কার্ড সার্ভিসডেবিট কার্ড

ডেবিট কার্ড জালিয়াতি থেকে যেভাবে সুরক্ষায় রাখবেন

ব্যাংক কার্ড নিয়ে একবার বেশ ঝামেলায় পড়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের বাসিন্দা সায়মা। রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছিলেন। যে চেয়ারে বসেছিলেন তার হাতলে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন ব্যাগটি। কল্পনাতেও মাথায় আসেনি এ রকম একটি দেশে, এ রকম একটি রেস্টুরেন্টে ব্যাগ থেকে মানিব্যাগ খোয়া যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটবে। বিল দিতে গিয়ে দেখেন ব্যাগের চেইন খোলা, ভেতরে থাকা ছোট্ট মানিব্যাগটি কেউ তাঁর অগোচরে তুলে নিয়েছেন। টাকা তো গেছেই সেই সঙ্গে গেছে যাবতীয় কার্ড। দ্রুত ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানাল, ইতিমধ্যেই এটিএম থেকে ডেবিট কার্ড দিয়ে তুলে নেওয়া হয়েছে হাজার ডলার। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, চোর কীভাবে জানল ডেবিট কার্ডের নম্বর। এখানে একটা ছোট্ট ভুল করেছিলেন সায়মা। ভুলে যান বলে একটা কাগজে পিন নম্বরটা লিখে মানিব্যাগেই রেখেছিলেন তিনি।

আসলে ডেবিট কার্ড জালিয়াতি তখনই করা সম্ভব, যখন অপরাধী কার্ড ব্যবহারের গোপন নম্বরটা জেনে যান। অবশ্য কেবল অসাবধানী হলেই যে এমনটা ঘটে তা নয়, অপরাধী নানাভাবেই এই তথ্য জোগাড় করে ফেলতে পারেন। নিউজটি আপনি পড়ছেন ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ-এ। দোকানে ডেবিট কার্ড দিয়ে কেনার সময় অসাধু ব্যবসায়ী না হলে হ্যাকাররা খুচরা বিক্রেতার নিরাপত্তাহীন কম্পিউটার বা নেটওয়ার্ক থেকে কার্ডের তথ্য নিয়ে নিতে পারেন।

এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল ২০১৮ সালে আমাদের দেশেই। রাজধানীর বনানী এলাকার একটি সুপারশপে কেনাকাটা করেছেন, এমন ৪৯ গ্রাহকের কার্ড জালিয়াতি করে একটি চক্র। চক্রটি ওই সব গ্রাহকের তথ্য নিয়ে নতুন কার্ড তৈরি করে লাখ লাখ টাকা তুলে নেয়।

জালিয়াতি থেকে যেভাবে সুরক্ষায় রাখবেন ডেবিট কার্ড
এর আগে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংকের চার এটিএম বুথ থেকে তথ্য চুরি করে ক্লোন কার্ড তৈরি করেন বিদেশিরা। ওই সময় ৪০টি কার্ড ক্লোন করে গ্রাহকের ২০ লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়। আসলে সারা বিশ্বেই কার্ড জালিয়াতির অভিনব সব কায়দা বের হচ্ছে। স্ট্যাটিসটার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যে ব্যাংক কার্ডের মাধ্যমে জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে সাড়ে ২৭ লাখ। এখানে স্কিমিং ডিভাইস বা গ্রাহকের কার্ডের ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য চুরির যন্ত্র ব্যবহার করে জালিয়াতির ঘটনা সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

তবে খুব সহজেই কিন্তু এই জালিয়াতির শিকার হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন কার্ডধারী। সংশ্লিষ্টরা বলেন, এই সমস্যা সমাধানের সহজ পথ হলো—অনলাইন ব্যাংকিংয়ের জন্য সাইন আপ করা। এতে আপনার ব্যালান্স এবং সাম্প্রতিক লেনদেনগুলো ঘরে বসেই প্রতিদিন পরীক্ষা করতে পারবেন। আর কার্ড জালিয়াতির ক্ষেত্রে যত তাড়াতাড়ি জালিয়াতি শনাক্ত করা যায়, তত তাড়াতাড়ি আর্থিক ক্ষতি এড়ানো সম্ভব। আবার যদি ভুলো মনের মানুষ হন, তবে প্রতিদিনকার লেনদেন লিখেও রাখতে পারেন। আর যদি অনলাইনে ব্যাংকিংয়ে আগ্রহী না হন, ফোন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আপনার সাম্প্রতিক লেনদেনের হিসাব রাখা সম্ভব। সেটা হলো প্রতি লেনদেনেই মেসেজ চলে আসবে আপনার ফোনে। আসলে এ রকম বেশ কয়েকটি উপায় আছে নিজের ডেবিট কার্ডটির সুরক্ষার।

ব্যাংকিং অ্যালার্ট চালু
অনলাইনে প্রতিদিন আপনার ব্যালান্স এবং সাম্প্রতিক লেনদেন পরীক্ষা করার পাশাপাশি ব্যাংকিং অ্যালার্ট পরিষেবা চালু রাখা যেতে পারে। যেকোনো লেনদেনে ট্রানজেকশন অ্যালার্ট মেসেজ চলে যাবে আপনার ফোনে বা ই–মেইলে।

কাগজবিহীন স্টেটমেন্ট
স্টেটমেন্ট কাগজে না নেওয়াই ভালো। তাহলে তথ্য চুরি করে নেওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।

ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ (Banking News Bangladesh. A Platform for Bankers Community.) প্রিয় পাঠকঃ ব্যাংকিং বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন।

ডেবিট কার্ড দিয়ে কম কেনাকাটা
আসলে কেনাকাটার ক্ষেত্রে ডেবিট কার্ড কম ব্যবহার করাই ভালো। যে মেশিনে কার্ড সুইপ করে আমরা বিল দিই, সেখানে থাকতে পারে কার্ড রিডার, যার মাধ্যমে ওই কার্ডের তথ্য কপি হয়ে যাবে, যার মাধ্যমে একটি ক্লোন কার্ড বানানো সম্ভব। তাই ডেবিট কার্ডের চেয়ে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা ভালো। ডেবিট কার্ডের চেয়ে প্রতারণার বিরুদ্ধে আরও বেশি সুরক্ষা দেয় ক্রেডিট কার্ড। আবার দেখা যায় যখন কোনো রেস্তোরাঁয় খেতে যাই বা কেনাকাটা করার পর দাম মেটাতে অনেক সময় নিজেদের কার্ডটা অন্য কাউকে দিয়ে থাকি সোয়াইপ করার জন্য। অনেকে তো গোপন পিন কোডটিও বলে দেন। এ বিষয়ে আসলে সতর্ক থাকা উচিত।

ব্যাংক এটিএমে কার্ড ব্যবহার করুন
রেস্টুরেন্ট, খাবারের দোকানে থাকা অটোমেটেড টেলার মেশিনের চেয়ে ব্যাংকের এটিএম বুথ অনেক বেশি নিরাপদ। এখানে ভিডিও ক্যামেরা থাকে। তাই জালিয়াতির কোনো ঘটনা ঘটলে তা সহজেই ধরে ফেলা সম্ভব।

মেয়াদোত্তীর্ণ ডেবিট কার্ড নষ্ট করে ফেলুন
এটি খুবই উল্লেখযোগ্য। মেয়াদ শেষ এমন ডেবিট কার্ড বহন করে বেড়ানো ঠিক নয়। যত্রতত্র এটি ফেলে রাখলে তথ্য চুরির ঝুঁকি তৈরি হয়। আবার যত দ্রুত সম্ভব নতুন কার্ডটি ব্যবহার করে একবার হলেও কিছু টাকা তুলুন। কারণ দেখা যায়, যেসব কার্ডের সময়সীমা পেরিয়ে গেছে অর্থাৎ কার্ডটি ‘এক্সপায়ার’ হয়ে গেছে তেমন কার্ড দিয়েও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে।

সব অর্থ এক জায়গায় নয়
আসলে এটা যদি সম্ভব হয় সব অর্থ এক জায়গায় না রাখা ভালো। গেলে একবারে সব চলে যায়।

অনলাইনে কেনাকাটার ক্ষেত্রে সতর্কতা
অনেক ওয়েবসাইটে ‘এক্সপ্রেস চেক আউট’ বলে একটি পরিষেবা দেওয়া থাকে। আমরা যখন অনলাইনে কোনো কিছু কেনাকাটা করি তখন কার্ডে দাম মেটানোর সময় সেই ওয়েবসাইটে নিজেদের কার্ডের কয়েকটি তথ্য লিখতে হয়। যাতে প্রতিবার কেনাকাটা করার পর কার্ডের খুঁটিনাটি লিখতে না হয়, তাই ‘এক্সপ্রেস চেক আউট’-এর পরিষেবা দেওয়া থাকে। এর ফলে ওই ওয়েবসাইটটি আপনার কার্ডের সব তথ্য সংগ্রহ করে রাখবে। এই ধরনের পরিষেবাগুলো এড়িয়ে চলা ভালো।

কম্পিউটারসহ সব ডিভাইস সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করুন
আপনার কম্পিউটার ও মোবাইল ডিভাইসে ফায়ারওয়াল, অ্যান্টি ভাইরাস এবং অ্যান্টি স্পাইওয়্যার সফটওয়্যারটি নিয়মিত আপডেট করে রাখুন।

যত্রতত্র নেটওয়ার্কে আর্থিক লেনদেন নয়
আপনার মোবাইল ডিভাইস বা কম্পিউটার দোকানপাট, রেস্টুরেন্ট বা অনিরাপদ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার সময় অনলাইনে আর্থিক লেনদেন করবেন না। যখনই হাতে নতুন ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড পাবেন তার পেছনে নির্দিষ্ট জায়গায় নিজের সই করুন। নিউজটি আপনি পড়ছেন ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ-এ।

এ ছাড়া যদি এটিএম কার্ডটি চুরি হয়ে যায়, তবে দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকে জানাতে হবে এবং কার্ডটির মাধ্যমে কোনো রকম লেনদেনের সুবিধা বন্ধ করে দিতে হবে। এ ছাড়া আপনার অজান্তে কোনো লেনদেন হয়েছে বুঝলেই সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে যোগাযোগ করতে হবে।

সোর্সঃ প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button