অর্থনীতিইসলামী অর্থনীতি

ইসলামী অর্থনীতি ও প্রচলিত অর্থনীতির মধ্যে পার্থক্য

ইসলামী অর্থনীতিতে ধন-সম্পদ বণ্টন ব্যবস্থা ন্যায়নীতি, সুবিচারপূর্ণ ও ইনসাফভিত্তিক। ইসলামী অর্থব্যবস্থায় আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, আত্মিক স্বাধীনতা ও মুক্তির সমান সুযোগ রয়েছে, যেখানে পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় রাজনৈতিক স্বাধীনতার উপর জোর দেয়া হয়েছে, অর্থনৈতিক মুক্তি সেখানে অবর্তমান। অপরদিকে সমাজতন্ত্রে অর্থনৈতিক মুক্তির উপর জোর দেয়া হয়েছে, কিন্তু রাজনৈতিক ও আর্থিক স্বাধীনতা অনুপস্থিত। পুঁজিবাদী ও সমাতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা চরমপন্থী ও শাসকশ্রেণীর ইচ্ছাধীন নীতিমালার অন্তর্ভুক্ত যেখানে ইসলামী অর্থব্যবস্থা পধ্যপন্থী এবং নিয়ন্ত্রিত নীতিমালার প্রবর্তক। সম্পদ পুঞ্জিভূত করা ইসলামে নিন্দনীয় কাজ।

কুরআনে পাকের সূরা হাশরের ৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে, كَيْ لَا يَكُونَ دُولَةً بَيْنَ الْأَغْنِيَاء مِنكُمْ
অর্থাৎ- যেন তোমাদের ধনীদের মাঝে সম্পদ পুঞ্জিভূত না থাকে। এ আয়াত থেকে ইসলামে যে ধনবৈষম্য বিদূরণ একান্ত আবশ্যক তার সুস্পষ্ট বিধান উল্লিখিত হয়েছে। ইসলামী দর্শন অনুযায়ী সব সম্পদের মালিক আল্লাহ। তবে যোগ্যতা, দক্ষতা ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে মানুষ ধন-সম্পদ উপার্জন করে সীমাবদ্ধভাবে ভোগ করতে পারে, কিন্তু তা জমা করে রাখতে পারবে না।

Difference between Islamic Economics & Conventional Economics (ইসলামী অর্থনীতি ও প্রচলিত অর্থনীতির পার্থক্য)
ইসলামী অর্থনীতি সাথে প্রচলিত অর্থনীতির মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো-
১. ইসলামী অর্থনীতিতে মানুষ সম্পদের প্রকৃত মালিক নয় বরং ব্যবহারকারী মাত্র সাধারন অর্থনীতিতে মানুষই সম্পদের প্রকৃত মালিক।
২. ইসলামী অর্থনীতিতে সম্পদ ইচ্ছামত বন্টন করা যায় না কিন্তু সাধারন অর্থনীতিতে সম্পদ ইচ্ছামত বন্টন করা যায়।
৩. ইসলামী অর্থনীতিতে প্রত্যেক কাজে ভাল ও কল্যানের বিষয় জড়িত থাকে কিন্তু সাধারন অর্থনীতিতে ভালো মন্দের প্রয়োজন নেই।
৪. ইসলামী অর্থনীতি হালাল ও হারামের বিধি নিষেধে নিয়ন্ত্রিত কিন্তু প্রচলিত অর্থনীতিতে হালাল ও হারাম বিবেচ্য নয়।
৫. ইসলামী অর্থনীতিতে সম্পদ কতিপয় ব্যক্তিদের হাতে পুঞ্জিভুত হওয়ার সুযোগ নেই কিন্তু প্রচলিত অর্থনীতিতে তা সম্ভব।

৬. ইসলামী অর্থনীতিতে নীতি নৈতিকতা প্রধান বিবেচ্য বিষয় কিন্তু প্রচলিত অর্থনীতিতে তা বস’তান্ত্রিক।
৭. ইসলামী অর্থনীতিতে টাকাকে কমোডিটি হিসাবে বিবেচনা করা যায়না কিন্তু প্রচলিত অর্থনীতিতে তা করা যায়।
৮. ইসলামী অর্থনীতিতে কোন অবস্থাতেই উৎপাদন ব্যয় কমানো যাবেনা কিন্তু প্রচলিত অর্থনীতিতে যে কোন পন্থায় উৎপাদন ব্যয় কমানো যাবে।
৯. ইসলামী অর্থনীতি ভেলু ওরিয়েন্টেড কিন্তু প্রচলিত অর্থনীতিতে ভেলু নিউট্রায়াল।
১০. ইসলামী অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতির সম্ভাবনা নেই কিন্তু প্রচলিত অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতির সম্ভাবনা অনেক।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।
রিলেটেড লেখা

১১. ইসলামী অর্থনীতিতে ব্যাংক বীমা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান শরীযার উপর ভীত্তি করে প্রতিষ্ঠিত কিন্তু প্রচলিত অর্থনীতি সুদের উপর ভীত্তি করে প্রতিষ্ঠিত।
১২. ইসলামী অর্থনীতি নিয়ন্ত্রিত অর্থনৈতিক কর্মকান্ড কিন্তু প্রচলিত অর্থনীতিতে অবাধ অর্থনৈতিক কর্মকান্ড করা যায়।
১৩. ইসলামী অর্থনীতিতে হারাম বা সমাজের জন্য ক্ষতিকর দ্রব্যের উৎপাদন বা ব্যবসা করা যাবেনা যদিও তা লাভজনক হয়। কিন্তু প্রচলিত অর্থনীতিতে লাভজনক হলে যে কোন দ্রব্যের উৎপাদন বা ব্যবসা করা যাবে।
১৪. ইসলামী অর্থনীতি সুদ মুক্ত অর্থনীতি অন্যদিকে প্রচলিত অর্থনীতি সুদ ভিত্তিক অর্থনীতি।
১৫. ইসলামী অর্থনীতি হলো সার্বজনীন ও কল্যাণকর অপরদিকে প্রচলিত অর্থনীতি ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়। তাতে সমাজের কোন কল্যাণ আসেনা।

১৬. ইসলামী অর্থনীতিতে মালিকের উপার্জনে শ্রমিকের বৈধ অধিকার রয়েছে। রাসুল (স) বলেছেন- শ্রমিকরা তোমাদের ভাই। রাসুল (স) আরো বলেছেন- শ্রমিকের মজুরি তাদের গায়ের ঘাম শুকানোর পূর্বেই দিয়ে দাও। অন্যদিকে প্রচলিত অর্থনীতিতে শ্রমিক শুধু খেটেই মরে, মালিকের উপার্জনে তাদের কোন অধিকার নেই।
১৭. ইসলামী অর্থনীতিতে ধনী ও গরীবের মাঝে ভারসাম্য স্থাপনের জন্য যাকাতের ব্যবস্থা যেমন রয়েছে তেমনি রাষ্ট্রের আয়ের জন্য করের ব্যবস্থাও রয়েছে। অপরদিকে প্রচলিত অর্থনীতিতে কঠিন করের বোঝা জনগণের উপর চাপানো হয়।
১৮. ইসলামী অর্থনীতিতে দুর্নীতির কোন প্রশ্রয় নেই। কিন্তু প্রচলিত অর্থনীতিতে অবাধ ব্যক্তি মালিকানা থাকায় দুর্নীতিবাজদের আবির্ভাব ঘটে।
১৯. ইসলামী অর্থনীতিতে আয় ও ব্যয়ের সুষ্ঠ ও সুনিয়ন্ত্রিত পদ্ধতি রয়েছে যেখানে কার্পণ্য ঘৃণিত এবং অপচয় নিরুৎসাহিত। অপরদিকে প্রচলিত অর্থনীতিতে আয় ও ব্যয়ের সুষ্ঠ ও সুনিয়ন্ত্রিত পদ্ধতি না থাকায় অবৈধ উপায়ে সম্পদ উপার্জন, কার্পণ্য ও অপব্যয়ের জন্য অন্য কাউকে জবাবদিহি করতে হয়না।
২০. প্রচলিত অর্থনীতিতে সম্প্রীতি ও সহানুভূতির কোন স্থান নেই। অন্যদিকে ইসলামী অর্থনীতি সম্প্রীতি ও সহানুভূতির উপর প্রতিষ্ঠিত।

লেখকঃ মোহাম্মদ শামসুদ্দীন আকন্দ, ব্যাংকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button