ব্যাংক

আরো বিশেষায়িত ব্যাংক প্রয়োজন

ড. আর এম দেবনাথঃ দেশে কি আবার বিশেষায়িত বা স্পেশালাইজড ব্যাংকের অনুমতি দেয়া হবে? কথাটি তুলেছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই)। উত্থাপিত প্রশ্নটি আলোচনার আগে আমরা অতীতের অভিজ্ঞতার শরণাপন্ন হতে পারি। যাদের বয়স একটু বেশি তাদের সবার হয়তো মনে আছে পাকিস্তান আমলে (১৯৪৭-১৯৭১) দুটি ব্যাংক ছিল। একটি শিল্পে অর্থ জোগানোর জন্য, অন্যটি কৃষিতে অর্থ জোগানোর জন্য। এ দুটো ব্যাংকের নাম ছিল ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অব পাকিস্তান (আইডিবিপি) ও এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অব পাকিস্তান (এডিবিপি)। তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) বিশেষ শিল্প চাহিদা মেটানোর জন্য আরেকটি প্রতিষ্ঠান ছিল, যার নাম ছিল ইস্ট পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (ইপিআইডিসি)।

যাদের কাজ ছিল শিল্প তৈরি করে লাভজনক অবস্থায় গেলে বেসরকারি খাতে বিক্রি করে দেয়া। বিশেষায়িত এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবগুলোর কার্যালয় ছিল শহরে, শিল্প নগরী ও ব্যবসাস্থলে। যেমন এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অব পাকিস্তানের (এডিবিপি) শাখা অফিস ছিল বড়জোর সাবেক মহাকুমা সদর দপ্তর (বর্তমানে জেলা সদরে)। বলা বাহুল্য এদের বিরুদ্ধে বাঙালিদের অভিযোগের অন্ত ছিল না। বাঙালি ছিল উপেক্ষিত। এসব প্রতিষ্ঠান শহরে অবস্থিত থেকে শহুরে ধনাঢ্য ব্যক্তিদেরই স্বার্থ দেখত। তারা স্বার্থ দেখত পশ্চিম পাকিস্তানি শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের।

আরও দেখুন:
ব্যাংক কি বা ব্যাংক কাকে বলে?
বাণিজ্যিক ব্যাংকের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা
ব্যাংকিং কি বা ব্যাংকিং কাকে বলে?

স্বাধীনতার পর পাকিস্তানের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দেশে সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের বাইরে প্রতিষ্ঠিত হয় শিল্পে অর্থ জোগানোর জন্য বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক ও বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা। কৃষিতে অর্থ জোগানোর জন্য তৈরি হয় বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি)। সবগুলোই বিশেষায়িত ব্যাংক। বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে গড়া। কৃষি ব্যাংকের সীমাবদ্ধতার কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে গ্রামে গ্রামে শাখা খুলতে আদেশ দেন বঙ্গবন্ধু এবং তাদের বলা হয় গ্রামীণ ঋণ ও কৃষি ঋণ দিতে। দেখা গেল বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কৃষি ঋণ দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। স্বাধীনতার ১১ বছর পর তাদের ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটে সরকার তৈরি করে সংসদীয় আইনে গ্রামীণ ব্যাংক। উদ্দেশ্য ভূমিহীন দরিদ্র মানুষকে ঋণ দেয়া, সেটাও জামানতবিহীন। হলো আরেকটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

কয়েক বছর পর ১৯৮৯ সালের দিকে আরেকটি বিশেষায়িত ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়, যার নাম বাংলাদেশ স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেড। নামেই এর পরিচয়। এ ব্যাংকের কাজ হবে ক্ষুদ্র শিল্প ও বাণিজ্যে অর্থ জোগানো। কেন এটি করা হয়? দেখা গেল বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সেবা করে ধনী লোকদের, প্রভাবশালীদের—ঠিক পাকিস্তান আমলের মতো। এ কারণে ছোট-মাঝারি শিল্প ও বাণিজ্যে ঋণ দেয়ার জন্য করা হলো বেসিক ব্যাংক লিমিটেড। ব্যাংকের বাইরে ১৯৯০ সালে সরকার তৈরি করে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)। যারা পার্টনার অর্গানাইজেশনের মাধ্যমে গ্রামগঞ্জে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে গরিব নারীদের অর্থের জোগান দেয়। এটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান, কিন্তু ব্যাংক নয়। এভাবে দেখা যায় স্বাধীনতার পর ১৫-২০ বছরের মধ্যে দেশে বেশকিছু বিশেষায়িত ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। এদের এরিয়া অব ওয়ার্ক ভিন্ন। এরা কাজ করে যাচ্ছিল সাফল্য ও ব্যর্থতার মধ্যেই।

এরই মধ্যে ঘটে অনেক ঘটনা। ক্ষুদ্র শিল্প ও বাণিজ্য ঋণ প্রদান প্রতিষ্ঠানের—যা ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়—মূল চরিত্র নষ্ট করে একে বানানো হয় পুরোদমে একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক। এর নাম বেসিক ব্যাংক লিমিটেড। ব্যাংকটি সাফল্যের সঙ্গে চলছিল। কিন্তু একে করা হলো বাণিজ্যিক ব্যাংক। শুরু হলো বড় বড় ঋণ দেয়ার কাজ। শিল্প খাতেও। চরম ব্যর্থতা, গাফিলতি, দুর্নীতি ও অনিয়মের মধ্যে পড়ে ব্যাংকটি। এখন ধুঁকে ধুঁকে মরছে। এদিকে বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক ও বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা দুটোই শিল্প ঋণ দিয়ে দিয়ে ফতুর হলো। শ্রেণীবিন্যাসিত ঋণে জর্জরিত হয়ে ব্যাংক দুটো মরতে বসেছিল। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ দুটো ব্যাংককে একত্র করে ২০০৯ সালে তৈরি করা হলো বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল)। কথা ছিল এ ব্যাংক বিএসবি ও বিএসআরএমের মতো সরকারের সাহায্য, সহযোগিতা ও অনুদানের ওপর নির্ভরশীল হবে না।

বিডিবিএল বাজার থেকে আমানত নেবে, গ্রাহকদের শিল্প ঋণ ও অন্যান্য ঋণ দেবে। একে করা হলো বাণিজ্যিক ব্যাংক। কিন্তু এদের আগের ঋণের বোঝার কিছু করা হলো না। ফলে এ দুটি বিশেষায়িত ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকে রূপান্তরিত হয়েও আজ পর্যন্ত অকার্যকর। আবার বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককে বাণিজ্যিক ব্যাংকে রূপান্তরিত করা হয় একই যুক্তিতে। কৃষি ব্যাংক হিসেবে সরকারের অনুদানের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয়। বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে বাজার থেকে আমানত নিয়ে তারা ঋণ দেবে। ঋণ দিতে গিয়ে বড় ঋণেও তারা জড়িয়ে পড়ে। এখন বিপুল পরিমাণ শ্রেণীবিন্যাসিত ঋণের বোঝা নিয়ে বিকেবি অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের মতো আরেকটি অকার্যকর ব্যাংকে পরিণত হয়েছে। এভাবে কৃষি, ক্ষুদ্র শিল্প ও ব্যবসা এবং বড় শিল্প ঋণের সব ব্যাংক আজ থেকে বছর বিশেক আগেই তিরোহিত হয়। মৃত্যু ঘটে বিশেষায়িত শিল্প ও ক্ষুদ্র শিল্প ব্যাংকের।

তাহলে শিল্প ঋণ কে দেবে? ব্যবস্থা হলো। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে জড়ানো হলো শিল্প ঋণে, এসএমই ঋণে। এসব ঋণ দীর্ঘমেয়াদি এবং বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। কোন শিল্প বাজার পাবে, কোন শিল্প বাজার পাবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। অন্যদিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকের আমানত (ডিপোজিট) স্বল্পমেয়াদি। বর্তমানে বেশির ভাগ মেয়াদি আমানত তিন মাসের জন্য করেন আমানতকারীরা। সঞ্চয়ী আমানত যেকোনো সময় উত্তোলনযোগ্য। এর দ্বারা কী বোঝা যাচ্ছে? বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আমানতকারীদের কাছ থেকে আমানত নিচ্ছে অল্প সময়ের জন্য অথচ ঋণ দিচ্ছে দীর্ঘকালের জন্য, তাও আবার ঝুঁকিপূর্ণ। এর অর্থ আমানত ও ঋণের মধ্যে বড় একটা মিসম্যাচ হচ্ছে, যা ব্যাংকের ক্ষেত্রে কোনোভাবেই কাম্য নয়। কারণ মিসম্যাচ থাকলে ব্যাংক লিকুইডিটি বা তারল্য সংকটে পড়ে যেতে পারে। বর্তমানে এ ঝুঁকি নিয়েই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো শিল্প ঋণের দিকে ঝুঁকেছে। সেটাও আবার বড় বড় শিল্প ঋণ। বড় বড় শিল্প মালিক, প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, শিল্পপতিদের সেবা করতেই তাদের ব্যস্ততা দেখা যাচ্ছে। তাদের দৃষ্টিতে স্বনিয়োজিত ব্যক্তি, ছোট ছোট উদ্যোক্তা, এসএমই উদ্যোক্তা, নারী উদ্যোক্তা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উদ্যোক্তা, আমানতবিহীন উদ্যোক্তা নেই। এমনকি নেই কৃষি খাতও, যদিও গ্রামে তাদের অনেক শাখা আছে।

গ্রামীণ উন্নয়নেও তাদের নজর নেই। বড় বড় প্রভাবশালী শিল্প মালিক ও ব্যবসায়ীদের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত নজর দিতে গিয়ে তারা ব্যাংকগুলোকে এরই মধ্যে বিপদে ফেলে দিয়েছে। বড় বড় পার্টির ঋণ মানেই বড় বড় ঋণপত্র, বড় বড় প্রকল্প ঋণ, বড় বড় ট্রাস্ট রিসিট লোন, বড় বড় ফোর্সড লোন ইত্যাদি। বলা বাহুল্য, আজকের দিনের ব্যাংকের সংকটের মূলে এসব ঋণ। টাকা পাচারের সবচেয়ে বড় মাধ্যম হলো আমদানি-রফতানি ব্যবসা। হুন্ডি নয়, আমদানি-রফতানি ঋণপত্র (এলসি) হচ্ছে টাকা পাচারের মাধ্যম। বলা বাহুল্য এভাবে ব্যাংকগুলোকে এক চোরাবালিতে নিক্ষিপ্ত করা হয়েছে ‘ব্যাংক লেড গ্রোথ’-এর স্বার্থে। মজা হচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংক শিল্প ঋণে যুক্ত হওয়ায় লাভবান হয়েছে বড় বড় ব্যবসা ও শিল্প। কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্পের কোনো উপকার হয়নি। বলা যায়, এ খাতের জন্য দেশে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান নেই। অথচ দেশে ৭০-৮০ লাখ ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখানে কাজ করেন লাখ লাখ শ্রমিক-কর্মচারী।

ফলাফল, বড় বড় শিল্পে বড় বড় ঋণ দিয়ে আজ ব্যাংকগুলো অনাদায়ী ঋণের সমস্যায় ভুগছে। প্রভিশনের ব্যবস্থা নেই, রয়েছে পুঁজির স্বল্পতা। এক কথায় শিল্প ঋণের জাঁতাকলে তারা আজ পথহারা। অথচ বাণিজ্যিক ব্যাংক বাণিজ্যের অর্থায়নে থাকলে দেশের ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা ঋণ পেতেন। অবশ্যই শিল্প ঋণের কাজ অন্য বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান করত, যা সরাসরি দেখভাল করত সরকার। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে সরকার তাদের ভালো-মন্দ দেখত। অনাদায়ী ঋণের বোঝায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ধ্বংসের শেষ প্রান্তে যেত না। সমালোচনাকারীরাও থাকত নিশ্চিন্তে। ছোট শিল্পে অর্থায়নের প্রতিষ্ঠানগুলোকে তুলে দেয়া হলো। পাশাপাশি ব্যাংকিং জগতে আরেকটি নতুন ঘটনা দেখা যাচ্ছে। গত ২০-৩০ বছরে দেশে নানা ধরনের ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বলা যায় সরকারি উদ্যোগে।

প্রথমেই দেখি ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক। নামেই বোঝা যায় এটি কাদের এবং তাদের উপকারার্থে তা করা হয়েছে। ১৯৯৯ সালে সেনা কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় ট্রাস্ট ব্যাংক। ২০১০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে একে একে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ব্যংক (২০১০), পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক (২০১৪), সীমান্ত ব্যাংক (২০১৬) এবং কমিউনিটি ব্যাংক লিমিটেড (২০১৯)। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রবাসী বাংলাদেশীদের কল্যাণের জন্য করা হয়েছে। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক বস্তুত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সীমান্ত ব্যাংক। সর্বশেষ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কমিউনিটি ব্যাংক লিমিটেড।

তাহলে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনী, বিজিবি ও আনসার-ভিডিপি বাহিনী সবার কল্যাণেই নিজ নিজ উদ্যোগে একটি করে ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সঞ্চয়ের জন্য একটি হয়েছে, আবার ওয়েজ আর্নার বাংলাদেশীদের জন্য হয়েছে একটি। এসব থেকে বোঝা যাচ্ছে, সরকার সব পেশা ও শ্রেণীর লোকের কল্যাণে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আগ্রহী, যারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে জোর দিয়ে কাজ করবে। অবশ্যই এতে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকদের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থায় কিছুটা উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কয়েক বছর পরপর গবেষণা করে আমাদের বের করতে হবে আমরা অভীষ্ট লক্ষ্যে কতটুকু পৌঁছলাম।

ইদানীং কালের সরকারি সিদ্ধান্তগুলোর আলোকে আমি শিল্প ঋণ ও ক্ষুদ্র শিল্প ঋণের জন্য আলাদা বিশেষায়িত ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করি। খবরের কাগজে দেখলাম ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের এক আলোচনা সভায় এ দাবি উঠেছে। আমি মনে করি ব্যাংকের দাবি যুক্তিসংগত। কারণ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ভারাক্রান্ত বাণিজ্যে অর্থায়ন, শিল্পে অর্থায়ন, ক্ষুদ্র শিল্পে অর্থায়ন, কৃষি ঋণ জোগানোতে; আবার সরকারি ব্যাংকগুলো অবকাঠামোতে অর্থ জোগান দিতে দিতে ক্লান্ত। তারা স্পষ্টতই এত সব দায়িত্ব পালনে অপারগ। এর বড় প্রমাণ প্রণোদনার টাকা বিতরণ। বড় বড় ঋণ খুব সহজে তারা বিতরণ করেছে। কিন্তু ছোট ও মাঝারি ঋণ, নারী ঋণ প্রাপকদের অভিযোগের সীমা নেই। খোদ বাংলাদেশ ব্যাংক সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে, শাস্তির কথা বলছে তাতেও কোনো কাজ হচ্ছে না। সমস্যা হচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো, বিশেষ করে সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো গাল খাওয়ার বেলায় এক নম্বরে আবার কাজের ওপর কাজও চাপায় সরকার তাদের ওপরই।

এসব বোঝা থেকে তাদের মুক্ত করে শিল্প ঋণ কুটির শিল্প, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য আলাদা প্রতিষ্ঠান করা দরকার। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংককে ভারমুক্ত করে শুধু কৃষি ঋণ এবং ওই জাতীয় ঋণে নিয়োজিত করা দরকার। এছাড়া সমাজের আরো কিছু শ্রেণীর লোক আছে যাদের প্রতি নজর দেয়া দরকার। যেমন ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও পাহাড়ি জনগোষ্ঠী। তাদের জন্য আলাদা ঋণপ্রতিষ্ঠান থাকতে পারে। এক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ থেকে শিক্ষা নেয়া যেতে পারে। তারা এ ধরনের কাজ করছে সংখ্যালঘু ও অবহেলিতদের জন্য। নারী উদ্যোক্তারা বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে আশানুরূপ ঋণ পাবে—এ আশা দুরাশা। অথচ তারা মোট জনসংখ্যার অর্ধেক। তাদের উন্নয়নে আলাদা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থাকতে বাধা কোথায়? বর্তমানে অনুসৃত মডেলের অধীনে এসব কাজ করতে অসুবিধা কোথায়?

লেখকঃ ড. আর এম দেবনাথ: অর্থনীতি বিশ্লেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button