বিশেষ কলাম

ব্যাংকের স্ফীত মুনাফা নিশ্চিত করতে আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত

মুহাম্মদ শামসুজ্জামানঃ চলতি ডিসেম্বর পর্যন্ত সুদের কিস্তি পরিশোধের সুবিধাপ্রাপ্ত মেয়াদি ঋণের ওপর বকেয়া সুদ আয় হিসাবে দেখাতে পারবে ব্যাংক। বিষয়টি জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক সব ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে। গত ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা নোটিশ অনুযায়ী ঋণ পরিশোধ নীতি শিথিলের সুবিধাপ্রাপ্ত ঋণের বকেয়া সুদ আয় খাতে স্থানান্তর করা যাবে বলে চিঠিতে জানানো হয়েছে।

ওই নোটিশে বলা হয়েছিল, ঋণ গ্রহীতারা ২০২২ সালের শেষ প্রান্তিকে প্রদেয় কিস্তির ৫০ শতাংশ পরিশোধ করলে, তারা আর খেলাপি হিসেবে শ্রেণিভুক্ত হবেন না। আগের নীতি অনুযায়ী ৭৫ শতাংশ কিস্তি দিলে এই সুবিধা পাওয়া যেত।

আরও দেখুন:
✓ আয়কর ব্যবস্থার ফাঁক ফোকর নিয়ে কি আয়কর বিভাগ ভাবে না?

চিঠিতে বলা হয়, সুবিধাপ্রাপ্ত ঋণের সম্ভাব্য আদায় ঝুঁকি বিশ্লেষণ করে ২০২২ সালের আরোপিত সুদ নিয়ম অনুযায়ী আয় খাতে স্থানান্তর করা যাবে। তবে পুনঃ তফসিলকৃত ঋণ, পুনর্গঠিত ঋণ বা এককালীন এক্সিট সুবিধাপ্রাপ্ত ঋণের বিপরীতে আরোপিত সুদ নগদ আদায় ছাড়া আয় খাতে স্থানান্তর করা যাবে না।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

সুবিধাপ্রাপ্ত ঋণের বিপরীতে অতিরিক্ত ২ শতাংশ জেনারেল প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে ব্যাংকগুলোকে। তবে সিএমএসএমই খাতের সুবিধাপ্রাপ্ত ঋণের বিপরীতে অতিরিক্ত ১ শতাংশ জেনারেল প্রভিশন সংরক্ষণ করা যাবে। তবে এই অতিরিক্ত প্রভিশন স্পেশাল জেনারেল প্রভিশন কোভিড-১৯ খাতে স্থানান্তর করতে হবে এবং পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত তা এই সংরক্ষিত প্রভিশন ছাড়া অন্য কোনো খাতে স্থানান্তর করা যাবে না।

সুবিধাপ্রাপ্ত কোনো ঋণ নগদ আদায় করে পুরোপুরি পরিশোধ হলে আগে সংরক্ষিত অতিরিক্ত জেনারেল প্রভিশনের অর্থ ব্যাংকের নিজস্ব বিবেচনায় আয় খাতে স্থানান্তর করা যাবে। খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করা হলে, আগে সংরক্ষিত অতিরিক্ত জেনারেল প্রভিশন ব্যাংকের সিদ্ধান্তে যথাযথ খাতে স্থানান্তর করা যাবে। এসব ক্ষেত্রে ঋণের তথ্য, যেমন ঋণ গ্রহীতার নাম, ঋণ স্থিতি, ধার্যকৃত সুদ, আয় খাতে স্থানান্তরিত সুদ, অতিরিক্ত প্রভিশনের পরিমাণ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখায় এবং প্রধান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগে সংরক্ষণ করতে হবে।

ইসলামী শরিয়াহ্ ভিত্তিক ব্যাংকগুলোও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এসব নীতিমালা অনুসরণ করে একইভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।এসব নির্দেশনা শিগগির কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ব্যাংকারগণ জানেন যে অশ্রেনিকৃত ৠণসমূহকেই কেবল নিয়মিত ৠণ বিবেচনা করা হয় যা থেকে প্রতিমাসে সুদ/মুনাফা চার্জ করে ব্যাংকের এডভান্স বা বিনিয়োগ খাতে আয় হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। কোন ৠণ রিসিউল হলেও এ সুবিধা পাওয়া যায়। কিন্ত শ্রেনিকৃত থাকা অবস্থায় ঐ ৠণ হিসাবের সুদ বা মুনাফা আয় খাতে স্থানান্তর হয়না। এখন বছর শেষে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে অনাদায়ী ও বাস্তবে শ্রেনিকৃত হিসাবের সুদ আয়খাতে স্থানান্তর মানেই ব্যাংকগুলোর সম্পদমান খারাপ হোক তবুও তারা স্ফীত আয় প্রদর্শন করতে পারবে এবং মজার বিষয় হলো এসব ৠণ নিয়মিত দেখানোর ফলে স্ফীত মুনাফার উপর সরকারী কর পরিশোধ করতে হবে।

লেখকঃ মুহাম্মদ শামসুজ্জামান, সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি), ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button