অর্থনীতি

ডিবেঞ্চার কী? ডিবেঞ্চারের প্রকারভেদ

ডিবেঞ্চার একটি ঋণ পত্র যা লোন ইস্যু করার জন্য সরকার বা কোম্পানি ব্যবহার করে থাকে। একটি নির্দিষ্ট সুদের হারে এই ঋণ ইস্যু করা হয়। ডিবেঞ্চার বন্ড হিসাবেও পরিচিত। কোম্পানি তাদের উন্নয়নের জন্য অর্থ ধার করার প্রয়োজনে ডিবেঞ্চার ব্যবহার করে থাকে। ডিবেঞ্চার সাধারণত মেয়াদি ঋণের চেয়ে বেশি নমনীয়। চলুন জেনে নিই ডিবেঞ্চার কী এবং তার প্রকারভেদ সম্পর্কে।

ডিবেঞ্চার কী?
যে ঋণের দলিলের মাধ্যমে শেয়ার বিক্রয় কোম্পানির অর্থ সংগ্রহ করা হয় তাকে ডিবেঞ্চার বলে৷ ডিবেঞ্চার হোল্ডারের কোম্পানির লাভ-ক্ষতির কোন সম্পর্ক নেই৷ ডিবেঞ্চার হোল্ডার নির্দিষ্ট মেয়াদান্তে নির্দিষ্ট হারে মুনাফাসহ টাকা ফেরত পায়৷
❏ A Dictionary of Banking and Finance এ L. R. Chowdhury বলেন-
A debenture is an acknowledgement of indebtedness. It is the common type of bonds/ securities issued by a company to raise long-term loans.
❏ ঋণপত্র বা ডিবেঞ্চার হলাে এক প্রকার ঋণের দলিল। কোম্পানি ঋণ পত্রের মাধ্যমে প্রয়ােজনীয় মূলধনের ব্যবস্থা করে থাকে। এতে ঋণের পরিমাণ, মেয়াদ, সুদের হার ইত্যাদি নানাবিধ শর্ত উল্লেখিত থাকে।

❏ ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের ২ (১-চ) ধারায় বলা হয়েছে যে, “ঋণপত্র বা ডিবেঞ্চার বলতে কোম্পানির পরিসম্পদের উপর চার্জ সৃষ্টি করুক বা না করুক, কোম্পানির ডিবেঞ্চার স্টক, বন্ড, অন্যদিকে সিকিউরিটিও এ সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত হবে।”
❏ অধ্যাপক পামার বলেন, “ঋণপত্র বা ডিবেঞ্চার কোম্পানির সীলমােহরাঙ্কিত ঋণের সাক্ষ্যসূচক একটি দলিল, ঋণের স্বীকৃতিই এর মূল কথা।”
❏ অধ্যাপক টোফাম এর মতে, “ঋণপত্র বা ডিবেঞ্চার হলাে এমন একটি দলিল যা ঋণদাতার ঋণের স্বীকৃতিস্বরূপ কোম্পানি কর্তৃক প্রদত্ত, যে ঋণ সাধারণত কোম্পানিকে ধার দেয়ার ফলে উদ্ভূত এবং যা সাধারণত চার্জ দ্বারা নিশ্চিত থাকে।”

সুতরাং বলা যায় যে, ঋণপত্র বা ডিবেঞ্চার হচ্ছে একটি ঋণের দলিল যার মাধ্যমে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি জনসাধারণের কাছে থেকে একটি নির্দিষ্ট হারে প্রতি বছর সুদ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঋণ গ্রহণ করে এবং নির্দিষ্ট সময়ান্তে তা পরিশােধ অঙ্গীকার ব্যক্ত করে থাকে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।
রিলেটেড লেখা

ডিবেঞ্চার কেন প্রয়োজন হয়?
কোনো কোম্পানি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সরকার বা স্ব-শাসিত প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক উন্নয়নমূলক কাজের প্রয়োজনে প্রারম্ভিক অর্থ সংকুলানের নিমিত্তে ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে জনগণ ও বিশেষ বিশেষ প্রতিষ্ঠান থেকে নির্দিষ্ট সুদের হারে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য যে ঋণ নিয়ে থাকেন এই ধরনের ঋণপত্রকে পুঁজিবাজারের ভাষায় ডিবেঞ্চার বলে। কোম্পানি মেয়াদ শেষে ডিবেঞ্চারের টাকা পরিশোধ করে দেয়। প্রতি ৬ মাস অন্তর সুদ পরিশোধ করতে হয়। কোনো ডিবেঞ্চারের মালিক চাইলে যেকোনো ডিবেঞ্চার স্টক এক্সচেঞ্জে লিস্টেড করতে পারে। লিস্টেড হলে ডিবেঞ্চারহোল্ডারগণ শেয়ারের মতো ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবেন। বেক্সিমকো টেক্সটাইল, বেক্সিমকো নীটিং, বেক্সিমকো ফিসারিজ, বাংলাদেশ জিপার, বেক্সিমকো ডেনিম এবং বাংলাদেশ লাগেজ ১৪% সুদে ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৮ সালে ডিবেঞ্চার বিক্রি করেন। এদের প্রত্যেকটিতে ২০% হারে মেয়াদ শেষে সাধারণ শেয়ারে রূপান্তরের শর্ত ছিল। ১৯৯৯ সনে বিডি ওয়েলডিং ১৫% সুদে ডিবেঞ্চার ছাড়েন।

ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ (Banking News Bangladesh. A Platform for Bankers Community.) প্রিয় পাঠকঃ ব্যাংকিং বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন।

ডিবেঞ্চারকে বিনিয়োগকারীদের নিকট আকর্ষনীয় করার জন্য মেয়াদ শেষে আংশিক বা পুরোপুরি শেয়ারে রূপান্তর করার ব্যবস্থা করতে দেখা যায়। যে সকল বিনিয়োগকারী ৬ মাস অন্তর নির্দিষ্ট হারে সুদ পেতে চায় তাদের জন্য ডিবেঞ্চারে বিনিয়োগ উত্তম। শুধুমাত্র স্টক এক্সচেঞ্জে লিস্টেড ডিবেঞ্চার শেয়ারের মতো ক্রয়-বিক্রয় করা যায়। আমাদের দেশে ডিবেঞ্চার নানা কারণে বিনিয়োগকারীদেরকে আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হয়। বিএসইসি-এর উচিত ডিবেঞ্চারকে আকর্ষনীয় করার জন্য যুগোপযোগী আইন কানুন অতি সত্ত্বর তৈরি করা। যে সকল বিনিয়োগকারী নানা কারণে শেয়ারে বিনিয়োগ করার মতো ঝুঁকি নিতে পারেন না তারা ডিবেঞ্চারে বিনিয়োগ করে লাভবান হতে পারেন।

ডিবেঞ্চারের প্রকারভেদ
দুই ধরণের ডিবেঞ্চার রয়েছে। যথা-
১. রূপান্তরযোগ্য ডিবেঞ্চার (Convertible Debenture) ও
২. অ-রূপান্তরযোগ্য ডিবেঞ্চার (Nonconvertible Debenture)।

১. রূপান্তরযোগ্য ডিবেঞ্চার (Convertible Debenture)
রূপান্তরযোগ্য বন্ড বা বন্ড যা পূর্বনির্ধারিত সময়ের পরে ইস্যুকারী সংস্থার ইকুইটি শেয়ারে রূপান্তরিত করা যেতে পারে। কনভার্টিবল বন্ড বিনিয়োগকারীদের জন্য আরো আকর্ষণীয় কারণ বন্ডগুলোর কাছে রূপান্তরিত হওয়ার ক্ষমতা রয়েছে এবং কোম্পানিগুলোর কাছেও আকর্ষণীয়, কারণ সাধারণত এতে অ-রূপান্তরিত কর্পোরেট বন্ডগুলোর চেয়ে কম সুদের হার থাকে।

২. অ-রূপান্তরযোগ্য ডিবেঞ্চার (Nonconvertible Debenture)
নিয়মিত ডিবেঞ্চার যা দায়বদ্ধ কোম্পানির ইকুইটি শেয়ারে রূপান্তরিত করা যাবে না। যেহেতু এগুলো রূপান্তর করতে সক্ষম হয় না, তাই তারা সাধারণত রূপান্তরযোগ্য ডিবেঞ্চারগুলোর চেয়ে উচ্চ সুদের হার বহন করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button