উগান্ডার এক ভাব নেওয়া ব্যাংকারের গল্প
সে ব্যাংকার। জ্বী না সরকারি নয় বেসরকারি ব্যাংকের ব্যাংকার। সে একজন নিরীহ পেশাজীবি প্রজাতির সদস্য। এই ভদ্রলোক স্বর্বংসহা প্রাণীর উত্তম উদাহরণ। অফিসে বসের অবিবেচক সকল কথা তাকে সইতে হয়। ক্লান্ত শরীরে পরিবারকেও সদা তাকেই বইতে হয়। পর্বতসম লক্ষ্য পূরণের আশায় এবং ছুঁতে না পারার হতাশায় দিন-রাত সে কেবলি ছটফটায়। এভাবে তার দিন যায়। মাইনেও পায়। হয় অর্থ আয়। কিন্তু মানবিক আর মানসিকতায় সে যে কতটা অসহায় তা কেবল গোপনে সে তার সৃষ্টিকর্তাকেই জানায়। এসব উগান্ডাতেই সম্ভব আমাদের দেশে নয়।
নিত্য সার্ফ এক্সেলে ধৌত করে, ইস্ত্রীর ভাঁজ খুলে পরিধান করে ধবধবে সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট তার সাথে মানানসই গলাবন্ধনী, রোজ কালি মালিশ করা চামড়ার জুতো অর্থাৎ আপাদমস্তক ফিটফাট, বলতে পারেন বাহঃ “দারুন স্মার্ট”। অথচ কি এক নিদারুণ যন্ত্রণায় এয়ারকন্ডিশনের ঠান্ডা হাওয়াতে তার ভিতরটা ঘামে ভিজে যায়। পোশাক-পরিচ্ছদে নেহাত সুখী ও ভদ্র দেখালেও রঙিন কার্পেটের নিচে লুকিয়ে থাকা গর্তের মত শত কষ্ট, অপ্রাপ্তির বেদনা ও অনিশ্চয়তার অন্দরমহলে লুকিয়ে রাখে তার যন্ত্রণা।
দৈনন্দিন জীবনের ভাবনায় সমস্তটা জুড়ে কেবল নিজেকে কর্মক্ষেত্রে নিমজ্জিত রাখে, সংসার স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে ভাবনার সময় কোথায় তার। সে না হতে পারল ভালো স্বামী না হতে পারল উত্তম পিতা। উত্তরোত্তর প্রমোশনের আশায় প্রফেশন তাকে গ্রাস করছে নিয়ম-নীতি হীন ভাবে, এখানে ইমোশনের তো কোন পাত্তাই নেই।
সে দিনের দীর্ঘ সময় কাটায় মানসিক অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে, যা মনোস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতির ক্ষেত্র। এখানে প্রতিদিন কেউ-না-কেউ এসে বলে যায় “মাস শেষে তোমার পকেটে যে বেতনটা যায়, সেটা আমাদের টাকায়”। সকাল থেকে রাত অবধি কাজ করেও তাকে শুনতে হয় বেতন হালাল করে নেওয়ার খোটা। তাকে শুনতে হয় “যদি না পারো তবে আজি চাকরি ছাড়ো”। এগুলো উগান্ডাতে সম্ভব আমাদের দেশে নয়।
| ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন। |
সে নাকি উগান্ডার অর্থবহ আর্থিক খাতের বিরাট বড় সৈনিক। সেজন্য তাকে উপস্থিত হতে হয় দৈনিক। ধর্মীয় কিংবা সামাজিক সকল উৎসব তাকে পরিহাস করে ফিরে। মাঝেমাঝে বেচারা দ্বিধা আর সংশয় নিয়ে উৎসবের পরিকল্পনা করলেও হঠাৎ নাযিল হওয়া সার্কুলারে পরীটা উড়ে যায় আর কল্পনায় কেঁদে যায়। তার সততা আছে কিন্তু চাকরির নিশ্চয়তা নেই, তার যোগ্যতা আছে কিন্তু চাটুকারিতা নেই।
ডিজিটাল ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্মের যুগে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে নমিনেশন এর টাকা জমা না দেওয়ার ব্যর্থতার খেসারত তাকেই দিতে হয় ছুটির দিনে অফিস করে।
ঈদের ছুটিতে যখন সবাই নাড়ির টানে বাড়ি যায় তখন সে গরুর হাটে গরুর বদলে জাল টাকা খুঁজে বেড়ায়। এছাড়াও গার্মেন্টস মালিকরা নির্দিষ্ট সময়ে দিল না শ্রমিকদের বেতন ভাতা। তাতে কি! এক ফাইল সার্কুলার ই যথেষ্ট। সমস্ত ছুটিকে ভেদ করে সে যথারীতি অফিসে উপস্থিত। উৎসবগুলো তার দিকে তাকিয়ে উপহাসের হাসি হাসে।
যখন পৃথিবী করোনাময়, সবকিছুই বন্ধ, লকডাউন চলছে, তখনো সে জীবন বাজি রেখে অফিসের দিকে ছুটছে। এইসব ক্ষোভ আর হতাশায় মাঝে সাজে ফেসবুকে এসে উচ্চ বাচ্য করে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর চেষ্টা করে এই উগান্ডিয়ান ব্যাংকার। এসব উগান্ডাতেই সম্ভব, আমাদের দেশে নয়।
তবে এটা ঠিক যে ঐ উগান্ডিয়ান ব্যাংকারের ভাবের অভাব কখনোই ছিলনা। আজ ও নেই। ‘ক্রেডিট কার্ড’ আর ‘পার্সোনাল লোন’ তার ভাবের অন্যতম সঙ্গী। এভাবে সে নিত্য ছুটে টিফিনের বাটি হাতে, নিথর ক্লান্ত শরীর নিয়ে ফিরে আসে রাতে। খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে যায় নতুন ভোরের আশায়। ধন্যবাদ সবাইকে ধৈর্য নিয়ে পড়ার জন্য।
লেখক: মোঃ কামরুজ্জামান সুমন, ব্যাংকার




