ব্যাংকারব্যাংকিং

ব্যাংক ক্যাশিয়ারের রিস্ক বা ঝুঁকি সমূহ

ব্যাংক ক্যাশিয়ারের রিস্ক বা ঝুঁকি সমূহ – ব্যাংকের মূল কাজ হচ্ছে আমানত সংগ্রহ ও ঋণ বিতরণ করা। যাতে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। একজন ক্যাশিয়ারের কাজের ধারায় অগণিত চ্যালেঞ্জ এর মুখোমুখি করতে পারে যা সঠিক পরিবর্তনের ব্যবস্থাপনা ছাড়াই বিস্তার লাভ করে। টাকা একবার কারো কাছে চলে গেলে তা ফেরত পাওয়ার আশা না করাই ভালো। তাই একটু ভুল করেছেন কী সেই ভু্লের ফাঁক গলে আপনার কষ্ট করে আয় করা টাকা তো যাবেই, সাথে ইন্টারেস্ট হিসেবে যাবে আপনার অর্জিত মান-সম্মান। আর হ্যারাসমেন্ট তো আছেই।

আর এই ঝুঁকিতে সব থেকে বেশি থাকে ক্যাশ অফিসাররা। শাখাতে ক্যাশ অফিসারই ফ্রন্ট ব্যাংকিং এর সাথে যুক্ত। ক্যাশ অফিসার হিসেবে সংক্ষেপে আপনার লুপ-হোল হচ্ছে চেক জালিয়াতি, নকল টাকা এবং আপনার সরল বিশ্বাস। পার্টি আপনার সাথে সুন্দর ভাব জমাবে। আপনিও জমাবেন। কিন্তু সেই সম্পর্কের মাঝে মিনিমাম একহাত অদৃশ্য দুরত্ব না রাখলে পরবর্তীতে পস্তাবেন। গ্রাহকের সাথে আপনার ভাল সম্পর্ক এবং ঝুঁকি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ব্যাংকের ভল্ট সম্পর্কিত যে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য, বিশেষ করে ক্যাশ অফিসারই দায়ী থাকবেন। অবশ্য এসব সমস্যা এড়ানোর জন্য ব্যাংক আপনারে যথেষ্ট প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে। নিম্নে একজন ক্যাশিয়ার কি কি ধরনের রিস্ক বা ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে তা তুলে ধরা হলো-

আরও দেখুন:
অবহেলা ও অব্যবস্থাপনায় ক্যাশ সেকশন

দক্ষতা এবং যথার্থতা

ব্যাংক ক্যাশিয়ার দক্ষতা এবং নির্ভুলতার সাথে লেনদেনের ভারসাম্যতা বজায় রাখতে পারে। যখন বড় আকারের অর্থ লেনদেন হয়ে থাকে, তখন কেবলমাত্র একটি ছোট ভুলও একটি বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে। ব্যাংক সফটওয়্যারের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে কতটা নগদ প্রদান করা হয়েছে এবং গ্রাহকের কাছ থেকে কতটা নগদ গ্রহণ করা হয়েছে তার সঠিক সংখ্যার ডাটা এন্ট্রি এবং সঠিক হিসাবের পরিমাণ যাচাইকরণ অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতএব ব্যাংক ক্যাশিয়ারের দ্রুততার সাথে এবং সঠিকভাবে মৌলিক গণিতের ক্যালকুলেশন করতে সক্ষম হওয়া উচিত। তাদের ১০-কী ক্যালকুলেটর দক্ষতাও শক্তিশালী হতে হবে।

ব্যাংক, ব্যাংকার, ব্যাংকিং, অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ খবর, প্রতিবেদন, বিশেষ কলাম, বিনিয়োগ/ লোন, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ফিনটেক, ব্যাংকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারগুলোর আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ 'ব্যাংকিং নিউজ', ফেসবুক গ্রুপ 'ব্যাংকিং ইনফরমেশন', 'লিংকডইন', 'টেলিগ্রাম চ্যানেল', 'ইন্সটাগ্রাম', 'টুইটার', 'ইউটিউব', 'হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল' এবং 'গুগল নিউজ'-এ যুক্ত হয়ে সাথে থাকুন।

স্ব-অডিটর

ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে ক্যাশিয়ারকে স্ব-অডিটর হিসেবে কাজ করতে হবে। ব্যাংক ট্রেনিং সেন্টারের মাধ্যমে লোটো জালিয়াতি, জাল টাকা বা জাল চেক এবং জাল শনাক্তকরণের সমস্যাগুলি জানতে হবে। উপরন্তু, ব্যাংকগুলি প্রায়ই ক্যাশিয়ারদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন ওয়ার্কশপ করে থাকে। এগুলোর মাধ্যমে নিজেদের দক্ষতাকে আর উন্নত করতে হবে।

অস্বাভাবিক অনুরোধ

ব্যাংক ক্যাশিয়াররা অনেক গ্রাহকের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরণের সুযোগ গ্রহণের অনুরোধ পেয়ে থাকেন। এই ধরেনর অনুরোধ গ্রহণ করা যাবে না। কেননা গ্রাহক বাড়তি কোন সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে আপনার কাছ থেকে বাড়তি সুবিধা কোন অস্বাভাবিক নিয়ে থাকে। যা ভবিষ্যতে আপনার ক্যারিয়ারের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। ব্যাংক ক্যাশিয়ারকে দক্ষতার সাথে এই বিষয়গুলি প্রত্যাখ্যান করতে হবে।

কম্পিউটার সমস্যা

ব্যাংক সফ্টওয়্যার আধুনিক বা অপ্রচলিত হতে পারে। প্রতিটি সিস্টেম শিখতে অনেক দিন বা মাস লাগতে পারে। কাজের সময়ে কম্পিউটারের সমস্যা হলে ক্যাশিয়ারকে সঠিক প্রোটোকলটি অবশ্যই জানতে হবে এবং সমস্যাটি ক্যাশিয়ারকে সমাধান করার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। কেননা এই সমস্যাটি দীর্ঘ সময় ধরে হতে থাকলে গ্রাহকরা বিরক্ত হতে পারে। ফলে ক্যাশিয়ার বিভিন্ন ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারে।

রুঢ় গ্রাহক

কিছু গ্রাহক বিশেষ করে যারা লাইনের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করছিল তারা দ্রুততম সময়ে সেবা চায়। এমতাবস্থায় তারা লাইনে দাড়িয়ে ব্যাংক ক্যাশিয়ারের সঙ্গে তর্ক করে ক্যাশিয়ারকে উত্তেজিত করে থাকে। ফলে ক্যাশিয়ারের জন্য এটি একটি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যার ফলে ক্যাশিয়ারের টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে ভুল হবার সম্ভাবনা থাকে। তাই অবশ্যই ব্যাংক ক্যাশিয়ারকে ধৈর্য্যশীল হতে হবে। তাছাড়া এক ধরনের জালিয়াত চক্র লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে এই এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তার উদ্দেশ্যকে সফল করে থাকে।

ব্যাংক ডাকাতি

ব্যাংক ডাকাতি ব্যাংক ক্যাশিয়ারদের জন্য একটি অত্যন্ত বাস্তব সমস্যা। এই পরিস্থিতিতে যতটা সম্ভব শান্তভাবে পরিচালনা করা। ব্যাংক ডাকাতরা কদাচিৎ সিনেমার মত বন্দুকের গুলি চালিয়ে ব্যাংক ক্যাশিয়ারদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে ব্যাংক লুট করে থাকে। এক্ষেত্রে যে সকল ক্যাশিয়ার বীরত্ব দেখিয়ে অর্থ সংরক্ষণের চেষ্টা করে থাকে তাদের অনেকেই আহত হয়ে থাকেন এমনকি তাদের অনেকেই ডাকাতদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। ব্যাংক ডাকাতির ক্ষেত্রে পুলিশকে যথাযথ তথ্য সরবরাহ করতে ক্যাশিয়ারদের সতর্ক হতে হবে।

দৈনিক লেনদেনের ভারসাম্যতা

ব্যাংক ক্যাশিয়ার সমস্ত আমানত গ্রহণ এবং পেমেন্ট প্রদানের জন্য দায়ী। এটি নগদ ও চেক উভয় মাধ্যমে হতে পারে। প্রতিটি লেনদেনের জন্য একটি নগদ ইন বা নগদ আউট রসিদ তৈরি হয়ে থাকে। দিনের শেষে ব্যাংক ক্যাশিয়ার সকল লেনদেনের মধ্যে ভারসাম্য থাকা উচিত। বেশিরভাগ ব্যাংকেই ক্যাশিয়ারের লেনদেনগুলি ডবল চেক করা হয় যাতে কোণ ত্রুটি না থাকে। যদি কোনো ত্রুটি দেখা দেয়, তাহলে তা সতর্কতার সাথে সমাধান করতে হবে।

রিসিভ ও পেমেন্ট ঘাটতি

ক্যাশিয়ারকে দিনের বেশীর ভাগ সময় কাউন্টারে জমা গ্রহণ ও পেমেন্ট প্রদান, ক্যাশ পরিবর্তন করা, ক্রেডিট কার্ডের পেমেন্ট এবং জমা রসিদ প্রক্রিয়াকরণ ইত্যাদি করতে হয়। সুতরাং ক্যাশিয়ারের চাকরিটি বিরক্তিকর হতে পারে। ক্লান্ত বা বিরক্ত একজন ক্যাশিয়ার সারা দিনে অনেক টাকার লেনদেন করে থাকে। এমতাবস্থায় দিন শেষে টাকায় ঘাটতি হয়ে থাকে। যখন এটি ঘটবে, তখন ক্যাশিয়ারের কাজ হল অ্যাকাউন্টগুলি সঠিকভাবে সমন্বয় করার জন্য চেকিং করা যাতে করে ঘাটতি হওয়া অর্থ খুঁজে বের করা যায়।

একটি মন্তব্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

রিলেটেড লেখা

Back to top button