বিশেষ কলাম

অফিস আদেশঃ কর্মীর মর্যাদার প্রতীক

মোঃ আমিনুর রহমানঃ ইংরেজীতে একটি কথা আছে, “Rights imply duties” অধিকারের কথা বললেই দায়িত্বের কথা এসে যায়। এই দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালনের জন্য কর্মী ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি ম্যানেজমেন্ট শব্দটির দিকে লক্ষ্য করি তাহলে দেখা যাবে, এটাকে Manage+Men+T, এভাবে বিভক্ত করা যায়। যদি Tactfully (সুকৌশলে) শব্দটি T-এর পরিবর্তে বসাই তাহলে Management শব্দটিকে পড়া যায় “Manage Men Tactfully” (সুকৌশলে মানুষকে পরিচালনা করা)। অফিস আদেশ এই কৌশলের একটি Tools হিসাবে কাজ করে।

অফিস আদেশ সাধারণতঃ কোন নিয়োগকর্তা, প্রতিষ্ঠান বা উর্ধ্বতন কর্মকর্তা কর্তৃক ইস্যু করা হয়। অফিস আদেশে বিভিন্ন কাজের বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকে। কর্মীদের মধ্যে কাজকে সুষ্ঠুভাবে বন্টন করে সুশৃংখলভাবে প্রতিষ্ঠানের/ অফিসের কাজ সম্পন্ন করা ও প্রতিষ্ঠানের টার্গেট ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করার জন্য অফিস আদেশ দেয়া হয়। অফিসের কাজ সুষ্ঠুভাবে বন্টনের পাশাপাশি কাজে যোগদান, পদোন্নতি, বদলী, চাকুরী স্থগিত, চাকুরী বাতিল, কোন সুযোগ-সুবিধা বা অধিকার প্রদান বা বন্ধ করণ, কোন কিছুতে সীমাবদ্ধতা প্রদান (Restrictions) কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অথবা কর্মচারীর ছুটি প্রত্যাখ্যান ইত্যাদি বিষয়গুলো অবহিত করতেও অফিস আদেশ প্রদান করা হয়। অফিস আদেশ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের থেকে অধ:স্তনদের মধ্যে একধরণের যোগাযোগ মাধ্যম। একজন কর্মচারী-কর্মকর্তা অফিস আদেশ মানতে বাধ্য। অফিস আদেশ যথাযথ ও নিখুঁত হয়, সহজ-সরল ভাষায় নির্দিষ্ট কাজ স্পষ্টভাবে লেখা হয়। দফাভিত্তি ও নির্দেশনাসমূহ অধঃস্তনদের কাছে বোধযোগ্য এবং মনোযোগ আকর্ষনের উপযোগী হতে হয়। চলমান পরিভাষা শব্দ ব্যবহার করা উচিত। আদেশ অবশ্যই স্বাক্ষরিত হতে হবে। আদেশ মৌখিক ও সুনির্দিষ্ট কাজ ভিত্তিকও হতে পারে। আদেশ অবস্থার প্রেক্ষিতে পরিবর্তন হওয়া চাই।

কর্মী ব্যবস্থাপনা (Talent Management) প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য উপযুক্ত জনশক্তি সংগ্রহ কর্মীর ব্যবহার ও কর্মীর মান উন্নয়নে সহায়তা করে। কর্মী ব্যবস্থাপনার কার্যাবলী নানাবিধ হতে পারে। প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি কর্মচারী এবং প্রতিটি নির্বাহী ব্যক্তি একজন কর্মী। কেননা প্রতিটি নির্বাহী প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি ব্যবস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্ট কোন না কোন কাজের সাথে সম্পৃক্ত। নির্বাহীদের ব্যবস্থাপনার কাজ করতে গিয়ে কর্মকর্তা/ কর্মচারীদের ব্যাপারে নানাধরণের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কর্মচারীদের কাছ থেকে কাজ আদায় করতে হয়। কর্মচারীদের পরিচালনা করতে হয়। বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবস্থাপকগণ, বিভাগীয় দায়িত্বশীলবৃন্দ, এমনকি প্রত্যেক কর্মকর্তার (White Colour Labour) জন্য মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য কিছু কার্যসম্পাদন করতে হয়। কর্মী ব্যবস্থাপনার অন্যতম লক্ষ্যই হচ্ছে ব্যবস্থাপনা ও কর্মীদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা। অফিস আদেশ এই সু-সম্পর্ক স্থাপনের মূল ভিত্তি। সাধারণত: কোন প্রতিষ্ঠানের অধঃস্তনগণ যাকে সরাসরি রিপোর্ট করেন তাকে লাইন ম্যানেজার বলে। অনেক সময় কর্মকর্তাগণকে একাধিক ‘বসের’ কাছে রিপোর্ট করতে হয়। এধরণের বসকে ‘ডটেড বস’ বলে। তবে লাইন ম্যানেজারগণই অফিস আদেশ ইস্যু করেন। এক্ষেত্রে একজন কর্মকর্তার প্রাথমিক কাজ হচ্ছে লাইন ম্যানেজার এর গাইডলাইন অনুযায়ী চলা ও ডটেড বসকে কাজের বিষয় অবহিত করা ও সহায়তা নেয়া। অফিস আদেশ কর্মকর্তার জন্য শুধু গুরুত্বপূর্ণই নয়, অনেক তাৎপর্যপূর্ণ।

১. অফিস আদেশ প্রতিষ্ঠানের সমস্ত কাজের অখন্ড অংশ ও কাজের ক্ষেত্রে শৃংখলা রক্ষার একটি বড় উপাদান। অফিস আদেশ বিভিন্ন কাজের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে ও প্রতিষ্ঠানের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

২. অফিস আদেশ কর্মকর্তার প্রতিভা, মেধা, কর্মদক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তার স্বীকৃতি বলা যায়। তার অনুরূপ কাজ করার যোগ্যতা আছে ভেবেই উক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়।

৩. অফিস আদেশ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কর্মকর্তার উপর আস্থা ও বিশ্বাস এর প্রতীক। প্রতিষ্ঠান তার উপর নির্ভর করে অনুরূপ দায়িত্ব দেয়।

৪. অফিস আদেশ কর্মকর্তার উপর প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রত্যাশা। প্রতিষ্ঠান মনে করে তিনি প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উন্নয়নের জন্য অর্পিত কাজ সফলভাবে পালন করবেন।

৫. অফিস আদেশ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কর্মকর্তার জন্য সুধারণার নজীর। তার উপর ভাল ধারণা আছে বলে তাকে কাজ দেয়।

৬. অফিস আদেশ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কর্মকর্তার জন্য ভালবাসার উপহার। তাকে ভালবাসে বলেই প্রতিষ্ঠান তার পবিত্র গর্ভে বীজ বপন করার জন্য কৃষক এর ভূমিকায় ন্যস্ত করে।

৭. অফিস আদেশ কর্মকর্তা/ কর্মচারীদের জন্য বড় নেয়ামত ও আমানত। এর দায় শোধ করা প্রতিটি কর্মীর নৈতিক দায়িত্ব।

৮. অফিস আদেশ হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কর্মকর্তার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ ও উত্তীর্ণ হওয়া প্রত্যেক কর্মকর্তার জন্য আবশ্যিক কর্তব্য।

৯. অফিস আদেশ কর্মকর্তার জন্য প্রতিষ্ঠানের প্রতি আনুগত্য ও কর্তব্যনিষ্ঠা প্রমানের প্রশ্নপত্র। এ ক্ষেত্রে সঠিক উত্তর হচ্ছে প্রচুর কাজ করা ও সময়ের মধ্যে সব দায়িত্ব পালন করা।

১০. অফিস আদেশ কর্মকর্তার পক্ষ থেকে ঊর্ধ্বর্তনদের প্রতি মর্যাদা ও সম্মান প্রদর্শন এবং বাধ্যতা প্রদর্শনের দলিল।

১১. অফিস আদেশ কর্মকর্তা, কর্মচারীদের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ ও কর্মশক্তি প্রদর্শনের একটি বড় নির্ঝরা।

১২. অফিস আদেশ অনেক ক্ষেত্রে কর্মচারীর জন্য ক্ষমতার অভিব্যক্তি (Power of Expression) ব্যক্ত করার প্রবেশদ্বার।

১৩. অফিস আদেশ নিয়োগকর্তার পক্ষ থেকে কর্মকর্তার জন্য একধরণের কর্তৃত্ব প্রদান হিসাবে বিবেচিত। এর ফলে তিনি সিদ্ধান্ত নেন ও বিভিন্ন কাজ পরিচালনা করেন।

১৪. অফিস আদেশ অনেক ক্ষেত্রে কর্মকর্তার জন্য ট্রেনিং, মূল্যায়ণলিপি ও পুরস্কার হিসাবে কাজ করে।

১৫. অফিস আদেশ অনেক ক্ষেত্রে কর্মকর্তাকে প্রতিষ্ঠানের পক্ষে আবিষ্কারক/ সংস্কারক এর ভূমিকায় অবতীর্ন করে। তার উপর অর্পিত কাজ সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য তাকে উদ্ভাবনী শক্তির ও উন্নত পদ্ধতির জনক হতে হয়।

অফিস আদেশকে গোটা ইঞ্জিনের অবিচ্ছেদ্দ অংশ হিসাবে তুলনা করা যায়। ইঞ্জিনের কোন একটি ক্ষুদ্র পার্টসও যদি যথাযথ ভূমিকা না রাখে, তবে যেমন ঐ ইঞ্জিনের উৎপাদন ক্ষমতা থাকে না, তেমনি প্রতিষ্ঠানের কোন ছোট কর্মীও যদি তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে অবহেলা করে, তবে সে প্রতিষ্ঠানও সফল হতে পারে না।

অফিস আদেশ এর বর্ণমালা ভিত্তিক গুনাবলী থেকেও এর তাৎপর্য উপলব্ধি করা যায়। Office Order শব্দ দুটির Vertical ব্যাখ্যা নিম্নরুপঃ

O – Order (আদেশ)। কর্তৃপক্ষের আদেশ মানতে বাধ্য, নৈতিক দায়িত্ব।
F – Foster (লালন করা, পোষণ করা)। অফিস আদেশ কাজ করতে উৎসাহ দেয়।
F – Fame (যশ, খ্যাতি)। অফিস আদেশ কর্মকর্তার জন্য সম্মান বয়ে আনে।
I – Initiative (উদ্যাম)। এর ফলে তিনি নতুন উদ্যোগ নেন ও কর্মে ঝাপিয়ে পড়েন।
C – Co-Ordination (সমন্বয়)। অফিস আদেশ বিভিন্ন কাজের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে।
E – Exert (প্রকাশ)। কর্মীর নিজেকে প্রকাশ করার উপায়, তার দক্ষতা ও যোগ্যতা দেখানোর সুযোগ হয়।

O – Obedient (বাধ্যতা)। আদেশ বাস্তবায়ন করে প্রতিষ্ঠানের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করার সুযোগ হয়।
R – Responsibility (দায়িত্ব)। অফিস আদেশ কর্মীর ভালবাসার প্রতিষ্ঠানের প্রতি সুনির্দিষ্ট দায়।
D – Discipline (শৃংখলা)। প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কাজের মধ্যে শৃংখলা রক্ষা করে লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করা। Drive (উদ্যাম, প্রচেষ্টা)। Decision (সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষের)।
E – Evaluation (মূল্যায়ণ)। কর্তৃপক্ষ অফিস আদেশের মাধ্যমে কর্মীর গুণ ও দক্ষতা মূল্যায়ণ করতে পারে।
R – Reliability (আস্থা) কর্তৃপক্ষের প্রতি আস্থা ও বিশ্বস্ততার অনুভূতি প্রকাশ করা সম্ভব হয়।

অফিস আদেশকে আক্ষরিক অর্থে না বুঝে ভাবগত অর্থ ও গভীর মর্ম অনুধাবন করা প্রয়োজন। অফিস আদেশের প্রতিটি অক্ষর একজন কর্মীর হৃদয় এর স্পন্দন হওয়া উচিত।

কতিপয় কাজ বা দায়িত্ব ও কর্তব্যের সমষ্টি হচ্ছে কর্ম (Work)। ছোট ছোট কাজ, ঠিকা কাজ বা কাজের অংশ বিশেষকে জব (Job) হিসাবে অবহিত করা হয়। অপর পক্ষে নির্দিষ্ট পরিমান কাজ, অর্পিত কাজের ভার/ গৃহীত কর্মভার হচ্ছে টাস্ক (Task)| ব্যবস্থাপককে অফিস আদেশ ইস্যু করার সময় কর্মকে সুনির্দিষ্ট করার জন্য এ বিষয়গুলো সতর্কভাবে লক্ষ্য করতে হয়। একজন কর্মীকে নির্দিষ্ট কর্মের সাথে সংশ্লিষ্ট কাজ (Task), দায়িত্ব দেয়া হয়। এক্ষেত্রে অধিক্রমন (Overlapping) কমানো গেলে কর্মীকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা সম্ভব। ভাল অফিস আদেশ এর জন্য ব্যবস্থাপককে সঠিকভাবে কর্ম বিশ্লেষণ (Job analysis) করতে হয়। মোট কর্মকে বিভিন্ন ভাগে বা প্যাকেজে ভাগ করার জন্য কর্ম বিশ্লেষণ প্রয়োজন। কর্মটি কে সম্পন্ন করবে, কি কাজ তাকে করতে হবে, কোথায় সম্পন্ন করতে হবে, কখন সম্পন্ন করতে হবে, কখন ও কেন করতে হবে এই উপাদানসমূহ কর্মের (Work) সাথে সংশ্লিষ্ট। এগুলো কর্ম কাঠামো এবং কর্ম বিশ্লেষণ এর সাথেও সম্পৃক্ত। কর্ম বিশ্লেষণকে অনেক সময় কর্ম পর্যালোচনা (Job Study) বলা হয়। ভাল অফিস আদেশ তৈরির জন্য কর্ম বিশ্লেষণ ও কর্ম পর্যালোচনার দক্ষতা প্রয়োজন।

অফিস আদেশ ইস্যু করার ক্ষেত্রে কর্ম বর্ধিতকরণ (Job Enlargement) প্রক্রিয়া অনুসরণ করা যেতে পারে। কর্ম বর্ধিতকরণ অর্থ হচ্ছে বর্তমান কাজের (Existing Work) সাথে অনুরূপ কিছু কাজকে সম্পৃক্ত/ যুক্ত করা। এ প্রক্রিয়াকে Job Loading ও বলা হয়। যখন অনেক গুলো সরল কাজকে বা সম পর্যায়ের কাজকে (Same Level of Work) একটি কাজের সাথে যোগ করে কর্ম বর্ধন করা হয়, তখন এ প্রক্রিয়া কে অনুভূমিক কর্মচাপ (Horizontal Job Loading) বা অনুভূমিক কর্ম বর্ধিতকরণ বলা হয়। কর্ম বর্ধিতকরণ কাজের আনন্দ বাড়ায়, একঘেয়েমি দূর করে এবং কর্মীর ও প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে।

অন্যদিকে যখন বর্তমান কাজের সাথে পরিকল্পনা প্রনয়ন, নিয়ন্ত্রন, প্রবৃদ্ধি অর্জন, কৌশল নির্ধারন, তত্ত্বাবধান ইত্যাদি অভিজ্ঞতা নিঃসৃত কর্ম যোগ করে কর্মীর কর্ম বর্ধনের সুযোগ দেয়া হয়, তখন তাকে উল্লম্ব কর্মচাপ বৃদ্ধি (Vertical Job Loading) বলা হয়। উল্লম্ব কর্মচাপ বৃদ্ধির মাধ্যমে কর্মীকে ক্ষমতায়াণ (Empowered) করা হয়। যা তার মধ্যে কর্ম প্রেরণা সৃষ্টি করে। অপরপক্ষে, যখন সুশৃংখলভাবে কর্মীকে একধরণের কাজ থেকে ভিন্ন ধরণের কাজের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়, তখন তাকে কর্ম বৰ্তন (Job Rotation) বলা হয়। দক্ষ ও যোগ্য কর্মী তৈরির জন্য নিয়মিতভাবে সুষ্ঠু কর্ম বর্তন জরুরী। কর্ম বর্তন প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠানে যোগ্য উত্তরাধীকার ও ভবিষ্যত নেতৃত্ব সৃষ্টি করে এবং কাজ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞ কর্মী তৈরি করে। অফিস আদেশ প্রদানের সময় কর্ম বিশ্লেষন এর এ সমস্ত উপাদানগুলো ব্যবস্থাপকের বিবেচনায় রাখা উচিত। অনেক সময় দেখা যায় একজন কর্মী বছরের পর বছর একটি কাজ করছেন, এমনকি কর্মীর পদোন্নতির পরও তার Job Title- এ কোন পরিবর্তন হয় না, একই কর্মস্থলে অবস্থান করেন, অনেক ক্ষেত্রে অফিস আদেশেরও কোন পরিবর্তন হয় না। কর্মীর উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পদোন্নতির পর কর্মস্থল পরিবর্তন সহ নিয়মিত কর্মচাপ বৃদ্ধি ও কর্ম বর্তন একটি বহুল প্রচলিত প্রক্রিয়া।

অফিস আদেশ প্রদানের ক্ষেত্রে কর্মীর যোগ্যতা, দক্ষতা, পদবী এবং সমগ্র কাজের বিভাজন সহ ইনসাফপূর্ণ বন্টন, ইত্যাদি বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয়। শুধুমাত্র পছন্দ ও অপছন্দের ভিত্তিতে কাজ বেশী-কম করা উচিত নয়। অফিস আদেশ যথাযথ পরিপালন, অফিস আদেশের বাইরে অন্য কিছু করা যাবে না, এমন নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী পরিহার করা বরং, অফিস আদেশের বাইরে কিছু বেশী কাজ করার চেষ্টা করাই কর্মীর জন্য উত্তম। অফিস আদেশ অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তার থেকে প্রতিষ্ঠান আরো অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ফলে প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নেয়াই একজন কর্মীর মূল দায়িত্ব।

অফিস আদেশ যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা, মাঝেমধ্যে পড়া ও অনুধাবন করা ও নিজ কর্মের সাথে পর্যালোচনা করা ভাল কর্মীর বিশেষ বৈশিষ্ট্য। অফিস আদেশ প্রদানের পরও কর্তৃপক্ষ কর্তৃক খবরদারী করতে হয়, যা সত্যিই কষ্টকর ও দুঃখজনক। ফলে অফিস আদেশ স্ব-প্রণোদিত হয়ে বাস্তবায়ন করা এবং অন্যের তত্ত্বাবধানের অপেক্ষা না করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সব কাজ করা, কর্মক্ষেত্রে সফলতার অন্যতম মাধ্যম।

বর্তমান প্রযুক্তির যুগ। প্রযুক্তি ব্যবহার করে কর্মীরা অধিক দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারে। প্রযুক্তির কারণে কর্মীদের একাধিক কাজে পারদর্শী হতে হয় এবং প্রচুর উৎপাদনক্ষমতা থাকতে হয়। প্রযুক্তি কাজকে দ্রুততার সাথে ও সহজে সম্পন্ন করতে সহায়তা করে। আধুনিক প্রেক্ষাপটে অফিস আদেশ প্রদানের সময় একজন কর্মী কর্তৃক অধিক কাজের সুযোগ সৃষ্টির দিকটি লক্ষ্য রাখা যেতে পারে। কর্মীর পেশাগত দক্ষতা ও পেশার উন্নয়নের জন্য তাকে প্রেষণা (Motivation) দেয়া প্রয়োজন।

ইসলামী ধারণামতে সব মানুষ শ্রমিক/ কর্মী। মানুষের মর্যাদা তাঁর উত্তম কর্মের উপর নির্ভরশীল। ফলে কাজের প্রতি আরও যত্নশীল ও ইতিবাচক ভূমিকা রাখা সবার পবিত্র কর্তব্য। অন্যদিকে মানুষ মাত্রই দায়িত্বশীল। আর এ দায়িত্ব সম্পর্কে পরকালে জিজ্ঞেস করা হবে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “তোমরা সবাই দায়িত্বশীল, আর তোমাদের এ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে।” (মুত্তাফাকুন আলাইহে)। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আরো বলেন, “আমরা যখন কাউকে দায়িত্ব প্রদান করি, সে যদি এক টুকরা সুতো বা তার চেয়েও কোন ক্ষুদ্র জিনিস খেয়ানত করে তবে কিয়ামতের দিন খেয়ানতের বোঝা মাথায় নিয়ে সে উত্থিত হবে। “অফিস এর দায়িত্ব-কর্তব্য পালন বস-সাব অর্ডিনেট এর মধ্যেই শেষ নয় বরং পরকালেও এর জন্য হিসাব নিকাশ এর সম্মুখীন হতে হবে। এজন্য অফিস আদেশকে বড় ফ্রেমে দেখতে হবে। অফিস আদেশকে ছোট গম্ভীর মধ্যে সীমাবদ্ধ করা ঠিক নয়। অফিস আদেশকে বিস্তৃত ও গভীরভাবে অনুভব করা এবং ইতিবাচক ও কর্মমুখী দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করা কর্মীর নৈতিক দায়িত্ব। এভাবে অফিস আদেশ কর্মীর জন্য মর্যাদার প্রতীক, পাশাপাশি মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্যও মর্যাদা বৃদ্ধির অনুসঙ্গ হতে পারে।

লেখকঃ মোঃ আমিনুর রহমান, দেশের বৃহত্তম ইসলামী ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে কর্মরত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button