বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলার

ব্যাংক আন্তঃসীমান্ত লেনদেনে ইউয়ান একাউন্ট খুলতে পারবে

চীনা মুদ্রা ইউয়ানে লেনদেন করার সুযোগ বাড়াতে ব্যাংকগুলো এখন থেকে ইউয়ানে একাউন্ট খুলতে পারবে, এবং তাদের বৈদেশিক শাখার মাধ্যমে আন্তঃসীমান্ত লেনদেন নিষ্পত্তি করতে পারবে। বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২) এবিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আন্তঃসীমান্ত লেনদেন চীনা মুদ্রায় করার সুযোগ বাড়াতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

আন্তর্জাতিক লেনদেনে উদীয়মান মুদ্রা হয়ে উঠছে ইউয়ান। আগে শুধু অনুমোদিত ডিলাররাই বাংলাদেশ ব্যাংকে ফরেন কারেন্সি ক্লিয়ারিং একাউন্ট খুলতে পারতো। নতুন প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ব্যাংকগুলিকেও তাদের বৈদেশিক শাখায় ইউয়ানে একাউন্ট রেখে লেনদেন নিষ্পত্তির সুযোগ করে দেয়া হলো।

বর্তমানে দেশের বেশিরভাগ ব্যাংকের ‘নস্ট্রো’ একাউন্ট রয়েছে, বিদেশি ব্যাংকে এ ধরনের একাউন্ট বৈদেশিক মুদ্রায় খোলা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যা মার্কিন ডলারে করা হয়। বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলি যখন তাদের রিজার্ভে ইউয়ানের পরিমাণ বাড়াচ্ছে– তখনই দেশের ব্যাংকিং খাতকে এ সুযোগ দিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

চীনের অর্থনীতি দিন দিন বিকশিত হচ্ছে, এই বাস্তবতায় বেইজিং বিশ্ববাণিজ্যে মার্কিন ডলারের যে কেন্দ্রীয় ভূমিকা রয়েছে তা নিজস্ব মুদ্রার মাধ্যমে দখল করতে চায়।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

চীন ইতোমধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে মূল্য নির্ধারণ এবং লেনদেন নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে উভয় দেশের স্থানীয় মুদ্রা, রেনমিনবি (ইউয়ানের স্থানীয় নাম) এবং টাকা বিনিময়ের প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পিপলস ব্যাংক অফ চায়নার মধ্যে উভয় মুদ্রা বিনিময় সংক্রান্ত চুক্তি প্রস্তাব করেছে চীন।

চলতি বছরের ১৯ আগস্ট পাঠানো এক চিঠিতে ঢাকাস্থ চীনের দূতাবাস জানায়, মুদ্রা বিনিময়ের এই চুক্তি বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে। সেইসঙ্গে কমাবে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন খরচও।

আন্তর্জাতিক লেনদেনে ডলারের বিকল্প হিসেবে বিশ্বজুড়ে দ্রুত স্বীকৃতি পাচ্ছে ইউয়ান। আর তাই বাংলাদেশ ব্যাংকও দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ডলারের অংশ কমিয়ে ইউয়ানের পরিমাণ বাড়াচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইউয়ানের পরিমাণ ২০১৭ সালের ১ শতাংশের তুলনায় চলতি বছরের আগস্টে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১.৩২ শতাংশে। অন্যদিকে, একই সময়ে রিজার্ভে আধিপত্য করা মার্কিন ডলারের পরিমাণ ৮১ শতাংশ থেকে কমে ৭৫ শতাংশে এসে ঠেকেছে।

২০১৬ সালে আইএমএফ (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) এর স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস (এসডিআর) মুদ্রা ঝুড়িতে ইউয়ান অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর থেকেই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদে ইউয়ানের পরিমাণ ক্রমাগত বাড়ছে।

মার্কিন ডলার, ইউরো, জাপানিজ ইয়েন এবং ব্রিটিশ পাউন্ডের পাশাপাশি পঞ্চম মুদ্রা হিসেবে ইউয়ানকেও এসডিআর- ঝুড়িতে অন্তর্ভুক্ত করেছে আইএমএফ। এসডিআর- ঝুড়িতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অর্থই হচ্ছে– ইউয়ান বর্তমানে বিশ্বব্যাপী রূপান্তরযোগ্য বা লেনদেনের ক্ষেত্রে স্বীকৃত একটি মুদ্রা।

বর্তমানে এসডিআর- বাস্কেটে মূল্যের দিক থেকে মার্কিন ডলার এবং ইউরোর পরেই তৃতীয় স্থানে রয়েছে চীনের মুদ্রা ইউয়ান। এর কিছু কাল পর- রিজার্ভ ধরে রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকও ইউয়ানকে অনুমোদিত মুদ্রা হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং চীনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান ব্যবসায়িক সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে– ফরেক্স রিজার্ভে চীনা মুদ্রাটির পরিমাণ বাড়াতে শুরু করেছে।

আরও দেখুন:
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন সার্কুলার

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, আগস্ট, ২০২২ পর্যন্ত ৫২৮ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ ইউয়ান রিজার্ভে রাখা হয়। অথচ ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ৩২৩ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ ইউয়ান ছিল রিজার্ভে। ২০২০-২১ অর্থবছরে চীন থেকে দেশে মোট আমদানির পরিমাণ ছিল ১ লাখ কোটি টাকা এবং রপ্তানি হয়েছিল ৪ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button