চাকরি নিয়ে সন্তুষ্ট নন ৬৭ শতাংশ ব্যাংককর্মীঃ বিআইবিএম
ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশঃ সরকারি চাকরির অপর্যাপ্ততায় কর্মসংস্থানের বড় একটা ক্ষেত্র এখন ব্যাংকিং খাত। তুলনামূলক উচ্চবেতন কাঠামো, পরিপাটি কর্মপরিবেশের কারণে চাকরিপ্রার্থীদের আকর্ষণীয় গন্তব্য এ খাত। তবে ব্যাংকগুলো চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছে যতটা আকর্ষণীয়, চাকরিরতদের ক্ষেত্রে চিত্রটা ঠিক তার উল্টো। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) গবেষণা বলছে, ব্যাংকিং খাতে কর্মরত ৬৭ শতাংশ কর্মীই চাকরিতে সন্তুষ্ট নন।
চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, ১৬টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক (ইসলামী ব্যাংকিং বাদে) ও পাঁচটি ইসলামী ব্যাংকসহ মোট ২৫টি ব্যাংকের তথ্যের ভিত্তিতে ‘ব্যাংকের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা-২০১৬’ শীর্ষক গবেষণাপত্রটি তৈরি করেছে বিআইবিএম। গবেষকরা কথা বলেছেন ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গেও। প্রাপ্ত এসব তথ্য ব্যাংকগুলোর মানবসম্পদ বিভাগের ১০ জন প্রধানের দেয়া তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে সঠিকতা যাচাই করা হয়েছে।
অসন্তুষ্টির একাধিক কারণ উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে রয়েছে শাখা পর্যায়ে পর্যাপ্ত জনবল না থাকা, ব্যাংকের আয় ও মুনাফার ওপর ভিত্তি করে কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা না বাড়ানো এবং বাড়তি সময় কর্মক্ষেত্রে অবস্থানে বাধ্য করা। এছাড়া নিয়মিত ছুটি ভোগ করতে না পারা ও মূল্যায়ন পদ্ধতিতে যোগ্যতাকে কম গুরুত্ব দেয়াকেও অসন্তোষের কারণ হিসেবে দেখছেন তারা।
প্রায় ৯১ শতাংশ ব্যাংককর্মীকেই বন্ডে স্বাক্ষর করে চাকরিতে যোগদান করতে হচ্ছে বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। গষেণার জন্য পরিচালিত জরিপে একাধিক কর্মীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, অসন্তোষ নিয়ে চাকরি করছেন কেন? উত্তরে তারা জানান, চাকরির শুরুতেই বন্ডে বিভিন্ন মেয়াদি অঙ্গীকার দেয়ার কারণে চাকরি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এছাড়া চাকরিজীবনের দু-এক বছর পর অনান্য খাতে চাকরির সুযোগ কমে যাওয়ার কারণে এ পেশায় থেকে যেতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে।
ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
জানতে চাইলে বেসরকারি ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইশতিয়াক আহমেদ চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, দেশের অন্যান্য খাতের তুলনায় ব্যাংকিং খাতের কর্মীদের বেতন ও সার্বিক সুযোগ-সুবিধা এখনো বেশি। ব্যাংক বেতন-ভাতা যেহেতু বেশি দিচ্ছে, সেহেতু কাজ একটু বেশিই করতে হয়। অনেক সময় রাতে কিংবা ছুটির দিনেও কাজ করতে হয়। কিন্তু ব্যাংককর্মীদের সেটিকে স্বতঃস্ফূর্ততার সঙ্গে উপভোগ করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। কেননা কর্ম মূল্যায়নের মাধ্যমে কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রেও ব্যাংকিং খাত এখনো নিরপেক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কর্মীদের অসন্তুষ্ট হওয়ার কোনো কারণ নেই।
গবেষণার তথ্যমতে, প্রতিটি ব্যাংকে নিয়মিত জনবল সংখ্যা গড়ে ৪ হাজার ২৯৮। তবে মানবসম্পদ বিভাগের প্রধানরা মনে করেন, পর্যাপ্ত জনবল রয়েছে মাত্র ৫৮ শতাংশ শাখায়। বাকি প্রায় ৪২ শতাংশ শাখায় জনবল পর্যাপ্ত নয়। গত দুই বছরে ব্যাংকিং খাতে শাখাপ্রতি জনবলও খুব একটা বাড়েনি। ২০১৪ সালে শাখাপ্রতি নিয়মিত জনবল ছিল ১৬ জন, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে এসে যা ২০ জনে আটকে আছে। আবার কর্মীদের গড় বেতন ও ভাতার আনুপাতিক পরিমাণও কমানো হয়েছে। মোট পরিচালন ব্যয়ের একটি বড় অংশ কর্মীদের বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় করা হলেও গত দুই বছরে তা কমানো হয়েছে। ২০১৪ সালে মোট পরিচালন ব্যয়ের প্রায় ৬২ শতাংশই কর্মীদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ছিল। ২০১৫ সালে তা ৫৭ ও ২০১৬ সালে ৫০ শতাংশে নেমে এসেছে।
কর্মীদের অসন্তোষের বিষয়টি বেসরকারি ব্যাংকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ক্ষেত্রে এমনটা হওয়ার কথা নয় বলে মনে করেন অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহম্মদ শামস্-উল ইসলাম। তিনি বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে এখনো চাকরির নিরাপত্তা সবচেয়ে ভালো। পাশাপাশি বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও বাড়ানো হয়েছে। একটি ব্যাংক দিন শেষে মুনাফার লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হয়। ফলে কর্মীদেরও এ লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কার্য সম্পাদন করতে হয়। সেখানে তারা কাজের দক্ষতা ও মানের ওপর ভিত্তি করে মূল্যায়ন পেয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক বা ব্যক্তিসম্পর্কের প্রভাব থাকে না।
গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যাংকিং খাতে এখনো হার্ড স্কিল ও সফট স্কিল কর্মীর ভারসাম্যহীনতা রয়েছে। ব্যাংকিং খাতের একজন কর্মীর মোট দক্ষতার ২০ শতাংশ হতে হবে হার্ড স্কিল ও ৮০ শতাংশ সফট স্কিল। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ চিত্র উল্টো। বাংলাদেশে ব্যাংককর্মীদের হার্ড স্কিল আছে ৯৬ শতাংশের আর সফট স্কিল আছে মাত্র ৪ শতাংশের।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাংকিং খাতে কর্মী ব্যবস্থাপনায় তিনটি বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে। অনেক ব্যাংকেই এখনো চাকরি বিবরণী (জব ডেসক্রিপশন), লক্ষ্য নির্ধারণ ও কর্ম মূল্যায়ন অনুসারে কর্মীদের র্যাংকিং করা হয় না। ফলে একজন কর্মী ভেবে বসে থাকেন, তাকে দুই বছর পর পর পদোন্নতি দেয়া হবে। কিন্তু সেটি হচ্ছে না। কারণ সক্ষমতা ও প্রয়োজনীয়তা অনুসারে লোক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। আবার সঠিক স্থানে সঠিক লোককেও নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। ফলে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় একটি ভারসাম্যহীনতা রয়েছে। পাশাপাশি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, আইটি নিরাপত্তাসহ রিটেইল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে যে ধরনের দক্ষ কর্মী প্রয়োজন, তারও যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। সব মিলিয়ে ব্যাংক ও কর্মীদের মধ্যে একটি দূরত্ব রয়ে গেছে।
পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, অধিকাংশ সময় ব্যাংকেই কর্মীদের মূল্যায়ন পদ্ধতি এসিআর (বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন) সঠিক ও বাস্তবিকভাবে প্রয়োগ করা হয় না। কাজের বিভিন্ন ধাপে কর্মীদের মূল্যায়ন পদ্ধতি তদারকির ব্যবস্থাও সঠিকভাবে হয়ে ওঠে না। অনেক সময়ই এসব মূল্যায়নে পক্ষপাতিত্ব দেখা যায়। কর্মক্ষেত্রে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এসিআর সংশোধনের প্রয়োজন হলেও তা যথাযথভাবে করে না প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে কর্মীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়। এটা থেকে উত্তরণের জন্য যথাযথ মূল্যায়ন শেষে পিছিয়ে থাকা কর্মীদের কাউন্সেলিং ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যদিকে এগিয়ে থাকা কর্মীদের যোগ্যতা অনুসারে পদায়নসহ প্রণোদনা দিতে হবে।
বিআইবিএমের এ গবেষণায় যুক্ত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ মাসুদুল হক, প্রভাষক রেক্সোনা ইয়াসমিন, বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক রফিকুল ইসলাম ও আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান মাযহারুল ইসলাম।
সূত্রঃ বনিক বার্তা
যেটুকু ছুটি আছে তা ভোগ করার সুযোগ চাই।
ঠিক বলেছেন, কিন্তু প্রাইভেট ব্যাংক গুলোতে এসব ছুটি শুধুমাত্র কাগজে কলমে, বাস্তবে এরা কোন ছুটি ভোগ করার সুযোগ দেয়না।