বাংলাদেশ ব্যাংকবাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলারস্কুল ব্যাংকিং

শিক্ষার্থীদের টিউশন ফিস গ্রহণ সংক্রান্ত সার্কুলার

শিক্ষার্থীদের টিউশন ফিস গ্রহণ সংক্রান্ত সার্কুলার- বাংলাদেশে কার্যরত সকল তফসিলি ব্যাংক সমূহের ব্যবস্থাপনা পরিচালক/প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক জারিকৃত একটি সার্কুলার, যা আপনাদের জন্য তুলে ধরা হলো- আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রমের আওতায় শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি সহ অন্যান্য ফিস/চার্জ গ্রহণ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান/শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় আর্থিক সেবা প্রদান প্রসঙ্গে।

অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রমে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বিভিন্নভাবে সম্পৃক্ত রয়েছে। সমাজের বিভিন্ন স্তরের ব্যাংকিং সেবা প্রত্যাশী জনগোষ্ঠিকে আর্থিক সেবার আওতাভুক্ত করার জন্য ব্যাংকগুলো তাদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন সেবা প্রদান করছে। তবে সমাজের বিভিন্ন জনগোষ্ঠির কাছে প্রয়োজনীয় এবং চাহিদামাফিক আর্থিক সেবা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে এখনো চাহিদা ও সরবরাহের পার্থক্য রয়েছে। চাহিদা ও সরবরাহের এ পার্থক্য কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোকে পরিকল্পনা গ্রহণ ও সে অনুযায়ী কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে হবে। ভবিষ্যত প্রজন্মকে শৈশব থেকেই আর্থিক সেবা বিষয়ে সচেতন করে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে স্কুল ব্যাংকিং চালু করেছে। স্কুল ব্যাংকিং নীতিমালার আওতায় শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাব খোলা ও আর্থিক সেবায় তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে। এক্ষণে, এসব সেবার পরিধি, ব্যবহার ও গুণগতমান বৃদ্ধির জন্য ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণের জন্য পরামর্শ প্রদান করা যাচ্ছে।

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি সহ অন্যান্য ফি সংগ্রহ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিনড়ব আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থাপনা করে থাকে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রমকে গতিশীল ও এর পরিধি বিস্তৃতকরণ এবং শিক্ষার্থী/অভিভাবকদের জন্য স্কুল/কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত বিবিধ আর্থিক সেবা ঝামেলামুক্ত ও সহজ করার জন্য ব্যাংকগুলোকে প্রযুক্তিনির্ভর এবং শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের চাহিদামাফিক সেবা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেয়া যাচ্ছে। এ ধরণের আর্থিক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে নিম্নোক্ত নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করার জন্য পরামর্শ প্রদান করা যাচ্ছেঃ

১) সাধারণভাবে অনুসরণীয়
ক. বিভিন্ন ব্যাংকে বর্তমানে প্রচলিত ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট শাখার মাধ্যমে নির্দিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ফি/চার্জ গ্রহণের প্রক্রিয়াকে পরিবর্তন করে ২নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত অনলাইন ব্যাংকিং, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, কার্ডবেজড পেমেন্ট সিস্টেমস এবং স্ট্যান্ডিং ইনস্ট্রাকশন্স পদ্ধতি হতে এক বা একাধিক পদ্ধতি চালু করবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে সমঝোতা স্মারক/চুক্তি সম্পাদন করবে;
খ. ব্যাংকগুলো কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নতুনভাবে এ ধরণের সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সমঝোতা স্মারক/চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে বেতন ও অন্যান্য সকল প্রকার ফি সংগ্রহে অনলাইন ব্যাংকিং, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস এবং কার্ডবেজড পেমেন্ট সিস্টেমস এবং স্ট্যান্ডিং ইনস্ট্রাকশন্স পদ্ধতি হতে এক বা একাধিক পদ্ধতি চালু করবে;
গ. শিক্ষার্থীদের বয়স ০৬ থেকে ১৮ বছর হলে ‘স্কুল ব্যাংকিং হিসাব’ এবং ১৮ বছরের বেশি হলে সাধারণ ব্যাংক হিসাব (সঞ্চয়ী/চলতি ইত্যাদি) খুলে উল্লিখিত ব্যবস্থা কার্যকর করবে। অভিভাবকদের নামে ব্যাংকে হিসাব খুলেও এ ব্যবস্থা কার্যকর করা যাবে। তবে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস ব্যবহারে ‘ওয়ালেট হিসাব’ খোলা ব্যতীত অন্য কোন ক্ষেত্রেই ব্যাংকে হিসাব খোলার বিষয়টি বাধ্যতামূলক থাকবে না; ও
ঘ. ‘স্কুল ব্যাংকিং’ হিসাবগুলো থেকে সরকারী ফি ব্যতীত অন্য কোন প্রকার সার্ভিস চার্জ/ফি কর্তন করা যাবে না।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

২) শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি সহ অন্যান্য সকল প্রকার ফিস গ্রহণের বিভিন্ন পদ্ধতি
টিউশন ফি সহ অন্যান্য সকল প্রকার ফি/চার্জ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সেবা প্রদানের জন্য ব্যাংক নিম্নে বর্ণিত এক বা একাধিক সেবার প্রচলন করবেঃ

ক. অনলাইন ব্যাংকিংঃ অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধার আওতায় নিম্নবর্ণিত এক বা একাধিক পদ্ধতি বিদ্যমান থাকবেঃ
 যে কোন ব্যাংক/শাখায় লেনদেনঃ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হিসাব রক্ষিত আছে এমন ব্যাংকের যে কোন শাখায়/অন্য ব্যাংকে টিউশন ফি সহ অন্যান্য সব ফি/চার্জ জমাদানের ব্যবস্থা;
 ইন্টারনেট ব্যাংকিংঃ ব্যাংক/এটিএম/মার্চেন্টের নিকট না গিয়ে শিক্ষার্থী/অভিভাবক কর্তৃক ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট ব্যাংক হিসাবে টিউশন ফি সহ অন্যান্য সব ফি/চার্জ জমাদানের ব্যবস্থা; ও
 ই-কমার্স পেমেন্ট গেটওয়েঃ ই-কমার্স পেমেন্ট গেটওয়ে/গেটওয়ে নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে টিউশন ফি সহ অন্যান্য সব ফি/চার্জ জমাদানের ব্যবস্থা।

খ. মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস
 ‘ওয়ালেট হিসাব’ খুলে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে শিক্ষার্থীর/অভিভাবকের হিসাব হতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হিসাবে টিউশন ফি সহ অন্যান্য সব ফি/চার্জ পেমেন্ট এর ব্যবস্থা; ও
 এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ইস্যুকৃত Guidelines on Mobile Financial Services for the Banks এ বর্ণিত নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।

গ. কার্ডবেজড পেমেন্ট সিস্টেমস
 ব্যাংক কর্তৃক ইস্যুকৃত ডেবিট/ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে টিউশন ফি সহ সকল প্রকার ফি/চার্জ পেমেন্টের ব্যবস্থা; এটিএম কিংবা মার্চেন্ট (POS মেশিন) এর মাধ্যমে এ ধরণের লেনদেন করা যাবে।

ঘ. স্ট্যান্ডিং ইনস্ট্রাকশন্স
 নিজ ব্যাংকে অথবা অন্য ব্যাংকে সংরক্ষিত শিক্ষার্থী/অভিভাবকের ‘স্কুল ব্যাংকিং হিসাব’ বা অন্য যে কোন হিসাব (সঞ্চয়ী/চলতি ইত্যাদি) বিকলন করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব আকলন করা।

৩) স্কুল ব্যাংকিং হিসাবে বৃত্তি/উপবৃত্তির অর্থ প্রদান
বৃত্তি প্রদানকারী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ/শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে সরকারী/বেসরকারী/বোর্ডের/যে কোন বৃত্তি ও উপবৃত্তির টাকা সংগ্রহ করে শিক্ষার্থীর ‘স্কুল ব্যাংকিং হিসাবে’ জমার প্রয়োজনীয় পদ্ধতি উদ্ভাবন ও তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। শিক্ষার্থীর হিসাব না থাকলে অভিভাবকের হিসাবে জমা করা যাবে।

৪) বিবিধ
ক. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চাহিদামাফিক ব্যাংকগুলো টিউশন ফি সহ ও অন্যান্য সব ফি এর বকেয়া ও আদায়ের শিক্ষার্থী, মাস ও খাতওয়ারী রিপোর্ট প্রদান করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। অভিভাবকদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেতন ও অন্যান্য ফি জমাদানের বিষয়টি এসএমএস এর মাধ্যমে অবগত করা ইত্যাদি তথ্য/সেবাও প্রদান করবে;
খ. প্রয়োজনে ব্যাংকগুলো যথাযথ প্রক্রিয়া ও নির্দেশনা অনুসরণপূর্বক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে বা নিকটস্থ কোন স্থানে বুথ স্থাপন অথবা এজেন্ট ব্যাংকিং এর আওতায় এজেন্ট নিয়োগের মাধ্যমে এ সেবা প্রদান করতে পারবে;
গ. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টিউশন ফি সহ অন্যান্য সব ফি/চার্জ সংগ্রহের প্রয়োজনে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়ম অনুসরণ করে বিদেশী শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাব খোলা যাবে। তবে এসব ব্যাংক হিসাব ‘স্কুল ব্যাংকিং হিসাব’ হিসেবে বিবেচিত হবে না;
ঘ. বেতন ও অন্যান্য ফি সংগ্রহের পাশাপাশি ব্যাংকগুলো বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সেবাপণ্য চালু করতে পারবে;
ঙ. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ধরণের সেবা প্রদানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ‘স্কুল ব্যাংকিং হিসাব’ খোলার বিষয়ে প্রণোদনা সৃষ্টির বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করবে; ও
চ. এফআইডি সার্কুলার নং-১ তারিখঃ ৩ আগস্ট ২০১৫ এবং জিবিসিএসআরডি সার্কুলার নং-০৩ তারিখ: এপ্রিল ০৯, ২০১৫ এর নির্দেশনা মোতাবেক ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে এতদসংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্ট-এ প্রেরণ করতে হবে।

৫) বাস্তবায়নের ক্ষেত্রঃ
প্রাথমিকভাবে এসব সেবা জেলা শহরে অবস্থিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের উদ্দেশ্যে চালু করা যেতে পারে। পর্যায়ক্রমে তা উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সম্প্রসারণ করতে হবে।

আরও দেখুন:
◾ বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন সার্কুলার

উল্লিখিত নির্দেশনাগুলো অবিলম্বে কার্যকর হবে। সার্কুলারটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে

সূত্রঃ ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্ট, বাংলাদেশ ব্যাংক
এফআইডি সার্কুলার নং ০৩ তারিখঃ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button