ব্যাংকারের স্মৃতিচারণ

ইসলামী ব্যাংকিং পেশায় তিন যুগ (১৯৮৪-২০১৯): ১ম পর্ব

মুহাম্মদ শামসুজ্জামানঃ পেশা হিসাবে ব্যাংকিং যেমন চ্যালেন্জের তেমনি কঠিন পরিশ্রমের। এখনকার মতো তখনও এই সেক্টরে চাকরির চাহিদা বেড়েই চলেছিলো। কিন্তু কেনো? হিসাবটা অনেক সহজ। ব্যাংকের চাকরি কঠিন হলেও এখানে প্রাপ্তিও কম নয়। ব্যাংক জবে বেতন কাঠামো যেমন স্মার্ট অ্যামাউন্ট। বিশেষ করে বেসরকারি ব্যাংকগুলো ভালোমানের সেলারি দিয়ে থাকে, তেমিন এ পেশার সামাজিক মর্যাদাও বেশি। ব্যাংকের জব বরাবরই সম্মানজনক একটা পেশা। তা ছাড়া অন্য করপোরেট হাউসগুলো থেকে ব্যাংক এমপ্লয়িদের ভালো সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে।

ঠিক এমন চিন্তা থেকে নয়, আমার ব্যাংকে প্রবেশের কারণ একদমই ভিন্ন। ছাত্রজীবনের উল্লেখযোগ্য সময়ই হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সময়টা। মূলতঃ সবার মনেই তখন থেকে ভবিষ্যত পেশা উঁকি দিতে থাকে। ব্যক্তিগতভাবে আমি সবসময়ই নির্মল চাঁপা স্বভাবের। হৈ-হুল্লোড় একদমই পসন্দ নয়। তবু বন্ধুবান্ধব কম ছিলোনা। প্রতিদিনই কম-বেশী লাইব্রেরি ওয়ার্ক করতাম। রাজনীতি বিজ্ঞান পড়ার সাবজেক্ট হলেও অর্থনীতি ও ব্যাংকিং এ ঝোঁক ছিলো এন্তার বিশেষ করে ইসলামী অর্থনীতির বাস্তবায়ের উপর তখন থেকেই পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ছিলো।

এমনই এক প্রেক্ষাপটে ১৯৮৩ সালের ৭ মে দৈনিক বাংলাদেশ অবজার্ভার পত্রিকায় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড প্রথম ব্যাচ প্রবেশানারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। যথারীতি আবেদন করি। ২৩ জুলাই ১৯৮৩ ঢাকা কলেজে প্রায় তিন হাজার আবেদনকারীর লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। মনে আছে, একই সময় পরদিন আমাদের মাস্টার্স দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা ছিলো। ফলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেকেই ঝুঁকি বিধায় আসতে পারেননি। আমার ছাত্রজীবনের অন্যতম বন্ধু এবং পরে ইসলামী ব্যাংকের সহকর্মী সৈয়দ নাসিরের অণুপ্রেরণা ও জোর না খাটালে হয়তো আমারও আসা হতোনা।

তখন ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে তিনজোড়া রেল চলতো। রাতে ঢাকা মেইল, দুপুরে গ্রীন এরো আর প্রভাতে উল্কা এক্সপ্রেস। সিদ্ধান্ত হলো আগের দিন রাতের ট্রেনে করে পরদিন প্রভাতে ঢাকা পৌছবো। পরীক্ষা শেষে ঐদিনই বেলা সাড়ে বারোটার গ্রীন এরো ধরে চট্টগ্রাম পৌছবো, তাই হলো। পরীক্ষার তেমন প্রস্ততি না থাকলেও ছাত্রজীবনে পড়া ইসলামী সাহিত্য বেশ কাজ দিয়েছিলো।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

ঠিক ছ’মাসের মাথায় রেজাল্ট হয়। ১৯ জানুয়ারী ১৯৮৪ তারিখে এপয়েন্টমেন্ট হয় ২৯ জনের। বলে নিই, এর আগে ১৬ নভেম্বর ১৯৮৩ মৌখিক সাক্ষাত্কার নেয়া হয়। সেটি জীবনের প্রথম চাকুরীর সাক্ষাত্কার। কাজেই ভীষণভাবে নার্ভাস তো অবশ্যই। ভাইবা বোর্ডে বারোজন পরিচালক ও তখনকার ইপি এম এ করিম ও ইভিপি আজিজুল হক স্যার মিলে অনেক শক্তিশালী। আমি পলিটিক্যাল সাইন্স বলাতে সব স্যারই কেমন যেনো নড়ে চড়ে বসলেন মনে হলো। প্রশ্ন সবাই করলেন তবে “সভরেইনিটি” নিয়েই প্রশ্ন ছিলো বেশী। কেবল আজিজুল হক স্যার ইসলামী ইকনমীর কার্যকর কয়েকটি বৈশিষ্ট সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। দীর্ঘ ভাইবা শেষে অপেক্ষমানরা জিজ্ঞাসা করলে কিছুই বলতে পারিনি।

আরও দেখুন:
মোহাইমিনের শুভংকরের ফাঁকি ও ইসলামী ব্যাংকিং: ১০ম পর্ব

তখন “বিআরসি” এর বিজ্ঞাপনে সমান্তরাল সরকারী ব্যাংকগুলোতেও নিয়োগ হয়। আমারও জনতা ব্যাংকে পিও হয়েছিলো। কিন্ত ইসলামী ব্যাংক ছিলো পসন্দ ও আরাধ্যের সর্বাগ্রে। ব্যাংকে নিয়োগপত্র পেয়ে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। যে চাকুরীর জন্য বহু তাহাজ্জুত, নফল রোজা আর কুরআন খতম জমা করেছিলাম, তার ফলাফল হাতে পেয়ে কার না খুশি হবে! মনে পড়ে, আমার বাবা সবচেয়ে বেশি খুশি হয়ে সেদিন শুকরানা নামাজ আদায় করেছিলেন।

যোগদানের তারিখ ১০ ফেব্রুয়ারি অবধি ছিলো তবুও প্রথম দিন অর্থাৎ ৫ ফেব্রুয়ারিই বেশিরভাগ যোগ দেয়, আমিও তাদের মধ্যে। এইচ আর হেড শ্রদ্ধেয় তাজুল ইসলাম স্যার অমায়িক ও সুন্দর আচরন দিয়ে ভুলিয়েই দিয়েছিলেন- কর্মকর্তা আর কর্মচারী সম্পর্ক। সামান্য ব্রিফ শেষে হেড অফিস থেকে আমাদের পাঠিয়ে দিলেন লোকাল অফিসে। তখনকার একমাত্র শাখা এটি, এখন আমাদের সবচেয়ে বড়, আয়তন ও পারফরম্যান্সে। কেউ কেউ বলেন, এটি আলাদা একটি ব্যাংক। -চলতে থাকবে, ইনশাআল্লাহ।

লেখকঃ মুহাম্মদ শামসুজ্জামান, সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি), ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button