বিনিয়োগ ও লোন

ঋণ ও অগ্রিম এর শ্রেণীকরণ: পর্ব-১

প্রণব চৌধুরীঃ ঋণ ও অগ্রিম এর শ্রেণীকরণ – ঋণ ও অগ্রিম, ইংরেজিতে বললে লোন এন্ড অ্যাডভান্স ব্যাংকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ক্ষেত্র। মূলত ব্যাংকের আয়ের মূল উৎস হিসেবে এই জায়গাটাকে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। তবে ঋণ বিতরণ করে ফেললেই যে তা ব্যাংককে আয় এনে দিবে তা কিন্তু নয়। এজন্যই আমাদেরকে গুণগত ঋণ বৃদ্ধি করার কথা বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ আমরা যে ঋণ বিতরণ করব তার যেন গুণগত মান ঠিক থাকে। কারণ মানহীন ঋণ ব্যাংকের শুধু যে ক্ষতির কারণ হয় তা কিন্তু নয় বরং ব্যাংকের জন্য তা হয়ে যায় বোঝা স্বরূপ। তাই ঋণ বাছাই ও প্রদান এবং ঋণ বিতরণ পরবর্তী রক্ষণাবেক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় দেখা যায় আমরা যে ঋণগ্রহিতাকে বাছাই করেছি তিনি কিংবা তাকে প্রদানকৃত ঋণটি ঠিকই গুণগত মান সম্পন্ন কিন্তু সঠিকভাবে পরিচর্যার অভাবে সেটি Bad Loan হয়ে যাচ্ছে। তো লোনগুলো কখন Bad Loan হয়ে যায়? কত প্রকারের লোনই বা আছে? চলুন সেগুলো ধাপে ধাপে জেনে নেয়া যাক।

আর্থিক খাত সংস্কার কর্মসূচির আওতায় ১৯৮৯ সালে সর্বপ্রথম ঋণ শ্রেণীকরণ ও প্রভিশনিং নীতিমালা প্রবর্তন করা হয়। আন্তর্জাতিক মানদন্ডের সাথে সমন্বয়ের লক্ষ্যে ওই নীতিমালায় বিভিন্ন পরিবর্তন এর জন্য ধাপে ধাপে ১৯৯৮ ও ২০০৬ সালে এ বিষয়ে মাস্টার সার্কুলার জারি হয়েছিল। সর্বশেষ ২০১২ সালে ঋণ শ্রেণীকরণ ও প্রভিশনিং নীতিমালায় উল্লেখযোগ্য পরিমার্জন করে বিআরপিডি মাস্টার সার্কুলার নং ১৪/২০১২ জারি করা হয়। মাস্টার সার্কুলার জারি করার পর ওই নীতিমালায় সময় সময় বিভিন্ন পরিবর্তন হয়েছে। ঋণ শ্রেণীকরণ ও প্রভিশন নীতিমালা আন্তর্জাতিক মানদন্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় ১২ বছর পর বিআরপিডি মাস্টার সার্কুলার-১৫ জারি করা হয়েছে যা ১ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখ হতে কার্যকর হবে।

আরও দেখুন:
বিনিয়োগ ও লোন সংক্রান্ত লেখা

বাংলাদেশ ব্যাংকের ২৭ নভেম্বর, ২০২৪ তারিখের ব্যাংকিং রেগুলেশন এন্ড পলিসি ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক জারিকৃত বিআরপিডি মাস্টার সার্কুলার নং-১৫ অনুযায়ী ঋণ ও অগ্রিম (লোন এন্ড অ্যাডভান্স) গুলোকে আমরা চারটি গ্রুপে ভাগ করতে পারিঃ

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

১. ধারাবাহিক ঋণ বা কন্টিনিউয়াস লোন (Continuous Loan)
২. চাহিদা ঋণ বা ডিমান্ড লোন (Demand Loan)
৩. স্থায়ী মেয়াদী ঋণ বা ফিক্সড টার্ম লোন (Fixed Term Loan) এবং
৪. স্বল্প মেয়াদী কৃষি ঋণ বা শর্ট টার্ম এগ্রিকালচারাল ক্রেডিট (Short-term Agricultural Credit)

১. ধারাবাহিক ঋণ বা কন্টিনিউয়াস লোন (Continuous Loan)‍:

আমাদের কাছে পরিচিত ক্যাশ ক্রেডিট বা ওভারড্রাফট ঋণ গুলো এই প্রকৃতির ঋণ। এইসকল ঋণ হিসাবে একটি নির্দিষ্ট সীমা বা লিমিটের মধ্যেই লেনদেন সীমাবদ্ধ থাকে এবং ঋণের পূর্ণ পরিসমাপ্তির জন্য একটি নির্দিষ্ট Expiry Date থাকে যার মধ্যে ঋণটি বন্ধ (Close) বা নবায়ন (Renew) করতে হয়। অর্থাৎ এসব ঋনের ক্ষেত্রে আমরা গ্রাহককে একটি ঋণ হিসাব খুলে দিয়ে সে হিসাবের জন্য মঞ্জুরীকৃত একটি লিমিট নির্দিষ্ট করে দেই। গ্রাহক তার সুবিধামত ঐ লিমিটের মাঝে যতবার খুশি টাকার উত্তোলন ও জমা করতে পারে। তবে ঋণগ্রহিতাকে অবশ্যই সেই ঋণ হিসাবের নির্দিষ্ট Expiry Date এর মধ্যে সুদসহ ঋণের সমুদয় টাকা পরিশোধ করে ঋণ হিসাবটি বন্ধ করে দিতে হয় অথবা নবায়ন এর জন্য আবেদন করতে হয়।

২. চাহিদা ঋণ বা ডিমান্ড লোন (Demand Loan):

এ সকল ঋণগুলো ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী অন ডিমান্ড পরিশোধযোগ্য বলে বিবেচিত। যদি কোন কনটিন্টজেন্ট বা সম্ভাব্য অথবা অন্য যেকোন দায়কে ফোর্সলি ফেরত দিতে বলা হয়ে থাকে তবে তাকেও ডিমান্ড লোন হিসেবে গণ্য করা হবে। ডিমান্ড লোনের উদাহরণ হিসেবে আমরা ফোর্সড লোন এগেইনস্ট ইম্পোর্টেড মার্চেন্ডাইজ, পেমেন্ট এগেইনস্ট ডকুমেন্ট, ফরেন বিল পার্সেজ, ইনল্যান্ড বিল পার্সেজড ইত্যাদি লোনগুলোকে বিবেচনা করতে পারি।

৩. স্থায়ী মেয়াদী ঋণ বা ফিক্সড টার্ম লোন (Fixed Term Loan):

ফিক্সড টার্ম লোনগুলোর একটি সুনির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে এবং ঐ সময়সীমার মাঝে ঋণটি পরিশোধ করার জন্যে একটি নির্দিষ্ট শিডিউল ঠিক করে দেয়া থাকে। অর্থাৎ এই ঋণগুলো একটি নির্দিষ্ট ঋণ পরিশোধের সময়সূচীর অধীনে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিশোধযোগ্য। যেমন আমরা যে পার্সোনাল লোন কিংবা মুক্তিযোদ্ধা ঋণগুলো বিতরণ করে থাকি সেগুলোর কিন্তু নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে, যেমন- চার/ পাঁচ বছর এবং ঐ চার/ পাঁচ বছর সময়ের মধ্যে ৪৮/৬০টি সমান কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ দেয়া থাকে।

৪. স্বল্প মেয়াদী কৃষি ঋণ বা শর্ট টার্ম এগ্রিকালচারাল ক্রেডিট (Short-term Agricultural Credit):

বাংলাদেশ ব্যাংকের Agricultural Credit Department (ACD) নামে একটি ডিপার্টমেন্ট আছে যারা প্রতি অর্থ-বছরে একটি কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচী (Agricultural and Rural Credit Policy and Program) প্রণয়ন করে থাকে। সেই নীতিমালা ও কর্মসূচীর আওতায় অন্তর্ভুক্ত স্বল্পমেয়াদী ঋণগুলোই হলো স্বল্প মেয়াদী কৃষি ঋণ। কৃষি সেক্টরের যে সকল ঋণ ১২ মাসের মধ্যে পরিশোধযোগ্য সেসব ঋণও এর আওতাধীন।

আজ তাহলে এই পর্যন্তই। পরবর্তী আলোচনায় আমরা ঋণ শ্রেণীকরণের ভিত্তি এবং ঋণের অবজেক্টিভ বা উদ্দেশ্য ভিত্তিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব। অর্থাৎ আলোচ্য ৪ শ্রেণীর ঋণগুলোর মধ্যে কোনগুলো কখন কিভাবে Overdue হচ্ছে এবং এই Overdue লোনগুলো কখন কোন পর্যায়ে গিয়ে SMA, Sub-standard (SS), Doubtful (DF), Bad/Loss (BL) হচ্ছে সেগুলো সম্পর্কে জানব। গুণগত ঋণ বৃদ্ধি করে এবং শ্রেণীকৃত ঋণ আদায় করে ২০২৫ সালেও সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এগিয়ে চলুক আমাদের প্রিয় প্রতিষ্ঠান দুর্বার গতিতে। হ্যাপি ব্যাংকিং।

লেখকঃ প্রণব চৌধুরী, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার (এসপিও), সোনালী ব্যাংক পিএলসি, প্রিন্সিপাল অফিস, সিলেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button