আমানত সুরক্ষা আইন নিয়ে কিছু কথা

কিছুদিন ধরে আমানতকারীগণের মধ্যে উৎকন্ঠার একটা বিষয় হলো ব্যাংক আমানত সুরক্ষা আইন (যা এখন খসড়া মাত্র)। উক্ত খসড়ার কিছু বিষয়ে অস্পষ্টতার কারনে জনমতে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে।
প্রথমতঃ এ আইনের নামকরণে কিছুটা সমস্যা রয়েছে। এ আইনটি মুলতঃ ব্যাংক আমানত বীমা আইন, ২০০০ এর নতুন সংস্করন। প্রত্যেক ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানতের বিপরীতে বীমা করতে হয় এবং উক্ত বীমার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রিমিয়াম জমা দিতে হয়।
এ প্রিমিয়াম জমা বাধ্যতামূলক। নতুন “আমানত সুরক্ষা আইন, ২০১৭” এর অধিনে কোন ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়িত হলে উক্ত বীমার অধিনে একজন গ্রাহক তার বীমাকৃত টাকার পরিমান (১ লক্ষ টাকার কম হলে) অথবা সর্বোচ্চ ১ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরন পাবেন। যদি একজন গ্রাহকের হিসাবে ৪০,০০০ টাকা থাকে তাহলে তিনি বীমার অধিনে ৪০,০০০ টাকা প্রাপ্ত হবেন।
আর যদি তার হিসাবে ১,২০,০০০ টাকা থাকে তাহলে তিনি বীমার অধিনে সর্বোচ্চ ১ লক্ষ টাকা পাবেন। তবে উক্ত টাকা তার মূল টাকার অতিরিক্ত। অর্থাৎ গ্রাহকের হিসেবে থাকা টাকা + বীমার জন্য টাকা প্রাপ্ত হবেন। এ ক্ষেত্রে ৪০,০০০ টাকা হিসেবে থাকা গ্রাহক মোট পাবেন ৪০,০০০ টাকা + বীমার জন্য আরো ৪০,০০০ টাকা, সর্বমোট ৮০,০০০ টাকা।
| ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
আবার ১,২০,০০০ টাকা হিসেবে থাকা গ্রাহক পাবেন ১,২০,০০০ টাকা + ১,০০,০০০ টাকা, সর্বমোট ২,২০,০০০ টাকা। একজন গ্রাহকের একাধিক হিসাব থাকলেও তিনি বীমার জন্য সর্বোচ্চ এক লক্ষ টাকা পাবেন। প্রত্যেকটা হিসাবের জন্য আলাদা আলাদা এক লক্ষ টাকা করে পাবেন না। এবার আমরা সমস্যা তৈরী হবার কারনগুলো একটু আলোচনা করি।
প্রথমতঃ নামকরণ
এ আইনের নামকরণে বীমা কথাটা না থাকায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে খসড়া আইনের শুরুতে এবং ১০ নং সেকশনে বুঝা যায় এটা মূলতঃ পূর্বের আমানত বীমা আইন, ২০০০ এর সংশোধন, যা স্পষ্ট করা থাকলে এ সমস্যা দূর করা যেত। আমরা আশা করব পরবর্তীতে আইনটি পাশের সময় বিষয়টি স্পষ্ট করে দেয়া হবে।
তবে আইনটি যেহেতু আমানত সুরক্ষা আইন সেহেতু এটা আমাদের আমানতকে সুরক্ষা করবে এটাই আমরা আশা করি। আইন প্রনেতাগণও তাই মনে করেন যে আমানতের টাকার অতিরিক্ত বীমার টাকা তাদের আমানতকে সুরক্ষা দেবে।
দ্বিতীয়তঃ অস্পষ্টতা
এ খসড়া আইনের সেকশন ৭ এর উপধারা ১ এবং ২ এর অস্পষ্টতা। সেখানে আমানতকৃত টাকার অতিরিক্ত বীমার অংশ হিসেবে বীমাকৃত টাকার পরিমান অথবা এক লক্ষ টাকা প্রাপ্তির বিষয়টি স্পষ্ট করে দিলে এ সমস্য এড়ানো যেত।
কিছু কথা
কোন দেশের অর্থনীতি বালিশ কিংবা লেপ ভিত্তিক নয়, আশা করি সরকার কখনোই এমন সিদ্ধান্ত নেবেনা যাতে করে মানুষ ব্যাংকে টাকা না রেখে বালিশ কিংবা লেপের মধ্যে রাখবে। তবে ব্যাংকে রেখে যদি সর্বোচ্চ এক লক্ষ টাকাই পাওয়া যায় তাহলে বালিশ, লেপই ভাল। কারন ইদুর, পোকা খাওয়ার পরেও নিশ্চয় এক লক্ষের বেশীই পাওয়া যাবে! তবে বালিশ, লেপে তালার ব্যবস্থা করে রাখা যেতে পারে যাতে করে ইদুর কিংবা পোকা ছাড়াও অন্য আক্রমন থেকে কিছুটা রক্ষা পাওয়া যায়।
এই খসড়া আইনটি বাংলাদেশ ব্যাংকের Website এ Proposed Act as “Deposit Protection Act, 2017” শিরোনামে দেয়া আছে।
যেতে যেতে অবশেষে
গ্রাহক ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টাকা রাখেন লাভের জন্য। তাতে যদি টাকা হারানোরই ভয় থাকে তাহলে টাকা রাখবেন কেন?
কার্টেসিঃ এ হোসেন স্বপন (সংশোধিত ও পরিমার্জিত)



