বিবিধ

১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস

১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস- মহান বিজয় দিবস, জাতির সর্বোচ্চ গৌরবের দিন। এবার বিজয়ের ৫২তম বার্ষিকী। বিজয় দিবস বাংলাদেশে বিশেষ দিন হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে দেশের সর্বত্র পালন করা হয়। প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশে দিনটি বিশেষভাবে পালিত হয়। ২২ জানুয়ারি, ১৯৭২ তারিখে প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে এই দিনটিকে বাংলাদেশে জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয় এবং সরকারীভাবে এ দিনটিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়। ৯ মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী বাংলাদেশ ও ভারতের সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে।

এর ফলে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামে একটি নতুন স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। এ উপলক্ষে প্রতি বছর বাংলাদেশে দিবসটি যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য এবং বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে পালিত হয়। ১৬ ডিসেম্বর ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের সূচনা ঘটে। জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে অনুষ্ঠিত সম্মিলিত সামরিক কুচকাওয়াজে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সদস্যরা যোগ দেন। কুচকাওয়াজের অংশ হিসেবে সালাম গ্রহণ করেন মাননীয় রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রী। এই কুচকাওয়াজ দেখার জন্য প্রচুরসংখ্যক মানুষ জড়ো হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের অংশ হিসেবে ঢাকার অদূরে সাভারে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মী, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে থাকেন।

আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য এবং বীরত্ব প্রকাশের অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন। বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার ৫১ বছর পূর্তির দিন। দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে এবার জাতীয় পর্যায়ে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে আলোকসজ্জায় উজ্জল হয়েছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের সরকারি ভবন, উল্লেখযোগ্য স্থাপনা।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বলেন, লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে পরমতসহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও চেতনা বাস্তবায়নে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরও বেশি অবদান রাখার আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাণীতে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশকে “স্বল্পোন্নত” দেশে উন্নীত করেন, আর আমরা মাতৃভূমিকে “উন্নয়নশীল” দেশের কাতারে নিয়ে গেছি। স্বাধীনতার পর বিগত ৫২ বছরে আমাদের যা কিছু অর্জন, তা জাতির পিতা এবং আওয়ামী লীগের হাত ধরেই হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের এই উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত থাকলে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশে পরিণত হবে, ইনশা আল্লাহ।’

কর্মসূচি
বাসস জানায়, জাতীয় পর্যায়ে এদিন ঢাকায় প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর উপস্থিতিতে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ, মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণকারী আমন্ত্রিত ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যগণ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।

এ ছাড়া সকাল সাড়ে ১০টায় তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রীও এ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এ দিন সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলোও।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীসহ সারা দেশেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শ্রমজীবী, পেশাজীবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করবে।

বিজয় দিবসের ইতিহাস
জিন্নাহের দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান নামক একটি অসম রাষ্ট্রকে বাঙালির ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। শুরু হয় পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসন, শোষণ, নির্যাতন। দিনের পর দিন বাঙালির ওপর অত্যাচার নির্যাতন ও শোষণ চালাতে থাকে পাকিস্তানি বর্বর শাসক গোষ্ঠী।

এই শাসন-শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাঙালি একে একে গড়ে তোলে আন্দোলন-সংগ্রাম। বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন, ৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬ দফা, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০ এর নির্বাচনে বিজয় লাভের মধ্য দিয়ে বাঙালি চূড়ান্ত বিজয়ের লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হতে থাকে।

এসব আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ও নেতৃত্ব দিয়ে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা হয়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বায়ান্নের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালির যে আন্দোলন শুরু হয় ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সেই আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নেয়। যার চূড়ান্ত পরিণতি ঘটে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) লাখ লাখ মানুষের সমাবেশে দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন। তিনি ‘ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলে, যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করা’র আহ্বান জানান।

বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে প্রস্তুতি নিতে থাকে বাঙালি জাতি। ২৫ মার্চ কালো রাতে নিরীহ বাঙালির ওপর ঝাপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, শুরু করে গণহত্যা। এই প্রেক্ষাপটে তাৎক্ষণিকভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেন। এরপর পরই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী।

শুরু হয় রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ ৯ মাস ধরে চলে এই যুদ্ধ। পাক হানাদার বাহিনী বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্নকে ভেঙে দিতে শুরু করে বর্বর গণহত্যা। গণহত্যার পাশাপাশি নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, শহরের পর শহর, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয় হানাদাররা। বাংলাদেশ পরিণত হয় ধ্বংস স্তুপে। আধুনিক অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অদম্য সাহস ও জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করে এদেশের কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, যুব, নারীসহ সব শ্রেণী-পেশার সর্বস্তরের বাঙালি।

এই সময় বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়ায় প্রতিবেশী দেশ ভারত। অস্ত্র, সৈন্য, খাদ্য, আশ্রয়সহ সার্বিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশাল ভূমিকা রাখে রাশিয়া (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন)।

এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে এগিয়ে আসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুক্তিকামী মানুষ। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হন। সম্ভ্রম হারার দুই লাখের বেশি মা-বোন। সর্বস্তরের মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেও এদেশের কিছু মানুষ, জাতির কুলাঙ্গার সন্তান পাক হানাদার বাহিনীর পক্ষ নেয়। রাজাকার, আল বদর, আল সামস বাহিনী গঠন করে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে গণহত্যা ও ধ্বংস যজ্ঞে মেতে উঠে তারা।

বাঙালি জাতির মরণপণ যুদ্ধ এবং দুর্বার প্রতিরোধের মুখে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা পরাজয়ের চূড়ান্ত পর্যায় বুঝতে পেরে বিজয়ের দুই দিন আগে জাতির সূর্য সন্তান বুদ্ধিজীবীদের বেছে বেছে হত্যা করে। এতেও সহযোগিতা ও সরাসরি অংশ নেয় এ দেশীয় রাজাকার, আল বদর, আল সামস বাহিনী ও শান্তি কমিটির সদস্যরা।

পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণ
১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাকিস্তানী দখলদার বাহিনী এই দিনে যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিল। সেদিন ঢাকার কেন্দ্রস্থলে রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানের পক্ষে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি। তিনি যৌথবাহিনীর প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর উপ-সর্বাধিনায়ক ও ডেপুটি চীফ অব স্টাফ গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবদুল করিম খোন্দকার উপস্থিত ছিলেন। তবে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানী উপস্থিত ছিলেন না। আত্মসমর্পণ দলিলের ভাষ্য ছিল নিম্নরূপ-

পূর্ব রণাঙ্গনে ভারতীয় ও বাংলাদেশ বাহিনীর জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ইন চিফ, লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে পাকিস্তান পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানের সকল সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে আত্মসমর্পণে সম্মত হলো। পাকিস্তানের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীসহ সব আধা-সামরিক ও বেসামরিক সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষেত্রে এই আত্মসমর্পণ প্রযোজ্য হবে। এই বাহিনীগুলো যে যেখানে আছে, সেখান থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কর্তৃত্বাধীন নিয়মিত সবচেয়ে নিকটস্থ সেনাদের কাছে অস্ত্রসমর্পণ ও আত্মসমর্পণ করবে।

এই দলিল স্বাক্ষরের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড লেফটেন্যান্ট-জেনারেল অরোরার নির্দেশের অধীন হবে। নির্দেশ না মানলে তা আত্মসমর্পণের শর্তের লঙ্ঘন বলে গণ্য হবে এবং তার প্রেক্ষিতে যুদ্ধের স্বীকৃত আইন ও রীতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আত্মসমর্পণের শর্তাবলীর অর্থ অথবা ব্যাখ্যা নিয়ে কোনো সংশয় দেখা দিলে, লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত।

লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা আত্মসমর্পণকারী সেনাদের জেনেভা কনভেনশনের বিধি অনুযায়ী প্রাপ্য মর্যাদা ও সম্মান দেওয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করছেন এবং আত্মসমর্পণকারী পাকিস্তানি সামরিক ও আধা-সামরিক ব্যক্তিদের নিরাপত্তা ও সুবিধার অঙ্গীকার করছেন। লেফটেন্যান্ট-জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার অধীন বাহিনীগুলোর মাধ্যমে বিদেশি নাগরিক, সংখ্যালঘু জাতিসত্তা ও জন্মসূত্রে পশ্চিম পাকিস্তানি ব্যক্তিদের সুরক্ষাও দেওয়া হবে।

বাংলাদেশের স্বীকৃতি
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পনের মাধ্যমে ৯ মাস ব্যাপী স্বাধীনতা যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে এবং বাংলা দেশ (পরবর্তীতে একটি শব্দ বাংলাদেশ হিসাবে ব্যবহার শুরু করা হয়) নামের একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। জাতিসংঘের অন্তর্ভুক্ত প্রায় সকল দেশ স্বাধীনতার মাসে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।

বিজয় দিবস উৎযাপনঃ জাতীয় স্মৃতিসৌধ
১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশে বিজয় দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ জাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, চলচ্চিত্র, কবিতা, নিবন্ধ, গণমাধ্যম ইত্যাদি বিভিন্নভাবে এই বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা হয়। এই দিন উপলক্ষে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজের আয়োজন করে থাকে, এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠান, মতবিনিময় সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। দেশের প্রধান সড়কগুলো জাতীয় পতাকা দিয়ে সাজানো হয়। এই দিনে ঢাকার সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করা হয়।

বিজয় দিবসের বিশেষ কিছু ঘটনা
১৯৭১: স্টেট ব্যাংক অফ পাকিস্তানের নাম করণ করা হয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
১৯৭২: গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম সংবিধান প্রকাশিত হয়।
১৯৭২: ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ গ্যাজেটের মাধ্যমে স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয় খেতাব ঘোষণা করা হয়।
১৯৯৬: ২৫ বছর পূর্তি উৎসব করা হয়।
২০১৩: জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ২৭,১১৭ জন স্বেচ্ছাসেবী বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার লাল এবং সবুজ ব্লক নিয়ে একত্রে জড়ো হয়ে বিশ্বের বৃহত্তম মানব পতাকার নতুন বিশ্ব রেকর্ড করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button