সাম্প্রতিক ব্যাংক নিউজ

চাইলেই কি ইচ্ছে মতো টাকা ছাপানো যায়?

বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এ বছর বাজারে আসা নতুন ব্যাংক নোটের পরিমাণ প্রায় ত্রিশ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ঈদ উল ফিতরের আগে বাজারে এসেছে ২২-২৫ হাজার কোটি টাকা আর কয়েকদিন পর ঈদ উল আযহার আগে আসবে আরো অন্তত পাঁচ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট।

সাধারণত ঈদের আগে নতুন টাকার জন্য অনেক সাধারণ মানুষও ভিড় করে বাংলাদেশ ব্যাংকে বা খোলাবাজারে। অনেকে ব্যাংক থেকেও সংগ্রহ করেন নতুন টাকা। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলছেন এবার পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন।

‘এবার নতুন টাকা শুধু ব্যাংকে দেয়া হবে। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে খোলা বাজারে এবার চাহিদা কম। তাছাড়া সামাজিক দূরত্বের বিষয়টিও আছে’। ইসলাম বলছেন, স্বাভাবিক সময়ে অনেকে সরাসরি এসে নতুন নোট সংগ্রহ করতো আবার ব্যবসায়ীরাও আগে থেকে অনেকে চাহিদা জানাতেন। সেজন্য নতুন নোট অনেক বেশি সরবরাহ করতে হতো।

কিন্তু ঈদ আসলে নতুন নোট কেন আনা হয়?
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলছেন এ সময়ে চাহিদা বাড়ে নতুন নোটের, বিশেষ করে ব্যবসায়ী ও ব্যাংকগুলোর দিক থেকে। ‘এর বাইরেও আমরা সারা বছর ধরে ছিঁড়ে যাওয়া, পুড়ে নষ্ট হওয়া. বা রি-ইস্যু করা যায়না এমন নোটগুলো ব্যাংকিং চ্যানেলে মার্কেট থেকে তুলে নেই। যার পরিমাণ কয়েক হাজার কোটি টাকা। এ ঘাটতি পূরণের জন্যও নতুন নোট সরবরাহ দরকার হয়। তাছাড়া বাজারের চাহিদার একটা বিষয় আছে’।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।
ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ (Banking News Bangladesh. A Platform for Bankers Community.) প্রিয় পাঠকঃ ব্যাংকিং বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন।

তিনি বলেন শুধু ঈদকে সামনে রেখেই নতুন নোট সরবরাহ করা হয়না। বরং এর আরেকটি বিবেচ্য বিষয় হলো মার্কেটে মানি সার্কুলেশন অর্থাৎ অর্থের প্রবাহের বিষয়টি।

অর্থনীতিবিদ ফাহমিদা খাতুন বলছেন, নতুন নোট আনার ক্ষেত্রে দুটি বিষয় প্রধানত: বিবেচনা করা হয়। এগুলো হলো পুড়িয়ে ফেলা ব্যবহার অযোগ্য নোট ও বাজার সার্কুলেশন। ‘বাজারের চাহিদা অনুযায়ী নতুন নোট সরবরাহ করতে হয়। কিন্তু খেয়াল রাখতে হয় সেটি যেন বেশি হয়ে মূল্যস্ফীতির কারণ না হয়। এজন্য একটা নিয়ন্ত্রণ রাখতে হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংককে’- বলছিলেন তিনি। টাকা কি নতুন করে ছাপানো হয়? নাকি আগেই ছাপানো থাকে?

সিরাজুল ইসলাম বলছেন, টাকা হঠাৎ করে ছাপানো হয়না কারণ টাকা ছাপানোর একটি প্রক্রিয়া আছে। ‘মার্কেট টুলস ব্যবহার করে সংশ্লিষ্টরা পর্যালোচনা করেন যে কি পরিমাণ টাকার দরকার হবে নতুন করে। সেভাবেই ছাপানো হয়। পরে বাজারের চাহিদার ভিত্তিতে তা বাজারে ছাড়া হয়’। ফাহমিদা খাতুন বলছেন অনেক সময় বিশেষ পরিস্থিতিতে টাকা ছাপানোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

‘যেমন ধরুন এখন কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে প্রণোদনা, নানা প্যাকেজের জন্য টাকার দরকার হবে। হয়তো সে কারণে নতুন সরবরাহের প্রয়োজন হতে পারে। তবে এসব ক্ষেত্রে খুব কঠোর ভাবে মূল্যস্ফীতির দিকে নজর রাখতে হয়। না হলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশংকা থাকে’।

টাকা কি সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইচ্ছেমতো ছাপাতে পারে?
সিরাজুল ইসলাম বলছেন, সে সুযোগ নেই। কারণ এর সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে, সেগুলো মেনেই কাজ করতে হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। অর্থনীতিবিদ ফাহমিদা খাতুন বলছেন, এমন কোনো বিধিনিষেধ বা ধরাবাঁধা নিয়ম নেই যে এতো টাকা ছাপানো যাবে বা এর বাইরে ছাপানো যাবেনা।

‘তবে পুরো বিষয়টি নির্ভর করে দেশের অর্থনীতির ওপর। বাজারে অর্থের প্রবাহ বেড়ে গেলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দ্রব্যমূল্য বাড়তে পারে যা জীবনযাত্রা খরচ বাড়িয়ে দেবে। তাই একটি ভারসাম্য রাখতে হয় অর্থনীতির স্বার্থেই’।

ঈদ সেলামি বা উপহারে নতুন টাকা
ঈদের সময় পরিবারের ছোটোদের উপহার দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে নতুন টাকার বেশ সমাদর রয়েছে। ঢাকার পরিবাগের শাহীনা আফরোজ বলছেন, পরিবারের বয়স্করা ছোটোদের নতুন নোট দেবেন- এ বিষয়টি ঈদ আনন্দেরই একটি অংশ হয়ে দাঁড়িযেছে।

‘আমার বাবাকে দেখতাম ছোটবেলায় নতুন নোট দিতেন আমাদের ভাইবোনদের। চাচা মামাদের কাছ থেকেও পেতাম। এখন আমার শ্বশুর তার নাতি-নাতনীদের প্রতি ঈদের নতুন নোট উপহার দেন’। ব্যাংকে কাজ করেন জাহেদা ইশরাত। তিনি বলেন ঈদের আগে আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু বান্ধবদের অনেকেই তার কাছ থেকে নতুন নোট পেতে চান।

‘ঈদের অনেক আগেই অনেকে বলে, তুমি তো ব্যাংকে আছো নতুন ১/২ বান্ডিল নোট দাও। কয়দিন আগে ২শ টাকার নতুন নোট এসেছে। তাও চেয়েছেন অনেকে’। তিনি অবশ্য বলেন, এবারে করোনাভাইরাস জনিত কারণে অন্যবারের তুলনায় নতুন নোটের জন্য আগ্রহ কম দেখছেন তিনি।

সূত্র: বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button