অর্থনীতি

বিদেশি বিনিয়োগ টানতে ব্যাংকিং জটিলতা কমানোর নির্দেশ

বৈশ্বিক করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির একদিকে যেমন জীবন-জীবিকার ঝুঁকি রয়েছে, অন্যদিকে উঁকি দিচ্ছে সম্ভাবনা। করোনার প্রভাবে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। চীন থেকে অনেক বিদেশি বিনিয়োগ অন্য দেশে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এসব বিনিয়োগ দেশে আনতে ইতোমধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। এবার বিদেশি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে বিনিয়োগকারীরা যাতে তাদের অর্থ-লভ্যাংশ সহজে নিজ দেশে বা অন্যত্র নিয়ে যেতে পারেন, সেজন্য ব্যাংকিং জটিলতা কমানোর জন্য পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম-সচিব মু. শুকুর আলী গত মঙ্গলবার (২৩ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে এ বিষয়ে একটি চিঠি দিয়েছেন। চিঠির অনুলিপি মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব এবং অর্থমন্ত্রীর কাছেও পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, ‘প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। শুরু হয়েছে নতুন অর্থনৈতিক মেরুকরণ ও বিনিয়োগ বহুমুখীকরণ। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে চীন থেকে অনেক বিদেশি বিনিয়োগ বা শিল্পপ্রতিষ্ঠান অন্যত্র স্থানান্তরের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এ অঞ্চলের অনেক দেশ যেমন- ভারত, ভিয়েতনাম এবং ইন্দোনেশিয়া এ ধরনের বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে নিজ নিজ দেশের বিনিয়োগ সংক্রান্ত আইন, বিধিবিধান, কর ব্যবস্থা এবং ব্যাংকিং পদ্ধতি সহজতর করছে। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ দেশসমূহের সংশ্লিষ্ট আইনি কাঠামোয়, নীতিসহায়তায়, ব্যাংকিং নিয়মনীতি ও পদ্ধতিতে প্রযুক্তির ব্যবহারসহ ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের অর্থ-লভ্যাংশ নিজ দেশে সহজে প্রত্যাবাসন তথা নিজ দেশ বা অন্য কোনো দেশে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির অন্যতম পূর্বশর্ত। তাই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যাতে অনায়াসে বিনিয়োগের অর্থ-লভ্যাংশ নিজ দেশ বা অন্যত্র নিয়ে যেতে পারেন, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা কর্তৃক জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ব্যাংকিং কার্যক্রমে নিয়মনীতি সহজীকরণ বা যুগোপযোগীকরণ এবং তার বাস্তব প্রয়োগ অত্যাবশ্যক।’

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

চিঠিতে বলা হয়, ‘গত ৮ জুন অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যাতে বিনিয়োগের অর্থ-লভ্যাংশ নির্বিঘ্নে নিজ দেশে নিয়ে যেতে পারেন, সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পুঁজি বিনিয়োগে এবং বিনিয়োগকৃত অর্থ-লভ্যাংশ প্রত্যাবাসনে সর্বোত্তম ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিতকরণের ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।’

‘বাংলাদেশের সহজলভ্য দক্ষ শ্রমবাজার, বর্তমান স্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থা, উদীয়মান ও দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি এবং অবকাঠামোর ক্রমাগত উন্নয়ন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে আকৃষ্ট করছে। এছাড়া এনআরবি বা প্রবাসী বাংলাদেশিরাও দেশের শিল্প, কৃষি এবং সেবাখাতে বিনিয়োগে অধিক হারে আগ্রহী হয়ে উঠছে। আমানতের সুদের হার বিদেশি ব্যাংকের তুলনায় অধিক হওয়ায় দেশীয় ব্যাংকগুলোতে বিভিন্ন সঞ্চয় স্কিমে তারা বিনিয়োগে উৎসাহিত হচ্ছেন। কিন্তু অনেক সময় সঞ্চয় স্কিমের মেয়াদ শেষে অর্থ উত্তোলন এবং প্রবাসে অর্থ প্রত্যাবাসনের সময় তারা ব্যাংকের জটিল প্রক্রিয়ার সম্মুখীন হন, যা অনেক প্রবাসীকে দেশে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করে।’

অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যাতে সহজে বৈদেশিক মুদ্রা হিসেবে অর্থ জমা, উত্তোলন ও তাদের বিনিয়োগের অর্থ-লভ্যাংশ নিজ দেশে প্রত্যাবাসন করতে পারেন, সেজন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ব্যাংকিং প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও দ্রুততর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।’

ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ (Banking News Bangladesh. A Platform for Bankers Community.) প্রিয় পাঠকঃ ব্যাংকিং বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন।

উল্লেখ্য, বিদ্যমান ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট, ১৯৪৭-কে বাংলা ভাষায় রূপান্তর এবং যুগোপযোগী করার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যে খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। এখন এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামত নেয়া হবে। তারা ২১ দিনের মধ্যে মতামত দেবেন। তারা যাতে মতামত দিতে পারেন, সেজন্য সংশোধিত আইনের খসড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, বিদেশি বিনিয়োগ সহজ করার জন্য এ আইনে আর কী কী পরিবর্তন আনা প্রয়োজন তা অন্যান্য মন্ত্রণালয় বা সংস্থা যেমন- বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বিভিন্ন ব্যবসায়ী গ্রুপ বা প্রতিষ্ঠান ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মতবিনিময় এবং পরামর্শক্রমে চূড়ান্ত করে ও মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিয়ে দ্রুত এ আইনটি যাতে জাতীয় সংসদে পাস হয়ে আইনগত বাধা দূর হয়, সেই উদ্যোগ এ বিভাগে প্রক্রিয়াধীন।’

একই সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ যাতে নিশ্চিত হয়, সেজন্য ব্যাংকিং প্রক্রিয়া সহজতর ও গতিশীল করা অতি প্রয়োজন বলেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় বলছে, কোভিড-১৯ জনিত পরিস্থিতিতে বর্তমানে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়ার যে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে, তা কাজে লাগাতে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের অর্থ-লভ্যাংশ নিজ দেশে বা অন্যত্র সহজে প্রত্যাবাসনের সুযোগ প্রদান করতে হবে।

এদিকে চীন থেকে বিদেশি বিনিয়োগ বা শিল্পপ্রতিষ্ঠান অন্যত্র স্থানান্তরিত হলে তাদের বাংলাদেশে আকৃষ্ট করতে কী ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে এ বিষয়ে সম্প্রতি জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে এ বিষয়গুলো নিয়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলাপ শুরু করেছি। যেসব কোম্পানি চীন থেকে রিলোকেট (সরে যাচ্ছে) করার চিন্তা করছে, তাদের সঙ্গে আমাদের ব্যবসায়ীদের আলাপ করার জন্য জানিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠনের তালিকা সংগ্রহ করে তাদের জানিয়েছি যে, আপনারা যেসব কোম্পানি চীন থেকে চলে যেতে চায় তাদের সঙ্গে আলাপ করেন। তাছাড়া বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) কাছেও এসব তথ্য দিয়েছি। আমরা চাই, বিশেষভাবে বেসরকারিভাবে উদ্যোগ নেয়া হোক। তাদের বলা হোক, বাংলাদেশে বিনিয়োগে প্রচুর সুযোগ রয়েছে। আমাদের ১০০টি ইকোনমিক জোন হচ্ছে, ২৮টি হাইটেক পার্ক হচ্ছে। এসব জায়গায় যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ অন্যান্য দেশ বিনিয়োগ করতে পারে।’

‘যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান একটি করে ইকোনমিক জোন নিয়ে নির্দ্বিধায় বিনিয়োগ করে তাদের ফ্যাক্টরিগুলো চালু করতে পারে। আমরা এসব দেশকে বলেছি যে, বাংলাদেশ হচ্ছে বাণিজ্যবান্ধব দেশ। বর্তমানে সরকার স্থিতিশীল। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের তুলনায় বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে এর লভ্যাংশ সহজেই নিয়ে যেতে পারে। সুতরাং আমাদের দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি খুব ভালো-এসব তথ্যই তাদের জানাচ্ছি’-যোগ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button