ফিনটেকবিকল্প ব্যাংকিং

আর্থিক প্রযুক্তি: স্টার্টআপদের ধারণা, প্রযুক্তি ও নতুন উদ্ভাবন

গত শতকের গোড়ার দিকে আর্থিক খাতে প্রযুক্তির ছোঁয়া খুব একটা তখনও লাগেনি। তখন আন্তঃব্যাংক সকল ধরনের নিস্পত্তি প্রায়শই নগদ বা স্বর্ণের মাধ্যমে সরাসরি সম্পন্ন হত। ১৯১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘ফেডারেল রিজার্ভ বা ফেড’ ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার বা তহবিল হস্তান্তরের উদ্যোগ নেয়। পরবর্তীতে ১৯১৮ সালে ফেড টেলিগ্রাফ প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশ্বের প্রথম ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার পদ্ধতি ‘ফেডওয়্যার’ তৈরি করতে সক্ষম হয়। এই পদ্ধতিতে ওই সময় তারা তাদের ১২টি রিজার্ভ ব্যাংকের মধ্যে সকল প্রকার লেনদেন সম্পন্ন করতে পারত। এর পরে ১৯৫০ এ ক্রেডিট কার্ড ধারণার প্রবর্তন হয় এবং পরবর্তীতে ১৯৬৭ সালে উত্তর লন্ডনে বার্কলেস ব্যাংকে প্রথম এটিএম স্থাপন করা হয়।

আশির দশকে কম্পিউটার আবিষ্কার ও নব্বইয়ের দশকে ইন্টারনেট আবিষ্কারের ফলে তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়নের পাশাপাশি ই-কমার্স ব্যবসারও উন্নয়ন সাধিত হয়। আর এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে তাই নতুনত্বের ছোঁয়া লেগেছে আর্থিক খাতেও। আর্থিক খাত ও প্রযুক্তির মধ্যে সংমিশ্রনের ধারণা শুধু মাত্র এই শতাব্দীতেই এসেছে তা কিন্তু না! ১৯১৯ সালে ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ জন মেইনার্ড কেইনস তার বই ‘দ্যা ইকোনমিক কনসিকোয়েন্সেস অব দ্যা পিস’ এ আর্থিক খাত ও প্রযুক্তির মধ্যে সংযোগ স্থাপনের কথা বলেছেন। এই শতাব্দীতে এসেছে ভার্চুয়াল বা ডিজিটাল মুদ্রা, এসেছে ডিজিটাল বা ই-ওয়ালেট এবং এসেছে ও আরো আসছে বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম। তাই আর্থিক খাত ও প্রযুক্তির এই সংমিশ্রনের ফলে বিশ্বের প্রতিটি দেশের আর্থিক খাতেই বিপ্লব এসেছে।

বিগত পাঁচ বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ‘ফোর্বস’ আর্থিক প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মধ্যে সেরা ৫০ কোম্পানির তালিকা প্রকাশ করে আসছে। ‘ফিনটেক ৫০’ নামে প্রকাশিত এই তালিকায় এই বছর জায়গায় করে নিয়েছে ১৯টি নতুন উদ্ভাবনী ফিনটেক কোম্পানি। গত বছর এই তালিকায় ছিল ২০টি কোম্পানি। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত প্রায় ৪০ শতাংশ কোম্পানিই নতুন উদ্ভাবনী ফিনটেক কোম্পানি। আটটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করা হয়েছে এই ৫০টি কোম্পানিকে এবং এগুলোর অধিকাংশই যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ফিনটেক কোম্পানি। ১৯টি নতুন উদ্ভাবনী ফিনটেক কোম্পানির ১৮টিই যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি। সারা বিশ্বের বিনিয়োগকারীরা গত বছর নতুন উদ্ভাবনী ফিনটেক কোম্পানির পিছনে ৫৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে পেমেন্ট স্টার্টআপগুলোতে বিনিয়োগ বেড়েছে।

পিছিয়ে নেই ডিজিটাল বা অনলাইন ব্যাংকিং। কেননা এদের লেনদেনের জন্য প্রথাগত শাখা নেটওয়ার্কিং এর প্রয়োজন পড়ে না। বিশ্বের বড় রাষ্ট্রগুলোতে বেশ আগে থেকেই এই ধরনের ব্যাংকিং চালু আছে। ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে বিনিয়োগ আড়াই গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৯ সালে ইন্স্যুরেন্স প্রযুক্তি ও পেমেন্ট সংক্রান্ত প্রযুক্তি খাতেও বিগত ২০১৮ সালের তুলনায় যথাক্রমে ৫৫ শতাংশ ও ২০ শতাংশ বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ও ১৫ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এখন তালিকায় স্থান পাওয়া এই ১৯টি স্টার্টআপের নতুন নতুন ধারণা ও প্রযুক্তির নতুন ব্যবহার এবং ব্যবহারকারীদের কাছে এরা কি কি নতুন সুবিধা নিয়ে হাজির হয়েছে তার সম্যক ধারণা নিয়ে আসা যাক।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

ডিজিটাল ব্যাংকিং ক্যাটাগরিতে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে ‘মানি লিওন’ নামে একটি স্টার্টআপ। ২০৭ মিলিয়ন ডলার তহবিল নিয়ে মাঠে নেমেছিল এই স্টার্টআপটি। এই স্টার্টআপটির তাদের নতুন আইডিয়া বা ধারণার কারণে এখন পর্যন্ত ৬ মিলিয়ন গ্রাহকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছে। মানি লিওন তাদের গ্রাহকদের বিনামূল্যে কিছু সুবিধা দিচ্ছে। আর তাদের মধ্যে অন্যতম হলো বিনামূল্যে একাউন্ট সংক্রান্ত সব তথ্য অনুসন্ধান, অর্থ স্থানান্তর, ঋণ সংক্রান্ত সকল তথ্য ও রিপোর্ট, বিনামূল্যে এটিএম এ লেনদেন সহ এটিএম এর কেনাকাটা করলে ১২ শতাংশ ক্যাশ- ব্যাক এর ব্যবস্থাও আছে।এর প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ তহবিল নিয়ে নেমেছিল ‘ডেইভ’, যার ঝুঁড়িতে এখন রয়েছে ৫ মিলিয়ন গ্রাহক সহ ৯০ মিলিয়ন ডলার আয়। এটিএমগুলোতে বিনামূল্যে লেনদেন, ১০০ ডলার পর্যন্ত অগ্রিম নেয়ার সুবিধা এবং মাসিক খরচের ভিত্তিতে অটোমেটেড বাজেট করাসহ আরো অনেক আধুনিক ধারণা নিয়ে এসেছে এই সংস্থাটি।

মার্ক কুবান এর মতো বিলিয়নিয়ার নতুন এই স্টার্টআপ এ বিনিয়োগ করেছেন। ‘লাইভলি’ নামের আরেকটি স্টার্টআপ ডিজিটাল হেলথ সেভিংস একাউন্ট নামে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে এবং এই হিসাবগুলির মাধ্যমে ২০০ মিলিয়ন ডলার সঞ্চয় করেছে গ্রাহকরা। সবচেয়ে কম তহবিল অর্থাৎ শুধুমাত্র ১৮ মিলিয়ন তহবিল নিয়ে এসেছে ‘প্রপেল’ নামে একটি স্টার্টআপ। এতে বিনিয়োগ করেছেন স্বনামধন্য টেনিস তারকা সেরেনা উইলিয়ামস। এই স্টার্টআপটি শুরু করতে এর প্রতিষ্ঠাতা ফেসবুকের উচ্চ পদের চাকরি ছেড়ে আসতে দ্বিধাবোধ করেননি। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের সাপ্লিমেন্ট নিউট্রিশন অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রাম (এসএনএপি) এর আওতায় পুষ্টিকর খাদ্য কিনতে মাসিক অতিরিক্ত আর্থিক সহায়তা বা বেনিফিট প্রদান করে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। প্রপেল তার নিজস্ব মোবাইল অ্যাপসের সাহায্যে ইলেকট্রনিক বেনিফিট ট্রান্সফার (ইবিটি) সুবিধা রেখেছে। যা দিয়ে গ্রাহক আর্থিক সহায়তাকে নগদ করার পাশাপাশি চাইলে মুদিখানা থেকে পুষ্টিকর খাদ্যও কিনতে পারবেন। অন্যান্য সুবিধা ছাড়াও বিশেষ এই ধারণাটি গ্রাহকদের আকৃষ্ট করেছে।

ইন্স্যুরটেক বা বিমা প্রযুক্তিতেও অনেক নতুন ধারণার প্রবর্তন হয়েছে। ইথোস নামের এক স্টার্টআপ ভবিষ্যৎ বলতে পারা এক ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জীবন বিমা করতে আসা কোনো ব্যক্তিকে কোনরূপ মেডিকেল পরীক্ষা ছাড়াই প্রকৃত মেডিকেল এবং ফার্মাসি রেকর্ডের সাথে স্ব-প্রতিবেদিত তথ্য যাচাই বাছাই করে জীবন বিমার হার ও মেয়াদ বলে দিতে পারে। এবং এই পুরো প্রক্রিয়াটি ১০ মিনিটেই সম্পন্ন হবে। এর প্রতিষ্ঠাতা ও সহ প্রতিষ্ঠাতা দুজনেই স্ট্যানফোর্ড বিসনেস স্কুলে পড়াকালীন সময়ে একই রুমে থাকতেন এবং সেখানেই ইথোস এর রূপরেখা তৈরি হয়। যুক্তরাষ্ট্রের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় এম আই টি থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেয়ার পর এক দম্পতি ‘ইন্স্যুরিফাই’ নামে একটি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠা করেন। এই অ্যাপসের মাধ্যমে একজন গ্রাহক বাড়ি বা গাড়ি বিমা করতে চাইলে ২ মিনিটের মধ্যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে সেরা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর ১০টির মূল্য সম্পর্কে জানাবে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স গ্রাহকের ব্যক্তিগত প্রয়োজনীয়তার সাথে বাজেট সমন্বয় করে বলে দিবে কোন বিমাটি গ্রাহকের জন্য ভালো হবে। ইন্স্যুরিফাই ব্যবহারকারী প্রত্যেক গ্রাহকরা তাদের গাড়ির বিমাতে বছরে গড়ে ৪০০ ডলার ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করতে পারেন।

পেমেন্ট স্টার্টআপগুলোও বেশ কিছু নতুন ধারণার নিয়ে বাজারে এসেছে। ফ্যাটমার্চেন্ট নামে একটি পেমেন্ট স্টার্টআপ, যারা মূলত একটি ক্রেডিট কার্ড প্রসেসিং কোম্পানি। এরা মূলত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের পেমেন্টগুলোকে প্রথাগত প্রক্রিয়ায় করার তুলনায় ৩০-৪০ শতাংশ কম খরচে এবং সহজ পন্থায় করে দেয়। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী যারা মাসিক বিভিন্ন ধরনের খরচ ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে প্রদান করতে চায় তারা প্লাস্টিক নামে একটি স্টার্টআপ আছে তার মাধ্যমে ২.৫ শতাংশ ফি প্রদানপূর্বক বিল পরিশোধ করতে পারবে। ৫০ হাজারেরও বেশি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এর সাথে সংযুক্ত আছে এবং বছরে ৪ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি লেনদেন এই অ্যাপসের মাধ্যমে হয়ে থাকে।

রিয়েল এস্টেট স্টার্টআপ গুলোও গতানুগতিক বাড়ি কেনা-বেচা থেকে বের হয়ে এসে আধুনিক ও বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। যেমন ‘ডিভি হোমস’ নামে একটি স্টার্টআপ আছে। যারা তাদের মক্কেলের নির্বাচিত বাড়িটি কিনে নেয় এবং তারপরে তাদের বাড়িওয়ালা হয়ে যায়। যদি ভাড়াটিয়া পরে বাড়িটি কিনতে চান, তবে ২ শতাংশ অগ্রিম ফি এবং মাসিক ভাড়ার একটি অংশ ডাউন পেমেন্টে রূপান্তরিত করে কিনতে পারবেন। ব্লকচেইন ও ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কিত স্টার্টাপগুলিও নতুন ধারণার প্রবর্তন করেছে। ইভারলেজার তাদের ব্লকচেইন প্রযুক্তি দিয়ে জুয়েলারির স্টোরে থাকা ২ মিলিয়ন ডায়মন্ড (৯ লাখ ক্যারেট) ট্র্যাক করার পদ্ধতি বের করেছে। ম্যাকারদাও স্টার্টআপটি আছে যারা ক্রিপ্টো কারেন্সিকে ঋণের বন্দকী হিসাবে রাখার একটি অভিনব পদ্ধতি বের করেছে।

এ তো ছিল নতুনদের সফলতার গল্প। তবে এদের মধ্যে কেউ কেউ আছে ব্যর্থতার পথ পেরিয়ে সফলতার মুখ দেখেছে। জেসন ব্রাউন ও জ্যাস্পার প্ল্যাটজ নামে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা করে আসা দুই সহপাঠী ‘ট্যালি’ নামে ক্রেডিট কার্ডের ঋণ পরিশোধের একটি অ্যাপস তৈরি করেছেন। তাদের এই ধারণাটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এর আগেও এই প্রতিষ্ঠাতা ও সহ প্রতিষ্ঠাতা একটি সোলার ফাইন্যান্স কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যা ২০০৯ সালে সোলার ইউনিভার্স নামে একটি সংস্থা অধিগ্রহণ করে।

প্রযুক্তি নির্ভর এই বিশ্বে ধারণাগুলোও প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়েছে। তাই স্টার্টাপগুলোর প্রতিষ্ঠাতারা তাদের পণ্য মানুষের দোড় গোড়ায় পৌঁছে দিতে নতুন নতুন ধারণার সাথে প্রযুক্তির সংমিশ্রণ ঘটাচ্ছেন। তাই আর্থিক খাতে প্রযুক্তি ও নতুন ধারণার মিলন ঘটলেই আসবে নতুন উদ্ভাবন। আর্থিক খাতে নতুন উদ্ভাবন পেতে যেমনটি নতুন ধারণার প্রয়োজন তেমনটি প্রয়োজন বিনিয়োগ। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও আর্থিক প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ প্রায় দ্বিগুন বেড়ে গত বছর ৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।একজন দক্ষ ও পূর্ব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন উদ্যোক্তা ব্যাংকে গিয়ে নতুন উদ্যোগে বিনিয়োগের ব্যাপারে বললে ব্যাংক বেশিরভাগ সময়ই আগ্রহী হয়ে ঋণ দিতে রাজি হয় না।

তাহলে একজন নতুন উদ্যোক্তা তার নতুন ধারণার সাথে প্রযুক্তির বিভিন্ন ধরন নিয়ে ব্যাংকের দ্বারস্থ হলে আশার বাণী ছাড়া অন্য কিছু আশা করতে পারে না। এইসব ক্ষেত্রে আগ্রহী উদ্যোক্তা ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হতে পারেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাশাপাশি আমাদের দেশের নতুন উদ্যোক্তাদের কাছে তাই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল।আমাদের দেশেও সহজ ডটকম, চালডাল ডটকম, আজকের ডিল ডটকমসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভেঞ্চার ক্যাপিটালের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশে দিন দিন বিভিন্ন ধরনের আর্থিক প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েই চলেছে। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস যেমন বিকাশ, রকেট, নেক্সাস পে, নগদ, শিওর ক্যাশ ছাড়াও রয়েছে আইপে, ডিমানির মতো সার্ভিস যার মাধ্যমে লেনদেন ছাড়াও রয়েছে কেনাকাটা, মোবাইল রিচার্জ , ইউটিলিটি এবং ক্রেডিট কার্ড বিল পে, রাইড শেয়ারিং পেমেন্টসহ আরো অনেক ধরনের সার্ভিস।

বাংলাদেশে সরকারও আর্থিক প্রযুক্তির বিভিন্ন উদ্ভাবনী ধারণা বের করে নিয়ে আসার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এরই অংশ হিসাবে সরকার ২০১৯ সালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীনে ‘স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড’ নামে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছে। শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে উঠে আসতে পারে নতুন ধারণা ও নতুন উদ্ভাবন। একজন শিক্ষার্থী যেন নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের ধারণা ও উদ্ভাবনকে তার আকাঙ্খিত স্থানে নিয়ে যেতে পারে এজন্য স্টার্টআপ বাংলাদেশ দ্বিতীয় বারের মতো শিক্ষার্থীদের জন্য গত বছর আয়োজন করেছিল ‘স্টুডেন্ট টু স্টার্টআপ’ শীর্ষক জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্রান্ট পেয়েছে শিক্ষার্থীদের দশটি সেরা প্রকল্প বা স্টার্টআপ।

প্রত্যেক প্রকল্পকে ১০ লাখ টাকা করে মোট ১ কোটি টাকা অনুদান প্রদান করা হয়েছে। বিভিন্ন আর্থিক প্রযুক্তির বিষয়ে প্রশিক্ষণ ছাড়াও স্টার্টআপ বাংলাদেশ স্টার্টআপদের তহবিল প্রদান করে থাকে। স্টার্টআপ বাংলাদেশের তহবিলের মাধ্যমে ‘ট্রাক লাগবে’ ছাড়াও ‘মনের বন্ধু’, ‘জলপাই ডটকমের’ মতো কয়েকটি স্বাস্থ্যসেবা প্ল্যাটফর্মও গড়ে উঠেছে। তাই নতুন উদ্যোক্তা ও নতুন উদ্ভাবন যেমন আর্থিক প্রযুক্তিতে নতুন সংযোজন আনবে পাশাপাশি তরুণদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং এর মাধ্যমে একসময় বাংলাদেশ গ্লোবাল ইনোভেশন সূচকে ১১৬তম স্থান থেকে বের হয়ে প্রথম সারিতে অবস্থান করতে পারবে। সরকারও ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবতায় রূপ দিতে ও বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে উন্নীত করার পথে আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে।

লেখক পরিচিতি: রফিকুল ইসলাম, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক, সীমান্ত ব্যাংক লিমিটেড ও এএসএম আহসান হাবীব, প্রিন্সিপাল অফিসার, উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড। তথ্যসূত্র: ফোর্বস, উইকিপিডিয়া, স্টার্টআপ বাংলাদেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button