বিশেষ কলাম

ছায়া ব্যাংকিং আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে ভূমিকা রাখছে

ড. শাহ মো. আহসান হাবীবঃ কভিড-১৯ যুগের নতুন স্বাভাবিকতায় ব্যাংক খাত রূপান্তর প্রক্রিয়ায় সামগ্রিকতার প্রয়োজন ও প্রবণতা সুস্পষ্ট। আজকের রূপান্তর খাতভিত্তিক রূপান্তর, প্রতিকূল অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক পরিবেশে টিকে থাকার রূপান্তর, যেখানে অনিশ্চয়তা দৃশ্যমান। আজকের রূপান্তরে দেশের এবং বহির্বিশ্বের অংশীদার পক্ষের সহযোগিতার পাশাপাশি বিশ্ব পর্যায়ে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতার মাধ্যমে যথাযথ বাজার প্রণোদনা কাঠামো তৈরি করা দরকার।

আমরা জানি, মহামারীর কঠিন সময়ে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক লেনদেন আমাদের সহযোদ্ধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আবার এর বিপরীত চিত্রও আমরা দেখেছি। আমাদের ব্যাংক ব্যবস্থায় কর্মী ও গ্রাহক উভয়ই যথেষ্ট প্রযুক্তিবান্ধব না হওয়ার কারণে আর্থিক খাতের ‘ফ্রন্ট লাইনার্স’ হিসেবে ব্যাংক কর্মীরা এ সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন। আমরা অনেক দক্ষ ব্যাংকারকে হারিয়েছি এ সময়। ‘ফ্রন্ট লাইনার্স’ হিসেবে ব্যাংক কর্মীদের জন্য প্রণোদনা ছিল ঠিকই, তবে জীবনের পরিপূরক হিসেবে কোনো প্রণোদনাই যথেষ্ট নয় কখনো। ব্যাপক হারে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে হয়তো এমনটি হতো না। যেকোনো পরিস্থিতিতেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলমান রাখা যায়, তবে তার জন্য দরকার প্রয়োজনীয় এবং সঠিক অবকাঠামো এবং দক্ষ জনবল।

আরও দেখুন:
◾ পুনঃতফসিল ঋণ ছয় মাস আদায় না হ‌লে মন্দ খেলা‌পি

তবে নতুন স্বাভাবিক সময়ে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে রূপান্তর প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ সহজতর নয়। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে প্রতিনিয়ত নানা পরিবর্তন হয় বিধায় এ খাতে ব্যাপক বিনিয়োগের প্রয়োজন পড়ে প্রতি মুহূর্তে। বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগকৃত অর্থের সঠিক ব্যবহার এজন্য অত্যন্ত জরুরি। আর এ বিষয়টি নিশ্চিতে প্রয়োজন সঠিক নেতৃত্ব। মনে রাখতে হবে, অনাগত দিনগুলোয় আমাদের আর কোন কোন নতুন স্বাভাবিকতার সঙ্গে পরিচিত হতে হবে, তা অজানা। তাই বর্তমানে যে স্বাভাবিক নতুনে আমরা ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি বা যাচ্ছি, সেখানে তথ্যপ্রযুক্তি আমাদের সামনে যে সুযোগটা তৈরি করে দিয়েছে তার ইতিবাচক এবং সঠিক ব্যবহারই অনাগত দিনের অজানা ঝুঁকি মোকাবেলার পথ দেখাবে। আমরা যদি এখন তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে না পারি, তাহলে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় টিকে থাকা কঠিন হবে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

তথ্যপ্রযুক্তির জনপ্রিয়তা ‘ছায়া ব্যাংক’ কার্যক্রমকে আলোচনায় এনেছে। অনেক ক্ষেত্রে নেতিবাচক ধারণা নিয়ে পরিচিতি লাভ করলেও প্রকৃতপক্ষে ছায়া ব্যাংক কার্যক্রম এর গুণাগুণ ও প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার উপায় নেই বরং অনেক ক্ষেত্রে ছায়া ব্যাংকিংয়ের প্রভাব অর্থনীতি ও আর্থিক খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে বলে মনে করা হয়। বিশেষত আর্থিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্য অর্জনে এবং স্বল্প আয়ের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে অবহেলিত জনগণকে আর্থিক ও অর্থনৈতিক খাতের আওতায় আনার কৌশল হিসেবে ছায়া ব্যাংকিং বিশেষভাবে কার্যকর হতে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় মোবাইল প্রযুক্তি ছায়া ব্যাংকিংয়ের বিস্তার এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্য অর্জনে বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিংয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সংযুক্তি অত্যাবশ্যকীয়ভাবে অ-ব্যাংক প্রতিষ্ঠানের বা স্বল্প নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান যেমন মোবাইল কোম্পানি, মোবাইল এজেন্ট ইত্যাদির সম্পৃক্ততা বাড়িয়েছে। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে মোবাইল সেবাভিত্তিক আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে।

অন্যান্য আর্থিক সেবা পণ্য যেমন—ক্ষুদ্রঋণ, বীমা ও আমানত সংগ্রহের ক্ষেত্রেও মোবাইল প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে শুরু করেছে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের বিকাশ বাংলাদেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্য অর্জন ও গ্রামীণ এবং স্বল্প আয়ের মানুষের মাঝে ঋণ ও আমানত সেবার বিকাশে ইতিবাচক পরিবর্তনের বার্তা দিচ্ছে। বাংলাদেশসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশে মোবাইল ব্যাংকিং ও এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা সাধারণত নিয়ন্ত্রিত আর্থিক ব্যবসার সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে প্রদান করা হলেও, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশেষত উন্নত দেশে, শুধু মোবাইল এবং ওয়েব নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেও সরাসরি আর্থিক সেবা প্রদান করার নিদর্শন আছে। উন্নয়নশীল দেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্য অর্জনে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের বিকাশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, যা একই সঙ্গে ছায়া ব্যাংকিংয়ের উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধির কারণও বটে। ব্যাংক খাত নিয়ন্ত্রণ এবং ছায়া ব্যাংকিংয়ের কোন কোন আর্থিক পণ্যের ক্ষেত্রে আর্থিক নজরদারি যেমন জরুরি, আর্থিক অন্তর্ভুক্তিসংক্রান্ত ছায়া ব্যাংকিংয়ের বিকাশের ক্ষেত্রে স্বল্প নিয়ন্ত্রণ এবং সীমিত নজরদারিই বেশি কার্যকর বলে মনে হয়।

কভিড-১৯ জোরেশোরে আলোচনায় এনেছে ডিজিটাল মুদ্রার বিষয়টিকে, যা বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং লেনদেন কার্যক্রমে বিশাল পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি করেছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির বেশির ভাগ কেন্দ্রীয় ব্যাংক এরই মধ্যে ‘ডিজিটাল মুদ্রা/নোট’-এর সম্ভাবনা, কৌশল এবং এর প্রযুক্তির দিকগুলো নিয়ে গবেষণায় অনেক পথ পাড়ি দিয়েছে। এ পরিবর্তিত ‘ডিজিটাল মুদ্রা’ এরই মধ্যে ‘সেন্ট্রাল ব্যাংক ডিজিটাল কারেন্সি’ বা ‘সিবিডিসি’ নামে পরিচিতি লাভ করেছে। ব্যক্তি এবং বেসরকারি পর্যায়ে ইস্যু করা ক্রিপ্টোকারেন্সির একটি নিয়ন্ত্রিত এবং পরিবর্তিত রূপ হতে যাচ্ছে সিবিডিসি। ২০২১ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং মুদ্রানীতি কর্তৃপক্ষের কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ ‘রাষ্ট্রীয় ডিজিটাল মুদ্রা/নোট’-এর ওপর গবেষণা, মতামত এবং তাদের অবস্থান প্রকাশ করেছে।

এ বিষয়ে ‘ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটলমেন্ট’ এবং ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে দলগতভাবে অবস্থান তৈরি করার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, সুইডেন, জাপান, কানাডা এবং তারা এরই মধ্যে এ বিষয়ে মৌলিক কিছু নীতিমালার ক্ষেত্রে সমঝোতায় পৌঁছেছে। একটি সফল পাইলট পর্ব সম্পন্ন করে বাহামাস বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে বাহামিয়ান ডলারের ডিজিটাল সংস্করণ স্যান্ড ডলার জারি করেছে, যা বিশ্বের প্রথম ‘রাষ্ট্রীয় ডিজিটাল মুদ্রা/নোট’। স্বল্প জনসংখ্যার এবং ৯০ ভাগ মোবাইল অন্তর্ভুক্তির এ দেশটিতে ‘রাষ্ট্রীয় ডিজিটাল মুদ্রা/নোট’-এর প্রচলন তুলনামূলক সহজ হলেও এটি অবশ্যই একটি সাহসী এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্ত।

তবে অর্থনীতির আকার, কাঠামো, প্রযুক্তি এবং জটিলতা বিবেচনায় চীন, সুইডেন ও কানাডার ‘রাষ্ট্রীয় ডিজিটাল মুদ্রা/নোট’ মডেলগুলো বিশেষজ্ঞ এবং নীতিনির্ধারকদের সবচেয়ে বেশি আলোচনার খোরাক হয়েছে। ‘রাষ্ট্রীয় ডিজিটাল মুদ্রা/নোট প্রবর্তনের প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী যে তোড়জোড় শুরু হয়েছে, বাংলাদেশ নিজেকে তা থেকে দূরে রাখতে পারবে না বেশি দিন। দেশকে প্রস্তুত হতে হবে এবং ‘ডিজিটাল টাকা’ প্রবর্তন ও বাস্তবায়নে স্বীকৃত মৌলিক নীতির আওতায় গবেষণা এবং পরীক্ষামূলক বাস্তবায়ন শুরু করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, ‘ডিজিটাল টাকা’ প্রবর্তন ও বাস্তবায়নে সফলতা কেবল ডিজিটাল আপ-গ্রেডেশন বা রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের বিষয় নয়, এটি বড় ধরনের পরিবর্তন ও রূপান্তরও বটে। যার জন্য প্রস্তুতি ও সক্ষমতার উন্নয়ন প্রয়োজন।

কভিড-১৯-এর কারণে সৃষ্ট বিপর্যয়ের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ একটি নতুন ও জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। সুশাসন ব্যবস্থা ঠিক রাখার জন্য কিছু মৌলিক বিষয় আগের মতো রয়ে গেলেও অনেক ক্ষেত্রে সুশাসন সম্পর্কিত বেশকিছু পদক্ষেপও সংশোধন করতে হচ্ছে। অর্থনীতির এ নাজুক পরিস্থিতিতে ‘এন্টারপ্রাইজ রিস্ক ম্যানেজমেন্ট তত্ত্ব’ বা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ব্যাপক অংশগ্রহণ এবং শীর্ষ নেতৃত্বের সহযোগে দায়িত্বশীল আচরণ আসলেই একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। নতুন এ পরিস্থিতিতে সব অংশীদার পক্ষের স্বার্থ সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন পরিবর্তনের কারণে পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। সব অংশীদার পক্ষের সর্বোচ্চ স্বার্থ সংরক্ষণের যে জনপ্রিয় ধারা চালু রয়েছে বছরের পর বছর তা নিশ্চিত করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে শীর্ষ নেতৃত্বকে।

নতুন এ পরিস্থিতিতে সমাজ ও পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতার ক্ষেত্রে আরো বেশি জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতাও অত্যন্ত জরুরি। এর ফলে যেন পরিচালনা পর্ষদ এবং শীর্ষ ব্যবস্থাপনার মাঝে যথাযথ দূরত্ব রক্ষার মৌলিক নীতি ভঙ্গ হয়ে না যায়, তা লক্ষ রাখতে হবে। বিপর্যয় কাটিয়ে উঠে ব্যাংক খাতে স্থিতিশীল অবস্থা আনয়নে পরিচালনা পর্ষদ ও শীর্ষ ব্যবস্থাপনার সংঘবদ্ধ কার্যক্রম চলমান রাখা অত্যন্ত জরুরি। সঙ্গে প্রয়োজন বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে যথেষ্ট বিনিয়োগ। কোনো সন্দেহ নেই, ডিজিটাল প্লাটফর্ম নিশ্চিত করা ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার একটি প্রয়োজনীয় এবং ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। এ রকম নাজুক একটি সময়ে এ খাতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ সহজ নয়। এক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদের সহায়তা জরুরি। আর সঙ্গে সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাইবার ঝুঁকি এবং পরিচালনগত ঝুঁকি যা মোকাবেলা না করলে নতুন সমস্যা তৈরি হবে। বিনিয়োগ করতে হবে নতুন পরিস্থিতিতে কার্যকর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য দক্ষ, যোগ্য এবং মেধাবী জনবল তৈরিতেও। এ অবস্থায় সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং আর্থিক সামর্থ্যের ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারক এবং অংশীদার পক্ষগুলোর কাছে স্বচ্ছ থাকা জরুরি।

বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের রূপান্তর প্রক্রিয়াকে টেকসইকরণে অধিক মাত্রায় মূলধন-ক্যাপিটাল সংরক্ষণ এবং মন্দঋণ নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। কভিড-১৯-এর কারণে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে জটিল এ পরিস্থিতিতে উচ্চমাত্রার মূলধন বা ‘ক্যাপিটাল অ্যাডিকোয়েসি রেশিও’ বজায় রাখা ব্যাংকের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ব্যাংকের দিক দিয়ে দেখতে গেলে উচ্চমাত্রার মূলধন ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে নির্দেশ করে। অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কর্মযজ্ঞের মাঝে শ্রেণীকৃত ঋণের যে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাচ্ছে, তাতে করে অদূর ভবিষ্যতে শ্রেণীকৃত বা মন্দঋণ এবং এর বিপরীতে সংরক্ষিত জমা ব্যাংকের জন্য যেন সমস্যা তৈরি করতে না পারে, সেদিকে নজর দেয়া জরুরি। এ ধরনের সমস্যা সফলভাবে সামলাতে প্রয়োজন হবে পর্যাপ্ত ক্যাপিটাল বা মূলধনের।

বর্তমান পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত সর্বনিম্ন ক্যাপিটাল বা মূলধন ভবিষ্যতে যথেষ্ট নাও হতে পারে। এজন্য বেশকিছু ব্যাংক সম্ভাব্য ঝুঁকি বিবেচনায় দায়িত্বশীল আচরণ করছে। ব্যাংক খাতে ঝুঁকিগুলো চিহ্নিতকরণ ও প্রকৃত ক্যাপিটাল বা মূলধনের পরিমাণ নিরূপণ এবং যথেষ্ট পরিমাণ সংরক্ষণ করে আগামী দিনের সম্ভাব্য বিপদগুলো মোকাবেলায় প্রস্তুতির বিকল্প নেই। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি সমস্যা সমাধানে ‘ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন ২০২১’ সরকারের আর্থিক খাতের উন্নয়নে একটি অত্যন্ত প্রশংসনীয় উদ্যোগ, যার সফল বাস্তবায়ন দেশের ব্যাংক খাতের কিছু মৌলিক সমস্যা সমধানে অবদান রাখতে পারে।

বিশ্বব্যাপী বর্তমান উন্নয়নের ধারা এবং পদ্ধতি যে পুরোপুরি টেকসই নয়. তা বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধু করোনা পরিস্থিতি আবার তা অত্যন্ত জোরালো ভাষায় মানব জাতিকে মনে করিয়ে দিচ্ছে। বার বার বিভিন্ন ধরনের মহামারী আমাদের উন্নয়নের ধারা ব্যাহত করছে ও শিক্ষা দিতে চেয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত বার বারই আমরা পরিবেশ ও প্রকৃতিকে বিপর্যয়ের মাঝে ঠেলে দিয়ে গতানুগতিক আধুনিকায়ন ও উন্নয়নের ধারায় মনোনিবেশ করেছি। পুনরুদ্ধার কৌশলের অংশ হিসেবেই শুরু হতে পারে প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষা করে উন্নয়ন কৌশলের যাত্রা। অর্থনীতির এ উন্নয়ন কৌশলে আদর্শ সঙ্গী করে নিতে হবে ব্যাংক তথা আর্থিক খাতকে, যা শুধু পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই আর্থিক সেবার বিস্তারে কাজ করবে। করোনাকালীন ভয়ভীতির অবস্থা কাটিয়ে অনেকটাই স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়িয়েছে আমাদের অর্থনীতি। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলার সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক সেবা ও ব্যাংক খাতে পরিবর্তনের এবং খাপখাইয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা লক্ষণীয়। করোনা অনিশ্চয়তা এখনো স্পষ্ট তবে নতুন পরিস্থিতিতে তথ্যপ্রযুক্তি যে ব্যাংক রূপান্তরে সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ—এ ব্যাপারে সবাই একমত ও কম-বেশি নিশ্চিত।

লেখকঃ ড. শাহ মো. আহসান হাবীব: অধ্যাপক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button