বিশেষ কলামব্যাংক হিসাব

ব্যাংক ডিপোজিটে আবগরি শুল্ক কর্তন রিভিউ-এর প্রস্তাবনা

মুহাম্মদ শামসুজ্জামানঃ ব্যাংক ডিপোজিটে আবগরি শুল্ক কর্তন রিভিউ-এর প্রস্তাবনা- আবগারি শুল্ক কাটার নিয়ম হলো, আপনার ব্যাংক হিসাবে যদি জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এক লাখ টাকার কম থাকে তাহলে কোনো আবগারি শুল্ক বসে না। অর্থাৎ বর্তমানে ব্যাংক হিসাবে এক লাখ টাকা পর্যন্ত থাকলে তা আবগারি শুল্কমুক্ত। আর ১ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত টাকা থাকলে ১৫০ টাকা এবং ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত থাকলে ৫০০ টাকা আবগারি শুল্ক দিতে হয়। এ ছাড়া ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকায় ৩ হাজার টাকা; ১ কোটি টাকা থেকে ৫ কোটি টাকায় ১৫ হাজার টাকা এবং ৫ কোটি টাকার ওপরে থাকলে ৫০ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক আরোপ হয়।

প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসে সঞ্চয়ী হিসাব (যেমন, বেতন-ভাতার টাকা কিংবা সারা বছর যেসব হিসাবে লেনদেন হয়) থেকে আবগারি শুল্ক কাটে ব্যাংকগুলো। কারণ, ব্যাংকের হিসাব-নিকাশের সময় জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস। অন্যদিকে স্থায়ী আমানতের হিসাবের ক্ষেত্রে যখন এফডিআর মেয়াদপূর্তি হয়, তখন সঙ্গে সঙ্গে আবগারি শুল্কের টাকা কেটে রাখা হয়।

আরও দেখুন:
◾ ব্যাংক হিসাবধারীদের জন্য সাধারণ ক্যালকুলেশন

যে কোন ধরনের ব্যাংক একাউন্ট পরিচালনা করার জন্য সরকারকে দুই ধরনের কর প্রদান করতে হয়। একটি হল আয়কর, আর অন্যটি হল আবগারি শুল্ক। ব্যাংক থেকে আপনি কোন সুদ বা মুনাফা পেলে যেমন আপনার কাছ থেকে আয় কর কেটে রাখা হয়, টিনধারী হলে ১০% নন টিনধারী হলে ১৫% ঠিক তেমনি ব্যাংকে টাকা রাখলেই নির্দিষ্ট পরিমাণ ব্যালেন্সের অতিরিক্ত হলেই সাধারণতঃ এক ক্যালেন্ডার বছরে একবারই বিশেষ করে ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আপনার একাউন্ট থেকে কর্তন করা হয়।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

আবগারি শুল্ক বছরে একবারই কর্তন করা যে কোন ধরনের হিসাবের ডেবিট অথবা ক্রেডিট ব্যালেন্স যদি ওই ক্যালেন্ডার বছরের যেকোনো সময়ে এক লক্ষ টাকা ব্যালেন্স অতিক্রম না করে তাহলে কোন আবগারি শুল্ক কর্তন করা হয় না। সমস্যা হলো, একই ব্যক্তির ধরুন একটি ফিক্সড ডিপোজিট করবেন। উনার একটি সেভিংস হিসাব আছে যেখানে তিনি ধীরে ধীরে কয়েক মাসে বেতনের সঞ্চয় ও অন্যান্য সোর্স থেকে দশ লাখ টাকা ব্যালাঞ্চ করলেন। এবারে এখান থেকে এক বছরের ফিক্সড ডিপোজিট করলেন। বছর শেষে ডিসেম্বরে দুই হিসাব থেকে ৩ হাজার হিসাবে ৬ হাজার টাকা শুল্ক কর্তন হলো। আবার ম্যাচুরিটিতে তিনি ফিক্সড ডিপোজিট ভাংগিয়ে সেভিংস এ রাখলেন। আবার ৩ হাজার টাকা। কী মজা! একই উদ্দেশ্যে রাখা একটি ডিপোজিটের বিপরীতে তিন বারে ৯ হাজার টাকা কর্তন। আপনি বলবেন, তিনি বার বার ট্রানজেকশান না করে নগদ টাকা দিয়ে মেয়াদী ডিপোজিট করতে পারতেন, আবার নগদ ভাংগাতেও পারতেন। তাহলে তিন তরফা কর্তন হতো না। কম্পিউটার তো মানুষের মনের মকসুদ বুঝে না। এটা একটা উদাহরন মাত্র।

অনেক ব্যাংকার বলেন, আবগারী শুল্কসহ নানামুখী ব্যাংক চার্জের কারণে আমানতকারীরা ব্যাংকবিমুখ হয়ে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এতে একদিকে যেমন ব্যাংকগুলো তহবিল সংকটে পড়বে, অন্যদিকে আমানতের সুদের ওপর নির্ভরশীল আমানতকারীরা বিকল্প কোনো নন-ব্যাংকিং খাতে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হবেন যা কোনভাবেই কাম্য নয়। বলাবাহুল্য যে, চলমান করোনা মহামারীর প্রকোপে সাধারণ আমানতকারীদের সঞ্চয়ের সক্ষমতা ও প্রবণতা এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ১ এপ্রিল থেকে সব ধরনের ঋণের বিপরীতে সুদের হার ৯ শতাংশ করা হয়েছে। ঋণের সুদ কমে যাওয়ায় তহবিলের খরচ (কস্ট অব ফান্ড) কমানোর নিমিত্তে ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহার উল্লেখযোগ্য হারে কমাতে বাধ্য হয়েছে। সাধারণ আমানতকারীদের অনেকেই ব্যাংকে গচ্ছিত তাদের আমানতের বিপরীতে প্রাপ্ত সুদ বা মুনাফার ওপর নির্ভরশীল।

আমার মতে, কোটিপতিদের জন্য ১৫, ২০, ২৫ হাজার যাই হোক ব্যাপার না কিন্ত মধ্যম আয়ের অর্থাৎ এই লেভেলের সঞ্চয়ীদের জন্য এটা ভীষণভাবে ক্ষতির কারণ এবং সঞ্চয়ে নিরুৎসাহব্যঞ্জক। মাঝারি ব্যবসায়ী তো বটেই পদস্থ চাকুরীজীবিদের অনেকে খেয়ে না খেয়ে একটি ফ্লাট বা একখন্ড জমির জন্য সারা বছরে দশ লাখ টাকা হয়তো জমা করেন, তাতে লাভ তো দূরে এরকম কর্তনের ফলে আসল টাকাও কমে যায়।

বিশেষ করে এই স্ল্যাবটা ১০-৫০ লাখ করে বছরে ১ হাজার টাকা শুল্ক এবং ৫০-৭৫ লাখ ব্যালাঞ্চ হলে ২ হাজার এবং ৭৫ লাখ-১ কোটি পর্যন্ত ৩ হাজার টাকা শুল্ক চার্জ করলে অনেকটা সহনীয় হতে পারে। আশাকরি আসন্ন অর্থবছরের বাজেট প্রনয়নকালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিষয়টি ভেবে দেখবেন।

লেখকঃ মুহাম্মদ শামসুজ্জামান, সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি), ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button