কেমন আছেন বাংলাদেশের ব্যাংকাররা
ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশঃ বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক মিলে সর্বমোট ৬৫টি ব্যাংক আছে। এতে সরকারি মালিকানাধীন সাধারণ ও বিশেষায়িত ব্যাংকের সংখ্যা ১৪টি। বেসরকারি ব্যাংক আছে ৫১টি। সরকারি ১৪টি ব্যাংকের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১টি, বাণিজ্যিক ব্যাংক ৬টি, বিশেষায়িত ব্যাংক ৭টি। বেসরকারি ৫১টি ব্যাংকের মধ্যে সুদ ভিত্তিক সাধারণ ব্যাংক হলো ৩৪টি, শরিয়াভিত্তিক ইসলামী ব্যাংক ৮টি, বিদেশী ব্যাংক ৯টি। ৫১টি বেসরকারী ব্যাংকের মধ্যে ২টি নন শিডিউল ব্যাংকও আছে তাহলো গ্রামীন ব্যাংক ও জুবিলি ব্যাংক। তাছাড়া সরকারী বেসরকারী সাধারণ ব্যাংক গুলোতে ইসলামী ব্যাংকিং- এর মোট ২৪টি শাখা ও উইনডো চলমান আছে। ব্যাংকসমূহের শাখা সংখ্যা ৮ হাজারের মত। কর্মচারীর সংখ্যা ২ লক্ষাধিক।
বাংলাদেশের সকল আর্থ সামাজিক উন্নয়নে বিশেষতঃ কৃষি ও শিল্প উন্নয়নে ব্যাংকারদের অবদান অনস্বীকার্য। দেশ গড়ার কারিগর হিসেবে খ্যাত ব্যাংকারদের সম্পর্কে মানুষের কৌতূহল থাকলেও তাদের সুখ দুঃখ নিয়ে কারো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। স্বাধীনতাপূর্ব বাংলাদেশে ব্যাংকারদের বেতন কাঠামো অন্যান্য পেশা থেকে আলাদা ও উন্নত ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার অব্যবহিত পর ব্যাংকার নন ব্যাংকার বেতন কাঠামো সমান করে ফেলা হয়। এতে ব্যাংকারদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। সেই সুবাদে ৮০’র দশকে প্রেসিডেন্ট সাত্তারের আমলে ব্যাংকাররা লাগাতার মাসাধিককাল ধর্মঘট চালিয়ে যায়। তাতেও কোনো ফল হয়নি।
পরবর্তীতে ৮২ সাল থেকে প্রেসিডেন্ট এরশাদের সময় এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রাইভেট কমার্শিয়াল ব্যাংকের শুভযাত্রা শুরু হয়। তখন থেকে বাংলাদেশে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ও সার্ভিস এ এক নব দিগন্তের সূচনা হয়। দেশের মানুষ সরকারী ব্যাংকের এক তরফা নিপীড়ন থেকে বেরিয়ে এসে প্রাইভেট ব্যাংকগুলোতে নিজেদের ইচ্ছামত ব্যবসা-বাণিজ্য ও অন্যান্য সুবিধা গ্রহণে সক্ষম হয়। মানুষের চাহিদা ও প্রয়োজনের আলোকে এই প্রাইভেট ব্যাংকগুলোর শাখা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। সরকারও নতুন নতুন ব্যাংক সৃষ্টিতে তৎপর দেখা যায়। কেউ কেউ রাজনৈতিক কারণে অনেকগুলো ব্যাংকে সৃষ্টির কথা বললেও এ ব্যাংকগুলোর অবদান ফেলে দেয়ার মত নয়।
বাইরের দিক থেকে ব্যাংকারদের অনেক সুখী মনে হলেও ভিতরে ভিতরে তুষের আগুনের মত এরা জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। আর্থিক বিষয় হওয়ায় ব্যাংকারদের সারাক্ষণ তটস্থ ও সতর্ক থাকতে হয়। অনেক সময় তারা না পারে দুঃখের কথা প্রকাশ করতে না পারে সহ্য করতে। এমন এক পরিস্থিতিতে নিপতিত অধিকাংশ ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী। মূলত ব্যাংকাররা কেমন আছে? এ নিয়ে তেমন কারো আগ্রহ আছে বলে মনে হয় না। তাদের সম্পর্কে কারো মাথা ব্যাথাও নেই। ভিতরে ভিতরে তাদের বৃহত্তর অংশ যে বৈষম্যও নিগৃহীতের শিকার একথা অনেকের কাছে আশ্চর্য্য মনে হলেও এটিই সত্য ও এ সময়ের বাস্তবতা। তবে কিছু সুবিধাভোগী স্বার্থপর ব্যাংকার যে নিজের আখের গোছানোর তালে নেই তা কিভাবে বলবো?
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
প্রকৃত পক্ষে বৃহত্তর কর্মীবাহিনী কোনো না কোনোভাবে অত্যাচারিত ও নিপিড়িত এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়। মিডিয়া ব্যাংকারদের জন্য সবসময় অনুদার এ রকম অভিযোগ কতটুকু সত্য আমরা জানি না। বলা হয়ে থাকে তাদের ছোট-খাট অপরাধও মিডিয়া লুফে নেয়। অথচ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ব্যাংকারদের অনেকটা সৎ ও কঠোর পরিশ্রমী বলতে হবে নির্দ্বিধায়। কেননা তাদের জবের ধরণটাই এ রকম। তাদের সুখ দুঃখের কোনো কথা প্রচার মাধ্যমে শুনাই যায় না। যেন ডুমুরের ফুল! এটি যেন একধরণের একদেশদর্শীতা ও এক তরফা বিদ্বেষতা!
তার কারণ যোগাযোগের অভাব কিংবা ব্যাংকারদের মিডিয়া বিমুখতা ও তাদের শান-শওকতের কারেণে হিংসা বিদ্বেষ কিনা আমাদের জানা নেই। বলতে গেলে সহকারী অফিসারের লেভেল লাগিয়ে প্রাইভেট ব্যাংকগুলোতে কর্মচারীদের মুখে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। টু শব্দটি করার ক্ষমতাও কারো নেই। এখানে লম্প-ঝম্প চলে উধ্বতনকর্তাদের সুনজরে থাকা হাতেগোনা কিছু সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভাগ্যে। অন্যরা দাসের মত চাকরিজীবন পরিচালনায় বাধ্য হোন। তাদের যেনো কোনো কথা বলার অধিকারই নেই। বিদেশ ট্যুর রিট্রেট, বিশেষ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ, দেশে ভ্রমন, গাড়ী, প্রমোশন, ভালো পোস্টিং সব সবই মিলে ঐসব সুবিধাভোগীদের ভাগ্য ললাটে। পক্ষপাত, আঞ্চলিকতা কি হারে ও কিভাবে চলে নিরবে নিভৃত্তে তা কেবল ভুক্তভোগীরাই বলতে পারেন। অধিকাংশরা হোন অধিকার বঞ্চিত ও অত্যাচারিত। বিভিন্ন গ্রুপ ও গ্যাং সৃষ্টি করে বিশেষ এলাকা ও গোষ্ঠির লোকেরা লুটেপুটে খাচ্ছে সর্বত্র।
সরকারী ব্যাংকগুলোর অবস্থা আরও তথৈবচ এগুলো হিসাবের বাইরে। এখানে প্রমোশন ভালো পোস্টিং যেন সোনার হরিণ। নেপোটিজম কাকে বলে এখানে ভিতরে প্রবেশ না করলে আসলে বুঝাই যাবে না। এই ব্যাংকগুলো নাকি মূলধন ও লোপাট করে ফেলেছে। তাহলে এরা কি দেউলিয়া হওয়ার পথে? প্রাইভেট ব্যাংকগুলোর কোনো কোনোটারও মূলধন অপর্যাপ্ততা চোখে পড়ার মত। তাতেও উদ্বেগ উৎকন্ঠার বালাই নেই! যে দেশে হলমার্ক কেলেঙ্কারীর মত সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার বড় অংকের কেলেঙ্কারীর পরও অর্থমন্ত্রী সামান্য টাকা বলে উড়িয়ে দিতে পারেন সে দেশে আর কি বলার থাকে।
ব্যাংকারদের বড় সমস্যা তাদের মধ্যে কোনো ঐক্য ফোরাম নেই, নেই কোনো শক্তিমান জার্নাল কিংবা লেখালেখির মাধ্যম। দু একটি সাময়িকী, পত্রিকা থাকলেও সেগুলো দখল করে আছে মালিকপক্ষ কিংবা উর্ধ্বতন নির্বাহীরা। সাধারণ কর্মচারী- কর্মকর্তারা অবহেলিত সবসময়। তাদের লেখালেখি করার কিংবা কথা বলার কোনো উপযুক্ত প্ল্যাটফরম নেই। তাদের দুখের কথা বলার যেন কোনো অধিকারই নেই। অপরপক্ষে মেধাবী ও স্পষ্টবাদী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চরম নির্যাতনের শিকার হোন সব সময়। এর কোনো বিচার নেই। ব্যাংকের অভ্যন্তরে প্রকাশ্যে কিংবা অপ্রকাশ্যে চলতে থাকে সীমাহীন অত্যাচার নিপীড়ন।
কিছু কিছু অপরাধের পিছনে ব্যাংকারদের একটি অংশ জড়িত থাকলেও অধিকাংশই সৎ ও পরিশ্রমী। তবে হলমার্ক কেলেঙ্কারির পিছনে কলকাটি নাড়িয়েছে রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালীরা এ কথা পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। এ ঘটনায় রিমান্ডে নেওয়া সোনালী ব্যাংকের একজন ডিজিএম নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করেন। এটিও তেমন কোনো প্রচার পায় নি। মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করা হয়েছিল কিনা তাও আমরা জানি না। বস্তুত অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের মত বেপরোয়া বক্তব্য যদি চলতে থাকে আর এভাবে যদি জনগণের আমানতের টাকাও খোয়া যায় তাহলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না কারণ তখন হয়তো আর কেউ বলে উঠবে এটি সামান্য টাকা এতে অসুবিধার কিছু নেই। এ দেশে এভাবে সবই সম্ভব! প্রকৃতপক্ষে ব্যাংকাররা তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে সর্বত্র।
পরিশেষে বলবো জাতীয় অর্থনীতির নিয়ামক শক্তি হিসেবে ব্যাংকারদের চাকরী ও জীবনের প্রোটেকশন থাকা উচিৎ ও এটি সময়েরও দাবী। সত্য কথা হলো লোকচক্ষুর অন্তরালে মিথ্যা মামলা হামলার শিকার হয়ে কত নিরীহ ব্যাংকারের জীবন বিপন্ন হচ্ছে তার কোনো হিসাব নাই। চুরি করা চেকের জন্য অথবা ইচ্ছাকৃত চেক হারানোর মামলার জন্যও পুলিশি হয়রানীর শিকার হোন তারা। পুলিশের আচরণ ক্ষেত্রবিশেষে জীবন বিপন্ন হওয়ার মত। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারী ও টাকাপয়সার বিনিময় দাবী করে হয়রানী করা নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। এ রকম ঘটনা অহরহ ঘটছে। এসব মিথ্যা মামলা করে ব্যাংকারদের যাতে হয়রানি করা না যায় তার জন্য তাদের অনুকুলে সুরক্ষা আইন থাকা জরুরি। এ সব বিবেচনায় রেখে আমরা সরকারের কাছে ব্যাংকারদের সার্বিক অধিকার ও ন্যায্য সুরক্ষা দাবী করছি।
কার্টেসিঃ সংগৃহীত