বিবিধ

করোনাভীত আশাজাগানিয়া ও প্রযুক্তিগত দিনলিপি

করোনাভীত আশাজাগানিয়া ও প্রযুক্তিগত দিনলিপি- মুঠোফোনের হঠাৎ ‘টুং’ শব্দে সমবিৎ ফিরে পেলাম, মার্চে প্রথম আলোর খবরের ক্ষুদে-বার্তায়; যেখানে বর্ণিত ‘সাধারণ ছুটি’ সংক্রান্ত সরকারী নির্দেশ-যাতে আমরা সকলে মিলে করোনার বিস্তার রোধ করতে পারি। সারা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে, ব্যাংকিং সেবা ব্যাহত না করে সীমিত আকারে পরিষেবা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশাবলী কেন্দ্রীয় ব্যাংক (বাংলাদেশ ব্যাংক) তথা নিজের ব্যাংক (কর্মস্থলের) সময়সূচীতে পরিবর্তন আনা হয়েছে; যাতে অর্থনীতির চাকা সচল রাখা যায়। যেহেতু আমি একজন ব্যাংকার সেহেতু আমরাও সামাজিক দায়বদ্ধতায় ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ভয়কে উপেক্ষা করে নিয়মিত সেবা দিয়ে আসছি, দেশের এই ক্রান্তিকালে।

ব্যাংকিং পরিষেবায় অভূতপূর্ব পরিবর্তন চোখে পরার মতো, এবং সে সকল পরিষেবার মধ্যে কিছু পরিষেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে মানুষ-মানুষে সরাসরি যোগাযোগের আবশ্যকতা নেই। ওই সকল সেবায় গ্রাহকদের উদ্বুদ্ধ করা এবং সেবা গ্রহণকারীদের সেবা গ্রহণে সহায়তা ও পরিচিত করে তোলাই বর্তমানে উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দেওয়াই অন্যতম লক্ষ্য। ফলে প্রথা-প্রচলিত ব্যতীত এক ভিন্ন ধরণের ব্যাংকিং সচেতনতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার গুরুত্বের ব্যাপারে সর্বক্ষেত্রে চর্চার আগ্রহ বেড়েছে। আমরা ব্যাংকার তথা ব্যাংকগুলোর নির্দেশনা মোতাবেক পরিষেবা চালিয়ে যাচ্ছি ও যাব। যদিও বিচ্ছিন্নভাবে ব্যাংকারদের দায়িত্ব পালনের জন্য রাস্তায় আইন-শৃংখলা বাহিনীর প্রতিবন্ধকতা ও অপ্রতুল গণপরিবহনের ‘কড়াকড়ি’ রোষানলে পতিত হয়েছি ও অনেকেই পড়েছেন। তথাপি সম-মৃত্যু ভয় উপেক্ষা করেই রাস্তায় আমরা বের হই। ব্যাংকার ভাই-বোনদের পথ চলার স্বার্থে কিংবা পেটের দায়ে রিক্সাচালক ভাইদের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির তথ্যচিত্র বা স্থিরচিত্রে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সবারই বিবেকের দরাজায় কড়া নাড়ছে।

আরও দেখুন:
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন সার্কুলার

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সর্বক্ষেত্রেই পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি সর্বাগ্রে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে যা বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা (WHO) কর্তৃক অনুমোদিত প্রচলিত পন্থাকেও মাঝে মাঝে হার মানিয়েছে। তবে আমাদের দেশের ‘ছেপাক্রান্ত’ জনগণের পরিচ্ছন্ন সচেতনতায় ঢাকার রাস্তা, মোড়,অলি-গলি ইত্যাদি অপেক্ষাকৃত সুস্বাস্থ্যকর ও মনোমুগ্ধকর হয়েছে বটে। অহেতুক জটলা বা আড্ডার উপস্থিতি নেই বললেই চলে। এ যেন এক অচিনপুরী “ঢাকা”। ফলে মতিঝিলে যাওয়া-আসার সময় পাখিদের কলরব ও চৈত্রের ভর দুপুরে “কোকিলের কুহু ডাক” সত্যিই বাড়তি পাওনা ও বিরল, যা আত্রান্ত হওয়ার ভয়কে অন্যদিকে ভুলিয়ে রাখতে সহায়ক।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

আমার মুখবইয়ের (Facebook) হিসেবটি অনেকদিন থেকেই নিষ্ক্রিয়; ওই ক্যামব্রিজ এ্যানালিটিকা ঘটনার পর থেকে, যা অধিকাংশক্ষেত্রেই ভুল বা মনগড়া তথ্যে পূর্ণ থাকে যা অনেকেই হয়ত: না বুঝেই আবার তা ছড়িয়ে দেন, ফলে ওই মুখবই নতুন নতুন আতংক বা গুজবের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে যায়। তবে, এ ক্ষেত্রে প্রতিথযশা কিছু পত্রিকার ক্ষুদে-বার্তা (SMS), তথ্য-উপাত্ত, সাংখ্যিক বিশ্লেষণে পরিসংখ্যান, উৎস চয়ন, প্রযুক্তিগত পরিষেবা, তথ্য বাতায়ন ইত্যাদি আমাদের সঠিক ও সত্যনিষ্ঠ খবরে প্রতিনিয়ত হালনাগাদ করে, যেমন প্রথম আলো এর মধ্যে পুরোধা এবং এহেন পরিস্থিতিতে ই-প্রথম আলোর (www.epaper.prothomalo.com) পরিষেবাটি ফ্রি (সাময়িক সময়ের জন্য) হওয়া সত্যিই প্রশংসিত ও সামাজিক দায়বদ্ধতার এক মহান উদ্যোগ। এছাড়া অন্যান্য পত্রিকাগুলোতেও অনেক জন-সচেতনতামূলক ও সাধারণ ছুটিগুলোকে আরও অর্থবহ ও স্মরণীয় করার জন্য সম্ভাব্য দিক-নির্দেশনাগুলোও তুলে ধরেছে যাতে দেশের জনগণও ঘরে থেকে (#stayathome) সমাজ, দেশ, জাতিকে ভাইরাস মোকাবেলায় সহায়তা করতে পারে।

গত কয়েকদিন আগে আলোচিত সাহিত্যিক অরুন্ধতী রায়ের বক্তব্য ফিনান্সিয়াল টাইমস ও প্রথম আলো পত্রিকাতে পড়ে অনেকটাই আশাবাদী হয়ে উঠেছি, যা তিনি বলতে চেয়েছেন তার স্বারসংক্ষেপ নিজের ভাষায় প্রকাশ করা যায়-আমরা মানে পৃথিবীর বিশাল জনগোষ্ঠী হয়ত নতুন পৃথিবীতে প্রবেশ করছি; যেখানে সবকিছুই সু-শৃংখলভাবে, পরিবেশকে নিজের হীন স্বার্থে ব্যবহার না করে, মানুষকে ‘মানুষ’ হিসেবে, পরিচ্ছন্নতাকে সামনে রেখে, সহায়তার হাত বাড়িয়ে, ধর্ম-বর্ণে বিভক্ত না করে, অল্পতে তুষ্ঠ থেকে, নতুন দৃষ্টি-ভঙ্গি নিয়ে, খালি হাতে প্রবেশ করব। আসলেই এই বিশ্বব্যাপী মৃত্যু মিছিলে আমি বা আমার যদি না থাকি, তবে অবশ্যই আমরা সকলে নতুন পৃথিবীতে ‘নবরূপে’ প্রবেশ করব।

সেই ছেলেবেলায়, বিজ্ঞানের আর্শীবাদ বা জয়যাত্রা এবং ইংরেজীতে Blessings of Modern Science ইত্যাদি রচনাগুলো বর্তমানেও সময়োপযোগী হিসেবে অত্যন্ত কার্যকর তা ভাবতেই ভাল লাগছে। বিভিন্ন ধরণের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম যেমন Viber, WhatsApp, Snapchat, Facebook, Twitter, LinkedIn ইত্যাদির কল্যাণে নিমিষেই খবর আদান প্রদান, ঘরে বসেই অফিস (Virtual Office/ Worked at Home), ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঘরে বসেই সরকার প্রধানের প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা, জিপিএস এর (GPS) মাধ্যমে সম্ভাব্য রোগী সনাক্ত তথা গুচ্ছ নির্বাচান (Cluster Selection), তথ্য বিশ্লেষণের (Data Analytics) মাধ্যমে আইসোলেশন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (Artificial Intelligence) মাধ্যমে ফল যাচাই, তথ্য উপাত্তের (নির্ভরণ) ভিত্তিতে রোগের বিস্তারের ধাপ চয়ন ইত্যাদির সাথে ঘরে বসে ব্যাংকিং পরিষেবা গ্রহণ বিশেষ করে মোবাইল ব্যাংকিং এর ব্যবহারের রেখচিত্রের উল্লষ্ফলণ এর মাধ্যমেই বিজ্ঞানের কল্যানকর প্রযুক্তিসমূহ মানবজাতির ভয়ের ভ্রুকূটিকে ম্লাণ করে সামনে এগিয়ে যাবে।

আর বিশ্বের তাবৎ ক্ষমতাধর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বগণ যুদ্ধ-বিগ্রহ ভুলে অসহায়ের মতো চিকিৎসক ও গবেষকদের কাছে ধরণা দিচ্ছেন, মহামারির প্রতিষেধক বা টেস্টিং কিটের পরিসংখ্যানিক “দ্বিতীয় ভ্রান্তি” রোধের (False Negative) জন্য যাতে কোভিড-১৯ এর বিস্তার যথাসম্ভব প্রতিরোধ করা যায়।

তারপরেও আমরা বাঙ্গালি জাতি হিসেবে বায়ান্ন্ ও একাত্তরে যে জীবনী শক্তিতে জয়ী হয়েছিলাম এবারেও, কুড়িতে আমরা সাহসের সাথে সবাই একাট্টা হয়ে মহামারী প্রতিহত করব।

লেখকঃ ম. রাশেদুল হাসান খান
এমআইটি, এমবিএ (ব্যাংকিং), এমএসসি (পরিসংখ্যান)
এসপিও, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক লিমিটেড
মতিঝিল শাখা, ঢাকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button