্য করে থাকে।

ঝ) Reducing Discrimination of Poor and Rich (ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য হ্রাসকরণ)
বাণিজ্যিক ব্যাংকের আমানত গ্রহণ ও ঋণদান কার্যক্রম সকল শ্রেণীর জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে, যা সমাজে ধনী-দরিদ্র্যের দূরত্ব হ্রাস করে থাকে।

ঞ) Creation of Savings (সঞ্চয়ের মানসিকতা সৃষ্টি)
জনগণের মাঝে সঞ্চয় প্রবণতা সৃষ্টি করা বাণিজ্যিক ব্যাংকের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য।

ট) Security (নিরাপত্তা)
গ্রাহকের অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রীর নিরাপত্তা প্রদান করা বাণিজ্যিক ব্যাংকের একটি উদ্দেশ্য।

ঠ) Economic Stability (অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা)
ঋণ সরবরাহের মাধ্যমে বাজারে অর্থের চাহিদা পূরণ করে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ নিয়ন্ত্রণ নীতির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা বাণিজ্যিক ব্যাংকের মূল উদ্দেশ্য।

ড) Industrial and Trade Development (শিল্প ও বাণিজ্যিক উন্নয়ন)
আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যে ব্যাপক সহযোগিতা প্রদান করে বাণিজ্য ও শিল্পের উন্নয়ন নিশ্চিত করা বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিশেষ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

ঢ) Improve Standard of Living (জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন)
গ্রাহকের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নকল্পে বাণিজ্যিক ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন সেবা ও পণ্য সৃষ্টি করে থাকে। ক্রেডিট কার্ড দিয়ে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত গ্রাহক নগদ টাকা ছাড়াই পণ্য ক্রয় করতে পারে। এটিএম মেশিন থেকে নগদ টাকা তোলা যায়।

উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে ব্যাংকের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সমূহকে নিম্নরূপে বর্ণনা করা যায়-
১) সর্বাধিক লাভের জন্য এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ পরিচালনা করার জন্য একটি প্রতিষ্ঠান হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা।
২) নিম্ন সুদ হারে জনসাধারণের কাছ থেকে সঞ্চয় বা অলস অর্থ সংগ্রহ এবং উচ্চ সুদ হারে এই অর্থ জনসাধারণকে ধার বা লোন দেয়া।
৩) মানুষের মধ্যে সঞ্চয় প্রবণতা তৈরি করা।
৪) মানুষের সচ্ছলতা আনয়ন করার জন্য অর্থ বিনিয়োগে তাদের অনুপ্রাণিত করা।
৫) অর্থ সরবরাহ বাড়ানোর বিকল্প হিসাবে অর্থের মাধ্যমে অর্থোপার্জন করা।
৬) সঞ্চয়ের মাধ্যমে মূলধন তৈরি করা।
৭) বিনিয়োগ দ্রুততর করা।
৮) গ্রাহকদের সেবা প্রসারিত করা।
৯) অর্থ বাজার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা।
১০) অর্থনৈতিক বিষয়ে সরকারকে সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান করা।
১১) ব্যবসা-বাণিজ্য ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য সরকারকে সহায়তা করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button