জেনারেল ব্যাংকিং

ব্যাংক হিসাবে নমিনী ও মৃত ব্যক্তির আমানত বা ঋণ হিসাবে সুদারোপ

দিনু প্রামানিকঃ বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআরপিডি সার্কূলার নম্বর-০৬ তারিখঃ ১৯ এপ্রিল, ২০১৭ এর নির্দেশনা এবং ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ ধারা ১০৩ অনুযায়ী মৃত গ্রাহকের হিসাবের স্থিতি গ্রাহক কর্তৃক মনোনীত নমিনীর অনুকূলে নমিনীর বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে পরিশোধ করা যাবে।

কোন মৃত গ্রাহকের আমানত হিসাবে যদি কোন নমিনী নিশ্চিত না হওয়া যায়, তবে উত্তরাধিকারীগণ এ হিসাবে নিষ্পত্তি করবে। এ বিষয়ে একটি কেস স্ট্যাডি’র মাধ্যমে ব্যাখ্যা দেয়া যেতে পারে। মি. রহমান একজন পেশাজীবি ব্যক্তি হিসেবে তফশীলি ব্যাংকে একটি সঞ্চয়ী হিসাব পরিচালনা করতেন। জীবদ্দশায় তিনি দুই স্ত্রী এবং উভয় পক্ষে ছেলে মেয়ে রেখে যান। তার মুত্যু পরবর্তী সময়ে, ওয়ারিশগণ ব্যাংকে যোগাযোগ করেন এবং ব্যাংক লেনদেন সম্বলিত স্টেটমেন্ট এ উল্লেখিত ব্যালেন্স নিয়ে আদালতের স্বরণাপন্ন হন।

আরও দেখুন:
ব্যাংকে রেখে যাওয়া মৃত ব্যক্তির আমানত কে পাবে?
◾ ব্যাংক গ্রাহকের মৃত্যুতে উত্তরাধিকারী ও নমিনী কর্তৃক টাকা উত্তোলনের নিয়ম
◾ মৃত ব্যক্তির হিসাবে গচ্ছিত টাকা কে পাবে নমিনী নাকি ওয়ারিশ?
◾ মৃত ব্যক্তির টাকা কে বা কারা পাবেন?

মহামান্য আদালত উক্ত ব্যালেন্স এর উপর ভিত্তি করে ওয়ারিশানদের প্রত্যেকের অংশটুকুন নির্ধারণ করেন। ইতিমধ্যে উক্ত হিসাবে দেখা যায়, সময়ের প্রেক্ষাপটে আরো কিছু টাকা সুদ যোগ হয়ে আদালত কর্তৃক নিধারিত টাকার চেয়ে হিসাবে বেশি ব্যালেন্স। এক্ষেত্রে প্রশ্ন থেকে যায়, ওয়ারিশগণ/ উত্তরাধিকারীগণ হিসাবের কোন টাকা পাবে, হিসাবধারীর গচ্ছিত টাকা, আদালত কর্তৃক নির্ধারিত টাকা নাকি আদালত কর্তৃক নির্ধারিত টাকা ও পরবর্তী চার্জকৃত সুদসহ টাকা। সাধারণভাবে উত্তর আসে, আদালতের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত বা আদেশনামা তো আছেই। এটাকে ভিত্তি হিসেবে ধরে, আমানতের টাকা দিলেই তো হয়! আসলে কি তাই?

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

এমন প্রশ্ন অনেকের মনেই থাকে, আমানতকারী গ্রাহক মারা যাবার পর তার হিসাবের সুদ প্রদান হয়তবাঃ বন্ধ হয়ে যাবে। আবার অনেকেই মনে করতে পারেন, মৃত ঋণ গ্রহিতার হিসাবে ঋণ পরিশোধ করার দিন পর্যন্ত সুদ আরোপিত হবে। প্রকৃতপক্ষে, সঠিক কোনটা? মৃত আমানতকারীর হিসাবে সুদ আরোপ হবে কি, হবে না অথবা মৃত ঋণ গ্রহিতার হিসাবে সুদ আরোপ হবে কি, হবে না- এমন প্রশ্ন আমাদের মনে প্রায়ই ঘুরপাক খায়।

সাধারণতঃ গ্রাহক, আমানতকারী বা ঋণ গ্রহীতা, মারা গেলে এবং তা ব্যাংকের গোচরে আসা মাত্র ব্যাংক উক্ত হিসাব ‘ডিসেসড্ এ্যাকাউন্ট’ বা ‘মৃত ব্যক্তির হিসাব’ নামে মার্ক করে থাকে। পরবর্তীতে মনোনীত নমিনী/ নমিনীগণকে উক্ত হিসাবের গচ্ছিত টাকা নমিনীর বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে ব্যাংক মৃত আমানতকারীর টাকা প্রদান করবে যদি আদালতের কোন নিষেধাজ্ঞা, আপত্তি বা চুড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত না থাকে।

আমাদের মূল আলোচনা ছিল, গচ্ছিত আমানতের সহিত সুদ প্রদান অথবা ঋণ হিসাবের সাথে সুদারোপ প্রসঙ্গে। এ বিষয়ে, আইনানুগ দিক তথা বাংলাদেশ ব্যাংক বা ব্যাংক কোম্পানী আইন পর্যালোচনা করে দেখা যেতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক এর বিসিডি সার্কুলার নং-১৮, তারিখ ২৭ মে, ১৯৮৪ এ বিষয়ে সুষ্পষ্ট নীতিমালা প্রণীত করেছেন। মৃত ব্যক্তির হিসাবের সুদ সংক্রান্ত এই নীতিমালা আজ অবধি অপরিবর্তিত আছে। সুদ সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংক এর বিসিডি সার্কুলার নং-১৮, তারিখ ২৭ মে, ১৯৮৪ অনুযায়ী বিস্তারিত নিম্মে তুলে ধরা হলোঃ

১) সঞ্চয়ী আমানত হিসাবঃ
হিসাবধারী যেদিনই মারা যান না কেন, যতদিন পর্যন্ত ওই হিসাবের টাকা উত্তোলন করা না হচ্ছে বা হিসাব বন্ধ না হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত সুদ দিতে হবে।

২) মেয়াদী আমানত হিসাবঃ
হিসাবধারী যেদিনই মারা যান না কেন, যদি মেয়াদী আমানত মেয়াদ পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত রাখা হয়, তাহলে মেয়াদ পূর্তি পর্যন্ত মেয়াদী আমানত এর রেটে সুদ দিতে হবে। যদি মেয়াদ পূর্তির পরে ভাঙ্গানো হয়, তাহলে পূর্ণ মেয়াদের জন্য মেয়াদী আমানত এর রেটে এবং অবশিষ্ট ভাংতি সময়ের জন্য সেভিংস একাউন্ট/ সঞ্চয়ী আমানত হিসাব এর রেটে সুদ দিতে হবে।

৩) ঋণ হিসাবঃ
অনুরূপভাবে ঋণ হিসাবেও সমন্বয় না হওয়া পর্যন্ত ব্যাংক চাইলে সুদ আরোপ করতে পারবে। তবে মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীদের বলে যথাসম্ভব তাদের দিয়ে ঋণ হিসাব দ্রুত সমন্বয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

বিআরপিডি সার্কূলার নং-১১ তারিখঃ ০৬ আগস্ট, ২০১৭ অনুযায়ী মৃত আমানতকারী হিসাবে রক্ষিত আমানত প্রদানের ক্ষেত্রে বিআরপিডি সার্কূলার নং-০৬/২০১৭ এর নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে, মর্মে উল্লেখ আছে। এতদ্ব্যতীত, উক্ত সার্কূলার অন্যান্য নির্দেশনা অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থাৎ ১৯৮৪ সালের বিসিডি সার্কুলার নং-১৮ এর ৩ নম্বর ধারা পরিস্কারভাবে উল্লেখ আছে, ঋণ হিসাবের আসলসহ সুদ মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীদের কাছ থেকে আদায় করতে হবে। ঠিক তেমনই, আমানত হিসাবের আসলসহ সুদ প্রদান করতে হবে।

ঋণ হিসাবের দায় উত্তরাধিকারীদেরকেই পরিশোধ করতে হবে, এই নিয়ম বর্ণিত সার্কূলার বলে আজও অপরিবর্তিত। কিন্তু আমানত হিসাবের টাকা পাবেন নমিনী। এখানে উত্তরাধিকারের কোনো সম্পর্ক নাই। অর্থাৎ নমিনী উত্তরাধিকারী না হলেও টাকা পাবেন যদি আদালতের চুড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত না থাকে। অতপরঃ উত্তরাধিকারী যদি নমিনী না হন, তাহলে উত্তরাধিকারী কোনো টাকা পাবেন না।

পরিশেষে বলা যায় গ্রাহক (আমানতকারী বা ঋণ গ্রহীতা, যেই হোক না কেন) মারা গেলে উক্ত হিসাবের সুদ আরোপিত হবে।

দিনু প্রামানিকঃ ব্যাংকার, কলামিষ্ঠ, কবি ও লেখক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button