বিশেষ কলাম

ব্যাংকাররাই ব্যাংক চালাচ্ছেন কি?

আইন অনুযায়ী ব্যাংক পরিচালনায় যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের। পরিচালনা পর্ষদ কেবল ব্যাংকের নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখার কথা। যদিও দেশের ব্যাংক খাতে আইনের এ ধারার প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে কম। দেশের বেশির ভাগ ব্যাংকে পরিচালকরাই হয়ে উঠেছেন সর্বেসর্বা। ব্যাংকাররা কেবল প্রভাবশালী পরিচালকদের নির্দেশনার বাস্তবায়ন ঘটাচ্ছেন।

প্রধান কার্যালয় গুলশানে এমন একটি প্রথম প্রজন্মের ব্যাংকের নেতৃস্থানীয় একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ব্যাংকটির ঋণ বিতরণ, ঋণপত্র (এলসি) খোলা, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, কেনাকাটা থেকে শুরু করে নীতিনির্ধারণী সব দায়িত্বই প্রভাবশালী পরিচালকরা পালন করছেন। শীর্ষ নির্বাহীসহ ব্যাংকের সব কর্মকর্তার দায়িত্ব হচ্ছে আমানত সংগ্রহ করা। শাখাগুলোকে আমানত সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেয়া হলেও ঋণ বিতরণের কোনো নির্দেশনা নেই।

আরও দেখুন:
◾ একজন ব্যাংকারের যে সকল গুণাবলী থাকা জরুরী

ইসলামী ধারায় পরিচালিত দ্বিতীয় প্রজন্মের একটি বেসরকারি ব্যাংকের পরিস্থিতি এর চেয়েও খারাপ। ব্যাংকটির শীর্ষ নির্বাহী নামমাত্র দায়িত্ব পালন করছেন। কেবল পরিচালকদের নির্দেশনার বাস্তবায়ন ঘটাতে তিনি প্রতিদিন ব্যাংকে যান। ব্যাংকটির অতিক্ষুদ্র কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাও তার নেই। বরং চেয়ারম্যানের আশীর্বাদপুষ্ট কয়েকজন জুনিয়র কর্মকর্তার নিয়ে আসা ফাইলে স্বাক্ষর করার মধ্যেই ওই শীর্ষ নির্বাহীর কার্যক্রম সীমাবদ্ধ বলে অভিযোগ রয়েছে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

দেশের বেসরকারি খাতের দুই ডজনেরও বেশি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিজেদের অসহায়ত্বের কথা জানিয়েছেন। তবে চাকরি হারানোসহ বিপদে পড়ার আশঙ্কা থেকে তাদের কেউই নিজেদের নাম উদ্ধৃত করে বক্তব্য দিতে চাননি। একাধিক ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী বলেছেন, চাকরি ছেড়ে দিতে চাইলেও তারা নিষ্কৃতি পাচ্ছেন না। বরং ব্যাংকে সংঘটিত অনিয়ম-দুর্নীতির দায় চাপিয়ে দেয়ার হুমকির মধ্যে আছেন। তবে কেউ কেউ স্বেচ্ছায় ব্যাংক চেয়ারম্যান বা পরিচালকদের ব্যক্তিগত সহকারীর (পিএস) ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে দেশের তৃতীয় প্রজন্মের একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বলেন, ‘ব্যাংকারদের এখন প্রধান দায়িত্ব হলো নিজ পরিচালকদের ঋণের জোগান দেয়া আর বেনামি কোম্পানি খুলে ঋণ পেতে সহায়তা করা। নিজ ব্যাংকে সম্ভব না হলে অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ পাইয়ে দিতে তদবির করা।’

খুব কম ব্যাংকই এখন ব্যাংকাররা চালাচ্ছেন বলে মনে করেন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান আনিস এ খান। তিনি বলেন, ‘দেশের বেশির ভাগ ব্যাংকে পরিচালকরাই সর্বেসর্বা হয়ে উঠেছেন। পরিচালনা পর্ষদের সব সদস্যও ব্যাংকে ভূমিকা রাখতে পারছেন না। বরং গুটিকয়েক প্রভাবশালী পরিচালক ব্যাংকের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। এসব পরিচালকের সিদ্ধান্তেই ব্যাংকের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ব্যাংকাররা প্রভাবশালীদের হুকুম তামিল করছেন।’

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করা সাবেক এ ব্যাংকার বলেন, ‘অনেক দিন থেকেই ব্যাংক খাতে সুশাসনের ঘাটতির কথা বলে আসছি। কিন্তু পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। উল্টো দিন দিন ব্যাংকগুলোর করপোরেট শৃঙ্খলার আরো বেশি অবনতি হচ্ছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অসৎ পরিচালকদের দৌরাত্ম্য কমানোর জন্য সত্যিকারের স্বতন্ত্র পরিচালকের সংখ্যা বাড়াতে হবে। পরিচালনা পর্ষদের নিয়ন্ত্রণ সৎ, দক্ষ ও যোগ্য স্বতন্ত্র পরিচালকদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে। বর্তমানে বেশির ভাগ ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক উদ্যোক্তাদের আত্মীয়-স্বজন বা কর্মচারী। এ ধরনের স্বতন্ত্র পরিচালক দিয়ে ব্যাংকের কোনো উন্নতি আশা করা যায় না।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স নিয়ে বর্তমানে দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে ৬১টি ব্যাংক। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের সংখ্যা নয়। বেসরকারি খাতের ব্যাংকের সংখ্যা ৪৩, এসব ব্যাংক গড়ে উঠেছে ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোগে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ১০টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ধারায় ব্যাংকিং পরিচালনা করছে। পাশাপাশি দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে নয়টি বিদেশী ব্যাংক। এর বাইরে ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানও (এনবিএফআই) রয়েছে ৩৫টি।

বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) নামের একটি প্রভাবশালী সংগঠন গড়ে তুলেছেন। দেশের ৪০টি বেসরকারি ব্যাংক বর্তমানে বিএবির সদস্য। সদস্য ব্যাংকগুলোর পরিচালক ও উদ্যোক্তার সংখ্যা ৫৬৭ জন বলে বিএবি সূত্রে জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বেসরকারি ব্যাংক পরিচালকদের দৃশ্যমান ঋণের পরিমাণ প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা। নিজ ব্যাংকের পাশাপাশি অন্য ব্যাংক থেকে তারা এ পরিমাণ ঋণ নিয়েছেন। যদিও তাদের পরোক্ষ ঋণের পরিমাণ আরো বেশি বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, কোনো কোনো ব্যাংক পরিচালক নিজ নামের পাশাপাশি বেনামি বিভিন্ন কোম্পানি গড়ে তুলেছেন। ওইসব কোম্পানির নামে নিজ ব্যাংকের পাশাপাশি অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন। দৃশ্যমান ঋণের তুলনায় বেসরকারি ব্যাংক পরিচালকদের বেনামি ঋণ অনেক বেশি।

গত বছরের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। তবে খেলাপির তুলনায় ব্যাংকগুলোর দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের পরিমাণ চার গুণ বেশি। বর্তমানে ব্যাংক খাতে খেলাপি, পুনঃতফসিল, পুনর্গঠনসহ দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকা। শুধু ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে পাঁচ বছরেই ব্যাংকগুলো ১ লাখ ২০ হাজার ৯৫০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করেছে। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, দুর্দশাগ্রস্ত এসব ঋণের বড় অংশই বেসরকারি ব্যাংক পরিচালক ও উদ্যোক্তাদের। পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে এসব ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। খেলাপি হওয়ার পর ব্যাংকাররা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পরিচালকদের ঋণই পুনঃতফসিল করছেন।

পরিচালকদের অনৈতিক হস্তক্ষেপে করপোরেট সুশাসন ভেঙে পড়া ব্যাংকগুলোর একটি ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড। গত এক যুগে প্রথম প্রজন্মের বেসরকারি ব্যাংকটির প্রায় সব ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আকস্মিক পদত্যাগ করেছেন। কেউ কেউ শারীরিক ও মানসিক নিপীড়নের শিকার হয়েও চাকরি ছেড়েছেন। সর্বশেষ গত ১৮ জানুয়ারি ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডি মো. মেহমুদ হোসেনও পদত্যাগ করেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপে তিনি পদে ফিরেছেন।

গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ন্যাশনাল ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণের মধ্যে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ব্লক হিসেবে স্থানান্তরকৃত। আদায় অযোগ্য হওয়ায় অবলোপন করা হয়েছে ১ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ। সব মিলিয়ে ন্যাশনাল ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের প্রায় অর্ধেকই এখন দুর্দশাগ্রস্ত। খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকটির সঞ্চিতি ঘাটতির পরিমাণও ৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বড় অংকের মূলধন ঘাটতিতেও পড়েছে একসময়ের ভালো ব্যাংক হিসেবে স্বীকৃত ন্যাশনাল ব্যাংক। আর্থিক দুর্দশার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ন্যূনতম সিআরআর ও এসএলআর সংরক্ষণ করতেও ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হচ্ছে ব্যাংকটি।

ন্যাশনাল ব্যাংকের মতোই বিপদের মুখে রয়েছে দেশের আরো অনেক ব্যাংক। ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সিআরআর ও এসএলআর সংরক্ষণে ব্যর্থ হচ্ছে। ব্যাংক পরিচালনায় ব্যাংকারদের অংশগ্রহণ সীমিত হয়ে যাওয়ায় এসব ব্যাংক দুর্দশায় পড়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

ব্যাংক এশিয়ার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরফান আলী মনে করেন, ব্যাংকের সম্পদ ও দায় ব্যবস্থাপনার দক্ষতা কেবল অভিজ্ঞ ব্যাংকারদের রয়েছে। এখন ব্যাংকাররা যদি পেশাদারত্ব ও স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে না পারেন, তাহলে পরিণতি যা হওয়ার কথা সেটিই হচ্ছে। একটি ব্যাংকের সুশাসনের ঘাটতি পুরো খাতের সুনাম ক্ষুণ্নের কারণ হয়। গণমাধ্যমে কিছু ব্যাংকের বিষয়ে যেসব সংবাদ আসছে, তাতে এটি বলার সুযোগ নেই যে ব্যাংকাররা স্বাধীনভাবে ব্যাংক চালাতে পারছেন।

শুধু বেসরকারি ব্যাংকই নয়, বরং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কোনো কোনো পরিচালকও ব্যাংকের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে হস্তক্ষেপ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ২০১২ সালে সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। ওই সময় পর্যন্ত ব্যাংক খাতের সর্ববৃহৎ ওই কেলেঙ্কারিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের অনৈতিক হস্তক্ষেপের বিষয়টি আলোচিত হয়েছিল। আবার রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংকের বিভিন্ন আর্থিক কেলেঙ্কারিতেও উঠে এসেছিল চেয়ারম্যান ও প্রভাবশালী পরিচালকদের নাম। বর্তমানেও এ ব্যাংকগুলোর কোনো কোনো পরিচালক ব্যাংকের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে হস্তক্ষেপ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি পরিচালনা পর্ষদে ঋণ প্রস্তাব ও কেনাকাটার ফাইল অনুমোদন করতে হলে পরিচালকদের ‘পার্সেন্টেজ’ দিতে হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কেউ মাথা উঁচু করে সত্য বলতে পারছেন না বলে মনে করছেন রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ। সরকারি-বেসরকারি তিনটি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। তিনি বলেন, ‘ব্যাংকাররা নিজের ইচ্ছায় ব্যাংক চালাচ্ছেন, নাকি অন্যের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করছেন, সেটি এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ মাথা উঁচু করে কথা বলার সাহস দেখাচ্ছে না। আইন অনুযায়ী, পরিচালনা পর্ষদ নীতির প্রণয়ন করবে, সে নীতির বাস্তবায়ন ঘটাবে ব্যাংকার। ৪৫ বছরের ব্যাংকিং ক্যারিয়ারে এটিরই চর্চা করে এসেছি। কিন্তু এখন ব্যাংকগুলোতে সঠিক চর্চা হচ্ছে না।’

নিজের অভিজ্ঞতা বিষয়ে আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ বলেন, ‘শীর্ষ নির্বাহী হিসেবে রাষ্ট্রের বহু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও দপ্তর থেকে নির্দেশনা এসেছিল। সেসব নির্দেশনা মনোযোগ দিয়ে শুনেছি, কিন্তু কখনই বাস্তবায়ন করিনি। তাতে কোনো ব্যাংক থেকে আমার চাকরি চলে যায়নি। ব্যাংকারদের নিজের বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে চলতে হবে। কারো নির্দেশনায় পরিচালিত হলে সেখানে ব্যাংকিং থাকে না।’

ডলারসহ চলমান অর্থনৈতিক সংকট বেসরকারি ব্যাংকের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব দেশের বড় ব্যবসায়ীদের কাছে আরো বেশি আকর্ষণীয় করে তুলেছে। দেশের সব বড় করপোরেট গ্রুপই এখন ব্যাংকের মালিকানায় সম্পৃক্ত হতে চাইছেন। এজন্য একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতাও করছেন। গত এক দশকে বেসরকারি খাতে এক ডজনের বেশি নতুন ব্যাংক যুক্ত হয়েছে। এজন্য প্রভাবশালী শিল্প গ্রুপগুলো এখন আর নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স চাচ্ছেন না। বরং বিদ্যমান প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকগুলোর পর্ষদে যুক্ত হয়ে কর্তৃত্ব নিতে তারা বিভিন্ন ধরনের তত্পরতা চালাচ্ছে।

একসময় বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তা ছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে শেয়ার বিক্রি করে ব্যাংক থেকে সরে গেছেন। এমন একাধিক শিল্প গ্রুপ ও ব্যবসায়ী মরিয়া হয়ে ব্যাংক খাতে ফিরতে চাইছেন। চলতি বছরেই দেশের বেসরকারি খাতের তিন-চারটি ব্যাংকের মালিকানায় পরিবর্তন আসতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি শিল্প গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, ‘যেসব ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রণে ব্যাংক আছে, তারাই চলমান সংকটের সময় চুটিয়ে ব্যবসা করছেন। নামে-বেনামে ব্যাংক চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা ঋণ নিচ্ছেন। আবার ব্যাংকের আমদানির এলসিও ব্যাংক পরিচালকদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।’

সোর্সঃ বণিক বার্তা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button