ব্যাংকার

জীবন তরঙ্গঃ ব্যাংকিং মানেই গ্রাহকদের সাথে সম্পর্ক

১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে হঠাৎ করেই আমার আব্বা চলে গেলেন তার প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে। আম্মা মানসিকভাবে সাংঘাতিক বিপর্যস্ত হয়ে পড়লেন। তাদের দাম্পত্য সম্পর্কটাও ছিল অনন্য! আমি তখন ইসলামী ব্যাংক বগুড়া শাখার সেকেন্ড অফিসার। ম্যানেজার ছিলেন জনাব শামসুল হক যিনি পরবর্তীতে ডিএমডি হিসেবে অবসর গ্রহন করেন। ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ছিলেন বাংলাদেশের কিংবদন্তী ব্যাংকার মরহুম লুৎফর রহমান সরকার। মা’কে একটু সঙ্গ দান করার নিয়তে আমাকে বরিশাল শাখায় বদলী করার জন্য অনুরোধ করলাম কর্তৃপক্ষের কাছে। আমাকে জানানো হলো, ‘আপনাকে ওখানে পোষ্টিং দেয়া হয়েছে ব্যাংকের পরিচালক জনাব নাজির আহমদের পরামর্শে।

অতএব ওনার গ্রীন সিগন্যাল পাওয়া না গেলে বদলী করা কঠিন হবে। নাজির আহমদ সাহেবকে বলতে উনি বললেন, “আপনাকে আমি একটি নির্দিষ্ট লক্ষে এখানে পোষ্টিং দেয়ানোর ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু মায়ের কথা বললে আমি নিজেও দূর্বল হয়ে যাই, যেহেতু আমারও মা আছেন।” শেষ পর্যন্ত বদলী হলো। বরিশাল শাখায় তখন একজন সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট দায়িত্বে। আমি মাত্রই প্রিন্সিপ্যাল অফিসার। সরকার সাহেবের কাছে নাকি বারবার প্রসঙ্গটি তোলা হয়েছিল যে, উনি মাত্রই একজন প্রিন্সিপ্যাল অফিসার। জবাবে উনি বলেছিলেন, সেটা আমিও জানি।’

যাহোক, অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে বদলীর চিঠি ইস্যু হলেও আমি রিলিজ হয়েছিলাম ১৯৯৩ সালের মার্চ মাসের মাঝামাঝি। ইতোমধ্যে শামসুল হক সাহেব ঢাকার বৈদেশিক বানিজ্য শাখায় চলে আসলেন শাখা প্রধান হিসেবে, আমাকে বগুড়া শাখার দায়িত্ব দিয়ে। বিদায় অনুষ্ঠানে বললাম, “আমাকে আপনার বিদায় দেয়ার কথা, অথচ আপনাকে আমি বিদায় দিচ্ছি। এটার নামই বোধ হয় নিয়তি। “মার্চ মাসে বগুড়া থেকে বিদায় নিয়ে বরিশালের উদ্দেশ্যে পথ ধরলাম। কর্ম জীবনে এই একবারের মতই বদলীর জন্য অনুরোধ করেছিলাম কর্তৃপক্ষের কাছে। ভাবলাম, প্রথম একটি শাখার ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছি, প্রধান নির্বাহীর সাথে একটু দেখা করে যাই। সরকার সাহেবের সাথে দেখা করলাম।

ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ (Banking News Bangladesh. A Platform for Bankers Community.) প্রিয় পাঠকঃ ব্যাংকিং বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ব্যাংকিং নিউজ বাংলাদেশ এ লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন।

তখন হেড অফিস ৭১, দিলকুশা জিইসি ভবনে। দোতলায় বসেন তিনি। আবদুর রহীম দুয়ারী তাঁর পিএ। দেখা হলো, কথা হলো। বললেন, “আমি বুঝি না, একটি বিভাগীয় সদর দপ্তরে স্থাপিত একটি শাখা প্রায় আট বছর যাবত লোকসানে চলছে কেন? সেখানে কি কোনো ব্যবসা বানিজ্য নেই? না থাকলে অন্যান্য ব্যাংকগুলোর শাখা চলছে কি করে? তাহলে আমরা কি শাখাটি ক্লোজ করে দিব? আপনি একটু দেখেন তো বিষয়টি। একটু পরিশ্রম করুন, বাজারের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সাথে একটা সম্পর্ক গড়ে তুলুন। Banking is nothing but relationship with the customers. “আমি শুধু শুনলাম আর তাঁর ব্যক্তিত্বপূর্ন চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। উঠতে গিয়ে বললাম, “স্যার! আপনার দোয়া চাই। আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করবো আপনার কথার আলোকে।”

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

আমি আমার কথা রাখার চেষ্টা করেছিলাম সাধ্যমত। অল্প ক’জন জনশক্তি নিয়ে অমানুষিক পরিশ্রম করেছি। আমার সহকর্মীরা তাদের সবটুকুন উজাড় করে আমার সাথে কাজ করেছে। ১৯৯৭ সালের শেষ দিকে তদানীন্তন প্রধান নির্বাহী, দেশের আরেক প্রথিতযশা ব্যাংকার জনাব এম কামাল উদ্দিন চৌধুরী বরিশাল শাখা সফর করে সব কিছু দেখে বলেছিলেন, well done my boy! সত্যিই সেদিন আনন্দিত হয়েছিলাম। সে কাহিনী আরেক দিন বলা যাবে। সরকার সাহেবের সেই কথাটি “Banking is nothing but relationship with the customers” কথাটি কর্মজীবনের সকল স্তরেই মনে রেখেছি। আল্লাহর অশেষ রহমতে সাফল্যের মুখ সর্বত্রই দেখেছি। তবে আমি এই কথাটির সাথে একটু বাড়তি যোগ করে নিয়েছিলাম and with the colleagues!

লেখকঃ নূরুল ইসলাম খলিফা, সাবেক ডিএমডি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ও সাবেক প্রিন্সিপাল, ট্রেইনিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, আলআরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button