অর্থনীতি

বাজেট কি ও কেন?

বাজেট হচ্ছে একটি দেশের সম্ভাব্য আয়-ব্যয়ের হিসাব। সরকারকে দেশ চালাতে হয়, সরকারের হয়ে যাঁরা কাজ করেন তাঁদের বেতন দিতে হয়, আবার নাগরিকদের উন্নয়নের জন্য রাস্তাঘাট বানানোসহ নানা ধরনের উদ্যোগ নিতে হয়। সুতরাং একটি নির্দিষ্ট অর্থবছরে কোথায় কত ব্যয় হবে, সেই পরিকল্পনার নামই বাজেট।

একজন মানুষকেও কিন্তু আয় ও ব্যয়ের হিসাব করতে হয়। তবে ব্যক্তির সঙ্গে রাষ্ট্রের বাজেটের একটি মৌলিক পার্থক্য আছে। ব্যক্তি আগে আয় কত হবে সেটি ঠিক করেন, তারপর ব্যয়ের খাতগুলো নির্ধারণ করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্র করে ঠিক উল্টোটা। রাষ্ট্র আগে ব্যয়ের খাতগুলো নির্ধারণ করে। এরপর ঠিক করে কোথা থেকে অর্থ আসবে। অর্থাৎ সরকার আয় করে খরচ বুঝে, আর ব্যক্তি ব্যয় করেন আয় বুঝে। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য না হলে রাষ্ট্র দেশ-বিদেশ থেকে অর্থ ধার করতে পারে। ব্যক্তিও পারেন, তবে এর সীমা সামান্যই।

ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ (Banking News Bangladesh. A Platform for Bankers Community.) প্রিয় পাঠকঃ ব্যাংকিং বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন।

কারণ ধার করলে পরিশোধ করতে হয়। রাষ্ট্রকেও পরিশোধ করতে হয়, তবে এ জন্য রাষ্ট্র সাধারণত দেউলিয়া হয় না। ধার বছরের পর বছর টেনে নিয়ে যেতে পারে। রাষ্ট্র এই সুযোগটি নিজেই তৈরি করে নেয়। যদিও এর ফলে দায় ক্রমাগত বাড়তে থাকে। আয় ও ব্যয় সমান কি না, সেই প্রশ্নেই রাষ্ট্রের বাজেট দুই রকমের হয়ে থাকে। যেমন-

সুষম বাজেট
সরকারের মোট আয় ও মোট ব্যয় সমান হলে সেটি হচ্ছে সুষম বাজেট। অর্থাৎ সরকারের মোট ব্যয় পরিকল্পনার সমানই হচ্ছে সম্ভাব্য আয়।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

অসম বাজেট
যেখানে আয় আর ব্যয় সমান হয় না। অসম বাজেট আবার দুই রকমের হতে পারে। যেমন উদ্বৃত্ত বাজেট ও ঘাটতি বাজেট। ব্যয়ের তুলনায় আয় বেশি হলে সেটি উদ্বৃত্ত বাজেট। ঘাটতি বাজেট হচ্ছে ঠিক উল্টোটা। এখানে ব্যয় বেশি, আয় কম।

প্রশ্ন হচ্ছে কোন বাজেটটি ভালো। সাধারণত উন্নত দেশগুলো সুষম বাজেট করে থাকে। তবে প্রতিবছরই সুষম বাজেট করা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। উন্নত বা ধনী দেশগুলো বাণিজ্য চক্র মেনে সুষম বাজেট করে। অর্থাৎ অর্থনীতির ওঠানামার সঙ্গে সমন্বয় করে একটি নির্দিষ্ট অর্থবছরের বাজেট তৈরি করা হয়। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো হলে সুষম বাজেট, খারাপ হলে ঘাটতি বাজেট। অনেক উন্নত দেশই আইন করে সুষম বাজেট তৈরি করে। যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ রাজ্যে এই আইন আছে। সুইজারল্যান্ড, ইতালি, অস্ট্রিয়াসহ বেশ কিছু উন্নত দেশে সুষম বাজেট প্রণয়নের আইন আছে।

অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, অব্যাহতভাবে সুষম বাজেট তৈরি করা ভালো কিছু নয়। বরং অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই বাজেট কেমন হবে ঠিক করা উচিত। কেননা, সুষম বাজেট সুদের হার কমায়, বাড়ায় সঞ্চয় ও বিনিয়োগ। এ ছাড়া বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনে। এতে দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনীতি এগিয়ে যায়।

সাধারণত অর্থনীতি ভালো অবস্থায় থাকলে সুষম বাজেট করা হয়, খারাপ হলে অর্থনীতিকে উদ্দীপনা দিতে তৈরি হয় ঘাটতি বাজেট। একটা সময় ছিল যখন ঘাটতি বাজেটকে ক্ষতিকর ও সরকারের দুর্বলতাও ভাবা হতো। পরিস্থিতি এখন পাল্টেছে। বরং অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশে কিছুটা ঘাটতি থাকা ভালো। এতে অব্যবহৃত সম্পদের ব্যবহার বাড়ে, ঘাটতি পূরণের চাপ থাকে। তাতে অর্থনীতিতে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। ঘাটতি বেশি থাকাটা আবার ভালো নয়। সাধারণত মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশ পর্যন্ত ঘাটতিকে মেনে নেওয়া হয়। বাজেট ঘাটতি দুভাবে পূরণ করা হয়। যেমন-

বৈদেশিক উৎস
এটি মূলত বৈদেশিক ঋণ। সরকার বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও দেশ থেকে সহজ শর্তে ঋণ নেয়। এই উৎস থেকে বেশি ঋণ নিয়ে ঘাটতি পূরণ করতে পারলে তা অর্থনীতির জন্য বেশি সহনীয়। কারণ, এতে সুদ হার কম এবং পরিশোধ করতে অনেক সময় পাওয়া যায়। তবে শর্ত থাকে বেশি।

অভ্যন্তরীণ উৎস
সরকার দুভাবে দেশের ভেতর থেকে ঋণ নেয়। যেমন, ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও ব্যাংকবহির্ভূত ব্যবস্থা। ব্যাংকবহির্ভূত ব্যবস্থা হচ্ছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। এভাবে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ঋণ নেয় সরকার।

অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বেশি ঋণ নেওয়ার দুটি বিপদ আছে। ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে সরকার বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতের জন্য অর্থ থাকবে কম। ফলে বিনিয়োগ কমে যায়। আর ব্যাংকবহির্ভূত ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিলে বেশি হারে সুদ দিতে হয়। এতে সুদ পরিশোধে সরকারকে বেশি পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রাখতে হয়। এতে পরের অর্থবছরের বাজেট বেড়ে যায়। সরকার বেশি পরিমাণ ঋণ নিলে মূল্যস্ফীতিও বাড়তে পারে। আয় ও ব্যয়ের ধরনের ভিত্তিতেও বাজেট দুই ধরনের। আর আছে উন্নয়ন বাজেট। যেমন-

রাজস্ব ব্যয়
রাজস্ব ব্যয় হচ্ছে সরকার পরিচালনার খরচ। রাজস্ব ব্যয়কে অনুন্নয়ন বাজেটও বলা হয়। অনুন্নয়ন ব্যয় মোটা দাগে তিনটি। যেমন দেশরক্ষা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও প্রশাসন চালানোর খরচ। বাংলাদেশ একটি কল্যাণ রাষ্ট্র নয়। তারপরও বাজেটে একটি মানবিক চেহারা দেওয়ার চেষ্টা থাকে। এ জন্য নানা ধরনের সামাজিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়। আবার কৃষি ও জ্বালানি খাতে সরকার ভর্তুকি দেয়। এর বাইরে আছে সুদ পরিশোধ। তবে সবচেয়ে বড় খরচের খাত হচ্ছে বেতন-ভাতা।

রাজস্ব আয়
রাষ্ট্রের কতগুলো আয়ের উৎস আছে। এগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন প্রত্যক্ষ কর, পরোক্ষ কর এবং করবহির্ভূত আয়। প্রত্যক্ষ করের মধ্যে আছে ব্যক্তিশ্রেণির আয়কর, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের আয়ের ওপর কর (করপোরেট কর), দান কর, উত্তরাধিকার কর, যানবাহন কর, মাদক শুল্ক, ভূমি রাজস্ব ইত্যাদি। আর পরোক্ষ কর হচ্ছে আমদানি কর, আবগারি শুল্ক, ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর, সম্পূরক শুল্ক ইত্যাদি।

কর ছাড়া আরও আয় আছে। যেমন বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের লাভ, সুদ, সাধারণ প্রশাসন থেকে আয়, ডাক-তার-টেলিফোন থেকে আয়, পরিবহন আয়, জরিমানা ও দণ্ড থেকে আয়, ভাড়া, ইজারা, টোল ও লেভি থেকে আয় ইত্যাদি।

উন্নয়ন বাজেট
দেশ পরিচালনায় যত ধরনের ব্যয় আছে তা পূরণ করে আয়ের বাকি অর্থ দিয়ে সরকার উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করে। এ জন্য যে বরাদ্দ রাখা অর্থই উন্নয়ন বাজেট। এই অর্থ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। রাস্তা নির্মাণ, সেতু নির্মাণ থেকে শুরু করে গ্রামীণ উন্নয়ন, বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি, স্কুল, কলেজ ও হাসপাতাল তৈরিসহ নানা ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ করে সরকার। রাজস্ব উদ্বৃত্ত ও দেশের ভেতর ও বাইরে থেকে নেওয়া ঋণ নিয়ে উন্নয়ন বাজেট করা হয়। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) নামে একটি প্রকল্প খাত রয়েছে। এই খাতেই সাধারণত উন্নয়ন বাজেটের খরচ দেখানো হয়। সুত্রঃ প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button